পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११७ এমন দৃষ্টাস্ত রহিয়াছে যে দারিদ্র্যের পেষণে, অন্নচিন্ত৷ চমৎকারার দাপটেও প্রতিভা নিভিয়া যায় নাই, বরং আরও দীপ্ততর হইয়া জলিয়া উঠিয়াছে ; অথবা প্রতিভাশালী ব্যক্তি গুরু কৰ্ম্মভারে অবসর হইয় পড়েন নাই, নিজের অবলম্বিত বৃত্তির সকল কৰ্ত্তব্য শেষ করিয়াও সাহিত্যস্বইতে বা মৌলিক তথ্যাবিষ্কারে অতুলকীৰ্ত্তি স্থাপন করিস্বাছেন। বিজ্ঞান-জগতে জগদীশচন্দ্ৰ-প্ৰফুল্লচন্দ্র, সাহিত্য জগতে বঙ্কিমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র প্রভৃতি আমাদের দেশেও সপ্রমাণ করিয়াছেন, যে, প্রতিভা থাকিলে নিজের অবলম্বিত বৃত্তির সকল কৰ্ত্তব্য যোগ্যতার সহিত সম্পন্ন করিয়াও অন্যক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করা যায়। কিন্তু প্রতিভার কথা স্বতন্ত্র। আর অনেক সময়ে প্রতিকূল অবস্থার জন্য প্রতিভার সম্যক ক্ষরণ হয় নাই, ইহাও জগতের ইতিহাসে ঘটে নাই এমন নহে। মাহ হউক সাধারণতঃ, পূৰ্ব্বনিদিষ্ট কারণপরম্পরাই যে বহু শিক্ষকের স্বাধীনচিস্তার ও সাধনার পথের অন্তরায়, ইহা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে। এইজন্য আমার মনে হয়—যদি প্রকৃতপক্ষে দেশে বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক গবেষণা ও সাহিতাহটির পথ সুগম করিতে হয়, তবে শিক্ষকশ্রেণীর মধ্যে এক সম্প্রদায়কে classএ অর্থাৎ অবকাশভোগী সম্প্রদায়ে পরিণত করিতে হইবে। যুগপং শিক্ষকত৷ এবং গবেষণা ও সাহিত্য-স্থষ্টির কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিলে, অধিকাংশ স্থলে হয় শিক্ষাদানের, না হয় স্বাধীনচিন্তার ক্ষতি হইবেই। হয় নিয়মিত শিক্ষাদানে অবহেলা, অবসাদ, শৈথিলা, অমনোযোগ আসিবে , না হয় গবেষণাকার্য্যে পদে পদে বাধা বিঘ্ন ব্যাঘাত ঘটবে। কচিং সব্যসাচী মিলিতে পারে, কিন্তু ইহাই সাধারণ নিয়ম। এ অবস্থায় দেশে প্রকৃত জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বা বাহিরে Endowed Research Chairs অর্থাং গধেষণা-বৃত্তি স্থাপন করা সৰ্ব্বতোভাবে কৰ্ত্তব্য। অবশ্য এগুলি যে শিক্ষকশ্রেণীর একচেটিয়া হইবে এমন কথা বলিতেছি না। এরূপ প্রতিষ্ঠান দেশে থাকিলে যে পূৰ্ব্ব আমলে এরাঞ্জা রাজেন্দ্রলাল মিত্র, yপণ্ডিত রজনীকান্ত leisured প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ MSMMSMMSMMSMSMS ーへヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘッ গুপ্ত (সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস প্রণেতা) এবং অধুনা ঐক্ত নগেন্দ্রনাথ বস্থ প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব ও রায় সাহেব ঐযুক্ত । দীনেশচন্দ্র সেনের ন্যায় মনীষিবৃন্দ অপেক্ষাকৃত অল্পায়াসে তাহাদিগের অমূল্য তথ্যগুলি আবিষ্কার ও প্রচার করিতে পারিতেন, তাহা বলা বাহুল্য। অবশু, ইহা অস্বীকার্য্য নহে যে মানবের চিন্তাশক্তি ও কাৰ্য্যকরীশক্তি চিররহস্যময় । দারিদ্র্যের ঘোর অন্ধকারের মধ্যেও অনেকে গবেষণা প্রভৃতির দ্বার যশস্বী হইয়াছেন; আবার গ্রাসাচ্ছাদনের অভাব নাই, অথও অবসর আছে, যৌবনে শিক্ষাও কায্যে প্রণোদনার অভাব হয় নাই, অথচ জগতে স্থায়ী কাৰ্য্য করিতে পারেন নাই, এরূপ সাহিত্যসেবীও দেখা যায়। কিন্তু তথাপি প্রস্তাবিত উপায় অবলম্বন করিলে যে মোটের উপর বেশী কাজ হইবে, ইহা নি:সংশয়ে বলা যাইতে পারে । সাহিত্য-সন্মিলন উপলক্ষে আমার যেসকল চিন্তার উদয় হইয়াছে, পাঠক-সমাজে তাহ উপস্থাপিত করিলাম। চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ এতৎসম্বন্ধে আলোচনা করিলে সুখী হইব । ইতি মনে শ্ৰীললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যাম্ব। মহাসমর ( আদি হইতে উদযোগ পৰ্ব্ব পর্য্যস্ত ) ইউরোপের মহাসমরের সকল কথা লইয়া ভবিষ্যতে বৃহদায়তন সংহিত রচিত হইবে ; কেহ কেহ পড়িবেন, কেহ বা পড়িবেন না। আমরা এই সমরের আদি হইতে উদযোগ পৰ্ব্ব পর্য্যস্ত কথাগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতেছি। ইউরোপীয় সভ্যতার প্রকৃতি ও ধাচ বুঝিবার পক্ষে এই বিবরণ কথঞ্চিং উপযোগী হইবে। আলসেস ও লোরেইন ঘটিত কপী । মোটামোটি সকল লোকেই জানে, যে, ফরাসির যখন ১৮৭০ খ্ৰীষ্টাব্দে জৰ্ম্মানির সহিত যুদ্ধে হারিয়া যায়, তখন জৰ্ম্মানরা ফরাসিদেশের আলসেস্ ও লোরেইন নামক উপপ্রদেশ দখল করিয়াছিল। ঐ উপপ্রদেশ পূৰ্ব্বকালে জর্শনরাজ্যের পশ্চিম সীমাস্ত-রাজ্যই ছিল । ফরাসিদেশের [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড I ২য় সংখ্যা] ইউরোপীয় মহাসমর রাজা চতুর্দশ লুই, ছলে বলে কৌশলে ঐ প্রদেশ আত্মসাৎ রিয়াছিলেন, এবং সেইদিন হইতে ১৮৭০ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যস্ত ফরাসির দখলেই ছিল। উপপ্রদেশের লোকেরা জৰ্ম্মানির অধিকারভূক্ত থাকিবার সময়েও রোমক এবং ফরাসিস, সভ্যতা অবলম্বন করিয়া বাড়িয়াছিল, কাজেই ফরাসির দিকেই তাহদের সহানুভূতি অধিক ছিল, এবং তাহারা জধান-প্রভাব হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বপেই বসবাস করিতেছিল। যখন প্রমিয়ার সহিত অন্যান্য খণ্ড খণ্ড রাজ্য মিলাইয়া জৰ্ম্মানি বলশালী হইতে চেষ্টা করিতেছিল, তখন রাজ্যের পশ্চিম সীমান্তে আলসেস, লোরেইন না থাকায়, দেশের একটি প্রাকৃতিক রক্ষা-স্তস্তের অভাব অনুভূত হইতেছিল। ফরাসিরাও সীমাস্তে পাহাড় প্রভৃতির কোনও প্রাকৃতিক বাধা না থাকায়, হুবিধা পাইয়া ক্রমাগত জৰ্ম্মানিকে বিধ্বস্ত করিতে ছাড়ে নাই। নামজাদা নেপোলিয়েন যাহা করিবার তাহা তো করিয়াছিলেন, তাহার পরেও বহু বংসর ধরিয়া জৰ্ম্মানি ফরাসিস, উপদ্রব সহিতেছিল। মন্ত্রীকুলতিলক জগৎপ্রসিদ্ধ বিসমার্ক এবং মণ্টকে যখন জৰ্ম্মানির বিশাল প্রসার বাড়াইয়া সুদৃঢ় একতা স্থাপন করিয়াছিলেন, তখন নিৰ্ভয়ে ফরাসিসদিগকে দণ্ডিত করিয়া আলসেস ও লোরেইন অধিকার করিয়াছিলেন । জৰ্ম্মানি যদি কেবল বিচ্ছিন্ন উপপ্রদেশটুকুই দখলে আনিত, তাহা হইলে তেমন গোল বাধিত না। ঐ উপপ্রদেশের সহিত খাটি ফরাসিরাজ্যের অংশ লইতেও ছাড়ে নাই ; সমগ্র মেট্জ (Metz) জেল, জন্মে কৰ্ম্মে ও ধর্শ্বে ফরাসিস। যুদ্ধজয়ের সময় ফরাসির বেলফেটি নগরও জ্বধানি দখল করিয়াছিল ; কিন্তু টিয়ারের ( M. Thiers) করুণ আবেদনে জৰ্ম্মানির মন গলিল বলিয়া বেলফোর্ট পরিত্যক্ত হইল। স্ববুদ্ধি বিসমার্ক মেট্ৰজ, দখল করিতেও কুষ্ঠিত ছিলেন ; কিন্তু স্বয়ং সম্রাট হইতে আরম্ভ করিয়া লোকসাধারণের সকলেই জয়স্তম্ভস্বরূপ ঐটুকু রাখিবার জন্য জিদ করিয়াছিল। তখন যদি সম্রাট বিসমার্কের কথা শুনিতেন, তাহ হইলে হয়তো বা একালের নূতন মহাভারত রচিত হইত না। নবলব্ধ উপপ্রদেশ যে স্বশাসিত হয় নাই তাহার অনেক পরিচয় আছে। কেবল মেট্‌জের অধিবাসী নয়, অনেক আলসেটিয়ান এবং লোরেইনার আপ २.११ নাদের ডিটামাটি ছাড়িয়া ক্রমাগত ফরাসিদৈশের অপ্ৰিয় লইতেছিল। উহাদের জন্য যদি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা হইত ; তবে জৰ্ম্মনিকে এত ভোগ ভূগিতে হইত না । রোমক-প্রভাবে অর্থাং প্রাচীন প্রথার ঋষ্টিয়ানের গুরু পোপের প্রভাবে জৰ্ম্মানির বিরুদ্ধে যে-সকল বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র হইতেছিল, তাহ অধিকপরিমাণে ফরাসিদেশে এবং বেলজিয়মে হইতেছিল বলিয়া ভূতপূৰ্ব্ব কাইজার এবং বিসমার্কের সন্দেহ ছিল। এই বিদ্রোহ নবলব্ধ উপপ্রদেশেও গোপনে আশ্রয় পাইতেছিল বলিয়া অনেকের বিশ্বাস। এই জন্যই ১৮৭০ সালের সন্ধির কয়েকবৎসর পরেই আবার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে বলিয়া জয়দৃপ্ত জৰ্ম্মানি বিশেষরূপে শাসাইয়াছিল। বিসমার্ক ফরাসিকে স্পষ্ট কথায় বলিয়াছিলেন, যে, তুমি পোপের প্রভাব জীর্ণবস্ত্রের মত দূরে পরিগর কর এবং আমার সাহায্যে বেলজিয়মরাজ্যৰে । দ্বিখণ্ডিত করিয়া তার দক্ষিণ-পশ্চিমভাগ গ্রহণ কর এবং লুপ্ত মেট্জ প্রভৃতির কথা ভুলিয় যাও। ১৮৭৫ খৃষ্টাৰে ষে বেলজিয়ামের সর্বনাশ কবিবার প্রস্তাব উঠিয়াছিল এ কথা ভাল করিয়া বুঝিতে পারিলে উপস্থিত বিগ্রহের একটি সমস্যা পূরণে স্ববিধা হইবে। একদিকে পরাভূত ফ্রান্সকে আবার বিধ্বস্ত করিবার সংবাদ, অন্যদিকে বেলজিয়ম্কে পদদলিত করিয়া, বৃটনপদলাঞ্ছিত সাগর-শাখার উপকূল পৰ্য্যন্ত জৰ্ম্মানির প্রভাববিস্তারের আশঙ্কা ; কাজেই ইংলও বহুবিধ স্বত্বে এবং উপায়ে জৰ্ম্মানিকে জৈত্রযাত্রা হইতে নিরস্ত করিলেন। অতুল্য প্রতিভাশালী নেপোলিয়নের সময় হইতে ফরাসিসেরা প্রতিবেশীর উপর যেরূপ উপদ্রব করিয়া শাস্তিভঙ্গ করিতেছিল, তাহাতে জৰ্ম্মীনির বিপুল একজাতীয়ত্ব এবং ফ্রান্সের পরাভব, মঙ্গলময় বলিয়াই সৰ্ব্বত্র স্বীকৃত হইয়াছিল। কিন্তু বিসমার্কের নবপ্রচারিত নীতি পুষ্টিলাভ করিলে বিষম অমঙ্গল ঘটিত । ইংলও তখন একদিকে রুষিয়ার সহিত এবং অন্যদিকে ফ্রান্সের সহিত মিত্রতা স্থাপনের চেষ্টা করিলেন । ইংলণ্ডও জানিতেন জৰ্ম্মানিও জানিতেন যে বেলজিয়ম্ লইয়া বিবাদ তুলিলে ইংলণ্ডের সহিত জৰ্ম্মানির যুদ্ধ বাধিবে। বিসমার্ক ১৮৭৫ খ্ৰীষ্টাম্বে স্পষ্টই বলিয়াছিলেন, যে, ১৮৩৯