পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলয়ালী বালিক। দুইটি ভিন্ন সমাজ মিশিল, দুইটি ভিন্ন দেশ মিশিল । এই নব-নিশ্রণে যে সন্তান জন্মিল তিনি হইলেন মাপলা বা মহাপিলা অর্থাৎ বড় ছেলে । বৰ্ত্তমানকালে এই প্রদেশে লক্ষ লক্ষ মাপল শৌর্য্যে বীৰ্য্যে ও ব্যবসা বাণিজ্যে এক অতি উচ্চস্থান অধিকার করিয়৷ রহিয়াছেন। এই প্রদেশে তৃতীয় আর-একপ্রকার মিশ্রজাতির উদ্ভব হইয়াছে ; তাহ খ্ৰীষ্টানদিগের দ্বারা। যীশুর সময়কাল হইতে এই প্রদেশে খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম প্রচার আরম্ভ হয় । তাহার প্রিয় শিষ্য সাধু টমাস যীশু-প্রচারিত মুক্তির নূতন সমাচার লইয়। এই ভূখণ্ডে প্রথম উপস্থিত হন। তিনি ধৰ্ম্মপ্রচার করিতে আসিয়া সামাজিক বিপ্লব উপস্থিত করিতে অনিচ্ছা প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রকাশ করেন। তিনি বলিতেন ধৰ্ম্মসাধন করিয়া আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভ কর ; ধর্মের পশ্চাতে সমাজ আপন হইতেই গঠিত হইয়া উঠিবে। সাধু টমাসের পুতচরিত্রের সংস্পর্শে আসিয়া ব্রাহ্মণ চণ্ডাল সকলেই যীশুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করিলেন। ব্রাহ্মণ প্রথমে যজ্ঞোপবীত ত্যাগ করেন নাই ; ব্রাহ্মণ ও চণ্ডাল খ্ৰীষ্টানসমাজে আসিয়াও প্রথম প্রথম ব্রাহ্মণ ও চগুলিই থাকিয় গেলেন। কিন্তু অধিকদিন এ পার্থক্য স্থায়ী হইতে পারিল না । খ্ৰীষ্ট ধৰ্ম্মের পাশ্চাত্য আদর্শ ভারতীয় খ্ৰীষ্ট-সমাজকেও স্বাতন্ত্র্য-লাভের স্বাধীনত দিল না । বিগত তিন চারি শতাব্দীর মধ্যে পরশুরাম-ক্ষেত্রের খ্ৰীষ্টীয় সমাজ ও বিশিষ্টরূপে পরিবর্তিত হইয়া উঠিল । ব্রাহ্মণে ও চণ্ডালে ভেদ প্রায় লুপ্ত হইয়া আসিল । স্থানীয় খ্ৰীষ্ট-সমাজ এখনও পৰ্য্যন্ত হিন্দু আদর্শ হইতে সম্পূর্ণ বিচ্যুত না হইলেও আভ্যন্তরীণ ঘটনাচক্র লক্ষ্য করিয়া অনুমান করা অসঙ্গত হইবে না যে খ্ৰীষ্টসমাজ অচিরেই আপনার সামাজিক স্বতন্ত্রত প্রতি(ঠত করিয়া লইবে । ধর্মের অনুষ্ঠানাঙ্গের রূপ বহুল-পরিমাণে হিন্দু থাকিলেও সামাজিক ংগঠনক্রিয়৷ পাশ্চাত্য প্রথাই অবলুম্বন করিবে। খ্ৰীষ্টান পুরুষানুক্রমে যতই বিস্তৃতি লাভ করিবে ততই স্বতন্ত্র হইতে থাকিবে । স্বকৃত-ভঙ্গ খ্ৰীষ্টান অপেক্ষা দ্বিতীয় পুরুষের খ্ৰীষ্টান মূল হিন্দুসমাজ হইতে দূরতর হইতে থাকিবে এবং ক্রমে ব্রাহ্মণ-খ্ৰীষ্টান ও চণ্ডালখ্ৰীষ্টানে পার্থক্য ঘুচিয়া যাইবে। কেবল অনুমানের উপর ভঁর করিয়াই এই কথা বলিতেছি না। বহুদিবস বহু অবস্থায় ইহাদিগের সহিত মিলিয়া মিশিয়। পূৰ্ব্বোক্ত ধারণাতেই উপনীত হইয়াছি। এখনও স্থলবিশেষে সুলেমান খ্ৰীষ্টান ও উচ্চশ্রেণীর খ্ৰীষ্টানের জন্য পৃথক পৃথক সিঞ্জাধর থাকিলেও শিক্ষা ও সভ্যতার বিস্তারের সহিত હાફসকল ক্ষুদ্র বৃহৎ পার্থক্য ভাঙ্গিয় যাইতেছে। বৰ্ত্তমানকালে খ্ৰীষ্টান-সমাজে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত | निश দুইটা শ্রেণী আছে। F. সদর দেশমধ্যে বাড়িয়া যাইতেছে। অল্প অনুধাবন করি। দেখিলেই বুঝা যাইবে ২য় সংখ্য। ] শিক্ষিতদলে ব্রহ্মণে ও চণ্ডালে একাকার হইয়া গিয়াছে। সুদৰ্ণ বিবাহ, অনুলোম ও প্রতিলোম বিবাহ অবাধে চলিয়। যাইতেছে। যতই দিন যাইতেছে ততই এই ভাবের জাতি লোকে মনে কবিতে পারেন যে, সূত্র খ্ৰীষ্টসমাজের সন্ধরজাতির স্থষ্টিতে বৃহত্তর হিন্দুসমাজের কি ক্ষতিবৃদ্ধি হইতে পারে ? যে রূপ ধারণ সমীচীন নহে। এই প্রদেশে খ্ৰীষ্টানের সংখ্য অত্যন্ত অধিক— দুলবিশেষে শতকরা ৮০ জনেরও অধিক । যে স্থানে এত অধিকসংখ্যক খ্ৰীষ্টান, সে দেশের খ্ৰীষ্টসমাজের প্রভাব বৃহত্তর সমাজকেও যে অধিকার করিতে পারে তাহা একপ্রকার সুনিশ্চিত । নানা জাতির খ্ৰীষ্টান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া এক পথ দিয়৷ এই প্রদেশে প্রি-জাতির স্বষ্টি করিতেছে । অন্ত এক পথ দিয়াও এই মিশ্র-জাতি-গঠন-ক্রিয়া চলিতেছে। এই মিশ্রণ খ্ৰীষ্টানে খ্রীষ্টানে নহে, হিন্দুতে ও খ্ৰীষ্টানে । পূর্বেই বলিয়াছি, থিয়ান সমাজের লোকগণ নম্বুদ্রাদিগের দ্বারা নানাপ্রকারে নির্যাতিত । নায়ক বা নায়ারগণ দেশ অধিকার করিয়া জেতার গৰ্ব্ব লইয়া ইহাদিগকে পেষণ করিতে আরম্ভ করেন। নম্বুদ্রপাদ সমাজে কর্তৃত্বপদ লাভ করিয়া এই থিয়ান জাতির উপর কঠোর পীড়ন আরম্ভ করিলেন । থিয়ান হিন্দুর দেবতা পূজা করিবার অধিকার লাভ করিল না ; মন্দিরের চতুঃসময় প্রবেশেরও তাহার অধিকার থাকিল না ; সে অগ্রহারম্ বা ব্রাহ্মণ-পল্লী এবং নায়ার-পল্লীর মধ্য দিয়া যাতায়াত করিবার অধিকার হইতেও বঞ্চিত হইল। বৌদ্ধযুগের অবসানে থিয়ানের মন্দিরে প্রবেশাধিকার ठ्ठ८ड বঞ্চিত হইয় ক্লেশ অনুভব করিতে লাগিল। বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের পরশুরাম-ক্ষেত্র भजग्राङ्गौ द्रश्निभौ । বিলোপের পর তাহার ক্রমে হিন্দুত্বে প্রবেশ করিতে চাহিল; এবং উত্তর ভারতের—বোধ হয় তিব্বত হইতে আনীত—তান্ত্রিক সাধন আরম্ভ করিয়া দিল। নম্বত্রপাদ তান্ত্রিক আচারের ঘোর বিরোধী। সুতরাং থিয়ানের তান্ত্রিক আচার ব্যবহারের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম ঘোষণা করিলেন। থিয়ান বুদ্ধিমান ও তেজস্বী। সে জেতা নম্বীপাদের এই কঠোর শাসনকে নিৰ্য্যাতন বলিয়াই গ্রহণ করিল এবং নীরব দীর্ঘনিশ্বাসে ইহার প্রতিবাদ করিয়া এই নিৰ্য্যাতনস্পৃহাকে দমন করিবার জন্য গোপন প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তিকে জাগরিত করিয়া তুলিল। এই প্রতিহিংস-প্রবৃত্তি নানা আকাৰে প্ৰস্ফুটিত হইয়া উঠিল।