পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের পত্র ግ» আমরা নিরস্ত্র আমরা নিঃসহায়, বিনাশের সঙ্গে লডুব কী ক’রে ? পঞ্চাবে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে বিচ্ছেদের ছবি দেখে এলুম তা অত্যন্ত ছশ্চিন্তাজনক এবং লজ্জাকররূপে जनडा বাংলার অবস্থা তো জানোই—এখানে উভয় পক্ষের বিকৃত সম্বন্ধের ভিতর দিয়ে প্রায়ই যে সব বীভৎস অত্যাচার ঘটুছে তাতে কেবল অসহ দুঃখ পাচ্ছি তা নয়, আমাদের মাথা হেঁট ক’রে দিলে । এখন দোহাই দেব কার ? সভ্যতার দোহাই ? কিন্তু একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষের যে সভ্যতার রূপ আমীদের সামনে বর্তমান, সে সভ্যতা মানুষখাদক । তার জন্ত এক দল খাদ্য চাই-ই, চাই তাঁর বাহন । তার ঐশ্বৰ্য্য তার আরাম, এমন কি তার সংস্কৃতি উপরে মাথা তোলে নিম্নতলস্থ মানুষের পিঠের উপর চ’ড়ে। এই নিয়েই যুরোপে আজি শ্রেণীগত বিপ্লবের লক্ষণ প্রবল হয়ে উঠেছে। লোভ প্রবৃত্তিটা সৰ্ব্বব্যাপী হ’তে পারে কিন্তু লোভের ক্ষেত্র এবং সেই ক্ষেত্রের অধিকারীকে স্বল্পপরিমিত হ’তেই হবে। যে-কোনো কারণ বশতই হোক যার জোর আছে সে সেই ক্ষেত্রকে নিজে অধিকার ক’রে অন্যের উপর প্রভুত্ব করে । এমন অবস্থীয় জোরের সঙ্গে জোরের সমানে সমানে লড়াই চলে, কিন্তু সেখানে ডিপ্লমাসির চাল চেলে নানা আকারের রফানিস্পত্তি হ’তে থাকে । কিন্তু ঘেথানে এক পক্ষের জোর আছে অন্ত পক্ষের জোর নেই সেখানে নিৰ্ব্বল পক্ষ আপনার લાભ দিয়ে অপরকে পোষণ করবার কাজে লাগে ৷ যত ক্ষণ লোভ রিপু এই বৰ্ত্তমান সভ্যতার ও স্বাজাত্যের অন্তর্নিহিত শক্তিরূপে কাজ করে তত ক্ষণ এর থেকে বলহীনের নিস্কৃতি নেই ; কেননা, যে দুৰ্ব্বল এই সভ্যতা তারই প্যারাসাইটু । অতএব প্রবলের হাত থেকে যখন দানপত্র আসবে তখন তা অত্যন্তই হোৱাইট পেপার হয়ে আসবে, তাতে রক্তের লেশ থাকবে না ; সেই পাতে যে উচ্ছিষ্ট আমাদের ভোগে পড়বে সেটা হবে কাটাচচ্চড়ি, তাতে মাছের গন্ধ থাকবে মাত্র—খ:দাবস্তু অতি অল্পই থাকবে । লোভী মনিবের পাত থেকে সেই মোট মাছের ভাগ নিয়ে কড়িাকড়ি করব কিসের জোরে? কেবলমাত্র পেটভরীর চেয়ে বেশি জোগান তার নিজেরই ধদি না থাকে তবে সেটাতে তার ঐশ্বর্ঘ্যের পরিচয় দেবে না ; তার যে সভ্যতা প্রাচুর্য্যঅভিমানী তারও দাবী তো মেটাতে হবে। কী দিয়ে ? যে দুৰ্ব্বল তারই ক্ষুধার অল্প দিয়ে। এই ক্ষুধা ভারতবর্ষের এক প্রাস্ত থেকে অন্ত প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত কত বড় চিরদুর্ভিক্ষের আসন পেতে আছে তা কি জানো না ? এর অৰ্দ্ধেকের অৰ্দ্ধেক অনটনও যখন ওদের ভাগ্যে দৈবাৎ ঘটে তখন ওরা কী রকম ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাতো আমরা দেখেছি । এই পেটুক সভ্যতা-সমস্তার স্তায়সঙ্গত সমাধান হবে কী ক’রে ? অধিকাংশ মানুষকে স্বল্পসংখ্যক মানুষের উদ্দেশে নিজেকে কি চিরকালই উৎসর্গ করতে হবে ? শুধু তাদের প্রাণরক্ষার জন্তে নয়, তাদের মানরক্ষার জন্তে, তাদের অতিরিক্তের তহবিলকে স্ফীত রাখবার জন্তে ! এই যদি অপরিহার্ষ্য হয় তবে চার্টহিলের জবাব দেব কী ? এই সমস্ত! তো সবলের সামনে নেই । তাদের সমস্ত বলের সঙ্গে বলের প্রতিযোগিতা নিয়ে । এই প্রতিযোগিতা আজকাল সাংঘাতিক হয়ে উঠেছে । সম্প্রতি এর প্রকাও আঘাতে ওদের দেহগ্রন্থি শিথিল হয়ে আছে, আরও আঘাতের আশঙ্কা চারদিকেই উদ্যত । এমন অবস্থায় যারা বুদ্ধিমান তারা দুৰ্ব্বলের সহায়তাকেও উপেক্ষা করে না । বিগত যুদ্ধে সেই সহায়তা পেয়ে চার্চহিলও কুতজ্ঞের বদান্ততায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন । আর কথনে যে সেই সহায়তার প্রয়োজন হবে না তা বল বীর না । কিন্তু কৃতজ্ঞতার স্মৃতি স্বল্পস্থায়ী, তার উপরে ভর দিয়ে আমাদের আবেদনের ভিত্তি পাকা করবার ব্যর্থ চেষ্টা দুৰ্ব্বলের পক্ষে বিড়ম্বনী । - যখন সামনে এত বড় দুর্ভেদ্য নিরুপায়তা দেখি তখনই বুঝতে পারি যে দুৰ্ব্বলের প্রতি নিৰ্ম্মম সভ্যতার ভিত্তি বদল না হ’লে ধনীর ভোজের টেবিল থেকে উপেক্ষায় নিক্ষিপ্ত রুটির টুকরো নিয়ে আমরা বাঁচব না। সভ্যতার বণিকবৃত্তি যত দিন না ঘুচবে তত দিন তারতবর্ষকে ইংরেজ সহাজনের পণ্যদ্রব্য হয়ে থাকতেই হবে, কোনোমতেই তার অন্যথা হ’তে পারবে না। এক পক্ষে লোভ যে-রাষ্ট্রব্যবস্থার সারথি, সেখানে অপর পক্ষে দুৰ্ব্বলকে বল্লাবদ্ধ বাহন দশ যাপন করতেই হবে। অবস্থাবিশেষে