পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩88 -- ------------ ---- ১৬ কলা সত্য দুলভ। কোন সত্য ১t কল, কোন সত্য ৮ কলা, কোন সত্য ১ কলা । যাহাতে ১ কলা সত্য, তাহাতে ১৫ কল অসত্য আছে। কেহ কেহ বলিয়াছেন বখতিয়ার খিলজি আঠার সেনা লইয়। বঙ্গদেশ অধিকার করিযাছিল। যাহার একথা বলেন, তাহার। আপ্ত নহেন। সামানাতে দৃষ্টিতে বুঝিতেছি কথাটা অসত্য। আঠার জন লোক, আশ্বারোহী হউক, অস্ত্রধারী হউক, একটা বিস্তীর্ণ দেশ জয় করিতে পারে না। কথাট। ১৫ কলা কিংবা আরও অধিক মিথ্যা । কিন্তু ১৬ কলা মিথ্যা, তাহাও বলিতে পারি না। অষ্টাদশ সেনা পারে না, কিংবা পারে নাই, বলিবার প্রমাণ কি ? আর কোথাও পারে নাই, ত৷ বলিয়া এখানেও পারে নাই এমন বলিতে পারি না। বাস্তবিক সামান্ততে দৃষ্টিতে যখন কিছু অনুমান করি, তখন সম্ভব অসম্ভব বিচার করি । মরা মানুষ বাচে না, অদ্যপি কেহ লাচিতে দেখে নাই । . কত হাজার হাজার লাখ লাখ বছর মানুষ জন্মিয়াছে মরিয়াছে, আদ্যাপি একজনকেও মরিয়া বঁচিয়া উঠিতে দেখা শোনা যায় নাই । তুমি যে বলিতেছ, লক্ষ্মণ শল্যাহত হইয়৷ মরিয়া ঔষধ-গুণে বাচিয়া উঠিয়াছিলেন, তাহ তোমার একার কিংবা দুইদশ হাজার লোকের কথায় বিশ্বাস করিতে পারি না। কারণ একদিকে অসংখ্য মানুষের, অন্যদিকে দুই দশ হাজারের সাক্ষ্য। যদি লক্ষ্মণ বাচিয়াছিলেন, তাহা হইলে হয় তিনি মরেন নাই, মৃতবং হইয়াছিলেন কিন্তু মরেন নাই ; কিংবা তিনি মানুষ ছিলেন না। আমরা মরা মাতুয বঁচিতে দেখি নাই , মাতুষ-সম্বন্ধেই বলিতে পারি। আমরা মৃতবং মানুষকে ভাষায়-অতিশয়োক্তি অলঙ্কার প্রয়োগ করিয়া বলি, মৃত । লক্ষ্মণও মৃত হন নাই, মৃতবং হইয়াছিলেন। তথাপি যখন এত লোক বলিতেছে তিনি বাস্তবিক মৃত হইয় পুনর্জীবিত হইয়াছিলেন, তখন সে কথা ১৬ কলা অসত্য ও বলিতে পারি না। লক্ষ্মণের নামরার পক্ষে যদি কোটি কোটি, মরার পক্ষে দুই দশ হাজার কিছুই নহে বটে ; কিন্তু নি:সংশয় হইতেছি না। অর্থাং কোটি কোটি, সংখ্যাতীত ঘটনায় ঘাহা সত্য, একটা ঘটনায়ু তাহা মিথ্য হইতে পারে, মরা মানুষ বাচিয়া উঠিতে পারে । প্রবাসী-আষাঢ়, هدهد এইরূপ, যখন শুনি রাবণের ভাই বিভীষণ অমর, তখন বুঝি তিনি দীর্ঘজীবী ছিলেন বলিয়৷ লোকে বলিত তিনি অমর, কিংবা বাস্তবিক তাহার মৃত্যু হয় নাই, হইবে না। এমন কি, যে স্বৰ্য্য হয়ত স্বষ্টির আরম্ভ হইতে প্রত্যহ উদিত ও অস্তগত হইয়া আসিতেছে, সে স্থৰ্য্য যে একদিন উদয়াস্ত-রুদ্ধ হইয়া নিশ্চল থাকিবে না, তাহ বলিতে পারি না। তবে যদি কেহ বলেন, আগামী কল্য স্বর্য্যোদয় হইবে ন, তখন তাহার উক্তি অবিশ্বাস্য হইবে । অবিশ্বাস্য হইবে; কিন্তু নিসংশয়ে বলিতে পারি না, কল্য সুৰ্য্যোদয় হইবে। বলিতে পারি কল্য সূর্য্যোদয়ের সম্ভাবনা আছে, অর্থাং স্বর্য্যোদয়ের পক্ষে কোটি কোটি, বিপক্ষে এক । কিন্তু কে জানে সেই এক কল্য ঘটিবে না। সংশয় অসংশয়ের ষে সম্বন্ধ তাহার নাম সম্ভাবন । একদিকে অল্প অন্যদিকে বহু সম্ভাবনা থাকিলেও যখন অল্প জয়ী হয়, তপন বলি দৈব । আমরা কাৰ্য্যকারণ-সম্বন্ধ যত বুঝিতেছি, দৈব তত লুপ্ত হইতেছে। বিধাতার বিধান-ভঙ্গের নাম দৈব। বিধাতার বিধান, ভৌতিক জগতের বিধান আমরা সব জানি না, বুঝি ন। জানিলে বুঝিতে পারিলে বিধানের ব্যভিচার দৈবাধীন ঘটনা বলিতাম না। হিন্দুজাতি ক্রমশঃ লুপ্ত হইতেছে ; যন্ত জন্মিতেছে তাহার অধিক মরিতেছে ; স্বতরাং শেষে কেহ থাকিবে না। অনেক প্রাচীনজাতি পৃথিবী হইতে লুপ্ত হইয়াছে। সুতরাং হিন্দুজাতির উৎসেদ একেবারে অসম্ভব নহে। কিন্তু বিধাতার বিধান জানি না। অতি প্রাচীনজাতি লুপ্ত হইয়াছে বলিয়। হিন্দুজাতিও যে তদৰং লুপ্ত হইবে, তাহ নি:সংশয়ে বলিতে পারি না। বলিতে পারি, লোপের দিকে চলিয়াছে, এবং যদি লোপের প্রতীকার না হয়, তাহা হইলে কয়েক শত বৎসর পরে হিন্দুজাতি লুপ্ত হইবে। অর্থাং যে বিধান এখন চলিতেছে, ঠিক সে বিধান চিরদিন থাকিলে লুপ্ত হইবে । কিন্তু জাগতিক বিধান জগং বিধাতা জানেন ; আমরা জানি ন । পুরাণে আছে, নারায়ণের নব অবতার হইয়া গিয়াছে, দশম অবতার হইবে । যুক্তি এই,– যখন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম অবতার সত্যু হইয়াছে, তখন দশম অবতারও সত্য হইবে । কিন্তু এখানে প্রথমে পূৰ্ব্বপক্ষ প্রমাণ করিতে হইবে। প্রমাণ করিত্বে [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড | ৩য় সংখ্যl ]


হইবে নব অবতার হইয়াছে, এবং যে বিধানে হইয়াছে, সে বিধান দশম পৰ্য্যস্ত টিকিবে, পরে টিকিবে না। উপরে যে বিচারমার্গ প্রদর্শিত হইল, তাহ বিজ্ঞানেরও মার্গ। বিজ্ঞানের অন্বেষণ ও ত্ৰিবিধ প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত । প্রভেদ এই, বিজ্ঞান আপ্তেরও প্রমাণ চালু । বিজ্ঞানের আপ্তপ্রমাণ এমন, যে, তুমি আমি সেও সে প্রমাণ পরীক্ষা করিতে পরিবে । যেখানে এত কড়াকড়ি, যেখানকার বিচারক মমতাহীন চক্ষু-লজ্জাহীন হইয়া সত্য অসত্যের তুলনা করিতেছেন, সেখানে বিজ্ঞানের প্রমাণ মাপুতুল্য গণ্য হইতেছে। বাইবেলে আছে ছয়দিনে এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক পৃথিবী ষষ্ট হইয়াছিল। বিজ্ঞান বলিতেছে,—না, হয় নাই। আমনই সকলকে মাথা নোআইয়। স্বীকার করিতে হইতেছে, বলিতে হইতেছে,—ন, পৃথিবী ছয়দিনে স্বস্ট হয় নাই । বিজ্ঞানের যে এত গৌরব, এত তেজ, তাহার কারণ বিজ্ঞানের সত্যবাদিত, বিজ্ঞানের পরার্থপরত। তাহার দয়া-মায়৷ নাই, আমার তোমার ভেদজ্ঞান নাই, যাহা সত্য বলিয়া বুঝিয়াছে, তাহ অকুতোভয়ে স্পষ্টভাষায় শোনাই৷ দেয়। বিজ্ঞানের যুক্তিমাৰ্গ বিজ্ঞানকে বড় করিয়াছে। এমন করিয়াছে যে অন্ত যাবতীয় বিদ্যাতে সে মাগ দেখিতে না পাইলে মনের পরিতোষ হয় না। কিন্তু এখানে একটু সাবধান হইতে হইবে । ব্যাসদেবের নামে যেমন কত কথা প্রচারিত হইয়াছে, তেমন বিজ্ঞানের নামেও হইতেছে। অনেকে যেমন "শাস্ত্রে আছে বলিয়া শ্রোতার সংশয় চাপ দিতে চায়, এখানেও তেমন বিজ্ঞানের নামের জোরে অপত্যকে সত্য বলিয়া প্রচার করে । বিজ্ঞান তোমার আমার কথা কিংব। তোমার আমার মনগড় কথা নহে। বিজ্ঞান বলে না, যে, সে সব জ্ঞ ; বরং বলে "আমি কিছুই জানি না, জানিতে চাই ; এই যে অল্পস্বল্প স্থানিয়াছি, অজানার তুলনায় ইহা কিছুই নয়।” বিজ্ঞানকে জিজ্ঞাস করুন, চাদে মানুষ আছে কি ? বলিবে, জানি না । জিজ্ঞাসা করুন, ইহকালের পর পরলোক আছে কি না । উত্তর হইবে, জানি না। অত কথায় কাজ কি, জিজ্ঞাসা কঙ্কন, মানুষ মরিয়৷ ভূতপ্রেত হয় কি না। বলিবে, জানি ন। যদি বলেন, জানি আছে ; বিজ্ঞান তর্ক করিবে না। ইতিহাসের ক্রম।

  • 36.

যদি বলেন বিশ্বাস কর ভূতপ্রেত আছে ; বলিবে প্রমাণ দিন, এমন প্রমাণ দিন যাহাতে আমার বিশ্বাস হইবে। একদিকে, বিজ্ঞান যেটা পাইয়াছে সেটা কিছুতেই "না" বলিবে না, অন্যদিকে যেটা ন পাইয়াছে সেটা "ই।” “না" কিছুই বলে না। এটা হইতে পারে না, মানুষ নিজ দেহ লঘু করিয়া শূন্তে থাকিতে পারে না, মানুষ মরিয়া বাচিতে পারে না, ইত্যাদি বিজ্ঞানের নিকট শুনিবেন না। যেট। তাহার জানা আছে, সে সেটার সম্বন্ধেই বলিতে পারে। সে জানে, যে, অনেক অজানা আছে ; যেটা জানে মনে করিতেছে সেটা সম্পূর্ণ জানে না। ইহার নাম বৈজ্ঞানিক প্রবৃত্তি। ইতিহাসে এই বৈজ্ঞানিক প্রবৃত্তি দেপিতে চাই। ইতিহাসে অনেক অজানা কথা থাকে। অনেক মন-গড়া কথার দ্বারা ইতিহাসলেখক আমাদিগকে ভুলাইতে চান। সবসময়ে নিজেরাও সাবধান হন না ; মন-গড়া কথাতে নিজেরাও ভুলিয়া যান। অঙ্গীকারের উপর অঙ্গীকার চাপাইয়া শেষে নিজের একটা অনুমান সত্য বলিতে চান। ইতিহাসের উহ বাদ দিলে কতটুকু সত্য থাকে ? বিজ্ঞানেও উহ আছে, এবং বিজ্ঞানে কেন, নিত্যজীবনেও উহ আমাদের সহচর। পরে পরে সব তথ্য জানা থাকে না ; তথ্যগুলি পরস্পর গাঁথিতে উহ আশ্রয় করিতে হয়। কিন্তু কোনটা উহ, কোনটা তথ্য, তাহা স্পষ্ট বলিয়া না দিলে সত্য অসত্য মিশিয়া যায়। তা ছাড়া, বিজ্ঞানের তথ্যসমূহ এমন শৃঙ্খলায় সম্বন্ধ থাকে যে উদেশ্ব বুঝিতে কষ্ট হয় না। আজিকালি যে বিষয়ই আলোচনা করি, বিচার করি, এইরূপ সাজাইয়৷ গুছাইয। বলিতে না পারিলে চিত্তের সন্তোষ হয় না, পড়িতে বুঝিতে মনে রাথিতে কষ্ট হয়। ইতিহাসে বহু চমৎকার তথা, বহু জ্ঞানের কথা থাকিতে পারে, এক বৈজ্ঞানিক বিন্যাসের অভাবে আমাদের চিত্ত আকৃষ্ট হয় না। ইতিহাসে বৈজ্ঞানিকমার্গ যেমন আবশ্বক, বৈজ্ঞানিক বিন্যাসও তেমন আবশ্যক । এই বিন্যাসের নিমিত্ত ইতিহাস কালাহুসারী হয়। ঘটনা-পরম্পরা দ্বারা কাল পরিমিত হয়, এবং কাল দ্বারা ঘটনা-পারম্পর্যোর এবং সত্যাসত্যের নির্ণয় হইয়া থাকে। বাস্তবিক এক এক ইতিহাস এক এক মানবজাতির উৎপত্তি