পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানেও তাহার কার্যাকুশলতার জন্য লোকের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতেছেন। আবার বাঙ্গালাদেশে সংবৎসর ধরিয়া মাতৃভাষার যে সেবা অক্লাস্তভাবে চলিতেছে, তাহার ভিতর অনুসন্ধান করিলে এ কথাটি আরও স্পষ্টীকৃত হয়। সত্য বটে, বিজ্ঞানে ডাঃ শ্ৰীযুক্ত জগদীশচন্দ্র বস্ব ও ডাঃ শ্ৰীযুক্ত প্রফুল্লচন্দ্র রায়, দর্শনে ডাঃ শ্ৰীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ নীল ও ইতিহাসে শ্ৰীযুক্ত যদুনাথ সরকার ও শ্ৰীযুক্ত রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি বিশেষজ্ঞগণ ইংরেজী ভাষা অবলম্বন করিয়া নিজেদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও মৌলিক গবেষণার ফল প্রচার করিয়াছেন, কিন্তু তথাপি তাহারা মাতৃভাষাকে একেবারে বঞ্চিত করেন নাই বা করিবেন না, এরূপ আশা করা যাইতে পারে। তাহাদিগের আবিষ্কৃত তথ্যগুলি আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্র ইউরোপের পণ্ডিতমণ্ডলীর গোচর করিবার জন্য তাহাদিগকে বাধা হইয়া ইংরেজী ভাষার শরণ লইতে হইয়াছে। ইউরোপেও বহুকাল পর্য্যন্ত ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি জাতিকে দর্শন বিজ্ঞান গণিত ইত্যাদি দুরূহ শাস্ত্রের তথ্য পণ্ডিতসমাজের নিকট প্রচারের উদ্দেশ্যে ল্যাটিন ভাষার আশ্রয় লইতে হইত। বেকন নিউটন প্রভৃতি তাহার উদাহরণ। ভেকার্ট লক প্রভৃতি মনীষিগণ এই নিয়ম রহিত করেন। এখন সাধারণতঃ প্রত্যেক পণ্ডিত (savant ) নিজের দেশ-ভাষায় তথ্য প্রচার করেন, অচিরেই তাহ অন্যান্য দেশ-ভাষায় অনূদিত হয়। বাঙ্গালাভাষার স্বদর ভবিষ্যতে সে দিন আসিবে কি না, জানি না। এখন পর্য্যস্ত নিশার স্বপন সম এ বারতা'। যাহা হউক, সাক্ষাং সম্পর্কে নিজেদের আবিষ্কৃত তথ্য বাঙ্গালী ভাষায় প্রচার না করিলেও, এই শিক্ষক কয়েকজন জ্ঞান-গবেষণার উজ্জল দৃষ্টান্ত ও দেশের গৌরবস্তম্ভ। যে-সকল শিক্ষক নিজেদের গভীর চিস্তার ফল বাঙ্গাল ভাষায় প্রকাশ করিতেছেন, তাহাদিগের মধ্যে বিজ্ঞানে ঐযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, শ্ৰীযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, শ্ৰীযুক্ত অপূৰ্ব্বচন্দ্র দত্ত, শ্ৰীযুক্ত পঞ্চানন নিয়োগ ও ঐযুক্ত জগদানন্দ রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞানে ইহার বিশেষজ্ঞ, কিন্তু বিজ্ঞানের বাহিরেও প্রথম দুইজনের কৃতিত্ব অনন্যসাধারণ। ত্ৰিবেদী মহাশয়ের দার্শনিক তত্বপূর্ণ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড জিজ্ঞাসা কৰ্ম্মকথা প্রভৃতি পুস্তক সম্বন্ধে মত প্রকাশ করা: আমার মত অনধিকারীর পক্ষে দৃষ্টত মাত্র । তবে এই টুকু বলিতে পারি যে, তিনি রোগশয্যায় পড়িয়াও প্রলাপ বকেন না, পরস্তু সে অবস্থায়ও তিনি যেসব তত্বের আলোচনা করিয়াছেন, সেই বিচিত্র প্রসঙ্গ অনেকের সুস্থশরীরে গোসমেজাজে বাহাল তবিয়তে লিখিত গ্ৰস্থাদি অপেক্ষ। অধিকতর মূল্যবান। ভাষাতত্ত্ব ও অভিধানের ক্ষেত্রে রায় বিদানিধি মহাশয়ের কীৰ্ত্তি অতুলনীয়। যাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুভাষাবিং বলিয়া বাহাদুরী লইয়াছেন, তাহা রাও ইহার অতুষ্ঠিত কাৰ্য্যের সহিত নিজেদের ক্ষমতার তুলনা করিয়া লজ্জায় অধোবদন হইবেন । ইতিহাসের ক্ষেত্রে শ্ৰীযুক্ত কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্ৰীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ ও শ্ৰীযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক এই শিক্ষকত্রয়ের গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য । অন্যতম শিক্ষক শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ সমাদারের অনুষ্ঠিত বিরাট ব্যাপারও তাহার দক্ষতার পরিচায়ক। ধৰ্ম্মালোচনা ও দার্শনিক আলোচনায় ৬ নীলকণ্ঠ মজুমদার, ৬কুষ্ণবিহারী সেন, ৬ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, মইমহোপাধ্যায় শ্রযুক্ত প্রমথনাথ তর্কভূষণ, শ্ৰীযুক্ত দ্বিজদাস দত্ত, শ্ৰীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ( শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ-কথামৃত-লেখক), শ্ৰীযুক্ত সীতানাথ তত্ত্বভূষণ, শ্ৰীযুক্ত মহেশচন্দ্র ঘোষ ও প্রযুক্ত খগেন্দ্রনাথ মিত্র প্রভৃতি শিক্ষকগণ কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন। স্বকুমার সাহিত্যের ক্ষেত্রেও শেষোক্ত শিক্ষকের কৃতিত্ব উল্লেখযোগ্য। প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে মহামহোপাধ্যায় ত্রযুক্ত সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ, শ্ৰীযুক্ত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ, শ্ৰীযুক্ত শীতলচন্দ্র চক্রবর্তী বিদ্যানিধি প্রভৃতি শিক্ষকগণের কৃতিত্ব সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পণ্ডিতরাজ মহামহোপাধ্যায় ঐযুক্ত যাদবেশ্বর তর্করত্ন, মহামহোপাধ্যায় শ্ৰীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত রাজেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ, পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত শরচ্চন্ত্র শাস্ত্রী, পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত বিধুশেখর শাস্ত্রী, শ্ৰীযুক্ত বিনয়কুমার সরকার, শ্ৰীযুক্ত রাধাকমল মুখোপাধ্যায়, প্রযুক্ত বিপিন বিহারী গুপ্ত, শ্ৰীযুক্ত রসিকলাল রায়, বৈজ্ঞানিক শ্ৰীযুক্ত নিবারণচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য ও শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যা প্রভৃতি শিক্ষকগণ পুস্তক ও প্রবন্ধসম্ভারে মাতৃভাষা-মন্দিরের নানা কক্ষ শুশোভিত করিতেছেন। শিক্ষক-সম্প্রদায়ের | ২য় সংখ্যা ] মধ্যে তিন জন नीनं কবি-প্রাক্ত করুণানিধান "দ্যোপাধ্যায়, শ্ৰীযুক্ত কালিদাস রায় ও শ্ৰীযুক্ত কুমুদরঞ্জন মল্পিক-বীণার ঝঙ্কারে আমাদের মন মুগ্ধ করিয়াছেন। এতদ্ভিন্ন, মাসিক পত্র-পত্রিকাগুলি পাঠ করিলে বহু শিক্ষাবিভাগের লোকের লিপিকুশলতার পরিচয় পাওয়া যায়। নিঃশেষ করিয়৷ উদাহরণ দিতে হইলে প্রবন্ধটি সুদীর্ঘ তালিকায় পরিণত হয়। মাসিকপত্র আজকালকার সাহিত্যচর্চার প্রধান ক্ষেত্র। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, আজকাল মাসিকপত্রের লেখকের মধ্যে বহু শিক্ষক দেখা যায়। কয়েকখানি মাসিকপত্রের সম্পাদকও শিক্ষক-শ্রেণীর লোক। দৃষ্টান্তস্থলে (ঢাকা রিভিউ ও ) সন্মিলন, প্রতিভ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, সঙ্কল্প ও অধুনালুপ্ত বাণী এবং নবপর্য্যায়ের উপাসনার নাম কর। যাইতে পারে। আজকাল কলেজে কলেজে যে ইংরেজী-বাঙ্গাল ম্যাগাজিনের উদ্ভব হইতেছে, তাহারও অধিকাংশের পরিচালক শিক্ষকবর্গ। 'প্রবাসী'র স্বযোগ্য সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় অনেক দিন উভয় কার্য্য একত্র চালাইয়াছেন। মাসিকপত্রের সম্পাদকদিগের মধ্যে কেহ কেহ পূৰ্ব্বে শিক্ষকতা-কার্য্যে ব্রতী ছিলেন, যথা—শ্ৰযুক্ত জলধর সেন, রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত যদুনাথ মজুমদার, শ্ৰীযুক্ত রামদয়াল মজুমদার। তবে এই অজুহাতে তাহাদিগকে দলে টানিয়া দল পুষ্ট করিতে চাহি ন । এ স্থলে ইহা বলাও অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, ‘বাঙ্গাল ভাষা ও সাহিত্য নামক অমূল্য গ্রন্থের প্রণেতা রায় সাহেব ঐযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন ও মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনচরিত' নামক উপাদেয় গ্রন্থের রচয়িত শ্ৰীযুক্ত যোগেন্দ্রনাথ বস্থ তত্তং গ্রন্থের প্রথম প্রণয়নকালে শিক্ষকতা-কার্যো ব্রতী ছিলেন। দীনেশ বাৰু অধুনা আবার শিক্ষকতা-বৃত্তিই অবলম্বন করিয়াছেন। পক্ষাস্তরে খ্যাতনামা নাটককার ৪ আখ্যায়িকাকার শ্ৰীযুক্ত ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ কয়েক বৎসর শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু অনেকদিন হইল উক্ত বৃত্তি পরিত্যাগ করিয়াছেন। অতএব তাহাকে এই শ্রেণীভূক্ত করা সঙ্গত বিবেচনা করি না। শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েক বৎসর হইতে আদর্শ শিক্ষালয় স্থাপন করিয়া শিক্ষাদান ও শিক্ষাপরিচালন-কার্য্যে ব্ৰতী হইয়াছেন। কিন্তু শিক্ষকের অাশা ও আশঙ্ক। --SumitaBot (আলাপ) ০৮:১২, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) ২৭৩ SS MSMSMSMSMSMSMS SS তথাপি তাহাকেও শিক্ষক-শ্রেণীভুক্ত করিতে সাহসী নহি । এতক্ষণ পর্য্যস্ত বৰ্ত্তমান অবস্থার কথা বলিলাম। - ইংরেজের আমলে যখন নূতন প্রণালীর বাঙ্গালাভাষা ও সাহিত্য গড়িয়া উঠিতে লাগিল, তখনও শিক্ষকশ্রেণীর মধ্যে মাতৃভাষায় স্থলেখকের অভাব ছিল না। yমৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, vঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ৮ মদনমোহন তর্কালঙ্কার, vতারাশঙ্কর তর্করত্ন, yহরিনাথ স্বায়রত্ন, ৬ রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভরামগতি স্থায়রত্ন, ৮দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, yদ্বারকানাথ অধিকারী প্রভৃতি যাহারা পণ্ডিতী বাঙ্গালার স্বষ্টি করিয়া এই নবপ্রণালীর সাহিত্যের শ্রষ্ট ও পোষ্ট হইলেন, তাহাদিগের সকলেই শিক্ষক ছিলেন। এই ভাষাগঠন-কার্ঘ্যে ৬কুষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্যও উল্লেখযোগ্য । তিনিও শিক্ষক ছিলেন। নাটক-রচয়িত। ৬ রামনারায়ণ তর্করত্নও শিক্ষক ছিলেন। সেকালে ৮ভূদেব মুখোপাধ্যায়, vরাজনারায়ণ বস্ব ও ৬অক্ষয়কুমার দত্ত চিন্তাশীলতার ও মৌলিকতার জন্য প্রথিতনাম।। ৮ভূদেৰ বাবু প্রথমে শিক্ষক ও পরে শিক্ষাপরিদর্শক ছিলেন। vরাজনারায়ণ বাবু বরাবর শিক্ষক ছিলেন। yঅক্ষয়কুমার দত্তও শিক্ষক ছিলেন। ইহাদের বয়ঃকনিষ্ঠ সম্বন্ধ-নির্ণয় নামক মূল্যবান গ্রন্থের রচয়িত পণ্ডিত ঐযুক্ত লালমোহন বিদ্যানিধিও শিক্ষক ছিলেন । এ সময়ে অনেক শিক্ষক ( ও শিক্ষণপরিদর্শক) বিদ্যালয়পাঠ্য পুস্তকরচনায় শক্তি নিয়োগ করিয়াছিলেন, যথা স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়, ৮ভূদেব মুখোপাধ্যায়, ৬অক্ষয়কুমার দত্ত, ৬ মদনমোহন তর্কালঙ্কার, wরামগতি ন্যায়রত্ন, vহরিনাথ ন্যায়রত্ব, ভরাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, Vরাধিকাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, ৬প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী ও ঐযুক্ত ব্ৰহ্মমোহন মল্লিক। আধুনিক পাঠক বলিবেন, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন উচ্চ অঙ্গের কার্য্য নহে। কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, নবপ্রবর্তিত শিক্ষাপ্রণালীর সেই প্রথম অবস্থায় আদর্শের অভাবে এই শ্রেণীর পুস্তক-রচনা কঠিন কার্য ছিল । স্বত্তরাং বিদ্যাসাগর-ভূদেব-অক্ষয়কুমারের ন্যায় মনীষিগণকেও এই কার্য্যে ব্ৰতী হইতে হইয়াছিল। নবাবঙ্গের কবিগুরু মাইকেল মধুসূদন দত্ত এক সময়ে