পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8b গেলেই কবি হয় না, তেমন উপাদানগুল পর পর সাজইয়া গেলেই ঐতিহাসিক হইতে পারা যায় না। কবিত্ব দুলৰ্ভ, ঐতিহাসিকতাও দুলভ। আমাদের দেশে ঐতিহাসিক ছিলেন মহর্ষি ব্যাস। মহাভারতের তুল্য ইতিহাস সুলভ। পদ্যে রচিত বলিয়৷ ইতিহাসের দোষ হয় নাই, বরং গুণ বাড়িয়াছে। অষ্ট৷ দশ পুরাণের বংশাহুচরিত ইতিহাস বই আর কি ? কিন্তু কেহ কেহ বলেন মহাভারত ইতিহাস নহে, পুরাণ ইতিহাস নহে। কেন নহে, কি অর্থে নহে ? মহাভারত ও পুরাণে মন গড় কবি-কল্পিত কথা আছে কি ? উপাদান, বৃত্তান্ত অসত্য কি ? উপাদান যথাযথ বিন্যস্ত হয় নাই কি? গ্ৰন্থনে কলাকৌশল প্রকাশ পায় নাই কি ? মনগড়া কথা আছে, কিন্তু সব মনগড়া অসত্য বলিতে পারি না; অতিশয়োক্ত থাকিতে পারে, উক্তি মিথ্য নহে ; বিন্যাসে গ্রন্থনে দোষ নাই। একটা অভাব, কালাহুসারিত। অমুস্থত হয় নাই। সময়নির্দেশ না থাকাতে এক বৃত্তাস্তের সহিত অন্য বৃত্তান্তের, এক পুরাণের সহিত অন্য পুরাণের মিল করিতে পারি না ; পরে পরে বৃত্তান্ত না পাইয়। ইতিহাস-অট্টালিকার গোড় কোথায় আগা কোথায় বুঝিতে পারি না। একটা শ্লোক আছে, লোকমুখে প্রচলিত শ্লোক আছে, সত্যযুগে অত্ৰি, ত্রেতায় চরক, দ্বাপরে মুখত, কলিতে বাগভট আয়ুৰ্ব্বেদ লিপিয়াছিলেন। এখানে সময়ের উল্লেখ আছে, অথচ নাই। যদি এই সত্য-ত্রেতাদিযুগ পাজির যুগ হয়, তাহা হইলে কথাটা বিচারেরও যোগ্য নহে। কারণ, সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ, বহু বহু বংসর পূৰ্ব্বে झट्रेश्न| म्रिएछ । যদি বলি সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি এই নাম চতুষ্টয়ে কালের পৌৰ্ব্বাপধ্যমাত্র বিজ্ঞাপিত হইয়াছে ; অর্থাং যে কাল চলিতেছে, তাহ কলি এৰং যে কাল অতীত হইয়াছে তাহ তিন ভাগু করিয়া কলির পূৰ্ব্বে অতীত দ্বাপর, তাহার পূৰ্ব্বে অতীত ত্রেতা, তাহার পূৰ্ব্বে অতীত সত্য যুগ ছিল ; তাহা হইলে বরং একটা সঙ্গত অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাং বুঝিলাম আত্ৰেয় সংহিতা প্রথমে, তার পর চরক সংহিতা, তার পর স্বশ্ৰুত সংহিতা, এবং তার পর বাগভটের অষ্টাঙ্গ প্রবাসী—অষাঢ় ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড হৃদয় রচিত হইয়াছিল। এই প্রতিজার বিরোধী প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। . কিন্তু বিরোধী প্রমাণ নাই কিম্ব পাওয়া যায় নাই বলিয়৷ প্রতিজ্ঞা সিদ্ধ হইল না। বস্তুতঃ রাগিণীর যেমন অসংবাদী ও বিবাদী রাগিণী বা স্বর আছে, প্রতি প্রতিজ্ঞার সংবাদী অনুবাদ প্রমাণ পাইলে এবং বিবাদী প্রমাণ না থাকিলে সে প্রতিজ্ঞ সিদ্ধ হয়। কেহ বলিল, রাবণের দশমুণ্ড ছিল। এই উক্তি মাত্র গ্রাহ হইতে পারে না ; ইহার বিবাদী, বিরোধী প্রমাণ না থাকিলেও উক্তি গ্রাহ হইবে না। দশমুণ্ড থাকার সংবাদী, অমুবাদী প্রমাণ চাই। এইরূপে দেখা যায় আয়ুৰ্ব্বেদের যে ইতিহাস জানা গিয়াছে, তাহাতে আত্ৰেয়াদি চারি আয়ুৰ্ব্বেদের পৌৰ্ব্বাপধ্যে আয়েয় সৰ্ব্ব পুরাতন, বাগভট সৰ্ব্বনূতন বটে। এইসব দৃষ্টান্ত হইতে বুঝিতেছি ইতিহাসে কালনির্ণ অত্যাবশ্যক । কালদ্বারা যে প্রমাণ তাহার পরীক্ষার উপায় পাওয়৷ যাইতে পারে। এ দেশে এক রাজা ছিলেন ; এট কথামাত্র, ইতিহাস নহে। সত্যযুগে মান্ধাত নামে এৰ রাজা ছিলেন ; বুঝিলাম বহুপূৰ্ব্বকালে। কলির আরম্ভ সময়ে কিংবা দ্বাপর শেষে কুরুপাণ্ডবের যুদ্ধ হইয়াছিল, এখানে জ্ঞান অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত হইল। যেখানে কালের উল্লেখ নাই, সেখানে ইতিহাস নাই। কিন্তু বৎসর পরিয়| সকলঘটনার উল্লেখ না করিলেও ইতিহাস হইতে পারে। মাঝে মাঝে বিশেষ দুই একটা ঘটনার বৎসর জানিলেই ইতিহাস গড়িতে বুঝিতে বিঘ্ন হয় না। যে ঘটনা লিপিবদ্ধ হইতেছে তাহার সত্যাসতা নিরূপণের নিমিত্ত বৎসরের উল্লেখ আবশ্বক হয়। যখন সত্যাসত্য নিৰ্দ্ধারণ আবখ্যক হয় না, যখন অন্যপ্রমাণে জানি অসত্য নাই, তখন বংসরের উল্লেখ না থাকিলেও চলে। এই যুক্তিতে মহাভারতের যুদ্ধ সত্য, পুরাণের বর্ণিত বংশ ও বংশামুচরিত অসত্য নহে। পুরাণের পাচ লক্ষণ নির্দিষ্ট আছে, তন্মধ্যে বংশ ও বংশাহুচরিত দুই লক্ষণ। আধুনিক ইতিহাসেও এই দুই থাকে। যে সে বংশ নহে; যে বংশ এক এক জাতির দেশের ভাগ্যের নিয়ামক হইয়াছিলেন তেমন বংশের বর্ণনা । বংশাচুচরিত: বর্ণনা, ইতিহাসে থাকে পুরাণেও আছে। ব্যাস | ৩য় সংখ্যা ] দেবের পর কত ব্যাস বংশ{হুচরিত লিথিয় গিয়াছেন তাহাদের সংখ্যা হয় না । দেশের রাজবংশের ইতিহাস ছিল, আমাদের দেশে পূৰ্ব্বকালে মান্য গণ্য যাবতীয় বংশের ইতিহাস ছিল। এই সকল কুলপঞ্জী দ্বারা জান৷ ঘাইতেছে যে আমাদের ইতিহাস চিরদিন লিখিত হইয়। আসিতেছিল। পুরীর মাদলা-পাজি, আসামের বুরুঞ্জি, ইতিহাস। অতএব আমাদের দেশে ইতিহাস ছিল না, নাই, এ কথা বল। দুঃসাহস । ইতিহাসের উপাদান আছে, নাই ঐতিহাসিক । ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক মার্গ চাই, নতুবা তাহা বিশ্বাস্য হইবে না। বৈজ্ঞানিক মাগে লিখিত ইতিহাসের একট। গুণ এই যে পড়িবা-মাত্র তাহ পাঠককে মানিতে হয় । অন্যদিকে অন্য বিদায় ঐতিহাসিক ক্রম অবলম্বিত হইলে জ্ঞাতব্য বিষয় বোঝা সহজ হইয় পড়ে। কেননা, কাহার পর কি হইয়াছিল, ইহা ইতিহাসে জানিতে পারি, জ্ঞানের পর পর যোগ জানিতে জানিতে বৰ্ত্তমানে আসিয়া পড়ি । ইহাই আবশ্যক। সমাজবিদ্যা ধরি, ভাষাবিদ্যা ধরি, যেকোন বিদ্যাই ধরি, ঐতিহাসিক ক্রমে শিক্ষা করাতে কত দুরূহ বিষয় সহজ হইয়া গিয়াছে। ইতিহাসের নামে নভেল লিখিতে বলি না, এককথা ফেনাইয়৷ ফেনাইয়া লঘু করিতে বলি না ; কারণ ফেনাইতে গেলেই অসত্য আসিবে । কিন্তু রচনার লালিতা, বিন্যসের সুস্পষ্ট ক্রমে বৈজ্ঞানিক মার্গ চাই। "বোধ হয় হইয়া ছিল", "বোধ হয় হয় নাই", "হইয়াছিল বলিয়া বোধ হয় ন।" ইত্যাদির প্রয়োগ বাস্তবিক অবিশ্বক হয় কি ? যদি হয়, তাহা পৃথক না বলিলে সত্য-অসত্য মিশিয়া যায়, আদ্যোপান্ত গোট বই পড়িয়া কিছুই জ্ঞানলাভ হয় না। এই সমস্ত আলোচনা করিয়া দেখা গেল, যে-সে ষ-ত লইয়। ইতিহাস লিখিতে পারেন না। ইতিহাস শব্দের অর্থ হইতে বুঝিতেছি উহা পড়িলে সত্য বলিয়। বিশ্বাস হইবে। শোনা কথা হউক, দেখা ঘটনা হউক, সত্য নির্ণয় চিরদিন দুরূহ। এইকারণে অন্যান্য বিদ্যার ন্যায় ইতিহাসেও বিতর্কের সমাপ্তি নাই। অথচ বিতর্কে চিত্ত তৃপ্ত হয় না। একটান-একটা ঠিক ধরিতে চায়। এই আকাঙ্ক্ষা হইতে প্রাচীনকালে আপ্তপ্রমাণ গৃহীত হইয়াছিল। একালে আমরা আঞ্চ 8 তীর্থ পাই না, সমুদায় অনুমান প্রমাণে সিদ্ধ করিতে চাই। এই ○8> হেতু ইতিহাসে বৈজ্ঞানিকমার্গ অনুসরণ আবশ্বক, এবং যে ইতিহাসে এই মার্গ নাই, বিন্যাস নাই, তাত ইতিহাস নামের যোগ্য নহে। তাহা পুরাণ হইতে পারে, গল্প হইতে পারে, কিন্তু ইতিহাস হইবে না। যদিও মহাভারত আধুনিক ইতিহাসের ধারায় লিপিত নহে, তথাপি আদর্শ উচ্চ বলিতেই হইবে । এককালের মানবসমাজের এমন উজ্জল স্থম্পষ্ট চিত্র দুলভ। ইহাতে পরে পরে বহু আপ্যান যোজিত হইয়াছে, কোন কোন স্থানে সমধিক হইয় পড়িয়াছে বটে, কিন্তু সৰ্ব্বত্র স্বত্রটি স্পষ্ট আছে। ইতিহাস পড়িতেই হইবে, শুনিতেই হইবে, নতুব। আমাদের চরিতের ধারা বুঝতে পারি না। শুধু তথ্য, অদম্বদ্ধ তথা, একটা দুইটা তথ্য ধরিয়া রচিত বিপু গ্রন্থে যদি আমার সম্বন্ধ, মানবজাতির সম্বন্ধ, স্পষ্ট দেখিতে না পাই, তাছা হইলে তাহাকে ইতিহাস বলিতে পারি না । সমুদ্রতটের বালুকাকণা হইতে দূরের অতিদূরের তারক্সর বৃত্তান্ত লিখিতে পারেন ; কিন্তু শুধু সত্য, আমাকে ছাড়িয়া সত্য, হাজার বলুন, তাহাতে আমার প্রয়োজন নাই। এইকারণে প্রথমে নিজের দেশের ইতিহাস চাই, পরে অন্যদেশের ; প্রথমে দেশের ভূগোল চাই, পরে অন্যদেশের । • শ্ৰযোগেশচন্দ্র রায় । তীর্থ রাপাল তাহার গভীরে হারায়ে বৈশাখী জল ঝড়ে দুই দিন পরে খুঁজে পেয়ে তারে কণ্ঠ চাপিয়া ধরে । লেহন-পরশ-শিহরিত তন্ত, দরদর ধারা বয় বাংসলোর গোমুখী তীর্থ নিভৃতে অভু্যদয় । গ্রীষ্মের দিনে গোঠের রৌদ্রে ক্লান্ত তপ্ত কায়ে রাখাল যখন শ্রান্তি দুরিয়া স্বশীতল বটছায়ে তরুর কাও বুকে ধরি কহে "বৃক্ষ, ঠাকুর তুমি” সেথা জাগে প্রেম কৃতজ্ঞতার বোধিক্রমতলভূমি। শ্ৰীকালিদাস রায় ।

  • উৎকল-সাহিত্য-সমাজে ওড়িয় ভাষায় अलैंड ।