পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* >ッ দ্বিতীয় পথ টিনেভেলি হইতে কুইলোন পৰ্যন্ত রেলে, তৎপরে মোটর বাসে ত্রিভেণ্ডম এবং তথা হইতে নগরকইল যাওয়৷ যায় এবং এই শেষোক্ত স্থান হইতে পূৰ্ব্বোক্ত গোযানে কুমারিক যাওয়া যায়। কবি ও চিত্রকরের দৃষ্টিতে এই পথের সৌন্দর্য দর্শন করিলে না জানি ইহার সৌন্দর্য্যে মনপ্রাণ কতই মুগ্ধ হইয়া যায়। উভয়পার্থে জনপদের কল-কল্লোল, নরনারীর বেশভূষার পারিপাট্য, মন্দিরশ্রেণীর অৰ্চনা-পূত গম্ভীর স্মৃতি, নদী, পৰ্ব্বত ও অরণ্যানী ত্রিবাঙ্গুরের সরিয়ান খ্ৰীষ্টান সমাজের বিবাহ। এবং পরিশেষে বালুকাস্তর উত্তীর্ণ হইয়া কোলাহল-মুখর জনতা ভেদ করিয়া নীরব নির্জনতার মধ্যে কুমারী দেবীর মন্দির-প্রাঙ্গণ। পথে দত্তাত্রেয়-মন্দির। জয়ন্ত-মন্দির ও কুমারীদেবীর শোভাযাত্র-কালীন উংসব-স্থান, প্রভৃতি দর্শন করিয়া কুমারী-মন্দিরে যাইতে হয়। এই উৎসবস্থানে বৎসরে একবার কয়েকদিনের জন্য মহাসমারোহ উৎসব হয়। পথে তাল তমাল খৰ্জ্জুর বৃক্ষশ্রেণী শস্য প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ) లివN [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড পাদপ-শূন্য মরুভূমির উপর দণ্ডায়মান হইয়া উচ্চগ্রীব ও উৰ্দ্ধদৃষ্টি হইয়া কি যেন অনির্দেশু। রত্বের অনুসন্ধান করিতেছে। বুঝিবা সে রত্ব কুমারিকার সমুদ্রতীরেই আছে । এই দেবীমন্দিরে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য তীর্থস্থানের তুলনায় নিতান্তই অল্প। তথাপি দুই তিন দল উত্তরভারতের যাত্রী দেখিলাম। এক দল রামেশ্বর হইতে পদব্রজে কি জানি কতদিনে এই স্থানে আসিয়াছেন। আর দ্বিতীয় দল ধনী মাড়োসার দেশীয় পুরুষ ও মহিল৷ কয়েকখানি গোযানে আসিয়াছেন। কন্যা কুমারীর মূৰ্ত্তি-কল্পনার মধ্যে একটি বুিশেষত্ব আছে যাহা অন্য কোথাও দেখা যায় না। দেবীমূৰ্ত্তি কুমারী, তিনি সালঙ্কার, সুচিঙ্কণ-বেশ, বিবাহাথিনী, মাল্য-হস্তে দণ্ডায়মান। তিনি বিবাহ-যোগ্য স্বামীর সন্ধানে যেন অভিসারিকার বেশে অপেক্ষাকারিণী। কত যুগযুগান্ত ধরিয়া তিনি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার দৃষ্টিতে পথের দিকে স্থির নয়নে চাহিয়া আছেন। দেখিয়া মনে হইল ইহা যেন সেই হিন্দুদর্শনের প্রকৃতি-পুরুষের লীলার কথা কল্পনার জীবন্ত তুলিকায় অঙ্কিত করিয়া রাখা হইয়াছে। পুরুষের সংযোগ বিনা প্রকৃতির লীলা প্রকট হইতেছে না। পুরুষও প্রকৃতির সংযোগ ভিন্ন নিক্রিয় ও শান্ত । প্রকৃতি পুরুষের প্রতীক্ষা বসিয়া আছেন। কুমারী দেবীও স্বামীর অপেক্ষায় মাগ্যহন্তে বধূসাজে দণ্ডায়মানা। আবার ভাবিলাম জয়দেবের গীতগোবিন্দের কথা। প্রণয়িনী সখার অপেক্ষায় বৃক্ষপত্রের প্রতিমৰ্ম্মরশব্দে তাহার আগমন কল্পনা করিতেছেন। জয়দেব গাহিয়াছেন— পততি পতত্রে বিচলিত পত্রে শঙ্কিত ভবদুপযানম্। সাধক এমনি আগ্রহে, এমনি আবেশে আপনার হৃদয়স্বামীর প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকেন। কন্যা-কুমারীর দেবীমূৰ্ত্তি সেই শাশ্বত কল্পনাকে রূপদান করিয়া চক্ষের সমক্ষে স্থাপন করিতেছে। মূৰ্ত্তি সকলেই দেখে, ভিতরের গভীর অর্থ কয়জন হৃদয়ঙ্গম করে ? কন্যা-কুমারীর পর উড় পী এই ক্ষেত্রের দ্বিতীয় তীর্থ। এইস্থান কৃষ্ণপূজার জন্য প্রসিদ্ধ; ইহা দ্বৈতবাদ-প্রচারক মধবাচার্য্য দেবের পীঠস্থান । এইস্থানে শ্ৰীকৃষ্ণ র্তাহার সহিত লীলা করিয়াছেন । তপন ভারতে খ্ৰীষ্টধৰ্ম্মের প্রচার | ২য় সংখ্যা ] পরশুরাম-ক্ষেত্র ইয়াছে। বিস্তৃত মন্দির, ইহার চারিদিকে গো-গৃহ, বাসভবন, নাট-মঞ্চ, দোল-লীলার স্থান বিশেষভাবে নিৰ্ম্মিত। মন্দিরের মধ্যে একটি সংস্কৃত পাঠশালা এবং একটি বেদ-বিদ্যালয় আছে। উড় পীর অধীনে আটটি মঠ আছে এবং প্রত্যেক মঠের জন্যই পৃথক মঠাধিপতি পরমহংস সন্ন্যাসী আছেন। প্রধান মন্দিরের পূজাদি দুই বৎসর অন্তর এক এক মুঠের তত্ত্বাবধানে থাকে। এই দুই বৎসরের জন্য সেই মঠের অধিপতি মন্দিরের সমুদায় আয় বায়ের ভার গ্রহণ করেন ; দুই বৎসরের জন্য মন্দিরের সম্পূর্ণ মালিক হন। এই দুই বৎসরের আয় ভিন্ন প্রত্যেক মঠেরই বিস্তৃত জমিদারী ও রত্নালঙ্কার আছে, সে সকলেরই আজীবনের মালিক মঠাধিপতি স্বামী মধ্বাচার্য্যই এই আটটি মঠ স্থাপন করিয়া যান। প্রবাদ এই প্রকার যে এক শুভ মুহূৰ্ত্তে দেবতার নিকট হইতে তিনি আটখণ্ড শিলা প্রাপ্ত হন এবং আটটিতে তাহার আটবার পদক্ষেপের স্থান হয় । এই আটথও শিলার উপর তিনি আটটি মঠ স্থাপন করেন এবং এই আটটি মঠই তাহার মতবাদ প্রচারের কেন্দ্রস্থান । প্রত্যেক মঠেরই আবাস-স্থান ত্রিবাঙ্কুরের তাড়ি-খানা। ও অতিথিশাল ভিন্ন মফস্বলে আশ্রম ও জমিদারী আছে। সহরের আবাস-বাটী ঐশ্বৰ্য্য ও বিভবের লীলানিকেতন এবং বিলাসের কেলিকুঞ্জ স্বদুর মফস্বলের আশ্রম-বাটিকায় বিলাসবিভবের অপ্রতুল না থাকিলেও ঐশ্বৰ্য্য-প্রদর্শন-চেষ্ট৷ নিতান্ত অশোভন বোধ করিয়া তাহার প্রকাশবাহুল্য নাই। সহরের লীলা-ভবনে প্রবেশ করিলেই মনে হয় যেন কোন রাজা মহারাজার প্রাসাদে প্রবেশ করিতেছি। প্রাচীরগাত্রে স্ফটিকোজ্জল চাকচিক্য, তাহার উপর বর্ণসম্পদের বিচিত্র সমাবেশে বহুবিধ চিত্রাবলী, সঙ্গে সঙ্গে বৃহদাকার তৈলচিত্র, মেঝের উপর স্বধৃত ও স্বকোমল গালিচার মওন, নানা বিচিত্র ঝাড়লণ্ঠন হইতে আলোকমালার অত্যদ্ভুত বিচ্ছুরণ, চেয়ার, কাউচ, সোফা, মৰ্ম্মর-মণ্ডিত টেবিল, স্বধৃত ও স্থচিত্রিত টানাপাখার মধুর কম্পন ; অপর পাশ্বে আফিসঘরে টাকাকড়ির হিসাব, 'নথিপত্র, কৰ্ম্মচারী ও প্রজাবৃন্দের জনতা ও কলহ-কোলাহল সকলই স্বামীজির ঐশ্বৰ্য্য-গৌরবের পরিচয় প্রদান করিয়া থাকে। মফস্বলের অাৰাসবাটীর মধ্যে সর্বপ্রধানটি মাত্র .