পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ নিজের গতিক বুঝিয়া সে নিজেই ধাধায় পড়িয়া গেল, একি হইল – ( & ) বিকালে, বাসার বারান্দায় পৈঠার উপর বসিয়া ছুরি দিয়া মেসোমশাই কাচা আম ছাড়াইতেছেন ও অদূরবর্তী রোয়াকে উপবিষ্ট, হরিনামের ঝুলি হস্তে, ছবির জননীর সহিত ছবির বিবাহ সম্বন্ধে কথাবাৰ্ত্ত কহিতেছেন। খিড়কির পশ্চাদ্ভাগে পোড়ো জমীটায় ছেলেরা সকলে থেল করিতেছিল। সেখান হইতে তাহীদের উচ্চ কলরব বেশ স্পষ্ট শোনা যাইতেছিল, অন্য স্ত্রীলোকের তখন রান্নাঘরে ছিলেন। r সদর দুয়ার পার হইয়া প্রাঙ্গণে রঞ্জন মিশ্র দেথা দিল । মুহূর্তে মেসোমহাশয়ের মুখের কথা ঠোটের মধ্যে থামিয়া গেল, হাস্তোজ্জল মুখে বলিলেন, "এস এস রঞ্জন এস, কাল তোমায় দেখতে পাইনি কেন ঠাকুর ?” "বড় কাজের ভিড় পড়েছে বাব । ওকি কচ্ছেন ? আম ? দিন আমায় আমি ছাড়াচ্ছি”—মেসোমশায়ের হাত হইতে ছুরি লইয়। রঞ্জন তৎক্ষণাং আম ছাড়াইতে বসিয়৷ পড়িল। সস্নেহ দৃষ্টিতে একবার তাহার পানে তাকাইয়৷ মেসোমশাই আবার ছবির বিবাহের প্রসঙ্গ লইয়৷ পড়িলেন। রঞ্জনের শ্রবণেন্ত্রিয়ের উপর শরীরের সমস্ত তড়িৎ আসিয়া কাজ করিতে লাগিল। প্রাণপণে উত্তেজন৷ চাপিয়া অত্যন্ত মনোযোগের সস্থিত সে ছুরি চালাইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে রঞ্জন সব আমগুলি পরিস্কাররূপে ছাড়াইয়া ফেলিল, “দেখুন তো বাবু হয়েছে ?" “বেশ হয়েছে। আচ্ছা রঞ্জন, তুমি এত বাংলা শিখলে কোথা ? কথনে বাংলা দেশে গিছলে ?” “না বাৰু, এইখানেই যাত্রীদের সঙ্গে মিশে শিখেছি।" "বাঃ! বাহাদুর ছেলে তুমি, খাস বুদ্ধিমান!” রঞ্জন উপস্থিত কৌতুকে হে হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। বালকের মত অসঙ্কোচ আনন্দ-স্বন্দর দৃষ্টিতে মেসোমশায়ের পানে তাকাইয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিল “আপনার আমায় বড় ভালবাসেন। না ?" তাহার স্বকোমল সরল প্রশ্নে ছবির জননীর মনে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড

      • ヘー。

গভীর মমতার উৎস উথলিয়া উঠিল । জীবনের সহস্ৰ শোক । বেদনায় সন্তপ্ত রমণীর চক্ষু হইতে বাৎসল্য-স্নেহের তপ্ত অশ্র খসিয়া পড়িতেই তাড়াতাড়ি আঁচলে চক্ষু মুছিয়। আত্মসম্বরণ করিয়া বলিলেন “নারায়ণ, নারায়ণ, হরিবোল!" মেসো-মশাই সস্নেহে রঞ্জনের পিঠে হাত বুলাইতে বুলাইতে রহস্যস্মিতহাস্তে বলিলেন, “ঠিক হয়েছে দিদি, আপনি ছবির বের জন্যে ভাবছেন কেন ? এক কাজ করুন,— জগবন্ধুর সামনে দুটো ফুল ফেলে, ছবিকে এই ছেলেটির হাতে উচ্ছগু করে দিন, ভাবনা চিন্তে সব চুকুক, আর রঞ্জনটিও আমাদের আপনার লোক হয়ে যাক।” রঞ্জনের কপালের শিরা লাফাইয়া ফুলিয়া উঠিল। আঘাতের ধাক্কাট অবিচলিত ভাবে গোপন করিতে তাড়াতাড়ি অঞ্জলি পুরিয়া আম লইয়। রঞ্জন রান্নাঘরের দিকে চলিয়া গেল । সজল নয়নে চাহিয়া চাহিয়া ছবির জননী ভাবিলেন “আহ৷ আমন আত্মি-সো জামাই হওয়া ভাগ্যের কথা ।” রঞ্জন ফিরিয়া আসিয়া বসিল, অন্য প্রসঙ্গের কথাবার্তা চলিতে লাগিল। কিন্তু রঞ্জন সেসকল কথা আর শুনিতে পাইল না। তাহার উদ্যত আনন্দকুল্ল শ্রবণশক্তি—সহণ কালাস্তকের শরবিদ্ধ মুম্যুর মত প্রাণের মাঝে লুকাইয়৷ পড়িল। হায় অশুভক্ষণে সেই তুচ্ছ ব্যঙ্গ উচ্চারিত হই য়াছিল—রঞ্জনের অন্তরে সেটা সাংঘাতিক বাজিয়াছে, থাকিয়া থাকিয়া রঞ্জন কেবলই অধীর হইয়া উঠিতেছিল। কঠিন পৌরুষের তীব্র ভ্ৰকুট-তঙ্গিমায় যতই সেই মোহময় উদ্বেগটাকে সজোরে ধাক্কা মারিয়া তাড়াইবার চেষ্টা করিতে লাগিল ব্যাপারটা ততই দৃঢ় হইয় তাহার অস্তরে প্রতিঘাত করিতে লাগিল। কি বিপদ!—রঞ্জন আকুল হইয়া উঠিল। কথাটা ক্রমশঃ তাহার সমস্ত মনটা জুড়িয় ঘুরিয়া ঘূরিয়া নাচিতে লাগিল। কোন রকমে শিষ্টাচার বজায় রাখিয়া বিদায় লইয়া বঞ্জন খিড়কির চুয়ার দিয়৷ বাহির হইল। সুবিধা হইত বলিয়। সে এই পথ দিয়াই প্রায় বাট যাইত। - খিড়কির বাহিরে, খোলা জমীতে, বালির গওঁ কাটিয়া মহা উৎসাহ আস্ফালনে ছেলের সব খেলায় মাতিয়াছে। কেবল ছবি একাকী, ও-দিকের রাস্তার ধারে বেড়ার র সংখ্যা]" কাছে ধাড়াইয়া, একজন উড়িয়া স্ত্রীলোকের সহিত কথা ৰছিড়েছিল। ছবি বড় হইয়াছে, সে কি আর খেলিতে পারে ?-ছিঃ ! তাহার কাজ এখন সৰলৰে আটকাইয়া খেলা করান। স্বৰুনের পা আর সরিল না, চিত্রাপিতের মত রায় অবলম্বনে দাড়াইয়া আত্মবিশ্বত রঞ্জন গভীর বিহ্বলতায় ছবির পানে চাহিয়া রহিল—আহা কি চমৎকার ছবিটি । রঞ্জনের মস্তিষ্কে ঘনীভূত উত্তেজনা জমাট স্বাধিয়া উঠিল। - ছবি স্ত্রীলোকটিকে আত্ম-পরিচয় দিতেছে, “আমার সবাই অাছে, কেবল বাবা নাই।” - কথাটা রঞ্জনের মঙ্গল- করিয়া ধ্যানস্থ হৃদয়ের সমবেদনার তারে স্বক্ষ আঘাতে গভীর করুণার আকুল বন্ধনা বাজাইয়া তুলিল —আহা তাহরে যে পিতা নাই । সহসা তাহার স্বপ্নপূর্ণ চিত্ত আলোড়িত করিয়া তীৱাশ্লানির ধিক্কারে ক্ষণমধ্যে তাহার সহানুভূতিপূর্ণ সুখের আবেশে রচিত চিন্তা-গ্রন্থি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয় গেল। ক্ষুব্ধতাক্ষিপ্ত প্রাণ নিষ্করণ যন্ত্রণায় হাহাকার করিয়া উঠিল হায় হায় সে করিতেছে কি ?—করিতেছে ন্ধি ভগবান জগন্নাথ দেব, তোমার আশ্রিত অযুগত সেবকের অম্বরে একি প্রলয়ঙ্কর প্রলোভনময় আকাজক্ষার দাবানল প্ৰজলিত করিলে ঠাকুর —রক্ষা কর রক্ষা কর প্রভু! - - মাতালের মত টলিতে টলিতে রঞ্জন পথে নাবিয়া *क्लिल । (os ) পৰদিন শ্রীমন্দিরে মেসো-মশায়ের সহিত রঞ্জনের দেপা হইল। সকলকে লইয়। তিনি দেবত দর্শনে আসিয়াছেন। রঞ্জনকে ডাকিয়া বলিলেন, “ঠাকুর, আজ একবার ভাল করে দর্শন করিয়ে দাও, আজই তো শেষ, আর ত কবে না।" - | “হবে না। কেন বাৰু?" A "কাল যে আমরা দেশে ফিরব, ঠাকুর।" . নিমেষ-মধ্যে কে যেন রঞ্জনের হৃদপিণ্ডের শিরাগুলি তথ br কপুরের মালা 、ヘヘヘヘペペヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ^*^^^^^ ২৩৯ - ০৮:০৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~~ - সাড়াশীতে সজোরে চিস্টাইয়া ধরিল, কাল!-কালইএত শীঘ্ৰ পীড়িত মর্শ্ব ভেদ করিয়া, বুকের মাঝখানে, বার বার আওঁপ্রশ্ন ধ্বনিত হইতে লাগিল-কাল, কালই, এত শীঘ্ৰ ! হায় দুর্ভাগ্য! - * কোমরে কসিয়া চাদর বাধিয়া, সজোরে নিঃশ্বাস झांक्लिग्रा द्रश्नन भएन भएन उॉदिल “त्रांभांब्रहे त्रनाग्नि !” “আবার কবে আসবেন বাৰু!" | “আবার!”—রহস্যচ্ছলে হাসিয়া মেসোমশাই বলিলেন “জগন্নাথ আবার যখন ডুরি ধরে টানবেন তখন আসব, - কি বলেন দিদি ?” | নিঃশ্বাস ফেলিয়া ছবির জননী মন্দির-পানে চাহিয়া বলিলেন “আহা তা আর নয়। জগবন্ধু আবার যখন মনে করবেন, তখন আসব "ি | মানমুখে ক্লিষ্টহাসি হাসিয়া রঞ্জন বলিল “তিনি সবাইকে মনে করেন মা, কিন্তু তাকে তো সবাইকার মনে পড়ে না !” - মেসোমশাই গম্ভীর মুখে বলিলেন “ঠিক।" “তা হলে সবাইকে নিয়ে রথের সময় আসবেন বাৰু।" কথাটা বলিয়াই দুঃসহ কুষ্ঠা রঞ্জনের কণ্ঠ যেন চাপিয়া ধরিল, রঞ্জন তাড়াতাড়ি সকলকে লইয়া অগ্রসর হইল। চলিতে চলিতে মেসোমশাই বলিলেন "রঞ্জন তুমি আজি বিকালে আমাদের বাসায় ষাৰে ?” “না বাবু, পাওরি জরুরী কাজ আছে।” "তাইত তোমার সঙ্গে যে তাহলে আর দেখা হবে না, আমরা কাল সকালের ট্রেনেই যে রওনা হব।” ব্যস্তভাবে ছবির জননী বলিলেন “তা হলে এক্ট"-چtra* "হ্য তাই হবে।” সকলে মন্দিরে ঢুকিলেন। নিদিষ্টসময়ে বিগ্রহকে প্ৰণাম করিয়া সকলে মন্দিরপ্রাঙ্গণে আবার সমবেত হইলেন। অকস্মাৎ-দৃষ্ট একটি পরিচিত লোকের সহিত মেসোমহাশয় একটু তফাতে দাড়াইয়। কথা কইতেছেন দেখিয়া রঞ্জনও অন্যদিকে সরিয়া গেল, কয়েক ছড়া কপূরের মালা হাতে লইয়া নাড়াচাড়া করিতে করিতে অন্যমনস্কভাবে অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়া ভাবিতে