পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ গ্লানি হইবে, এই যে আমাদের একটি স্বাভাবিক ধারণা আছে তাহা উচ্ছেদ করিতে হইবে । প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে যে প্রমাণ না পাইলে কিছুই বিশ্বাস করিব না। প্রামাণিক ঘটনা হইতেই ইতিহাসের আরম্ভ । এই জন্য ইউরোপে ইতিহাস রচনায় এক ক্রমোন্নতির পারা দেখিতে পাই। জ্ঞানের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত পুরাতন মত, পুরাতন গ্রন্থ ঠেলিয়া সরাইয়া দেওয়৷ হইতেছে। আইনের পুস্তকের মত ইতিহাসেরও ক্রমাগত নূতন সংস্করণ কিনিতে হইতেছে। পিতামহদের সময় হইতে আগত বিশ্বাসের মূল পরীক্ষা করিয়া, সেই পুরাতন অট্টালিকাগুলি ক্রমাগত নিৰ্ম্মমভাবে ভাঙ্গিয় ফেলিয়া তাহাদের স্থানে নূতন নূতন গৃহ রচিত হইতেছে। ইহার কয়েকটি দৃষ্টান্ত কিছু পরে দিতেছি। সভ্যতা, সমাজ ও বিশ্বাসের বৃদ্ধি ও পরিবর্তন ইতিহাসের বিষয়ের মধ্যে বটে। ইহার মানবের লিখিত সাক্ষী না পাইলেও মানবের হাতের কাজ কত যুগ ধরিয়া পৃথিবীর নানা স্থানে সঞ্চিত আছে। কিন্তু ইতিহাস বলিতে আমরা সাধারণতঃ যাহা বুঝি তাহার আরম্ভ প্রামাণিক ঘটনা হইতে। প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ ও বিচার করা ঐতিহাসিকের সর্বপ্রথম কাৰ্য্য। এই মূল মন্ত্রটি এত সহজ, আপনার প্রত্যহ আদালতে, সাংসারিক কাজে ইহার এত ব্যবহার করেন, যে ইহার ব্যাখ্যা করা অনাবশ্যক বোধ হইতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের নান৷ প্রদেশে লিখিত আধুনিক ইতিহাস ও ঐতিহাসিক প্রবন্ধ পড়িয়া মনে হয় যে ইতিহাসের ক্ষেত্রে এ নিয়ম আমরা এখনও স্বীকার করি নাই । সাক্ষ্য পাইলেই আপনার তিনটি প্রশ্ন করেন,--( ১ ) Hátta got așteră firstCE ? grē first information অর্থাং প্রথম সাক্ষ্যের নকলটা সংগ্ৰহ হইয়াছে ত ? পুলিস ডায়েরীর গোপনীয় নকল কি করিয়া পাওয়া যায় ? (২) এই সাক্ষীটি ঘটনা জানিবার কি সুযোগ পাইয়াছিল ? এ কি স্বচক্ষে দেখিয়াছে, ন পরের কথা শুনিয়া বলিতেছে ? (৩) মোকদ্দমার কোন পক্ষের সহিত ইহার স্বার্থ .' জড়িত আছে কি ? প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রত্যেক ইতিহাস-লেখককেও পদে পদে এই প্রশ্ন তিনটি করিতে হয়। ঘটনা সম্বন্ধে যাহারী কিছু লিখিয়া গিয়াছে, তাহাদের নামের তালিক প্রস্তুত, শ্রেণী বিভাগ, পরম্পরের উক্তির বিরোপভঞ্জন ও সমালোচনা করিয়া, তবে ইতিহাস লেখা আরম্ভ করা উচিত । প্রথমে এইরূপ তালিকা ( critical bibliography ) at so a foil 157th প্রবৃত্ত হওয়া যে মহা ভ্রম তাহা আমরা এখনও সম্পূর্ণরূপে বুঝি না। বর্ণিত ঘটনার সর্বপ্রথম ও প্রধান সাক্ষীর উক্তি খুজিয়া বাহির করিতে হইবে। সমসাময়িক লেখক ন৷ থাকিলে, ঘটনার যত অদূরবর্তী সাক্ষী পাওয়া যায় ততই ভাল। পুরাতন বিবরণ সংক্ষিপ্ত বা কৰ্কশভাষায় লিখিত হইলেও, আধুনিক সময়ের সুদীর্ঘ ও সুললিত বর্ণনার উপরে তাহাকে স্থান দিতে হইবে। আদি গ্রন্থ পাইলে অনুবাদ } ব্যবহার করা অনুচিত । অথচ আমাদের দেশের অনেক ঐতিহাসিকের নিকট মুড়ী মুড়কী এবং সীতাভোগের একই দর। ঘটনা সম্বন্ধে যাহারাই দুকথা লিথিয়া গিয়াছে সকলেই সমান বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া আমরা মানিয়া লই ; বিচার করি না, সমালোচনা করি না, সত্যের আদি উংসে পৌছিতে চেষ্টা করি না। এই দেখুন, পাঠান যুগের ভারত-ইতিহাস লিখিতে গি৷ আমরা ফিরিয়তা এবং আলবাদামুনীর উপর, এবং সপ্তদশ শতাব্দীর মুঘল সম্রাটগণ সম্বন্ধে থাকি থার উপর অন্ধভক্তি করিয়া নিজ নিজ গ্রন্থ রচনা করি। অথচ এই তিন লেখকই বর্ণিত ঘটনার অনেক পরে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ঐ ঐ যুগের সমসাময়িক বিবরণ হইতে শুধু সংকলন করেন। আমরা সেই-সব সমসাময়িক বিবরণ গ্রহণ করিতে চেষ্টা l করি না ; তাহ যে গ্রহণের উপযোগী এ কথাও মনে মনে বিশ্বাস করি না। একজন সমসাময়িক সাক্ষর বিরুদ্ধে হাজার জন পরবর্তী যুগের নকলনবিশ খাড়া হইলেও ঘটনা সম্বন্ধে তাহাদের সাক্ষ্যের কোন মূল্য নাই ; তাহাদেৱ । কথা সমালোচনা হইতে পারে, ইতিহাসের মূল উপাদান নহে,–এই সত্যটি কার্য্যত: মানিয়া লই না । আবার, সাক্ষীটি সত্য জানিবার কতটুকু স্থযোগ পাইয়াছিল, তাহ দেখা আবশ্যক। এই যেমন, শাহজাহানের . ১ম সংখ্যা ] "ു পুত্র শৃঙ্গ। আরাকানে মারা যান ; সেখানে হিন্দু মুসলমানের "যাতায়াত নিষেধ ছিল, মগরাজা ওলন্দাজ ও পর্তুগীজ ভিন্ন অন্য বিদেশীকে তাহার রাজ্যে ঢুকিতে দিতেন না। এই ইউরোপীয় বণিকগণ শূজার শেষ দশ সম্বন্ধে যে সংবাদ ভারতে তাহাদের কুঠাতে প্রেরণ করে তাহা বর্ণিয়ারের ভ্রমণবৃত্তান্তে কিছু কিছু, এবং আর্ডিন-অনূদিত মাহশীর আত্মজীবনীতে বিস্তৃতভাবে দেওয়া হইয়াছে। অথচ আমাদের লেখকের অন্য সব স্থান হইতে নানা গুজব সংগ্ৰহ করিয়া প্রবন্ধ পূরণ করেন, এই দুই গ্রন্থ দেখেন না, দেখিলেও ইহাদের উক্তি সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া গ্রহণ করেন না। আদি সাক্ষীর অনুসন্ধান করায় বিলাতে ইতিহাসক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রবিপ্লবের ন্যায় পরিবর্তন হইতেছে তাহার দুই একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি । চারি শত বৎসর ধরিয়া ইংলণ্ডরাজ ৩য় রিচাড়া ইতিহাসে নরপিশাচ বলিয়া বর্ণিত হইয়া আসিতেছেন। অধুনা সার ক্লেমেণ্টস মার্কহাম এই বিশ্বাসের ভিত্তি পরীক্ষা করিয়া ইহাকে মিথ্যা বলিয়। প্রমাণ করিতে চেষ্ট৷ করিয়াছেন। আমরা পড়িয়া আসিতেছি যে স্পেনের ভিসিগথ বংশীয় শেষ রাজা রডেরিক তাহার সেনাপতি জুলিয়ানের কন্যার প্রতি অত্যাচার করায়, জুলিয়ান মুসলমানদের ডাকিয় রাজাকে বিনষ্ট করেন। কিন্তু ডোজি প্রভৃতির অতুসন্ধানের ফলে প্রমাণ হইয়াছে যে এই বিবরণটি উপন্যাস মাত্র , রমণীর প্রতি অত্যাচারের গল্প ঘটনার ছয় শত বৎসর পরে একজন ইটালীয় সন্ন্যাসী প্রথম রচনা করে ; জুলিয়ান বলিয়া কেহ ছিল না, স্পেন দেশীয় যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি মুসলমানদের পক্ষ লয় তাহার নাম আর্বান ; রডেরিক স্পেন রাজ্যের ন্যায্য অধিকারী ছিলেন না, ইত্যাদি। ফলত: আরবদের স্পেন-বিজয়-কাহিনী একেবারে নূতন করিয়া লিখিতে হইতেছে ; পুরুষগণের নাম ও চরিত্র, ঘুটনা-পরম্পর, ঘটনার কারণ পর্যান্ত বদলাইয়৷ দিতে হইতেছে। নেপোলিয়ন সম্বন্ধে তিয়র ( Thiers ) যে ইতিহাস লিখিয়া যান, এবং যাহা আমাদের দেশে আদৃত যাবটের নেপোলিয়ন-চরিতের মূল, তাহ নানা দেশের সরকারী কাগজ পত্র ও গোপনীয় চিঠি অনুসন্ধানের ফলে এখন শিক্ষিত-সমাজে কাব্য বলিয়। ঘূণায় পরিত্যক্ত হয়। অথচ এই নব অনুসন্ধানের ফল যেখানে একত্রীভূত করা - ইতিহাস চর্চার প্রণালী

  • ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ/、ヘ/

९१ **Too Go Holland Rose's Life ി এর নাম পৰ্য্যন্ত আমরা অনেকে শুনি নাই। সেই যাবট লইয়াই আমরা নেপোলিয়ন জোসেফিন প্রভৃতির চরিত্র বর্ণনা করিতেছি। আমাদের দ্বিতীয় নীলমণি টডের “রাজস্থান”ও যে অনেকস্থলে অবিশ্বাসযোগ্য উপন্যাস মাত্র, একথা আমরা ভাবি না। আসল গ্রন্থ বৰ্ত্তমান থাকিতে অনুবাদের উপর নির্ভর করা যে কি ভুল তাহার একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। গ্র্যান্ট ডফের ‘মারাঠাজাতির ইতিহাস" এক উপাদেয় গ্রন্থ ; অথচ ডফ সাহেবের পণ্ডিত ভুল করায় আফজল খার দূতের . নাম শিবাজীর দূতকে দেওয়া হইয়াছে। এটি নগণ্য বিষয় নহে ; আফজল খার দূত যদি শিবাজীর টাকা থাইয় নিজ প্রভুকে বধ্যভূমিতে ভুলাইয়া আনিত তবে সে বিশ্বাসঘাতক হইত ; শিবাজীর দূতের পক্ষে ঐ কাজ ততদূর নীতিগর্হিত নহে । ors, Dow's History of Hindostan নামক একথান ইংরেজী গ্রন্থ অনেকে মুঘল সম্রাটদের অতি বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাস মনে করিয়া তাহার মত উদ্ধৃত করেন ; অথচ ডাওসাহেব সমসাময়িক ও প্রামাণিক কোন ফার্সী গ্রন্থ ব্যবহার করেন নাই, এবং যে-সব নব্য ফার্সী গ্রন্থের সাহায্য লইয়াছেন তাহারও বিশুদ্ধ বা অবিকল অনুবাদ দেন নাই ; অধিকাংশ স্থলেই নিজের কল্পনাবলে স্বরঞ্জিত কাহিনী লিখিয়াছেন। এখন পণ্ডিত-সমাজে কেহই ডাঙএর গ্রন্থকে ইতিহাস বলিয়৷ মানেন না। সমসাময়িক লেখককে অন্ধভাবে বিশ্বাস করিয়া পূৰ্ব্বে গ্রীস দেশের ইতিহাস রচিত হইত। কিন্তু এখন প্রস্তরফলক, মুদ্র, প্রভৃতির সাহায্যে এবং যুক্তিসঙ্গত সমালোচনার ফলে গ্রীস-ইতিহাসে যে কি মহা পরিবর্তন হইয়াছে তাহা বিউরী (Bury) প্রণীত History of Greece পড়িলেই বুঝিতে পারা যায়। সেইরূপ, ইসলামের অভু্যদয় ও আদিযুগের বিশুদ্ধ ইতিহাস নবপ্রকাশিত Cambridge n/eda and Historyতে লিপিবদ্ধ হইয়াছে। ইহাতে - অনেক ভ্রম দূর করে। - - অতএব যদি মারাঠী-ভাষাবিদ লেখক শুধু গ্র্যান্টডক্ষ - অবলম্বনে এবং ফাসী-জান লেখক ডাও অবলম্বনে ইতিহাস লেগেন তবে সে পুস্তকের মূল্য কি ? তাহ আমাদের জ্ঞান .