পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t~&వీ তোরঙ্গটা নামিয়ে সেই বলিষ্ঠ লোকটা একপাশে বসলে । মেয়েট বসলো তার পাশে । গায়ে একটা পুরনো জাম, পরনে থাটো একপানী শাড়ী, মাথায় খোপা চুড়ে ক’রে বাধা, হাতে দু-গাছ রুলি। রূপ তার তেমন নেই, কিন্তু স্বাস্থ্যটা ভাল । নবীন বাবু বললেন -তোমার নাম কি মা ? মেয়েটি বললে –আমার নাম ভুনি –এই ব’লে সে বাপের কাছে ঘেষে ছোট তোরঙ্গটায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল এবং মিনিট-পাচেক পরেই দেখা গেল, ঘুমে সে নেতিয়ে পড়েছে, নাক ডাকৃছে । নবীনবাবু বললেন –বাড়ি কোন গ্রামে বললে ? বাড়ি নেই বাবু, এগন আসছি তারকপুর থেকে। সেখানে ক্ষেতে জল ছেচতম। বাপ-বেটির ভাত-কাপড় জ্বটে যেত । দেশ কোন জেলায় ? -মানন্তয়ে । সে অনেক দিনের কথা। -ঈশ্বর বললে, দু-বছর ধান হ’ল না, জমিদারকে জমি ছেড়ে দিয়ে গেলাম বাকুড়ে । পেটের দায়ে নিলাম কারপানায় কাজ । সেখানে ওলাউঠোয় ছোট ছেলেটা ম'রে গেল। বউ বললে আর এদেশে নয় । --তার পর ? ঈশ্বর বললে-পায়ে-ইটা দিয়ে গেলাম মেদিনীপুর। সেখানে রতনজুড়ির হাটে সোম-শুকুরে তরকারি বেচতে বসলাম, এই মেয়েট তখন দু-বছরের। চোং মাসের দিনে গায়ে লাগল আগুন, মশাই গো, ঘর বাচাতে পারা গেল না, ঘরস্থ বউট আগুনে মোলো। দূর হোক গে, মেদিনীপুর আর ভাল লাগল না। মেয়েটাকে কাধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গরিবের জীবন, বাৰু। নবীন বাবু বললেন-মেয়েটাকে ত ধড় করে তুলেছ ভাই, এই তোমার লাভ ! ঈশ্বর হেসে বললে –ওটাও মরবে একদিন, ও কি জার থাকবে! সেবার ডুবে গিয়েছিল কাসাই-নদীতে, এক জন মাঝি তুললে টেনে ; বল্ব কি বাৰু, একবার হারিয়ে গেল খড়গপুরে। মেয়েটার জান বড় শক্ত। সেই যে ছাব্বিশ সালের বম্বে, মনে আছে ত বাবু, গিয়েছিলাম খতম হয়ে. প্রবাসী ১৩৪২ ও বেটিকে গাছে চড়িয়ে দিয়ে আমি ভেলায় চেপে রইলাম, সেবার তোমাদের দেশের এক বাবুর দয়ায় মেয়েটা বাঁচলে । এই বলে সে চুপ করে গেল। স্বরেশ্বর ব্যগ্ৰকণ্ঠে বললে—এবার কোথায় যাবে ঈশ্বর ? ঈশ্বর হাসতে লাগল। এ যেন তার কাছে বাহুল্য প্রশ্ন । এর জলাব দেওয়া সে দরকারই মনে করে না ! শুধু বললে আপনার কি এদিকে কাজ করতে এসেছ ? নবীন বাবু বললেন- -কাজের কুল কিনার পাঠ নে, তা এলুম যদি কিছু উপকার করতে পারি। চাল-ডাল বিলোবে, কেমন ! একখান ক'রে কাপড় আর কঙ্গল, এই ত ? --ব’লে ঈশ্বর হাসতে লাগল। তাব হাসি, তার ভঙ্গী, তার কণ্ঠস্বর যেন জগতের সমস্ত বদান্যতাকে নিঃশব্দে বিদ্রুপ ক’রে দিলে, এর পরে আর পরোপকারের আতিশয্য প্রকাশ করা চলে না । নবীন বাৰু নীরব হযে গেলেন । শেষরাত্রির ঘোলাটে অন্ধকারে বাইরের দিগন্তপ্রসারী প্রান্তর তথন ও স্পষ্ট হয় নি। ছেলের সবাই জেগে বসেছিল । তারা বোধ হয় ভাবছে, বন্যার প্রবাহে আসে অনেক পাপ অনেক অন্যায়। জল একদিন নানা থাতে পালিয়ে যায় বটে, কিন্তু রেখে যায় মানুষের লজ, কলঙ্গ, দুষ্প্রবৃত্তি, রোগ আর দারিদ্র্য। সারা বঁাচে তাদের জীবনব্যাপী মৃত্যু আর ধ্বংস। ঐ অশিক্ষিত নিৰ্ব্বোধ লোকটার হাসির ভিতরে হয়ত এ-কথাটাও ছিল ! - চাপা কান্নার শৰে সবাই সজাগ হয়ে উঠল। নবীন বাবু বললেন -কে হে, কে র্কাদে ? কোথায় ? এদিক-ওদিক সবাইকে তাকাতে দেখে ঈশ্বর হেসে বললে আমার মেয়েটা গো মশাই, ঘুমেন্টুে ভুনি কাদে, ওর তিন বছর বয়েস থেকে এই অভ্যেস। থাক থাকু বাবা—এন্স আমি আছি ব'লে। ব’লে সে তার মেয়েটার গায়ে বার-দুঃ হাত চাপড়ালে । স্বরেশ্বর বললে—কাদে কেন ? অস্বথ ? --ন বাবু, স্বপন দ্যাখে । ওর বোধ হয় একটু মাথাঃ দোষ আছে...দুঃখু পেয়ে পেয়ে—আমার হাতখান ওঃ গায়ের ওপর থাকলে আর কাদে না। এই ভুনি, ৬ষ্ঠ