পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০২ তুলিকা-সম্পাতে চিত্রে কেমন মাধুর্য্য ফুটি উঠিয়াছে। রমণীর দাড়াইবার ভঙ্গী কেমন কমনীয়, কেমন স্থঠাম! সাজি উণ্টাইয়। রমণী ফুল ফেলিয়া দিতেছে, অথচ তাহার শরীরে কোন চাঞ্চল্যের লক্ষণ নাই। পাত্র-বিচ্যুত ফুলগুলিই যেন সকল চাঞ্চল্য সকল ক্ষত্তি অঙ্গে মাথিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে। মুখাবয়ব ভাব প্রকাশের প্রধান বা একমাত্র অবলম্বন, সাধারণতঃ সকলের এই বিশ্বাস । এই চিত্রে রমণীর মুখাবয়ব নষ্ট হইয়া যাওয়াতে লক্ষিত হইতেছে না; কিন্তু তাহার শরীরের ভঙ্গিম এরূপ সুনিপুণভাবে অঙ্কিত হইয়াছে যে মুখ বিলুপ্ত হইলেও চিত্রটি যে শ্ৰীভ্রষ্ট হইয়াছে তাহা মনেই হয় না । সঙ্গীতকারিণী নৰ্ত্তকীর দল । দ্বিতীয় চিত্র একটি দাসের । কয়েকটি শতদল হাতে লইয়া দাস দাড়াইয়া আছে । পুষ্পপাত্র একটি পদ্মপত্র ; ইহা অপেক্ষ আর কোন সাজি সুন্দর হইতে পারে ? প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ,১৩১ - [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড

          • ヘヘヘヘヘヘヘヘヘー、ヘ

গোঁধীন বাবুদের অভাব কোন কালেই ছিল না। তৃতীয় চিত্রে খুব বাহারে কাপড় পর একজন সোঁখন বাৰু | দাড়াইয়া আছেন। বাবুটির এক হাত কোমরে, ও অন্য হাতে একটি ফুল। দাড়াইবার ভঙ্গীতে বাবুগিরি আরামপ্রিয়তা ও গৰ্ব্বের ভাব বেশ স্পষ্ট প্রকাশ পাইতেছে। চতুর্থ চিত্রের প্রধান মুক্তি রাজকুমার সিদ্ধার্থের। সিদ্ধার্থ এখনও সংসার ত্যাগ করেন নাই। মণিমুক্তাখচিত কিরীট এখনও তাহার মাথায় শোভা পাইতেছে ; অঙ্গে এখনও সুচারু বেশ রহিয়াছে। কিন্তু পার্থিব সম্পদ ও রাজকীয় বেশে তাহার কোন স্পৃহা নাই । কবে তিনি ভিক্ষুর বেশ গ্রহণ করিয়া নিৰ্ব্বাণপথের পথিক হইবেন অন্ধনিৰ্মলিত নয়নদ্বয়ে যেন সেই চিন্তার ভাবটি ফুটিয়া উঠিয়াছে। সিদ্ধার্থের দাড়াইবার ভঙ্গী কেমন সৌম্যভাবাপন্ন। দাসদাসীতে পরিবেষ্টিত নৃপতি । পূৰ্ব্বোক্ত চিত্রগুলিতে কেবল এক-একটি মাত্র মুক্তিরই ভঙ্গিমা-সৌন্দর্য্যের কথা বলা হইয়াছে। একাধিক-মূৰ্ত্তিবিশিষ্ট বড় বড় চিত্রেও ঠিক এইরূপ ভঙ্গিমা-বৈচিত্র্য দেখা যায়। পঞ্চম চিত্রে একদল নৰ্ত্তকী গান গাহিতে গাহিতে চলিয়াছে। এই চিত্রটি সিংহল বিজয়ের বৃহৎ চিত্রের একটি অংশ। বিজয় সিংহের অভিষেক-সময়ে রাজার সঙ্গে সঙ্গে যাইতে যাইতে নর্তকীগণ মঙ্গলগীতি গাহিতেছে। বাদক ও নর্তকীদের ভঙ্গীতে কেমন অপরূপ ক্রীড়ার ভাব । সঙ্গীতের ভক্তমণ্ডলীর মধ্যে ভগবান ৰুদ্ধদেব । কেবল চলনশীল মৃত্তিতেই যে এরূপ রম্য ভঙ্গিম দেখিতে পাওয়া যায় এমন নয়। স্থির বা নিশ্চেষ্ট মৃত্তিতেও অতি রমণীয় ভঙ্গী-মাধুর্ঘ্য দেখা যায়। ষষ্ঠ চিত্রে কয়েকটি দাসদাসীতে পরিবেষ্টিত কোন এক নৃপতি অঙ্কিত হইয়াছে। চিত্রিত সকল মূৰ্ত্তিতেই দাড়াইবার ও বসিবার ভঙ্গী কেমন সুন্দর, কেমন চিত্তাকর্ষক ! সপ্তম চিত্রের বিষয় বুদ্ধদেবকে পরিবেষ্টন করিয়া ভক্তমণ্ডলীর অবস্থিতি। বুদ্ধদেব উপদেশ দিতেছেন, ভক্তমণ্ডলী ভক্তিবিহবল চিত্তে তাহ শুনিতেছে। ভক্তগণের মধ্যে কেহ মুকুট পরিয়া আছে, আর কেহ বা পরিয়া আছে ভিক্ষুর বাস । এ আসরে রাজা প্রজ, ধনী নিধনের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই। নিজের কথা বিশ্বত হইয়। ○o"○


প্রভূ যুদ্ধের নিকটে মাতা ও সন্তান। অস্পষ্ট, কিন্তু তত্ত্বও ইহাতে কেমন একটি মহান ভক্তিবিহ্বল আনুগত্য ও প্রেমের বিকাশ রহিয়াছে। এরূপ ভাববাঞ্চক চিত্রের বর্ণনা হয় না। ভাবই যাহার একমাত্র রূপ, সে রূপটা অনুভব করিতে হইলে ভাবটাই কেবল হৃদয়ঙ্গম করিতে হয়। কেবল শিক্ষা-নৈপুণ্যে এরূপ চিত্র অঙ্কিত হয় না ; কেবল প্রাকৃতিক ভাবের প্রতিলিপিকে চিত্রের চরম আদর্শ বুঝিলে এরূপ চিত্র অঙ্কিত হয় না। অজস্তার শিল্পীগণ ভক্তির নেশায় মাতোয়ার হইয়া অন্তদৃষ্টিতে যাহা দেখিতে পাইত তাহাই কেবল ফুটাইয়৷ তুলিতে চেষ্টা করিত বলিয় তাহাদের শিল্পে এত গভীর ও অপরূপ ভাবব্যঞ্জক মাধুর্য্যের বিকাশ । সকলে মহাতাপস প্রভু বুদ্ধের শান্তিময় প্রচার শুনিতেছে! অষ্টম চিত্রে প্রভু বুদ্ধের সম্মুখে মাতা সস্তানকে व्झेभ्रा সকলের মুখে আত্মহারা শান্তির ভাব। চিত্রটি জীর্ণ, দাসের দাড়াইবার ভঙ্গ মনোরম ৷ মাধুর্য, নৃত্যের গতি চিত্রে সুস্পষ্টরূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে। -