পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন দৈৰ-ধন t=్సNరి নাচে হইতে সোজা গিয়া পাশে পদ্মপুকুরে নামিয়াছে। মনসার ধনের ঘড়ী রামধনের গৃহ হইতে পুকুরের পদ্মবনে চলিয়া গেল । সেই হইতে রামধন ফকির ! —এই প্রকার কত কাহিনী চকিতে হরিবিলাসের মনে পড়িয়া গেল। নিশুতি বিলে হরিবিলাসের সাত পুরুষের অধিকার । ঘোর বর্ষায় ঝড়-তুফানে এত কাল ধরিয়া নিশুতি বিলে মাল-বোঝাই কত নৌকা ডুবিয়াছে । কে বলিতে পারে যে সে-সব নৌকার ধনরাশি এখনও পাটুলি নদীর গর্ভে আত্মগোপন করিয়া রহে নাই ? ধনের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা মনসার রূপ হইলে বিলের মালিক হরিবিলাসই বা তাহ পাইবে না কেন ? দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া হরিবিলাস বলিলেন--"কিন্তু দয়াল, মায়ের কৃপা না হ’লে ত সে-ধন আমি পাব না !” দয়াল উত্তর করিল –“মায়ের কিরূপ এক রকম হয়েই আছে ।” তখনই আবার চতুর্দিকে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করিখ নীচু গলায় বলিল—“কারও কাছে বেফাস না করেন ত একটা থলর বলি। রাত-বেরাত ডিঙি চড়ে এই নিশুতি বিলে আমি মাছ ধরে বেড়াই । দুপুর রাতে কত কিছুই চোখে পড়ে, কিন্তু শহীদ বাদশার দয়ায় আজও কোন বিপদে পড়ি নি। কিছুদিন ধরে এক আশ্চৰ্য্য ঘটনা লক্ষ্য করে আসছি। শনি-মঙ্গলবার অমাবস্য-রাতে নিগুতির বুকে একসঙ্গে বহু পিবৃদীম্‌’ ভেসে উঠে। ও আর কিছুই নয়, ম-মনসার ধনের সিন্দুক সব পিৰ্বদীম মাথায় ক’রে জলের উপর দেখা দেয়। যদি মালিকের জন্তই না হবে, তবে এতদিন . ংগুলো দেখি নি কেন ?” দৈব-ধন-প্রাপ্তির প্রবল ঝোক হরিবিলাসের মগজে গপিয়াছিল। আগ্রহের সহিত বলিলেন—“তুই ত মস্ত বড় গুণী, দয়াল ! সিন্ধুক ধরতে পারবি ?” “মায়ের দয়া আর মনিবের হুকুম হ’লে এ আর তেমন - ৰক্ত কাজ কি, হুজুর ! সিদ্ধপুরুষ নেপুর মাঝি ছিলেন আমার ঠাকুর্দার বাবা, মায়ের কিরূপায় নিজেও গুণী ব’লে একটু নাম কিনেছি। ‘পিবৃদীমের কাছ ঘেসে আগে নব সবুষের ছিটে। তার পর সিন্দুক ঘিরে জলের উপর ' zس-8 • د যদি একটা মস্তরের বেড়া দিতে পারি, তবে আর যায় কোথা ? সিন্দুক কিছুতেই তলাতে পারবে না।” আশায় হরিবিলাসের মন নাচিয়া উঠিল । ই, যদি কেউ পারে তবে এই দয়ালের মত গুণীর দ্বারাই তা সম্ভব ! “তবে তাই কর, দয়াল ! আসছে কালীপূজায় ঘোর অমাবস্ত। ঐদিন তৈরি হয়ে থাকিস্। যদি সিন্দুক ভেসে ওঠে - প্রদীপ দেখা যায়—তবে ধ’রে ফেল্বি।” দু-জনের ভিতর যুক্তি-পরামর্শ হইল। অপর কেহ জানিল না ; কারণ নাকি "তিন কানে মন্ত্রনাশ !' পরদিন হইতে হরিবিলাস পূজা-অৰ্চনার ফাঁদ বাড়াইয়া দিলেন । দয়ালও মন্ত্র-তন্ত্র সব ঝালাইয়া লইতে লাগিল । দেখিতে দেখিতে অমাবস্তা তিথি উপস্থিত হইল। কাৰ্ত্তিক মাসের শেষ-বিলের জল অৰ্দ্ধেক কমিয়া গিয়াছে। দয়াল আজ দিনের বেলায় রাতের কাজ সারিয়া রাখিতেছে । রাত্রিকালে সিন্দুক ধরিতে হইবে, তাই বিকালে পাহাড় হইতে প্রায় পোয়৷ মাইল দূরে বিলের একটা দিক ঘেরিয়া গোটাকয় খুটি পুতিল । সেই সব খুটির সহিত মাছ ধরিবার বেড়াজাল বাধিয়া রাখিল । পরদিন ভোরে জাল গুটাইয়া মাছ তুলিয়া লইলেই হইবে । মাছ-ধরা দয়ালের কিছুতেই বাদ পড়িতে পারে না। তার উপর এখন কাৰ্ত্তিক মাস-বিলে অজস্র মাছ মরিতেছে ! কাছারী-ঘরট বিলের খুব কিনারে । সন্ধ্যা হইতেই কাছারী-ঘাটে ডিঙি বাধিয়া দয়াল হরিবিলাসের পায়ের কাছে বসিয়া রহিল। কাপড়ের খুটে বাধিয়া বাড়ি হইতে সর্ষপ, লোহার টুকুর, শূয়োরের দাত ইত্যাদি সাজ-সরঞ্জাম সঙ্গে আনিয়াছে। হরিবিলাসও কাছারী-ঘরের বারানায় একখানা আরাম-কেদারায় বসিয়া বিলের দিকে কড়া নজর রাখিলেন। মাঝে মাঝে একটা দূরবীণ চোখে লাগাইয়া দেখিতেছিলেন, প্রদীপ কথন ভাসিয়া উঠে। সন্ধ্য হইতে রাত্রি দশটা পৰ্য্যস্ত খুব জোর এক পশলা বৃষ্টি হইয়া যদিও থামিয়া গেল কিন্তু অন্ধকার খুবই ঘনাইয়া আসিল । ঠায় একই জায়গায় বসিয়া থাকায় মাঝে মাঝে হরিবিলাসের চোখ দুটি তন্দ্রায় জড়াইয়া আসিতেছিল । চোখ রগড়াইয়া জোরে ঘুম তাড়াইতেছিলেন। .প্রায় দুপুর রাতে হঠাৎ হরিবিলাস