পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ج- ج- سيا প্রবাসী ১৩৪২ বসিয়াছেন, এমন সময় এক জন সদর হইতে ছুটতে ছুটতে আসিয়। বলিল --বড়বাবু উড়ে চিঠি ! —উড়ে চিঠি, কই দেখি– ? চিঠিটায় চোখ বুলাইয়া লইয়া দয়াল একটু হাসিয়া বলিলেন—ও বিটুলে সর্দার ? আচ্ছ দেখি কি করতে পারে। আমার রাজত্বে থেকে আমারক্ট বাড়িতে ডাকাতি ? দেখে নেব—- তাহার পর সেই এক শত জন লাঠিয়ালের মধ্যে সাজ সাজ’ রব পড়িয়া গেল। সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে লাঠিয়ালের দল লইয়া দয়াল বাহির হইয়া পড়িলেন। সেদিন অন্দরে মেয়েদের মধ্যে কি অপরিসীম শঙ্কা । বৈকালেই সবাই ঘরে খিল ভাটিয় রহিল। কাহারও মুখে আর র বাহির হইল না। ...মাঠের উপর দিয়া যাইতে যাইতে পুরাতন গড়ের নিকট আসিয়া দয়াল দেখিতে পাইলেন গড়ের খালের মধ্য দিয়া শন শন করিয়া দুইখানি নৌকা আসিতেছে । তিনি আর অপেক্ষ করিতে পারিলেন না। লাঠিয়ালদের বলিলেন—তোরা এইখানে দাড়িয়ে থাক। দরকার হ’লে আসিস । তাহার পর নিজেই ঝপ, করিয়া জলের মধ্যে লাফাইয়া পড়িলেন। সন্ধ্যার অন্ধকারে নৌকার গলুই ধরিয়া উঠিয়া পড়িয়া ডাকাতদের এক জনের হাতের লাঠি কাড়িয়া লইয়া সাই সাই করিয়া মাথার উপর ঘুরাইয়া লইয়া পটাপট মারিতে আরম্ভ করিলেন। অন্ধকারের মধ্যে কিছুক্ষণ খট্‌খটু খটাখট, শব্দ চলিল। দু-এক জন ঝুপ্রাপ, জলের ভিতর পড়িল । নৌকা দুখানি আসিয়া তটে ভিড়িল । তাহার পর ডাকাতের দলের সহিত লাঠিয়ালদের কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলিবার পর তাহারা ডাকাতদের বধিয়া ফেলিল। দয়ালের মাথার একদিক একটু কাটিয়া গিয়াছিল-ঝর ঝর করিয়া রক্ত পড়িতেছিল।. সর্দার সেইদিকে তাকাইয় তাহাকে চিনিতে পারিয়া হু হু করিয়া কাদিতে কাদিতে র্তাহার দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া ৰলিল-ও বড়বাৰু আর নয়! খুব হয়েছে। এবার থেকে আপনার দাস হয়ে থাকবো । e কথাটা নিতান্ত সত্যই। চৌধুরী-বাড়ির খবর যাহারা রাখিত তাহারাই সদারকৈ দেখিয়াছিল। সদর-বাড়ির পাখে একদিকে একটি গোলপাতার কুঁড়ে তৈয়ারী করিয়া তাহাতে সর্দার থাকিত। প্রতিদিন সকালে দৃষ্ট দিলে দেখা যাইত, সর্দার তাহার কুঁড়ের সম্মুখের স্থানটিতে ভনবৈঠক দিতেছে অথবা লাঠি ঘোরাইতেছে। দীর্ঘজীবন সে এবাড়ির সবার রক্ষার জন্ত বঁচিয়া থাকিয়া এই অল্প দিন হইল মারা গিয়াছে। দয়ালের একদিন অমনিই ছিল ! কিন্তু আজ সে গৌরব লুপ্তপ্রায়। পূর্বের কথা জিজ্ঞাসা করিলে তাহার কণ্ঠ বাম্পাকুল হইয়া পড়ে । তাহাকে সে-কথা না জিজ্ঞাসা করাই ভাল। এমনিই একদিন আশ্বিনের সন্ধ্যায় পাচখানি ডিঙি ধানচাল বোঝাই. হইয়া গঙ্গার শাস্ত, শীতল, বুকের উপর দিয়া ভাসিয়া আসিতেছিল। দয়ালের ছোট ছেলে বিধু ছিল এমনি একটি ডিঙীর ভিতর । তাহার সহিত বহুখ টাকাকড়ি ছিল। তাহার পর আকাশের ঝোড়ো কোণে যে একখণ্ড মেঘ ছিল তাহা যে এক তুমুল তুফান তুলিল তাহাতে দয়ালের ভাগ্যতরী এবং পুত্ররত্ন দুই-ই ডুবিয়া গেল । একথা এখনও মনে পড়িলে ক্ষোভে দয়াল বুক চাপড়ায়। এ শোকে সাত্বনার ভাষা তাহার জীবনে মিলে নাই। ૨ মাধুরীকে যে ঘরখানি দেওয়া হইল তাহ ধীরুর ঠাকুমার ধর। মস্ত বড় একখানি খাট ঘরখানি জোড়া করিয়া আছে। বেশ উচু খাটখানি। কাঠের ধাপে চড়িয়া তবে উঠিতে হয়। ঘরের অপর দিকে একটি সাবেকী সিন্দুক। মস্ত বড় একটি তালা তাহার জাংটায় ঝুলিতেছে। ধীক ফুলশয্যার দিন তাহাকে বলিয়াছিল যে এই ঘরখানি তাহার ঠাকুমার ছিল। এই খাটখনিতেই তিনি গুইয়া থাকিতেন। তার নাকি মৃত্যু হইয়াছিল এক আশ্চৰ্য্য দুৰ্ঘটনার মধ্য দিয়া। সেই হইতে দয়াল আর এ ঘরের মধ্যে আসেন না। মাধুরীর গায়ে যে সমস্ত গহনা দেওয়া হইয়াছিল সেগুলিও অধিকাংশ ঠাকুমার। কি ভারী সে. গহনাগুলি । পুরাতন ধাজের তৈয়ারী। গহনার ভারে মাধুরী দুই হাত তুলিয়৷ ই পাইয় পড়ে। সকালবেলা ঘুম হইতে উঠিয়া মাধুরী বাহির হইতেছিল।