পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬8 উৎসাহিত ভাবে ভবতারণ বলিল, “খুব ভাল, পল্টনের কাজ –সাহসের চর্চ, শক্তির চর্চা, উদ্যমের চর্চা –বেশ কাছ তুমি চেষ্টা কর—তোমার কাজে আমার সম্পূর্ণ সহানুভূতি আছে। জীবনের সঙ্গে মরণের ঝগড়া বরাবরই চলছে।—যুদ্ধ!—সে না হয় জীয়ন্ত মরণের সঙ্গে লড়াই – কিন্তু তাতে কতখানি তেজস্বিত, কতখানি নির্ভীকতার উদ্বোধন, সেটাও ভেবে দেখা উচিত ; শুধু মরণের ভয়ে সমস্ত জীবনটা কাবু করে রাখা ঠিক নয়।" উত্তেজনার আবেগে ভবতারণের কণ্ঠস্বর ক্রমে উচ্চে উঠিতেছিল, আন্দু মৃদু হাসে বলিল “একটু আস্তে–মায়ের ওখানে রয়েছেন—” ভবতারণ হাসিয়া বলিল, "মিছে নয়। ওরা শুনলে এখনি পাছড়িয়ে কাদতে বস্বেন। দেখবে একটু বগড় করুব—” ভবতারণ উঠিতেছিল, আলু অসহিষ্ণুভাবে তাহার হাত ধরিয়া বসাইল, বলিল “আঃ কি কর, মেয়েমহলে বীরত্ব ফলিয়ে ছেলেমামুখী করতে হবে না।". ভবতারণ সহাস্যে বলিল "ঐ দেখ, বাঙ্গালীর ছেলে, জাতীয় পৌরুষ কি ভুলতে পারি, অভ্যাসের দোষে মুখের আম্ফালনটা মেয়েমহলেই বেশী রাষ্ট্র কর্তে ইচ্ছে হয়!" আন্দু মৃদুস্বরে বলিল, “পুরুষত্বের সাধনা চাই, মন্দ অভ্যাস জয় করতে হবে ।” - ভবতারণ বলিল “এ কর, ও কর, তা কর, বলবার লোক ঢের পাচ্ছি, কিন্তু করবার শক্তি যে খুঁজে পাচ্ছি না।" ভবতারণ ক্রীড়াচ্ছলে আন্দুর হাতে হাত দিয়া প্যাচ লড়িতে লাগিল। কিছু বলিল না। আন্দু উপস্থিত প্রসঙ্গ চাপ দিয়া বলিল “আচ্ছ ভাল কথা, আমাদের আখড়ায় একটু গোলমাল চলছে, আখড়ার নামে একটা বদনাম উঠেছে, শুনেছ ?” ভবতারণ বলিল “সে ত শুনলুম, ঐ লক্ষ্মীছাড়। লছমী ভকতকে নিয়ে যত গোল বেঁধেছে,—” আন্দু ক্ষণেক নীরবে রহিল, তাহার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া দুঃখিতভাবে বলিল "এঃ! ছি ছি ছি! লছমী ভকত-আমাদের চেয়ে ছেলেমাস্থ্য, বেচার এই বয়েসে এমন করে উচ্ছন্ন গেল, ভারি আপশোধের কথা। সত্যি কথা বলছি, তার ছেলেমামুখী রঙ্গ দেখে আমি তার ওপর প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ ു. এত খুলী ছিলুম, যে, বলতে পারি না, আমি নিজের ভাইয়ের । - মত তাকে ভালবাসতুম। আহা, হতভাগা এমন করে বয়ে । গেল।” ভবতারণ বলিল “বাপের পয়সা আছে, বড়লোকের ছেলে—” - সকাতরভাবে আন্দু বলিল “আহা ও যদি বুেখা পড়৷ শিখে সচ্চরিত্র হত তা হলে কত উপকারে লাগত!-ওকে নষ্ট হতে দেওয়া হবে না। —” “ওকে শোধরায় কার সাধ্য ?” "কেন, তোমার, আমার । নিতে হবে ।” - ভবতারণ বলিল “ও সব আমার চেয়ে তোমার মাথায় কিন্তু পরিষ্কার খেলে আন্দু, ওসব বিষয়ের ভার তুমি নাও" আন্দু হাসিল, “আমি যে অস্থিত-পঞ্চানন, ভাগলপুরের অন্নজল যে কোন মুহূৰ্ত্তে আমার ফুরিয়ে যাবে, তার ত ঠিক নেই। অবশ্য যতদিন থাকব ততদিন তোমার উ% তোমাকেই এই ভারটি লক্ষ্য আছি, কিন্তু তার পরে—” ভবতারণ বিস্ফারিত চক্ষে আব্দুর মুখের দিকে চাহিয়৷ বলিল “আচ্ছ। আন্দু, সত্যি বল ত তোমার জীবনের লক্ষ্যটা কি ?” "আমার জীবনের লক্ষ্য ।”—শান্তভাবে হাসিয়া আঙ্গু বলিল “আমার জীবনের লক্ষ্য ?—সকলের সঙ্গে আমার জীবন জড়িয়ে রয়েছে, সকলের শুভ ভিন্ন আমার শুভ নাই, এই মোট ধারণাটা মনের মধ্যে পুষে ভগবানের নাম নিয়ে সকল ভাল চেষ্টায় হাত দেবে, তার পর ঈশ্বরের ইচ্ছা!—“ ভবতারণ হাসিয়া বলিল “গাড়ী চালান, গুলি চালান তোমার চোখে একই কথা,—আচ্ছ একটা ছেড়ে আরএকটায় ঝুঁক্‌ছ কেন তবে ?” “দুটি মতলবে । গুলির নামে সকলেরই একটা গুরুতর আতঙ্ক আছে, অনেকে ইচ্ছা সত্বেও তাই এ কাজে এগুতে পারে না। আমার কেউ কোথাও নাই, কাজেই নির্ভাবনা, সুতরাং গুলিটা ঠিক আমারই উপযুক্ত—" একটু হাসিয়া বলিল “আর-এক কথা,—আমার চাকরীটির একটি বেকার উমেদার জুটেছে, সে এখানকারই বাসিন্দা, মা আছে, স্ত্রী আছে, ছেলেপুলে আছে, সুতরাং এইখানেই [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড | ২য় সংখ্যা ] সেখ আন্দু • ২৬৫ സ്.സി.സ~~സഹ ബസ്സ്പ് একটি কাজ পেলে তার ভারি উপকার হয়, তাই থস বার চেষ্টায় আছি।” "কে লোকটা ?” "আখড়ার পিয়ারী সাহেব।” "তোমার মুনীব তোমায় ছাড় বেন ?" "ন। ছাড়েন, নিজেই খসব ।” ভবতারণ চুপ। স্থির দৃষ্টিতে মুগ্ধ নয়নে আব্দুর গৰ্ব্বলেশশূন্য সরল হাস্যস্মিত মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। আন্দু উঠিয় দাড়াইল, “আমি তবে আসি, অনেক বেলা হয়েছে,-” আন্দু স্ত্রীলোকদের পুনরায় প্রণাম করিয়া বিদায় লইল। ভবতারণ দ্বার পর্য্যন্ত আসিয় তাহাকে আলিঙ্গন করিল, ক্ষুন্নভাবে বলিল, “আন্দু, তুমি চলে যাবে শুনে মনটা ভারিদমে গেল।” আন্দু কোমল হাস্তে বলিল "ভালবাসা কি চোথে ? ভালবাসা প্রাণে ।” রাস্তায় নামিয়া চাদরে মাথা ঢাকিয়া, রৌদ্রে ঝলসিত দ্বিপ্রহরের পথ অতিবাহন করিতে করিতে আন্দু মনের আনন্দে গান ধরিল,— "নয়নের নেশা নহে ভালবাসা—” ( t ) কলহপীড়াক্রাস্ত ব্যক্তির স্বভাব, সে বাহিরে কাহারে সহিত কলহের কোন উপকরণ খুজিয়া একান্ত না পাইলে বাতাসকে ধরিয়া ছিদ্র জিয়া দ্বন্দ্বে প্রবৃত্ত হয় ; কেহ শুহক , ন শুমুক, ব্যাধি বিকারের তাড়নায়, তাহাকে অন্তত: ঐটুকু করিতেই হইবে, ন হইলে নিস্তার নাই। আমাদের জীবনের অতৃপ্তি-রাগিণীর স্বরও সেই ভাবে বাধা। তাহার সহস্র মুখেও শাস্তি নাই, সহস্ৰ সৌভাগ্যেও স্বস্তি নাই,— তাহার জগতে সবই আছে, নাই শুধু সন্তোষ । বিকালে চৌধুরী-সাহেব নিজের বসিবার ঘরে চটপায়ে ইজের পরিয়া গ্রীষ্মাধিকা-হেতু অনাবৃত দেহে কোঁচে বসিয়া নর্থী দেখিতেছিলেন । পিছনে দাড়াইয়া একজন ধানসাম৷ হাতপাথায় বাতাস করিতেছিল। এমন সময় লতিকার পশ্চাতে বৈকালিক ডাক বিলি হইয়া গিয়াছিল, উভয়েই চিঠির তদন্তুে আসিয়াছে। - জ্যোংস্কা আসিয়া ঘরে ঢুকিল । সোনার চশমার ভিতর হইতে চক্ষু তুলিয়। উভয়কে দেখিয়া চৌধুরীসাহেব নীটা পাশে রাখিয়া কোঁচে কনুইয়ের ভর দিয়া সোজা হইয়া বসিলেন, সাদরে বলিলেন - "এস মা এস, কেমন আছ ? কোন কষ্ট হয় নি ত?--” লতিকার দিকে চাহিয়া বলিলেন "কই মা, তোমরা আজ বেড়াতে যাওনি ?” লতিক অপ্রসন্ন মুথে সংক্ষিপ্তভাবে বলিল “না।” চৌধুরীসাহেব পাশের বেতের চেয়ারটা টানিয়া জ্যোৎস্নাকে ধ্যগ্রভাবে বলিলেন “বস মা বস,—”. থানসামাকে বলিলেন "ওরে ওটা থাক্‌, বড় পাখাটা টান।” পাথা চলিতে লাগিল, জ্যোংস্ক নম্রভাবে আসন গ্রহণ করিল। লতিকা নিতাস্ত উদাসীনভাবে টেবিলের কাছে চেয়ারে বসিয়া দাতে আঙ্গুল কামড়াইতে লাগিল। সরলহৃদয় নিযুতকৰ্ম্মচিন্তাশীল চৌধুরীসাহেব, তাহার সে ভাববৈলক্ষণ্য বুঝিতে পারিলেন না, আপন মনে এদিক ওদিক কথাবাৰ্ত্ত কহিতে, লাগিলেন। লতিকা কথা কহিল না, জ্যোৎস্ব মৃদুভাবে উত্তর প্রত্যুত্তর দিতে লাগিল। হঠাৎ অন্য কথার মাঝখানে লতিকা অসহিষ্ণুভাবে জিজ্ঞাসা করিল—“বাবা, আমাদের চিঠিপত্র কিছু এসেছে ?” - চৌধুরীসাহেব হঠাৎ বিস্মৃতি স্মরণে, প্রৌঢ়ত্ব-কুঞ্চিত ললাটে চক্ষু তুলিয়া মাথা উচাইয়া ব্যস্তভাবে বলিলেন “হ। হ। তোমাদের খানকতক চিঠি আছে, ভূলে গেছি, টেবিলে আছে, নাও,—” জ্যোংস্কাকে বলিলেন "তোমার দাদাবাবুর চিঠি পেলুম মা, তিনি দিন চার পাচ পরে মুঙ্গেরে আসবেন, সেখান থেকে তোমায় নিতে এখানে আসবেন লিখেছেন—তোমারও চিঠি আছে দেখে নাও।” চৌধুরীসাহেব নর্থখানা আবার তুলিয়া দেখিতে লাগিলেন । জ্যোংস্ক টেবিলের কাছে আসিয়া দেখিল তাহার পিতার পত্র ; তিনি দাদাবাবু অর্থাৎ জ্যোংস্কার মাতামহের সহিত তাহাকে কলিকাতায় যাইতে আদেশ করিয়াছেন, এবং বন্ধুপরিবারের কুশল জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। লতিকাকে তাহার দুইজন শিক্ষয়িত্রী দুইখান পোষ্টকার্ডে সংক্ষিপ্ত মঙ্গলাশিস প্রেরণ করিয়াছেন, এবং আর-একখানা রঙীন পুরুখাম বোম্বের ছাপ দেওয়া তাহার নামে আসিয়াছে, সেখানা লতিকা মুঠায় পুরিল । সেখান লতিকার