পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭০ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২২ লড়াইয়ের জন্যে। লড়াই ধনেরও নয় মানেরও নয়,— শুধু হাসিতে ਸ਼ਿਸ਼ अशहरे. ੇ ਬੈ। লড়াইয়ের দাম শুধু লড়াই ! এই ধরগে কুস্তি, কুস্তি কি হইয়া চোখ টেপাটেপি করিয়া, প্রচুর হাস্যপরিহাসে হর ব্যবসার জিনিস? না সখের জিনিস? যে ব্যবসার জন্যে, কিষণ যে আন্দুকে ঠিক জন্ম করিয়াছেন, এই কথাট পয়সার খাতিরে কুস্তি শিখতে আসে, তার উচিত আলু নি:সংশয়ে প্রতিপন্ন করিয়৷ আন্দুর ধৈর্য্য রক্ষা অসম্ভব পটল বিক্রির কসরৎ শেখ ..." - করিয়া তুলিল । ওস্তাদ মাঝে পড়িয়া, তাহাদের টানিয়া হরক্ষিণ কোকের মাথায় অনেক কথা বলিয়া চলিল। লইয়া গেলেন। আলু নিফুল মুষ্টি শূন্যে উচাইয়া, তাহারে ওস্তাদের সারা চিত্ত কিন্তু ঐ সৰ্ব্বনেশে লড়ায়ের উৎসাহের ভবিষ্যতে প্রাপ্তির সম্ভাবনা বুঝাইয়া হাসিতে হাসিতে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া উঠিল, তিনি এ অভিনয়ের গন্তব্য পথে ফিরিল। যবনিকা এইখানেই পতন করাইবার জন্য—আন্দুর ধূল্যব- অকস্মাং কোথা হইতে দমকা বাতাসের মত-পরিমল লুষ্ঠিত গামছাখানির প্রতি অকস্মাৎ অচিন্তানীয় সহানুভূতি ছুটিয়া আসিয়া লাইয়া আন্দুর গলা ধরিয়া ঝুলিয়া পড়িয়া প্রকাশ করিয়া, সুগভীর করুণায় বলিলেন "আহ! আন্দু, মহা আন্ধার জুড়িয়া দিল । সে এত দ্রুতস্বরে কথা কহিতেতোমার গামছাট যে ধূলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে, তুমি চান ছিল যে আন্দু তাহার একবর্ণও বুঝিল না। বিস্মিত হইয়া করতে যাও।” বলিল “কি হয়েছে ?” গামছাট তুলিয়া আলু বলিল "এই যে যাই।”—তাহার পরিমল বলিল "কাল তুমি খেলার সময় বাবাকে পর হরকিষণের পানে ফিরিয়া একটু আগ্রহের সহিত বলে আমায় স্থল থেকে নিয়ে যাবে কি না বল ।” বলিল "আপনি কদিন এখানে থাকবেন ?" পরিমল কথাটা কোথা হইতে শুনিল অমুসন্ধান করিয়া হরকিষণ বলিল “বেশী নয়, দিন-চার।" জানিবার অবকাশ হইল না, তাহার হস্ত হইতে সদ্যশীতলচাদ মাথা নাড়িয়। তৎক্ষণাৎ বলিল "ততদিনে পরিত্রাণ লাভের জন্য, আন্দু পুনঃ পুন: আশ্বাস দিয়া পাশ তুমি লড়াইয়ের হাল হদিস সব মুখস্ত করে নিতে পারবে। কাটাইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু সে কিছুতেই মানিবে না, প্রত্যুত্তরে আন্দু শীতলের পৃষ্ঠে এক চপেটাঘাত বসাইল। শপথ করাইবার জন্য বিষম হাঙ্গামা করিতে লাগিল। বিপন্ন মহাদেবমিশ্র অস্তিন গুটাইয়া একটা পাক লড়াইয়ের আব্দুর অমুনয় বিনয় সমস্তই সজোরে অগ্রাহ করিয়া সে উদ্যোগ করিতেছে দেখিয়া ওস্তাদ হাসিয়া বলিলেন "এখন নিজের জেদ ধরিয়া রহিল। এদিকে আন্দুও প্রতিজ্ঞা করিতে নয় বাবা, আন্দু আগে ‘আসনান করে আসুক।” অসম্মত ; শেষে দুরন্ত বালক চেচাইয়া বলিল, “দিদি, তুমি আন্দু বলিল "আপনার বসবেন না ?” বলে দাও না " চমকিত আন্দু চাহিয়া দেখিল তিলের ওস্তাদ বলিলেন "না বাব, কাল বলথেলার মাঠে খেলা রৌদ্রনিবারক পদার পাশ হইতে একখানি স্বন্দর মুখ হবে, অনেক লোককে বলতে আছে, সিংহজী তোমায় সরিয়া গেল। সৰ্ব্বনাশ ! তাহা হইলে তাহদের সমস্ত কথাকখনো দেখেন নি বলে মাত্র আলাপটা করাতে তোমার বার্তাই তো ঐ অন্তরালবর্কিনী শুনিয়াছে। হয়ত হয়কিষণের কাছে একবার এসেছিলুম, এখন তবে যাই।" সেই অতকিত আক্রমণের পরিণামটাও দেখিয়াছে! ছি: ওস্তাদ অগ্রসর হইলেন। আন্দুর হাত নিজের মুষ্টির ছি:! আব্দুর দেহ ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়া উঠিল, সে সবলে পরিমলের মধ্যে পুরিয়া বিরাটকায় হরকিষণ সিং গম্ভীর মুখে বলিল হাত খুলিয়া তাহাকে স্বদ্ধ লইয়া স্নানের ঘাটে চলিয়া “তোমার সঙ্গে আলাপের আমার অনেক বাকী রইল, মনে গেল । রেখ। আমি তোমার জন্যে বোধ হয় আবার শীঘ্রই ভাগল- আহারাস্তে আন্দু আড্ডায় হুরকিষণের সহিত গল্প পুরে আসব। কাল কিন্তু আমার সঙ্গে তোমায় পনের করিতে যাইবে বলিয়। জুতা জামা পরিতেছে, এমন সময় মিমুট, বি খেলতে হবে। রাজী ?” বগীর হাঙ্গামার মত পরিমল আসিয়া মহা উৎপাত বাধাইল স্বীকার অস্বীকারের কোন লক্ষণই না দেখাইয়। আন্দু সেও আব্দুর সহিত যাইবে। আন্দু অনেক বুঝাইল, কিন্তু [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড y ৩য় সংখ্যা ] সে কিছুই মানিল না। ত্যক্ত হইয়া আন্দু বলিল “মাইজীর ছকুম নিয়ে এস।” পরিমল টলিবার পাত্র নহে, সে ধরিয়া বসিল “তুমি মার কাছে চল ।" আন্দু বিস্তর আপত্তি করিল। কিন্তু না-ছোড়বান্দ পরিমল তাহাকে অকুতোভয়ে টানিয়া লইয়া চলিল। সিড়ির পরে বারান্দায় উঠিতেই সরসীর দেখা পাওয়া গেল। সে আন্দুকে নাছোড়বান্দা ছোড়দার কবলিত দেখিয়া নিতান্ত দয়াদ্র হইল, এবং ছোড়দার অন্যায় আব্দার সম্বন্ধে কিঞ্চিং বিরুদ্ধ মন্তব্য প্রকাশ করিয়া বলিল “তুমি চলে যাও তে, ওর কথা কথ থোনে শুনো না ।" অজ্ঞাটি প্রতিপালন বড় সহজ ব্যাপার নহে। বিপন্ন আন্দু বেশ বুঝিল, এই দুৰ্দ্দমনীয় লোকটি উচ্চ শাসনালয়ের আদেশ ব্যতীত কিছুই মানিবে না। অগত্য সে সরসীকে বিনয় করিয়া কহিল "মাইজী সাহেবকে একবার ডেকে দাও খুকু—" খুকু যদিচ আন্দুর নিকটে অনেক অসঙ্গত 'ফাই-ফরমাসের দরুন সবিশেষ কৃতজ্ঞ আছে বটে, কিন্তু উপস্থিত ক্ষেত্রে আন্দুর সহিত ছোড়দার কাজের যোগটা তাহার চিত্তের সমস্ত কৃতজ্ঞতার সলিলটুকু বিদ্বেষের রুক্ষ্ম বায়ুর সহযোগে বাষ্পাকারে উড়াইয়া দিল । সে প্রাণপণ বেগে মাথা নাড়িয়া বলিল “ম ? মা এখন কিছুতেই আসতে পারবেন না। মার কাছে মাদ্রাজী কাপড় বিক্রী কৰ্ত্তে এসেছে, তিনি বলে এখন তাই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন, এখন আসবেন কি কমে—" পুনশ্চ অনুরোধের আশঙ্কায় আবশ্বকীয় কৰ্ম্মের অতুরোধের অসম্ভব ব্যস্ততায় সরসী দ্রুতপদে চলিয়া গেল ; মনে মনে অবশ্ব ভরসা রহিল যে আন্দুর মত নীরিহ জীব তাহার কৃতঘ্নতার জন্য কিছুমাত্র অমৃতপ্ত হইবে না। যাহাই হউক, সরলীর ব্যবহারে পরিমলও কিছুমাত্র নিরুদ্যম না হইয়। আন্দুকে টানিয়া লইয়৷ চলিল। পরিমল তাহাকে সত্যই বিপদে ফেলিয়াছে । যে হলঘরখানার মধ্য দিয়া কত্রীর ঘরে যাইতে হয়, সেই গৃহের সম্মুখে আসিতেই দেখা গেল, লতিকা কোঁচে আড় হইয়া গালে হাত দিয়া রাজনৈতিক-কায়দায় গভীর সেখ আন্দু ভাবনা ভাবিতেছে। আন্দু দ্বারের পাশে থমকিয়া দাড়াইল, ©ጓ » একটু বিশেষরকম শব্দ করিয়া হেঁট হইয়া জুতা খুলিতে লাগিল। লতিকা গলা বাড়াইয়৷ চাহিতেই দ্বারান্তরালবৰ্ত্তী আন্দুর সহিত চোখোচোথি হইল। সে উঠিয়া টেবিলে হেলান দিয়া দাড়াইল। পরিমলের সহিত আন্দু নতশিরে কক্ষে ঢুকিল। লতিকার হৃদপিণ্ডের ক্রিয় একটু উত্তেজনার সহিত চলিল, বলিল “কি হয়েছে পরিমল ?” পাছে দিদি আবার কিছু ফ্যাসাদ বাধায় এই ভয়ে পরিমল সংক্ষেপে বলিল “আমি আন্দুর সঙ্গে বেড়াতে যাব।” দ্বিতীয় কথার অবসর হইল না, তাহার কক্ষ অতিক্রম করিয়া গেল। লতিকার মনের মধ্যে অজ্ঞাত প্রদেশে এক সুপ্ত সমূদ্র অকস্মাং সবেগে উছলিয়া উঠিল। অধীরতায় লতিকার কপালের শিরা দপদপ, করিতে লাগিল! সে শ্লথ শীতল হস্তে, পেনের ডগে করিয়া, বাতিদানের পোড়া মোমগুল তুলিতে লাগিল । - অবিলম্বে জননীর অনুমতি করিয়া আন্দুকে ছাড়ি দিয়া পরিমল কাপড়জাম পরিতে চলিয়া গেল। আন্দু সসঙ্কোচে আবার সেই ঘরের ভিতর দিয়া ধীরপদে পার হইয়৷ চলিয়া যাইতেছিল। সহসা মুখ তুলিয়া যথাসাধ্য সহজভাবে লতিকা বলিল “যে-লোকটি ও-বেল এসেছিল সে কি শিখ ?” আন্দু দাড়াইল, নতদৃষ্টিতে বলিল "আঞ্জে হ্য।” “কি নাম তার ?” “আঞ্জে হরকিষণ সিং ।” কাল তুমি তার সঙ্গে খেলা করবে ?” কুষ্ঠাকাতর আন্দু প্রাণপণে জবাব যোগাইল, "আঞ্জে বলতে পারি না, এখনো ঠিক করতে পারিনি।" আন্দু দুইপদ অগ্রসর হইল, লতিকা হঠাৎ গভীরস্বরে বলিল “তুমি কি পন্টনে যেতে চাও?" পল্টনে যাওয়ার কথা লইয়৷ ইহার স্বদ্ধ নাড়াচাড়া আরম্ভ করিয়াছেন । আন্দু বিষম থতমত খাইয়া দাড়াইয়। হঠাৎ চোখ তুলিয়া চাহিল, দেখিল, লতিকার চক্ষে আনন্দ রহিয়াছে, উৎসাহ রহিয়াছে, আর রহিয়াছে, এক কোণে একটু কোমল মোহমুগ্ধতার চিহ্ন ! - আন্দুর মুখ লাল হইয়া উঠিল। শুষ্কহাসি হাসিয়া লতিকার কথার জবাব না দিয়৷ টুপী:তুলিতে ভুলিয়া গিয়া