পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ു.**** ------------- মার্ক ইটালীকে কাছে টানিয়া বন্ধু করিলেন, এবং লে যাহাতে ত্রিপলি পাইতে পারে তাহার পস্থা দেখাইয়৷ দিলেন। ইটালী এই উপায়ে জৰ্ম্মানি এবং অষ্টিয়ার সহিত “ত্রিগুণযোগে" (Triple Alliance) যুক্ত হইলেন। এটা হইল শ্রেণীক্রমে বল বাধা, ওস্তাদি রকমের বড়ের চাল । ফ্রান্সের দৃষ্টি যাহাতে আলসেস্ লোরেইনের দিকে না থাকে, তাহার জন্য তাহাকে আফ্রিকার নিকটবর্তী এবং অন্যস্থানের পচা পচা উপনিবেশ লাভের জন্য বিসমার্ক অত্যাশ্চৰ্য্য ক্ষমতার সহিত উৎসাহিত করিয়াছিলেন । ইহার ফলে ১৮৯০ খ্ৰীষ্টাব্দ পর্য্যন্ত সে বেশ ভুলিয়া ছিল ; কিন্তু যখন অনেক পরচাস্তের পর লাভের গুড়ে বালি পড়িল, এবং অনেকেই ম্যালেরিয়া প্রভৃতিতে পীড়িত হইয়া দেশে ফিরিল, তখন গা ঝাড় দিয়া ইংরেজের সহিত মৈত্রী করিল, এবং আলসেস্ লোরেইনের দিকে দৃষ্টি দিল । যদি এই দীর্ঘ অবসরে আলসেস্ লোরেইন স্বশাসিত হইত, তাহা হইলে বিস্মার্কের গজের চালে ফ্রান্স যেরূপ হস্তীমূৰ্খ প্রমাণিত হইয়াছিল, অবস্থাটি সেইরূপই থাকিত। আলসে টিয়ান প্রভৃতির সম্বন্ধে যাহাই হউক, জৰ্ম্মানি কিন্তু এই অবসরে নৌবল কিয়ং পরিমাণে বাড়াইয়াছিল। প্রতিবেশীরা উপনিবেশ লইয়া ব্যস্ত ছিল বলিয় তাহার প্রতি কেহ লক্ষ্য করে নাই। উপনিবেশ সম্বন্ধে আর-একটা বড় রকমের রহস্য আছে। যদি উপনিবেশ করিতে হয় তবে দক্ষিণ আফ্রিকায়ই করিতে হইবে, একথা বিসমার্ক স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন। নৃতত্ত্ববিদেরা সকলেই বলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার উপনিবেশে ইউরোপীয়দিগের বর্ণমালিন্য ঘটে না, বরং সেখানকার নৃতনবংশের লোকেরা দেখিতে অধিকতর সুন্দর হয়। অনেক পূৰ্ব্ব হইতেই বোয়ারের জার্মানির সাহায্যের আশায় ট্রান্সভালে উপনিবেশ বাড়াইতেছিল। ইহাতে যখন ঐ দেশে ইংরেজদের সহিত বোয়ারদের সংঘর্ষণ ঘটিল, তখন বোয়ারদলের লোকেরা স্পষ্টভাবে জৰ্ম্মানিকে আহবান করিয়া বলিয়াছিল যে তাহারা জৰ্ম্মানির রক্ষাধীনে ট্রান্সভালে বাস বাধিতে চায়। নৌবলের অভাবে বিসমার্ক প্রত্যক্ষ সাহায্য দিতে পারেন নাই; কিন্তু ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে মাজুবাহিলের যুদ্ধে ইংরেজ যখন হটিয়া গেলেন, তখন জৰ্ম্মান প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ ছিল। কোন কোন লোক আপনাদের চকচকের দিকটার চমকে, জীবদ্দশায় বেশ বড় লোক বলিয়া গণিত হন। গ্লাড ষ্টোন যে এই শ্রেণীর লোক ছিলেন এবং যথার্থ রাজনীতিজ্ঞ ছিলেন না, তাহা তীক্ষু সমালোচক মেথু আরনল্ড অনেকবার বলিয়াছিলেন। বিসমার্ক যখন 〉bセrS থষ্টাব্দে Angr -pequena &*& &fqzz[A, g«g ইংলণ্ডে একটু গোল উঠিয়াছিল; কিন্তু বিসমার্ক যখন | প্লাড ষ্টোনকে বোকা বানাইয়া, মিসরে জন্মানির যতটুকু যাহা ছিল, তাহা ইংরেজকে দিয়৷ Angra-pequena হইতে আরম্ভ করিয়৷ বহুদূর পর্য্যন্ত স্থান দখল করিয়া লইল এবং লুসিয়ানা উপসাগরের (Luciana Bay) কূলেও অনেক স্থান লাভ করিল। ট্রান্সভালের বোয়ারের যে ইহাতে অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছিল তাহ বলা বাহুল্য। শেষবারকার বোয়ারযুদ্ধ যে কারণে যাহা ঘটিয়াছিল, এবং কি জন্য জৰ্ম্মানি ক্রুগারের নিরস্তর অনুরোধ সত্বেও বোয়ারকে সাহায্য করিতে পারে নাই, সেই-সকল কথার উল্লেখ করিতে পারিলাম না ; জৰ্ম্মানি যে এ কালের সকল যুদ্ধের তলায়ই ছিলেন তাহার ইঙ্গিত মাত্র করিলাম । ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে বিসমার্ক ইংলণ্ডকে হেলিগোলাও দান করিতে অতুরোধ করিলেন এবং সেই সময়কার ইংরেজনীতিজ্ঞদিগের সরলতায় পরে উহা লাভ করিয়৷ জৰ্ম্মানির উত্তরকুল হইতে ইংরেজের দৃষ্টিপাত তিরোহিত করিলেন। ইংলণ্ডের মন্ত্ৰীসভা সে সময়ে রুষিয়াকে দমাইয়া রাখিবার জন্য জৰ্ম্মানির অনেক আবদার মঞ্জুর করিয়াছিলেন ; সেই সুবিধায় দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক স্থলে, এবং ব্রাজিলে জৰ্ম্মানির প্রভাব এবং উপনিবেশ বাড়িয়া গিয়াছিল। ইহার । পরে আর-একটি বড় রকমের ঘটনার উল্লেখ করিতেছি। জৰ্ম্মানির বর্তমান কাইজার ক্ষমতাশালী সুবক্তা এবং লোকপ্রিয়। ইহার চতুরতা যথেষ্ট আছে, কিন্তু বিসমার্কের পর ইহাকে সুমন্ত্রণা দিবার কেই নাই। বিসমার্কের পন্থা অনুসরণ করিয়া চলিলেও, অনেকস্থলে হঠকারিতার পরি" চয় দিয়াছেন। বোয়ারযুদ্ধে ক্রুগারের প্রত্যাশিতরূপে কোন সাহায্য দিতে পারেন নাই; কিন্তু ১৮৯৮ খৃষ্টাৰ হইতে বোয়ারযুদ্ধের গোলমালের শেষ পর্য্যস্ত রণতরীগুলি [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড I প্রভাবের ফলেই গ্লাড ষ্টোনকে মাথা ছেট করিতে হইয়া__ ২য় সংখ্যা ] খুব ভাল করিয়া প্রস্তুত করিয়া ফেলিয়াছিলেন, এবং তীর্থদর্শনের ছুতায় নিজে ১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে পেলেষ্টন গমনের সময় তুরন্ধরাজ্য দিয়া বাগদাদ-রেলপথ নিৰ্ম্মাণের অনুমতিটুকু আবদুল হামিদের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছিলেন। এখন আর গ্লাড ষ্টোনের দিন ছিল না ; চতুর ইংরেজ জৰ্ম্মানির প্রতিপক্ষত পরিষ্কার বুঝিয়া লইলেন। রুষিয়া এ সময়ে একবার আপত্তি করিয়াছিল, কিন্তু কাইজার উইলিয়ম তাহাকে গোপনে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন, যে, রেল প্রস্তুত হইলে তিনি ও রুষিয় পারস্যদেশকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ভাগ করিয়া লইবেন ; এবং তাহাতে ভারতবর্ষের উপরে রুযিয়ার আধিপত্য বাড়িতে পরিবে । রুযিয়া প্রথমত: আহাম্মক বনিয়াছিল বটে, কিন্তু শেষে সকল চাতুরী বুঝিয়া ফেলিয়াছিল। রুষিয়ার জার জন্মানির কূটনীতি আর-এক কারণে বুঝিতে পারিয়াছিলেন। জৰ্ম্মানি যে সৰ্ব্বঘটেই আছেন, এবং একালের সকল বিদ্রোহের তলে তলেই তাহকে পাওয়া যায়, উহ! পূৰ্ব্বে একবার বোয়ারপ্রসঙ্গে বলিয়াছি। পীতজর" নিবারণের জন্য এবং মহাচীনের কূলে বাণিজ্যের স্ববিধার জন্য জৰ্ম্মানি যে রুযিয়াকে জাপানের বিরুদ্ধে ক্ষেপাইয়। তুলিয়াছিল, একথা অল্পদিন পূৰ্ব্বে প্রকাশ পাইয়াছে। রুষ যখন জাপানের কাছে হারিল, তখন রুষ এবং জাপান উভয়েই জৰ্ম্মানির দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া অতি শীঘ্র বন্ধুত্ব স্থাপন করিয়াছিল। এই কারণেই মরকঘটিত বিবাদের সময়, ফ্রান্স ইংলণ্ডের প্রতি অতি ক্রুদ্ধ হইয়াও, পরে রুষিয়ার সহিত মিলিয়। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে ইংলণ্ডের সহিত পাকারকম রাজনৈতিক বন্ধুত্ব স্থাপন করিল। ইহার মধ্যে কীল-কেনালও খুব প্রশস্ত হইয় গেল, জৰ্ম্মানির রণতরীও বাড়িয়া গেল ; কাজেই জৰ্ম্মানি এ-সকল সন্ধি উপেক্ষা করিয়া ইংরেজের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ বাধাইবার অবসর এবং সুবিধা খুজিতে লাগিল। জৰ্ম্মানি ১৯১১ খৃষ্টাব্দে আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমকুলে অগাদির ( Agadir) দখল করিয়া লইলেও যখন ইংলণ্ড কিছু করিল না, তখন সে ইংলণ্ডকে নিৰ্ব্বীৰ্য্য মনে করিয়াছিল। কাইজার উইলিয়ম এবারে নৌকার চাল চালিয়া, কিস্তিমাং করিতে পারিবেন ভাবিয়ছিলেন। ইউরোপীয় মহাসমর షి) AASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS অষ্টিার রাজপরিবারিক হত্যাকাণ্ডের অনেকপূৰ্ব্বে ষে জৰ্ম্মানি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল, তাহ দেখিতেছি। ১৯১২ খৃষ্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্মান উপনিবেশে বিপুল আয়োজনে অত্যধিক অস্ত্ৰ শস্ত্র সংগৃহীত হইয়াছিল এবং ৬ বৎসরেও নিঃশেষিত না হইতে পারে এরূপ আহাৰ্য্যসামগ্ৰী সঞ্চিত হইয়াছিল। ইংরেজ ইহা গুপ্ত উপায়ে জানিতে পারিয়া জৰ্ম্মানিকে এই উদযোগের কারণ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, কিন্তু সে কোন উত্তর দেয় নাই ; একবার এইমাত্র বলিয়াছিল যে আফ্রিকার অসভ্যজাতির সঙ্গে বিবাদ বাধিবার ভয়ে ঐক্কপ করিয়াছে। সে অঞ্চলে যে কোন উপদ্রবের আশঙ্কা ছিল ন এবং নাই, ইংরেজ তাহা জানিতেন বলিয়া, আত্মরক্ষায় বিশেষ উদযোগী হইয়াছিলেন। যে উদযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার উপনিবেশে হইয়াছিল, তাহ যে কত অধিকপরিমাণে খাস জৰ্ম্মানদেশের জন্য হইয়াছিল, তাহাও কিয়ং পরিমাণে জানিতে পার। গিগছে। ইংলণ্ডেৱ সহিত যুদ্ধটি যে দৈবাৎ ঘটে নাই, জৰ্ম্মানি যে মূখ্যভাবে ইংলণ্ডের দিকেই অগ্রসর হইতেছিল, ইংরেজ তাহ ১৯১০ খৃষ্টাব্দেই পরিষ্কার বুঝিতে পারিয়াছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ট্রাইটুণে (Treische) ছাত্রদিগের মধ্যে চিরদিন প্রকাস্তে ইংরেজ-বিদ্বেষ বাড়াইয়া আসিতেছিলেন, এবং কাইজার তাহাকে উৎসাহিত করিতেন। ১৯১০ খৃষ্টাব্দে একখানি নূতন রণতরী সাজাইয়া স্ববক্তা কাইজার যে বক্তৃতা করিয়াছিলেন, তাহাতে ইংলণ্ডের প্রতি বিদ্বেষের ভাব অনেকস্থলেই ফুটিয়া উঠিয়াছিল। সমগ্র জৰ্ম্মানদেশের লোক কাইজার উইলিয়মকে দেবতার মত পূজা করে। র্তাহার এই বক্তৃতার পর লোকসাধারণের মধ্যে যে প্রকার উৎসাহের উদ্দীপনা দেখা গিয়াছিল, ইংরেজ রাজনীতিজ্ঞেরা তাহা বিশেষভাবে লক্ষ্য করিতে ছাড়েন নাই। সরকারি কাগজপত্রে সে কথা লইয়া গভীর আলোচনা হইয়াছিল। কাইজার এখন যতই নেকা সাজুন, পৃথিবীর লোক তাহাকে চিনিয়া ফেলিয়াছে। - ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে ফরাসিকে পরাজিত করিয়া এবং দেশের একতা দৃঢ় করিয়া, জৰ্ম্মানি যে-সকল অনুষ্ঠান করিয়াছিল, উহ হইল এই মহাসমরের আদিপৰ্ব্ব । অষ্টিয়াকে মিলাইয়া,