পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

85ν ডেন্সীতে শিক্ষার বিস্তার বেশী বলিয়া টলকের বহি বেশী বিক্ৰী হইয়াছে, বলিলে চলিবে না। টিলকের মত বিদ্বান কোন লোক যে বঙ্গে গীত সম্বন্ধে বহি লেখেন নাই, তাহাও নয়। ভক্তিভাজন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় দর্শনে পাণ্ডিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ এবং তাহার দার্শনিক প্রতিভা অসামান্য। তাহার “গীতাপাঠ" কয়খানি বিক্ৰী হইয়াছে? অনেক উদারচরিত ব্যক্তি খৃষ্টধৰ্ম্মাবলম্বী বেকন, বার্কলীর বহি নিৰ্ব্বিবাদে পড়েন, কিন্তু ব্রাহ্ম বলিয়া হয় তদ্বিজেন্দ্রনাথের লেথ না পড়িতে পারেন । তজন্য জিজ্ঞাসা করি, হিন্দু এবং বিদ্বান বলিয়৷ বিখ্যাত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয়ের "গীতায় ঈশ্বরবাদ” কয়দিনে, কয় সপ্তাহে, কয়মাসে বা কয় বংসরে কত হাজার বিক্ৰী হইয়াছে ? অন্য গভীর বিষয়ের বহিই বা কয়থানি বিক্ৰী হয় ? যদি বলেন, টিলক খুব লোকপ্রিয় ; তাহ হইলে জিজ্ঞাসা করি, অামাদের বঙ্গের হিন্দু নেতারা ওরূপ লোকপ্রিয় নন কেন ? যদি বলেন, টিলক জেলে গিয়াছিলেন, অতএব তাহার গীতার কাটুতি হইয়াছে বেশী। কিন্তু আমাদেরও ত কয়েক জন নেতা জেলে বাস করিয়াছিলেন। র্তাহীদের বহি পড়িবার জন্য তা লোকের এত আগ্রহ হয় নাই। মহারাষ্ট্রেও দলাদলি আছে; বাঙ্গলাদেশের চেয়ে মজবুত রকমের দলাদলি অাছে। আমরা আজ চরমপন্থী সাজিয়া যাহাকে গালাগালি দি, কালই তাহার দলভূক্ত হই বা তাহার চাকরী করি। কিন্তু মহারাষ্ট্রীয় এত সহজে নোয় না। এই সেদিন চরমপন্থীরা পুণায় প্রাদেশিক সমিতি করিল। তাহ বাতিল ও নামঞ্জুর বলিয়া ঘোষণা করিয়া বোম্বাইয়ের নরমপন্থী নেতারা আবার পুণাতেই প্রাদেশিক সমিতি বসাইয়াছেন। আমরা এরূপ দলাদলির প্রশংসা করিতেছি না। কেবল দেখাইতেছি যে মহারাষ্ট্রে বাংলার চেয়ে শক্ত রকমের দলাদলি আছে। সাহিত্যক্ষেত্রেও ঠিক্ এই রকম দলাদলি সেখানে আছে। যেমন, এক ঐতিহাসিক রাজাওড়ের দল, এক তাহার বিরোধী দল। এসব সত্বেও টিলকের বহি বিক্ৰী হইয়াছে। । তথায় দলাদলি নাই, অতএব বিক্ৰী বেশী হইয়াছে, বঙ্গে দলাদলি আছে, অতএব বিক্ৰী কম, এরূপ বলিবার জো নাই। প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২২ { ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড বাঙ্গালীর সাহিত্যাগুরাগের অল্পতার কারণ তবে কি? আমাকে কোন কোন ভারতবর্ষীয় ইংরেজীপুস্তকপ্রকাশক বলিয়াছেন যে স্কুলকলেজপাঠ্য ছাড়া অন্তবিধ ইংরেজী বহি বাঙ্গল দেশে অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে কম বিক্ৰী হয় ; ইংরেজী মাসিকপত্রও অন্যান্য প্রদেশ অপেক্ষা বাংলায় কম পঠিত হয়। আমাদেরও অভিজ্ঞতা এইরূপ। বাঙ্গালী যে খুব বেশী বাংলা বহি ও মাসিকপত্রাদি পড়ে বলিয়। ইংরেজী পড়ে না, তাও নয়। শুনিয়াছি মরাঠী একখানি মাসিকপত্রের এত গ্রাহক আছে যে বাংলা কোন মাসিকের তাহার অৰ্দ্ধেক গ্রাহকও নাই। এমন হইতে পারে যে বঙ্গে সাহিত্যক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র অপেক্ষ দলের সংখ্য বেশী। বাস্তবিকই তামাদের অবস্থা এরূপ যে মনে হয় যেন আমাদের মধ্যে সিপাহী অপেক্ষা সেনাপতির সংখ্যাই অধিক । মোটামুটি যাহাদের মত ও আদর্শ এক রকমের তাহারাও একত্র কাজ না করিয়া বিচ্ছিন্ন হইয়া শক্তিক্ষয় করেন। ঈর্ষ্য পরশ্ৰীকাতরতা থাকিলে দল বাধে না । ইহাও সত্য, যে, বড় ধিনি, ছোটকে ছাড়িয়া তাহার সাফল্য হয় না, ছোট যিনি, তিনি হাম-বড় হইলে অকেজো হইয় পড়েন। বাংলাদেশে অনেকের মধ্যে শ্রেষ্ঠতার একটা শূন্যগর্ভ অহঙ্কার আসিয়া পড়িয়াছে। অন্যান্য প্রদেশের উন্নতি ও কৃতিত্বের খবর তাহার রাখেন না । সেইজন্য সৰ্ব্বজ্ঞতা ও বিজ্ঞতার দম্ভে লোকের প্রীতি ও শ্রদ্ধা হারাইতেছেনL বঙ্গের সকল দলেই সম্ভবতঃ সারগ্রাহী ও গুণগ্রাহী লোক থাকিলেও গালাগালিবাজ কুৎসানিপুণ লোকদের আধিপত্য বাড়িয়াছে। বিদেশে বাঙ্গালীছাত্রের কৃতিত্ব। ঐযুক্ত হেমেন্দ্রনাথ সেন ও শ্ৰীযুক্ত বিমানবিহারী দে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-এস্লী উপাধি পাইয়াছেন। ইহার উভয়েই কলিকাতা-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাদ বৃত্তিপ্রাপ্ত। লণ্ডন-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষাই বড় কঠিন ; ডি-এস্পীর ত, কথাই নাই। এই উপাধি অতি অল্প লোকেই পাইয়া থাকে। ঐযুক্ত স্থধাময় ঘোষ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএস্লী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ਾ

৪র্থ সংখ্যা ]

ছেন। ইহাও কঠিন পরীক্ষ। শ্ৰীযুক্ত নরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত আমেরিকায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি | পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছেন। হার্ভার্ড বিলাতের অক্সফর্ড কেন্থিজের সমকক্ষ। কেন্ধিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ট্রাইপস্ (বি-এ অনাস) পরীক্ষায় প্রযুক্ত & প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীস প্রথম স্থান অধিকার করিয়া আড়াই * - বৎসরের জন্য বাধিক ১২০০২ টাকা গবেষণা-বৃত্তি পাইয়া ছেন। ভারতীয় কোন ছাত্র এ পর্য্যস্ত এই পরীক্ষায় এরূপ কৃতিত্ব দেখাইতে পারেন নাই । 校* শূকর না মানুষ ? - বর্নেস নামক একব্যক্তি প্রায় সন্ধ্য ৭ টার সময় কাশীর জেলের হাতায় বন্তশৃকর শিকার করিতে যায়। দূরে কালমত একটা কি দেখিয়া সেটাকে শূকর মনে করিয়া সে গুলি করে ; কিন্তু তাহ শূকর ছিল না, এক জন দেশী মানুষ (মাজিষ্ট্রেট হামিণ্টন ‘নেটিভ" কথাটি প্রয়োগ করিয়াছেন )। মাজিষ্ট্রেট বলেন, পগার-দেওয়৷ জেলের হাতার মধ্যে এই নেটিভের বিদ্যমান থাকিবার কোন অধিকার ছিল না। অবশু, বার্নে জেলের কোন কৰ্ম্মচারী না হইলেও এবং লক্ষ্যীভূত পদার্থ টা মানুষ কি শূকর তাহা পরিষ্কার বুঝিতে না পারিলেও, জেলের হাতায় গুলি করিবার অধিকার তাহার নিশ্চয়ই ছিল ! মান্ডক, মজিষ্ট্রেট হামিণ্টন নেটভটার জেলের হাতায় অনধিকার অস্তিত্ব সত্ত্বেও, এতটুকু বলিয়াছেন যে ঐ ব্যক্তি জেলের কোন কৰ্ম্মচারীর চাকরও ত হইতে পারিত ; ভাল করিয়া না দেখিয়া গুলি কর আসামীর উচিত হয় নাই। তবে কি না ফৌজদারী সোপর্দ হওয়ায় তাহার বড় উদ্বেগ হইয়াছে, এই উৎকণ্ঠারূপ শাস্তিই তাহাকে পুনৰ্ব্বার এইরূপ কাৰ্য্য হইতে বিরত রাখিবে । তথাপি তাহার ১৫০২ টাকা জরিমান হইয়াছে। ঐ টাকা মৃত ব্যক্তির বিধবা পত্নী ভাগীরথী পাইবে। তাহা দ্বারা তাহার জীবিকা অর্জনের -নিশ্চিত §otto &a ("will effectively aid the widow of the deceased in gaining a livelihood") আমাদের বিবেচনা ইহা অত্যন্ত অবিচার হইয়াছে। বিবিধ প্রসঙ্গ—দুর্ভিক্ষ 8రిసె দওও বড় কঠোর হইয়াছে। যদিও জেলের হাত চাদমারী নয়, শিকারের জায়গাও নয়, তথাপি দেশী লোকটার সেখানে যাইবার আগে গণকের বাড়ী হইতে জানিয়া যাওয়া উচিত ছিল যে সেদিন সেখানে শূকরশ্রমে মানুষ খুন হইবে কি না। যখন সে তাহ করে নাই, তখন বানেসের দোষ কি ? অার আসামীর যে দারুণ উদ্বেগ হইয়াছিল, তাহার উপর আবার ১৫৩২ টাকা জরিমানা আদায় করিয়া বিধবা ভাগীরথীকে দেওয়া বড়ই অস্কায় হইয়াছে। লোকটা শূকরের মত কাল চেহারা লইয়। গুলি খাইয়া মরিয়া বানের্সকে এত উদ্বেগের মধ্যে ফেলিয়াছিল বলিয়া বরং তাহার স্ত্রী ভাগীরথীর নিকট হইতে উদ্বেগের ক্ষতিপূরণস্বরূপ। কিছু টাকা লইয়া বানেসকে দিলে স্ববিচার হইত। তাহার পর, একজন দেশীলোকের জীবনের মূল্য দেড় দেড় শত টাকা, নয় হাজার ছয়শত পয়সা, আটাশ হাজার আটশত পাই, ধার্ধ্য করা বড়ই বাড়াবাড়ি । পরের পয়সায় এরূপ বদাঙ্গতা হামিণ্টন ফের যেন না করেন। আমাদের মনে সামান্য একটু সন্দেহও হইতেছে। দেশী লোককে হঠাৎ গুলি করিয়া বসিলে ইংরেজদের গুরুতর কিছু শাস্তি ত প্রায়ই হয় না; একথা ভারতপ্রবাসী ইংরেজদের অবিদিত নাই। স্বতরাং এরূপ মোকদমায় অভিযুক্ত হইলে আসামীদের উদ্বেগ হয় কি না, তাহাই আগে নিৰ্দ্ধাৰ্য্য। -- আমাদের অনুমান এই যে তাহাদের বিশেষ কিছু উদ্বেগ হয় না। অতএব বানেসের উদ্বেগ হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া লওয়া বোধ হয় মাজিষ্ট্রেট হামিণ্টনের ভ্রম হইয়াছে। কিন্তু এরূপ তুচ্ছ ব্যাপারে এমন সামান্য এক-আধটা ভুলচুক্ৰ হইয়াই থাকে। মাজিষ্ট্রেট হইলেও, হাজার হউক মানুষ ত বটে। কুতরাং এ বিষয়ে আর বেশী আলোচনা করা উচিত নয়। -o-o: -- o o ত্রিপুর, নোয়াখালি, বাখরগঞ্চ, রংপুর, প্রভৃতি জেলায় তুর্ভিক্ষ হইয়াছে। অনাহারে মানুষও মরিয়াছে। গবর্ণমেন্ট সাহায্য করিতেছেন, সৰ্ব্বসাধারণেও কিছু করিতেছেন। সরকারী বা বেসরকারী সাহায্য যথেষ্ট হইতেছে কি না,