পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-- ২৪৬ - বেকারেল বলেন রন্টগেনের মত তিনিও দৈবক্রমে রেডিয়ম জাতীয় পদার্থের অদ্ভূত রশ্মির (Radioactive *Rays) সন্ধান অবগত হন। তবে এস্থলে একটি কথা বলার প্রয়োজন। আকস্মিক ঘটনার সাহায্যে আবিষ্কার করা সকলের সাধ্য নয়। যিনি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক শিক্ষা লাভ করিয়া প্রত্যেক ঘটনার কাৰ্য্য-কারণ-সম্বন্ধ নির্ণয় করিতে ব্যগ্র, তিনিই এরূপ ঘটনা হইতে নূতন সত্য উদঘাটন করিতে সক্ষম হন। দৈব উযোগী পুরুষেরই সহায় হয়, অলসের নহে। দ্বিতীয়তঃ, কোনও কোনও বৈজ্ঞানিক কোনও একটি লৌকিক সংস্কারের সাহায্য লইয়। তাহার অনুমান গঠন করিয়াছেন, এরূপও দেখা যায়। ডাক্তার জেনার ইংলণ্ডের এক পল্লীগ্রামে ডাক্তারি করিতেন। তাহার গ্রামে গোয়ালদের মধ্যে একটা সংস্কার ছিল যে যাহার একবার গোবসন্ত (cow pox ) হয় তাহার আর ইচ্ছার বসন্ত (small pox) হয় না। জেনারের ইচ্ছা হইল এই সংস্কারের মধ্যে কতটুকু সত্য নিহিত আছে সে সম্বন্ধে অনুসন্ধান ও রীতিমত গবেষণা করিয়া দেখিবেন। তাহার ইচ্ছার কথা যখন তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকারী ডাক্তার বন্ধুদের জানাইলেন, তখন তাহারা গোয়ালাদের এই কুসংস্কারটা হাসিয়া উড়াইয়া দিলেন ( কেননা দেখা গিয়াছিল কথাটা সকল সময়ে থাটে নাই) এবং তাহাকে এ বিষয়ে গবেষণা = করিয়া সময় নষ্ট করিতে নিষেধ করিলেন। তিনি কিন্তু উহাদের কথায় কর্ণপাত না করিয়া, ধীরভাবে এই বিষয়ে গবেষণা করিতে লাগিলেন। কিছুকালের মধ্যে দেখা গেল দুই রকম রোগকে গোয়ালারা ভুল করিয়া গো-বসন্ত বলিত ; তাহার মধ্যে যেটা আসল গো-বসন্ত সেট। যাহার হয়, তাহার আর ইচ্ছার বসন্ত হয় না। এই বিষয় লইয়া কয়েক বৎসর ধরিয়া পরিশ্রম করিবার পর তাহার জগদ্বিখ্যাত বসন্থের টীকার আবিষ্কার হইল। - দ্বিতীয় দৃষ্টান্তস্বরূপ আমি মেচনিকফের একটি স্বপরিচিত আবিষ্কারের উল্লেখ করিতে চাই। কি করিলে মানুষ দীর্ঘজীবী হয় এই সম্বন্ধে মেচনিকফ কিছুদিন চিন্তু করিতেছিলেন। তাহার ধারণ জন্মিল যে মানুষের বৃহৎ অন্ত্রের মধ্যে ভূক্ত দ্রব্য পচিতে থাকে এবং কয়েকটি বিষাক্ত প্রৱালী-জ্যৈষ্ঠ ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড - -- -------------------- ു পদার্থের স্বষ্টি করে ; তাহারই ফলে মাস্থ্য বৃদ্ধ হইয়া মঞ্জি। যায়। যদি কোনও রকমে অস্ত্রমধ্যস্থ ভূক্ত দ্রব্যের এই পচনক্রিয়া নিবারণ করা যায় তাহা হইলেই মানুষ বহুকাল বাৰ্দ্ধক্য ও মৃত্যুর হস্ত এড়াইতে পারিবে। * 「 ইতিমধ্যে তিনি দেখিলেন অনেক দেশের সাধারণ লোকের মধ্যে একটা বিশ্বাস আছে যে দধি ও ঘোল জাতীয় জিনিস আহার করিলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। অক্ষু, সন্ধান করিয়া দেখিলেন যাহারা এইরূপ জিনিস পায় তাহার প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয়। তারপর তিনি যন্ত্রাগারে পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন যে দধিতে যে ব্যাক্টরিয়া (জীবাণু) ল্যাক্টক এসিড প্রস্তুত করিয়া দুধকে দধিতে পরিণত করে, সেই ব্যাকটিরিয়া উপস্থিত থাকিলে কোনও একটা জিনিস পচনক্রিয়া হইতে রক্ষা পায়। কাজেই দধি ভক্ষণ (বা অন্য কোনও প্রকারে ল্যাকটিক এসিড ব্যাক্টরিয়া ভক্ষণ) দীর্ঘজীবন লাভের একটি উপায়, এই সত্যটি আবিষ্কার হইল। যে-সকল বৈজ্ঞানিক লৌকিক সংস্কার মাত্রকেই কুসংস্কার বলিয়া ঘৃণা করেন এবং তাহার মধ্যে কিছু প্রকৃত সত্য লুক্কায়িত আছে কিনা তাহ অনুসন্ধান করা কেৰল পণ্ডশ্রম বলিয়া বিবেচনা করেন, তাহারা উল্লিখিত দুইটি আবিষ্কারের ইতিহাস হইতে কিছু জ্ঞানলাভ করিতে পারেন। ইহা স্বীকার্য্য যে অনেক স্থলে লৌকিক সংস্কারের অন্তর্নিহিত সত্যটুকু ভ্রান্তির আবরণে এরূপ আচ্ছাদিত থাকে যে হঠাৎ সেটুকু কাহারও নজরে পড়ে না-লে সত্যটুকু বাহির করিতে হইলে জেনারের মত অদম্য উৎসাহের প্রয়োজন । - - আমাদের দেশে প্রাচীনকাল হইতে কতকগুলি সংস্কার চলিয়া আসিতেছে—তাহার মধ্যে কতটুকু সত্য আছে তাহা কে অনুসন্ধান করিয়া দেখিবে ? যদিই বা কেহ দেখিতে চাহে তাহা হইলে তাহাকে বিদ্বজ্জনসমাজে হাস্যাম্পদ হইতে হইবে। যদি কেহ বলে, গাধাকে যে শীতলাদেবীর বুহিন বলে তাহার অর্থ–বোধ হয় গাধার দুধে বসস্তুের উপকার হয় এবং আমি এ বিষয়টা লইয়া গবেষণা করিতে চাই, তাহা হইলে অনেক বৈজ্ঞানিকই ভাবিবেন এই ব্যক্তির বৃদ্ধির সঙ্গে শীতলার বাহনের বুদ্ধির অনেকটা সোসাদৃশ্ব আছে। | ক্ষুর আজকালকার ফ্যাসান-বহির্ভূত । Հ8Պ --SumitaBot (আলাপ) ০৮:১০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) JMAMSMMAMS নিদানস্বরূপ ব্যাসিলির নাম উল্লেখ করেন তাহ পাপ্তরেরই আবিষ্কার। তাহার পূৰ্ব্বে রোগসংক্রান্ত ঘটনাগুলি কেহই বৈজ্ঞানিক নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিতেছিলেন না। . কোন গুপ্ত শক্তির বলে তিনি এ বিষয়ে সফলকাম ठ्ठ्ठলেন? রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় যেসকল নিখত প্রণালী অবলম্বিত হয়, রোগ সম্বন্ধীয় এইসকল কঠিন প্রশ্নের সমাধানে সেইসকল প্রণালীর প্রয়োগই এই গুপ্ত শক্তি । কেবল এক বিজ্ঞানের প্রণালীই যে অপর বিজ্ঞানে প্রযুক্ত হয় তাহা নহে, এক বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তও অপর বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হইয়া যথেষ্ট স্বফল প্রসব করিয়াছে দেখা যায়। এই বিষয়ে একটি চূড়ান্ত দৃষ্টাস্ত দিব । উদ্বর্তনবাদের আবিষ্কারক ডারউইন ও ওয়ালেস দুইজনেই স্বীকার করিআছেন যে ম্যালথস-প্রণীত লোকসংখ্যার আলোচনাবিষয়ক পুস্তক পাঠ করিয়াই তাহারা যোগ্যতমের জয় এই সত্যটি আবিষ্কার করিতে সক্ষম হন। এ স্থলে দেখা যাইতেছে সমাজ-বিজ্ঞানের একটি সিদ্ধান্ত হইতে জীববিজ্ঞানের একটি সিদ্ধান্ত নির্ণীত হইল। সেইরূপ হাৰ্বার্ট স্পেন্সার প্রমুখ । কয়েকজন সমাজ-বিজ্ঞানবিদ জীববিজ্ঞানের অনেক সিদ্ধান্ত সমাজবিজ্ঞানে প্রয়োগ করিয়া গিয়াছেন। পদার্থবিজ্ঞান জীববিজ্ঞান প্রভৃতি স্বপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের গবেষণাপ্রণালী এবং কোনো কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হিন্দুসমাজের প্রতি প্রয়োগ করিলে যে অনেক নূতন তথ্যের আবিষ্কার হয় সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কিন্তু মুস্কিল এই, সমাজ সম্বন্ধে সমালোচনা করিতে যাইলেই আপনাকে একট-ন-একটা দলের হাতে পড়িতে হইবে—আপনি যে বৈজ্ঞানিকোচিত অপক্ষপাতিতা অবলম্বন করিবেন তাহাতে কাহারও সহানুভূতি পাইবেন না। আপনার কথাগুলি ষেদলের মনোমত হইবে তাহারা আপনার সাহায্য করি বন ; কিন্তু খবরদার, সেই দলের মতের বিরুদ্ধে কোনও আলোঁচনা করিতে পরিবেন না, তা সে আলোচনা যতই বৈজ্ঞানিক হউক না কেন । কাজেই এদেশে যদি একজন প্রকৃত সমাজবিজ্ঞানবিদের একাই একদল হইয়া কাজ করিবার সামর্থ না থাকে, তাহা হইলে তাহার পক্ষে অরণ্যে রোদন ২য় সংখ্যা ] তেমনি হঠযোগ সম্বন্ধে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখানে বলিয়া বাধি পরিচ্ছদ সম্বন্ধে যেমন দেশকালপাত্রোপযোগী একটা ফ্যাসান থাকে তেমনি সাহিত্য এবং বিজ্ঞান সম্বন্ধেও একটা একটা ফ্যাসান থাকে। যে দুঃসাহসিক লেখক বা বৈজ্ঞানিক সেই ফ্যাসানের শাসন মানিয়া না চলেন তাহার ভাগ্যে অশেষ লাঞ্ছন থাকে। অথচ আশ্চর্য্যের বিষয়, এই সেদিন লা রিভিউ নামক একখানি উচ্চঅঙ্গের পত্রিকায় লিথিয়াছে যে ডাক্তার গিউটলিস নামক একজন জৰ্ম্মান বিশেষজ্ঞ দেখাইয়াছেন যে অনেকের কর্ণপটহে ছিদ্র থাকে, কিন্তু তাহা জানা যায় না। তাহার হঠাৎ জলে ঝাপ দিলে কানের ভিতর জল ঢুকিয়া মারা যাইতে পারে। এই জন্য ডাক্তার সাহেব তাহাদিগকে কানে তুলার ছিপি লাগাইবার উপদেশ দিয়াছেন। পড়িয়াই মনে হইল ছেলেবেল বাবা বলিতেন ‘ওরে, ডুব দেবার আগে কানে আঙ্গুল দে। এতদিন ত আমি এটাকে একটা কুসংস্কার বলিয়াই জানিয়া আসিয়াছি। - এইবার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রকৃতি সম্বন্ধে আরএকটি কথার উল্লেখ করিয়া প্রবন্ধের উপসংহার করিব । পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের মত কোনও একটি পুরাতন বিজ্ঞানের গবেষণাপ্রণালী শারীর-বিজ্ঞানের মত একটি নূতন বিজ্ঞানে প্রয়োগ করায় অনেক বড় বড় আবিষ্কার হইয়া গিয়াছে। বৈজ্ঞানিকশ্রেষ্ঠ হেলমহোলজে বলিয়াছেন তিনি যে শারীর-বিজ্ঞানে অতগুলি প্রয়োজনীয় আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন তাহার কারণ এই যে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাপ্রণালী শারীর-বিজ্ঞানে প্রয়োগ করেন। তার পূৰ্ব্বে এই পদার্থবিজ্ঞানের প্রণালী শারীরবিজ্ঞানে ব্যবহার হয় নাই। কাজেই তিনি যেন একটা নূতন জমি প্রথম আবাদ করিলেন—সেইজন্যই ফল খুব সন্তোষজনক হইয়াছিল । - বৈজ্ঞানিক প্রধান পাস্তুর প্রথমে রসায়ন সম্বন্ধে গবেষণা করেন। পরে তিনি জীববিজ্ঞানে অত্যদ্ভুত আবিষ্কার পরম্পরা দ্বারা জগতের অনেক কল্যাণসাধন করিয়া গিয়া ভিন্ন দ্বিতীয় পন্থা নাই।• ছেন। এই যে আজকাল ডাক্তাররা কথায় কথায় রোগের ঐসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এম-এ, বি-এস সি। Tন প্রবাসী, ১৩২১ সালের পৌষ মাসের পঞ্চশস্য দ্রষ্টব্য। মধুম বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মিলনে পঠিত । - s