পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨.8 অবস্থিত হইয়াছে সেগুলি রস সাহেবের নিদিষ্ট পুরাতন উপায়। কিন্তু এইগুলি অবলম্বন করিতে যে উদ্যম, যে ভবিষ্যৎদৃষ্টি, যে যত্ন, যে সাবধানত দেখান হইয়াছিল, ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে যে মনোযোগ এবং প্রত্যেক খুটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সম্পন্ন করিবার যে স্ববন্দোবস্ত করা হইয়াছিল, তাহা আমাদের কেন সমস্ত 'জগতের শিক্ষার বিষয়। ইটালিতে পূৰ্ব্বে অনেক স্থান ম্যালেরিয়ার বাসভূমি ছিল। কিন্তু এখন ঐ দেশে ম্যালেরিয়া অত্যন্ত কমিয় গিয়াছে। যে যে উপায়ে উহা কমিয়াছে তাহ ১৯০১ সালের ঐ দেশীয় ম্যালেরিয়া সম্বন্ধীয় আইন হইতেই প্রাপ্ত হওয়া যায় ম্যালেরিয়াক্রান্ত স্থানে সকল সরকারী ও সাধারণ আফিস, সকল রেলওয়ের বাড়ী, এবং সকল সরকারী কনট্রাক্টরের আফিসসমূহের দরজ জানালায় জন হইতে ডিসেম্বর মাস পর্য্যন্ত জাল দিতে হইবে, যাহাতে ঐসকল স্থানে মশা প্রবেশ করিতে না পারে। বেসরকারি কারখানার অধিকারীরা ঐরুপে জাল দিয়া তাহদের বাড়ী রক্ষা করিলে তাহার ম্যালেরিয়া ফাগু হইতে ১• • • ফ্রাঙ্ক (প্রায় ৬০০ টাকা ) পর্য্যন্ত পুরস্কার পাইবেন। যতদূর সম্ভব ভূম্যধিকারীগণ তাহদের বাটার জল নিকাশের স্থব্যবস্থা করিবেন এবং কোন মতেই ছোট ছোট গৰ্ত্ত বা ডোবায় জল জমিতে দিবেন না। রাস্ত এবং পালের কণ্টাক্টরগণকে এমন করিয়া মাটি কাটিতে হইবে যে, জল জমিতে পারে এরূপ গৰ্ত্ত কোথাও না থাকিয় যায়। স্বাস্থ্যবিভাগের কৰ্ম্মচারীগণ যদি ঐসব ঠিকাদারদিগের দোষ দেখিয়া উপেক্ষ করেন তবে তাহার নিজেই দণ্ড পাইবেন। পূৰ্ববিভাগের ঠিকাদারদিগকে স্বাস্থ্যবিভাগ হইতে এই সৰ্ত্তে হুকুম লইয়া কাজ করিতে হইবে যে রাস্ত বা খাল প্রস্তুত করিতে যে মাটির আবখ্যক হইবে, স্বাস্থ্যবিভাগের নিদিষ্ট স্থান হইতেই তাহ লইতে হইবে এবং এইজন্য যে-সকলু থানা খন্দ হইবে তাহা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভরাট করিয়া দিতে হইবে । যাহার এরূপভাবে ধানের চাষ করিতে পরিবেন, যে, তজ্জন্য কোথাও, জল জমিবে না, তাহাদিগকে উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হইবে। এতদ্ভিন্ন সরকারি বেসরকারি সকল মনিবই নিজ নিজ অধীনস্থ সকল লোককেই কুইনাইন দিবেন। প্রত্যেক ম্যালেরিয়াক্রান্ত বিভাগে দুই মাইলের মধ্যে . কুইনাইনের দোকান থাক চাই। এখন দেখা যাউক আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া নিবারণের কি কি উদ্ধায় বলম্বিত হইয়াছে। বলা বাহুল্য এ বিষয়ে • গবর্ণমেণ্টের বিশেষ মনোযোগ আছে। ভারতগবর্ণমেণ্টের বৰ্ত্তমান সার্জন জেনারেল সার পার্ড লুকিসের এ বিষয়ে উৎসাহ ও উদাম যথেষ্ট আছে। কিন্তু এখানে স্বাস্থ্যবিভাগের • কার্ধ্য সবে আরম্ভ হইয়াছে। ১৮৪৯ সালে ইংলণ্ডে একবার প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ কলের রোগে প্রায় ৩৫ • • • লোক মারা যায় । সেই সময় - হইতেই ইংরেজের স্বাস্থ্যতত্বের মূল্য বুঝিয়াছে। আমাদের ' প্লেগের মহামারীতে ঘুম ভাঙ্গি য়াছে। তবে গবর্ণমেণ্ট এ বিষয়ে আমাদিগের অপেক্ষ অনেক অগ্রসর । বাঙ্গল৷ গবর্ণমেণ্ট বংসরে জল নিকাশের জন্য ও পল্লীগ্রামে স্বাস্থোর উন্নতির জন্য যথাসাধ্য অর্থ ব্যয় করেন। এতদ্ব্যতীত মিউনিসিপালিটিগুলি বৎসর বংসর ৩৪৩৫ লক্ষ টাকা কেবল স্বাস্থোর উন্নতির জন্য খরচ করেন । ইহাতেও গবর্ণমেণ্টের অনেক সাহায্য আছে। কিন্তু আমাদের ভার আমরা নিজে বহন করিতে চেষ্টা না করিলে কেহই আমাদিগকে সাহায্য করিতে পরিবে না। এখন আমাদের ভাবিবার বিষয় বেশী ! নাই, করিবার অনেক আছে। ম্যালেরিয়া নিবারণের জন্য বন জঙ্গল পরিস্কার কর চাই, বসতবাটীর নিকটস্থ ( ১০০ গজের মধ্যে ) ডোবা গান ভরাট করা চাই,—ছোট ছোট । পগার খাল পৃথক পৃথক থাকিলে তাহাদিগকে একত্র করিয়া, । জল নিকাশের সুবিধা করিয়া দেওয চাই। এতদ্ভিন্ন যে সকল ভাইভগ্নীর রোগগ্রস্ত হইবে, তাহাদিগকে যথাসাধ্য কুইনাইন সেবন করান চাই। কলেরা নিবারণের জন্য প্রত্যেক পল্লীতে পরিষ্কার পানীয় জলের স্বব্যবস্থা কর! চাই এবং আহার্য্য দ্রব্য যাহাতে মক্ষিক-স্পর্শে দূষিত না হইতে পারে তাহার বন্দোবস্ত করা চাই। সহরে নিবারণের জন্য ধনহীন ভ্রাতাভগ্নীদিগের নিমিত্ত স্বাস্থ্যকর বাসগৃহ ও যথেষ্ট পরিমাণে পরিস্কার মাছ ও পুষ্টিকর। বসন্ত ও প্লেগ নিবারণের । আহারের বন্দোবস্ত করা চাই। জন্যও উপযুক্ত টীকা প্রভৃতির বন্দোবস্ত করা চাই। সৰ্ব্বোপরি এই-সকল উদ্দেশ্যের সফলতা সমাজের লোকের শিক্ষার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। সেবা সমিতি প্রতিজ্ঞ করুন যে স্বাস্থ্যতত্ত্বের জ্ঞানের প্রচার । তাহাদের জীবনের ব্রত হইবে । একদিনে কিছু হইবে না, - কিন্তু সমবেত হইয়া, বদ্ধপরিকর হইয়া, আমরা কাজ আরম্ভ । করিলে নিশ্চয়ই বিধাতার রূপায় সফল হইব । কর্তৃব্যের ভার কখনও মানবের শক্তি অপেক্ষ অধিক ठ्श न| । ভারতের সেই অতীতের আত্মোৎসর্গময়ী শক্তির আরাধনা করিয়া, সকলে আপনাকে ভুলিয়, সকলে একত্ব হইয়৷ সমবেত সামর্থকে পরসেবায় নিযুক্ত করিলে সব বাধা দূর । আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তব-রাজ্যের মধ্যে হইয়। যাইবে । নূতন সেতু নিৰ্ম্মিত হইবে। প্রতিকূল ঘটনার খরস্রোতা পদ্মা ও তাহ নষ্ট করিতে পরিবে না। • শ্ৰীনীলরতন সরকার ।

  • বঙ্গীয় হিতসাধন-মণ্ডলীর অধিবেশনে পঠিত ।

যক্ষারোগ । সেবা-ব্রতের শক্তির সীমা নাই। একবার । [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ১ম সংখ্যা ] --l. ~ , ইতিহাস চর্চার প্রণালী এই যে দেশময় ইতিহাস-চর্চার একটা প্রবৃত্তি জাগরুক হইয়াছে, এই যে কেহ কেহ দুঃখ করিয়া বলিতেছেন ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ছোটগল্পকে বাঙ্গলা মাসিকের পৃষ্ঠা হইতে নিষ্কাশিত করিয়াছে, এ স্ব-খবর যদি সত্য হয়, তবে জাতীয় মনের এই বিকাশ সম্বন্ধে সাহিতা-নেতা ও পরিষংগুলির এক গুরুতর কৰ্ত্তব্য উপস্থিত হইয়াছে, তাহা আর বেশীদিন অবহেলা করিলে চলিবে না। আমাদের কৰ্ত্তব্য, এই নবজাগ্রত ইতিহাস-সেবার চেষ্টাকে সমবায়-স্বত্রে বঁধি, এই উদ্যমকে উপদেশ দ্বারা সংযত ও উচিতপথে চালিত করি, যেন বাঙ্গালীর মস্তিষ্কের অপব্যয় না হয়, যেন শ্রমের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ফল উৎপাদন হয়, যেন যন্ত্রের বা প্রণালীর দোষে ঐতিহাসিক কারিগরের প্রস্থত দ্রব্যগুলি অঙ্গহীন বা ভঙ্গুর আকার ধারণ না করে। স্বধীমণ্ডলীই এই কাজ করিতে পারেন। ব্যক্তিবিশেষ একাকী এই কাজ করিতে সক্ষম নহেন, তাহার অধিকারও সাধারণে স্বীকার না করিতে পারে। সকলেই জানেন যে, কারিগর যেরূপ যন্ত্র হাতে পায় এবং যেরূপ প্রণালীতে কাজ করে, তাহার প্রস্বত দ্রব্যও তেমনি হয়। মহামেধাবীর সুদীর্ঘ পরিশ্রমের ফলও যন্ত্রের দোষে বিত্র ও অকাৰ্য্যকর হয়। আর উচিত প্রণালী অবলম্বন না করিলে সমস্ত চেষ্টা বার্থ হয় । - ইতিহাস-চৰ্চার যাঙ্গ শ্রেষ্ঠ পন্থা তাঙ্গ বৈজ্ঞানিক পন্থ। দেশকাল ভেদে বা বিষয়ের পার্থক্য অনুসারে এই পন্থাটি ভিন্ন হয় না, কারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রের সকল বিভাগেই ইঙ্গ সমান কার্যাকর, এবং সৰ্ব্ববিধ সত্যের অন্তরে ইত নিহিত রহিয়াছে। আমরা যদি জাতীয়তার অভিমানে মত্ত হইয়া, এই প্রথা নব্য ইউরোপীয়গণ অবলম্বন করিয়াছেন বলিয়৷ ইহাকে অবহেলা করি, তবে আমাদেরই ক্ষতি হইবে। জগং অগ্রসর হইবে ; শুধু আমরা মধ্যযুগে পড়িয়া থাকিব । আমাদের রচিত ইতিহাস বিজ্ঞান-বিরুদ্ধ সুতরাং অশুদ্ধ হইবে ; এবং বিদেশীরা বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে যে ইতিহাস রচনা করিয়া যাইতেছেন তাহাই সত্যের বলে বলীয়ান ইয়া কিছুদিন পরে আমাদের প্রাচীন ধরণের ঐতিহাসিক ইতিহাস চর্চার প্রণালী રજ ০৭:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৭:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৭:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) জল্পনা কল্পনাকে পরাস্ত করিবেই করিবে। কারণ ঋষিবাক্য মনে রাথিবেন—“সত্যই জয় লাভ করে, অসত্য করে না ।” ঐতিহাসিকের কি উদ্দেশ্য তাহ বুঝিলে ইতিহাস লিখিবার শ্রেষ্ঠ প্রণালী জানিতে পারা যায়। প্রকৃত ইতিহাস অতীতকে জীবন্ত করিয়া চোখের সামনে উপস্থিত করে ; আমরা যেন সেই স্বদর কালের লোকদের দেহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহাদের ভাবে ভাবি, তাহাদের স্থখ দুঃখ আশা ভয় আমাদের হৃদয়ে অনুভব করি। এইরূপে অতীতকাল সম্বন্ধে অবিকল ও পূর্ণাঙ্গ সত্য উপলব্ধি করাই ইতিহাসের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সত্যের দৃঢ় প্রস্তরময় ভিত্তির উপর ইতিহাস দাড়াইয়া থাকে। যদি সেই সত্য নিৰ্দ্ধারিত না হইল, যদি অতীতের একটা মনগড়া ছবি খাড়া করি অথবা আংশিক ছবি অ কিয়াই ক্ষাস্ত হই, তবে ত কল্পনার জগতেই থাকিলাম । তার পর সে বিষয়ে যাহাই লিখি বা বিশ্বাস করি তাহা বালুকার ভিত্তির উপর তেতলা বাড়ী নিৰ্ম্মাণের চেষ্ট৷ মাত্র। সত্য-নিৰ্দ্ধারণের প্রণালী কি ? সৰ্ব্বপ্রথমে নিজের মনকে এই কার্যোর উপযোগী করিয়া তোলা। যশ, ধন, বা প্রতিপত্তি লাভের লালসা দূর করিয়া, নিজের অস্তরের অনুরাগ বিরাগ দমন করিয়া, সব পূৰ্ব্ব-সংস্কার ত্যাগ করিয়৷ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে – মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ ! মোরা বুঝিব সত্য, পূজিব সত্য, খুজিব সত্যধন ! সত্য প্রিয়ই হউক আর অপ্রিয়ই হউক, সাধারণের গৃহীত হউক আর প্রচলিত মতের বিরোধী হউক, তাহ ভাবিব না। আমার স্বদেশ-গৌরবকে আঘাত করুক আর ন করুক, তাহাতে ক্ৰক্ষেপ করিব না । সত্য প্রচার করিবার জন্য সমাজে বা বন্ধুবর্গের মধ্যে উপহাস ও গঞ্ছনা সহিতে হয়, সহিব ; কিন্তু তবুও সত্যকে খুজিব বুঝিব । গ্রহণ করিব। ইহাই ঐতিহাসিকের প্রতিজ্ঞ। ভারতের অতি প্রাচীন কালের কথা, মহাভারত রামায়ণ প্রভৃতির . রাজকাহিনী যদি কাল্পনিক বলিয়া ধরি তবে হিন্দুধৰ্ম্মের -