পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

lo-Bo প্রেৰণসী SNరి8R কোন নায়ক-নায়িকার চরিত্র বিশ্লেষণ হয়, নুতন গানের স্বর লইয়া আলোচনা চলে, প্রতিদিনের তুচ্ছ ঘটনার কথা, অকারণে হান্স, অপূৰ্ব্ব কৌতুক ! মল্লিকদের বড় বাড়ির পিছনে সূৰ্য্য অস্ত যায়, ছাদের বালি-থস হলদে দেওয়াল কাঞ্চন-বর্ণের হইয় ওঠে, আকাশে অপরূপ মায়াময় আলো, গলির কদম্বরক্ষের পাতাগুলি বাতাসে কাপে, একে একে সন্ধ্যাতারা ফোটে, মিত্তিরদের বাড়িতে শাখ বাজিয় ওঠে। দিনের নানা তুচ্ছ কৰ্ম্মে ক্লাস্ত চিস্তাক্লিষ্ট মন এই সন্ধ্যার আলোয় কল্পলোক রচনা করিতে চায়। কোন স্বপ্নের উম জাগিয়া গুঠে । এই একসঙ্গে বেড়ানটুকু অরুণের বড় ভাল লাগে, মনে গভীর শাস্তি আনন্দ অহুভব করে, এ অপূৰ্ব্ব মুহূৰ্ত্তগুলি যেন স্বর্ণসন্ধায় কণ্ঠঙ্গর হইতে খস অমূল্য মণিমাণিক্য । পড়ার ঘরে আলো জলিলেক্ট বেড়ানে বন্ধ করিতে হয় । প্রতিদিন কলেজের পড় তৈরি করা সম্বন্ধে উম। অত্যস্ত নিয়মনিষ্ঠাবর্তী। অরুণের কোন অতুরোধ বা পরিহাস সে গ্রাহ করে না । শীঘ্র বাড়ি ফিরিতে অরুণের ইচ্ছা হয় না, রান্নাঘরের দ্বারের সম্মুখে বেতের মোড়ায় বসিয়া সে মামীর সহিত গল্প করে, অথবা অকারণে প্রদোমান্ধকারময় পথে ঘুরিয়৷ বাড়ি ফেরে। বেশী রাত করিয়া বাড়ি ফের চলে না। প্রতিমার সকাল-সকাল পাওয়া উচিত। অরুণ না বাড়ি ফিরিলে প্রতিমা থাইতে চায় না, বলে, দাদ। আমুক, একসঙ্গে খাব । কোন ছুতায় অনিয়ম করিতে পারিলে ছোট খুকীর মত সে খুশী হইয় ওঠে। রাত্রে গাওয়ার পর অরুণ প্রতিমার ঘরে গিয় তাহার সঠিত গল্প করে। প্রতিমাকে শীঘ্ৰ শুইতে বলিয়া দোতলার পড়ার ঘরে যায় । শিশির সেনের সহিত প্রতিযোগিতা করিয়া সে নানা বই কিনিয়াছে। নিজের লাইব্রেরীটি মুগ্ধদুষ্টিতে দেখে। আরও কত বই কেন দরকার । রাতে আর কলেজপাঠ্য পুস্তক পাঠ হয় না, কোন চিন্তাশীল প্রবন্ধ ব। সমাজতত্ত্ব বা ইতিহাস-পড়িতে বসে। বেতের ইজিচেয়ারে অৰ্দ্ধশয়ান ভাবে অরুণ পড়ে রাস্কিনের সিসেম এণ্ড লিলিজ, কালাইলের ফ্রেঞ্চ রিভলুঙ্গিন বা উইলিয়াম মরিসের নিউজ ফ্রম নে হোয়ার। পড়িতে পড়িতে তাহার মন কোন স্বপ্নলোকে চলিয়া যায়, মানব-সভ্যতার এক সুমহান আনন্দময় ভবিষ্যতের চিত্র মানসনেত্ৰে ভাসিয়া উঠে । অরুণ ভাবে এক মহাবিপ্লব, তার পর পৃথিবীর শান্তিময় আনন্দময় যুগের আরম্ভ হইবে, ধনী-নিধন প্রভেদ থাকিবে না, প্রতি মানব স্বাধীন, প্রেমিক, আনন্দপূর্ণ। পড়ার ঘর হইতে বাহির হইয়া সে দক্ষিণমুণী প্রশস্ত বারান্দার অন্ধকারে চুপ করিয়া বসে। মোট আইয়োনিক থামগুলি পাষাণীভূত দৈত্যের মত স্তন্ধ দাড়াইয় ; ঝিলিমিলির মাথায় কোন পার্থী বাস বঁাধিয়াছে, সহসা জাগিয়া চমকিয় ওঠে ; তারাভরা নিৰ্ম্মল আকাশে সাদা হাল্কা মেঘ ঘুরিয়. বেড়ায় ; মুদ্র বাতাস বয়, অন্ধকার বাগান মৰ্ম্মরিত হইয় উঠে, সরু গলিতে বরফওয়াল ঠাকিয় যায়—চাই কুলপি বরফ , শরৎ-রাজি থমখম করে । এই সময় অরুণের চিন্তা করিবার, স্বপ্নের জাল বুনিবার সময়, কত তাজগুবি কল্পনা, অসম্ভব আশা, অপরূপ ভাবনা ৷ অরুণ ভাবে, বড় হৰ্চয় সে কি করিবে । কত অস্তুত প্ল্যান মাথায় আসে, কিছুই সে স্থির করিতে পারে না । উনবিংশ শতাব্দীর পূর্বলভাগে তাহার বুদ্ধপ্রপিতামহ নদীয়ার গঙ্গাতীরবর্তী এক গ্রাম হইতে কপর্দকহীন অবস্থায় কলিকাতায় আসিয়াছিলেন, এক ধনী আত্মীয়ের বাড়ি থাকিয় বহুকষ্ট্রে সামান্য লেখাপড়া শেখেন, তার পর এক ইংরেজ বণিকের . আপিলে সামান্য কাজ পান, অসামান্ত বিযয়বুদ্ধি শ্র: কৰ্ম্মদক্ষতার গুণে ধীরে ধীরে তিনি বড় ইংরেজ কোম্পানীর মুচ্ছন্দী হন, লক্ষপতি হইয় উঠেন, এই পুরাতন বাড়ি প্রথমাংশ তাহার সময়ে নিৰ্ম্মিত । অরুণও কি সেই লক্ষপংি মহাভারত ঘোষের মত বড় ব্যবসাদার হইবে, এখন ত দেশে বুদ্ধিমান কৰ্ম্মপটু বণিকের প্রয়োজন, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করিয়া অরুণ হয়ত আবার ঘোষ-বংশের নব গৌরবম যুগ আনিবে । কিন্তু আপন বংশকে বড় করিয়া তুলিবাগ কথা, লক্ষপতি হইবার কথা সে ভাবিতে চায় না, সে ভা:ে মানবজাতির কল্যাণময় যুগের ও শাস্তির কিরূপে প্রতিষ্ঠ, হইবে । মানব-সভু্যতার মঙ্গলময় নবযুগ যাহারা আনয়করিবে, সে তাহদের দলে থাকিতে চায়। হয়ত সে বড় কবি হইবে । কবিতা সে লেখে না, কিন্তু