পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७रे リ মঙ্গল থানলাম গদা ঝাড়িতেছে ; এবং বালক চাকর দেবীদীন, গাড়ীর এপাশে দাড়াইয়। চাকার ধূলা ঝাড়িয়া, - চাকার রবারে ভ্যাসিলিন ঘসিলে তাহার উজ্জলতা বৃদ্ধি হয় কি না, একমনে তাহাই পরীক্ষা করিতেছিল। অদূরে বাবালোকদের আসিতে দেখিয়া মঙ্গল খানসামার মনে সহসা নিজের সততা প্রচারের সাধু সংকল্প জাগিয়া উঠিল, সে তৎক্ষণাং উচ্চকণ্ঠে দেবীনের নষ্টবুদ্ধি-সস্থত ব্যাপারটিতে আন্দুর মনোযোগ আকর্ষণ করিল। দন্তে অধর চাপিয়া, রুদ্ধহস্যে কৌতুকোজ্জল মুখে আন্দু ঘাড় উচাইয়া উকি দিয়া দেবীদীনকে দেপিতে গিয়া দেখিল— ছেলেদের লইয়। সৌন্দর্ঘ্যের সাগরে শোভার হিল্লোল তুলিয়া অদূরে ত্রিদিবের জলন্ত রূপের" চলন্ত প্রতিম! স্বয়। আন্দু চট করিয়া মাথ নামাইয়া প্যাচ কদিতে বসিল, দেবীকে কিছু বলা হইল না। সকলে গাড়ীতে উঠিল। লতিকা ও পরিমল একদিকে বসিল, অপরদিকে সরসী ও জ্যোৎস্নার স্থান নির্দেশ হইল। সমীরণ গাড়ীতে উঠিতেই লতিকা ঈর্ষিতনেত্রে সরসীর পানে চাহিয়া বলিল "একে তো বাহাদুরী করে নিয়ে এলে! এবার বসে কোথা?—চলুক দাড়িয়ে!" এ তিরস্কারের প্রচ্ছন্ন শ্লেষটুকু জ্যোংস্কার গায়ে বাজিল। সে তাড়াতাড়ি বলিল, “আমি ওকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।" জাদু মাথায় টুপী তুলিয়া গাড়ীতে উঠিবীর উদ্যোগ করিতেছিল, ছোট ভাইটির প্রতি লতিকার রূঢ়তা দেখিয়া তাহার বড় অস্বস্তি হইল, একটু রাগও হইল, শিক্ষিতা লতিকার—অস্তুত: সাংসারিকতা হিসাবে, এটুকু বুঝ। উচিত, যে সে বড় হইয়া সামান্য সামান্য কারণে ছোট ভাই বোনদের প্রতি যেরূপ বিদ্বেষ ব্যবহার করিতেছে, উহারাও ইহার পর তাহারই দৃষ্টাস্তের আহ্ববৰ্ত্তী হইয়। অমনই বিদ্বেষপরায়ণ, নিৰ্ম্মম হইয়া উঠিবে। আন্দু মোটর-কারের চাকায় জুতার ঠোকর মারিয়া বলিল “ছোট সাহেব, তুমি আমার কাছে এস, জায়গা হবে।” ছোটসাহেবের পূৰ্ব্বেই বড়সাহেব লাফাইয়া উঠিল, পরিমল বলিল “আমি যাচ্ছি।” - কিন্তু তাহার যাওয়া হইল না। লতিকার ধমকে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড চঞ্চল বালককে পুনরায় যথাস্থানে বসিন্তে হইল। সমান ... I আন্দুর ক্রোড়ে উঠিয়া হাওয়া থাইতে চলিল । ( 3 ) পরদিন কিসের উপলক্ষ্যে আদালত বন্ধ থাকায় সকালে আন্দুর ছুটি ছিল। সমস্ত সকলেট এর ওর তার সংবাদ লইতে কাটাইয়া,—ফিরিবার সময় আৰু বাল্যের স্বহৃদ, বৰ্ত্তমানের কুস্তির আখড়ার ক্রীড়াসঙ্গী, ভবতারণ চাটুজ্যের সংবাদ লইতে গেল, সে কয়দিন কুস্তির আখড়ায় যায় নাই। আন্দু বাল্যকাল হইতে তাহাদের বাড়ীতে যায়, সুতরাং একেবারে বাড়ীর ভিতর টকিয়৷ উচ্চকণ্ঠে ডাকিল "মা—” * ভবতারণের বর্ষীয়সী বিধবা ভগিনীকে আন্দু মা বলিঃ ডাকিত, তাহার কারণ ভবতারণ আব্দুর সহিত শ্বশুর জামাই সম্পর্ক পাতাইয়াছিল। ভবতারণ আন্দুব হৃষ্টপুষ্ট স্বগের স্বঠা চেহারায় মুগ্ধ হইয়। তাহাকে আদর করিয়া জামাই, বলিয়া ডাকিত , ভবতারণের অবশু কন্যা নাই, সেঞ্জ আন্দুরই সমবয়স্ক, এবং সদ্য বিবাহিত মাত্র । আন্দু মা বলিয়৷ ডাকিতেই ভবতারণের জ্যেষ্ঠ ভগিনী রান্নাঘরের রোয়াক হইতে উত্তর দিলেন "বাবা—” তিনি তখন বঁটা পাতিয়া কুটুনা কুটিতেছিলেন, আজ একটু বেলায় রান্না চড়িয়ছে, কেননা ভৰতারণের আফিস বন্ধ ; ভবতারণ আদালতের একজন ৪৫২ টাকা বেতনের কেরানী। ভবতারণ অমায়িক উদার প্রকৃতির যুব। আন্দু অগ্রসর হইয়া, দূর হইতে মুষ্টির উপর মাথা নত করিয়া, মাতৃসম্বোধিতাকে হিন্দুয়ানী-ধরণে প্রণাম করিল। এ ধরণে অভিবাদন সে শুধু এই পরিবারের রমণীদেরই করিত, অন্য কাহাকেও নয়। ভবতারণের বুদ্ধা জননী রান্নাঘর হইতে হাত ধুইয়। বাহিরে আসিলেন । আৰু র্তাহাকে প্রণাম করিলে তিনি সস্নেহে বলিলেন “আমি আজই ভাবছিলুম, যে, নাংঞ্জামাই আমার অনেকদিন আসেনি কেন ? তারপর, ভাল তো ভাই ?” আন্দু বলিল “শ্বশুর কোথায় দিদিমা ?" হাসিয়া ভবতারণের দিদি বলিলেন, "তোমার নতুন শ্বাশুড়ী এসেছে যে, শুনেছ ?”—বলিয়াই ওদিকের বারান্দায় I - | ২য় সংখ্য। ] .. ੋਣ সপ্তম পুত্রকে ডাকিয়া বললেন "ওরে श्क्तः, মামাকে ডেকে দে, আন্দু দাদা এসেছে।" হরু আব্দুকে এতক্ষণ দেখে নাই, এখন দেখিয়া "মামা" বলিয়া চীৎকার করিয়া ডাক দিয়াই খেলা ছাড়িয়া ছুটিয়া আসিয়া আন্দুকে জড়াই। ধরিল। আন্দু ব্যস্ত হইয়। বলিল,8এই যাঃ ! মোছলমানকে ছুয়ে ফেল্লে—” তাহার কথা শুনিয়া সকলে হাসিয়া উঠিল। ভবতারণের দিদি বলিলেন “তা হোক, জামা কাপড় ছেড়ে ফেলবে ।” হাসিতে হাসিতে ভবতারণ গৃহ হইতে বাহির হইল । ভগিনীকে লক্ষ্য করিয়া অলুযোগের স্বরে বলিল, “যা হোক মা বটে। ছেলে রৌদ্রে টিটুচ্ছে,আর মা দিব্বি বঁটতে বসে আছে!” ভবতারণের দিদি কি বলিতে যাইতেছিলেন। কিন্তু আন্দু মুখ ফিরাইয়া প্রশ্নের জবাব দিল, “মার কাছে আবার ছেলের আসন কি !—" সে হরকে পৃষ্ঠে তুলিয়া लॅझेज़ । - - , ভবতারণের দিদি বলিলেন “তোর যে জামাই এসে উঠোনে দাড়িয়ে রইল, তুই ঘরে ছিলি কোন হিসেবে ?" আন্দু বলিল “বউম কি সত্যি এসেছেন ?" ভবতারণের জননী বলিলেন “হা, এই কদিন হল এনেছি। যারে ভব, বাছাকে বসা গে যা।" ভবতারণ দুষ্টামি করিয়া নিজে আব্দুর পৃষ্ঠে চপেটাঘাত ৰরিয়া বলিল "দিদি, তোমার ছেলের আঙ্কুেল দেখলে ? আমায় ছুলে !" দিদি হার্সিয়া বলিলেন “আমার ছেলে তো সোনার টা! তুমি যে মেথর ছুয়ে আসছ, তোমায় কে আঁটুবে शिः” ভবতারণ তৎক্ষণাং বলিল, "যদি জানছই, যে একদিকে তোমরা যতখানি আচার করে চলছ অন্যদিকে আমি . ততখানিই অনাচারে চলছি, তবে এত ছোয়াছুয়ি বিচার কেন?” - দিদি কুটুনোগুলি ধুইয়৷ থালায় সাজাইয়। রান্নাঘরের দিকে মাইতেছিলেন। ভ্রাতার কথায় হাসিয়৷ মাথা নাড়িয়া ক্ষুন্নভাবে বলিলেন “তা জানি না ভাই ।” মান্দুকে লইয়া ভবতারণ শয়ন-গৃহের দাওয়ায় আসিল । ভবতারণ গৃহ হইতে দুটি বেতের মোড়। বাহির করিয়৷ > x সেখ আন্দু ২৬৩ ------- - -- তাহাতেই দুইজনে বসিল । ভবতারণ পান আনিতে ঘরে চুকিল, আন্দু বলিল, “বউমা কি ঘরে আছেন ?” ভবতারণ গৃহমধ্য হইতে উত্তর দিল “হা, শাশুড়িকে কুর্নিশ করবে না কি ?" - আন্দু হাসিল, বলিল "না, আমার পৈত্রিক বাসস্থান চব্বিশ পরগণা, আমি চব্বিশ পরগণার লোকেদের প্রণাম করতে জানি,—” আন্দু চৌকাঠের উপর মুষ্টি রাখিয়া তাহাতে মাথা ঠেকাইল । ভবতারণ গৃহমধ্য হইতে বলিল “তোমার শাশুড়ি জিজ্ঞাসা কচ্ছে, কি বলে আশীৰ্ব্বাদ করব? বিয়ে হয়েছে কি?” আন্দু বলিল “নাম, বিয়েটুকু বাদ দিয়ে যা খুলী তাই বলে আশীৰ্ব্বাদ করুন।" ভবতারণ বলিল “আশীৰ্ব্বাদ কচ্ছে তুমি বুদ্ধিমান, জ্ঞানবান, চরিত্রবান "মাহুষ' হও,—" - আন্দু পুনরায় নত হইয়া বলিল “মার আশীৰ্ব্বাদ সফল হোক ।" * ভবতারণ পান লইয়। হাসিতে হাসিতে বাহিরে আসিল, বলিল "শাশুড়ি জামাইকে প্রতিনমস্কার কচ্ছে, কিছু আশীৰ্ব্বাদ কর,—বল সাধা স্বরে বাধা বোল,—চুপ কেন, বল—ছেলে হোক ৷” - আন্দু বলিল "ছ। ঐ আশীৰ্ব্বাদই মেয়েদের শ্রেষ্ঠ আশীৰ্ব্বাদ । কিন্তু এখন নয়, ওঁর বয়স কত ?” “¢éीक"" * “তবে আমি এরই মধ্যে ছেলে হবার আহাম্মুখী আশীধ্বাদ করব না। ছেলে মাহুষের ছেলে । সে আশীৰ্ব্বাদ নয়, অভিশাপ |—আমি ভগবানের নামে প্রার্থনা করছি নিজের আগে মাহুষ হোন,—ছেলেকে আগে মাহুষ’ করবার ক্ষমতা হোক, তার পর যেন হয়, আরো বছর পাচ ছয় পরে।” - - ভবতারণ প্রত মুখে তাহার পিঠ ঠুকিয়া বলিল “ঠিক কথা! বুদ্ধিমান জামাই বটে”—তাহার পর সহসা বলিল "ভাল কথা মনে পড়েছে আন্দু, সেদিন আখড়ায় শুনছিলুম, তুমি নাকি পন্টনে ঢোক্বার চেষ্টা চরিত্র করছ?—” আন্দু অপ্রভিত হইয়া হাসিল, তাহার পর মুখ তুলিয়া মৃদুস্বরে স্বধাইল, "কাজটা কি মন্দ ?—” -