পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 o তোমাদের বৃহত্তর মাতৃভূমি বৃটিশসাম্রাজ্য। ভারতভূমি তাহার অংশ। ভারতভূমিকে একটা জমিদারী সম্পত্তি, দাসী, বা কামধেম মনে না করিয়া, জননীর প্রাপ্য ভক্তি ও প্রীতির অর্ঘ্য তাহাকে প্রদান করিও।" এই প্রকার উপদেশ বৃটিশ ঔপনিবেশিকদিগকে আরও বেশী করিয়া দেওয়া উচিত। আমরা সসাগর ধরিত্রীকে ম৷ বলিয়া থাকি। সুতরাং বস্কন্ধরার বিশেষ কোন অংশকে আমরা মা বলিবই না, এমন কোন প্রতিজ্ঞ আমাদের নাই। পৃথিবীকে বা বিশেষ কোন ভূখণ্ডকে যে জননী বলা হয়, তাহ রূপক হইলেও, ইহার মধ্যে নিগৃঢ়তর কথা আছে। তাহা বুঝান আমাদের এই আলোচনার অন্যতম উদেখা । আমরা বৃটানিয়ার আইন মানি, বুটনিয়াকে খাজনা দি, বুটানিয়ার যুদ্ধে প্রাণ দি, অথচ বুটানিয়। আমাদের মাতৃভূমির অংশ, এ ধারণা আমাদের এখনও জন্মে নাই। তাহার কারণ কি ? কারণ এই যে হৃদয়ের যোগ, আত্মীয়তবোধ এখনও জন্মে নাই। কোন জমিদারের বাড়ীর প্রজা বা কৰ্ম্মচারী খুব বাধ্য, খুব অযুগুহীত, খুব উপকৃত ও খুব কৃতজ্ঞ হইলেও, এমন কি জমিদারগৃহিণীকে মা বলিলেও, “গিল্পী মা’কে সে বাস্তবিক মা মনে করে না। কেননা, উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তা-বোধ নাই ; উভয়ের মধ্যে তফাৎ বহুৎ । তেলুগুভাষী ও সিন্ধীভাষীর ভাষা স্বতন্ত্র, বাসভূমি স্বতন্ত্র, এবং আচারব্যবহারও কিয়ং পরিমাণে স্বতন্ত্র হইলেও, উভয়েই ভারতীয় সভ্যতার দ্বারা গঠিত, উভয়ের অনেক প্রাচীন জনশ্রুতি ও কিম্বদন্তী এক, পূৰ্ব্বগৌরবস্থতি বহুপরিমাণে উভয়ের এক। ভারতবাসী হিন্দুমুসলমানকে আপাতদৃষ্টিতে খুব দূর দূর মনে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষের খুব প্রাচীন সভ্যতার সহিত মুসলমানের কোন সম্পর্ক না থাকিলেও, হাজার বংসর ধরিয়া হিন্দুমুসলমান ভারতীয় সভ্যতাকে, উহার স্থাপত্যাদি শিল্প, এবং সঙ্গীত চিত্র প্রভৃতি কলাকে গড়িয়৷ তুলিয়াছে। ভারতের মধ্য-যুগের এবং তাহার পরবর্তী যুগের আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্ষ্যে মুসলমানেরও সাধনার ফল নিহিত রহিয়াছে। গোবধঘটিত ঝগড়া মন হইতে দূর করিয়া দিয়া ভাবিলে বুঝা যায়, হিন্দুমুসলমানের ধর্শে ব্রত নিয়ম প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড আচার উপবাস সাধনায় কত ঐক্য আছে। এক কথায় বলিতে গেলে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই 215J | বিস্তৃত ভূভাগের সমুদয় শ্রেণীর অধিবাসীদের মধ্যে নানা পার্থক্য থাকিলেও যদি পূৰ্ব্বোক্ত প্রকারের আভ্যন্ত রীন আত্মীয়তাবোধ থাকে, তাহা হইলে সকলেই আপনা- . দের সাধারণ বাসভূমিকে জননী জন্মভূমি বলিতে পারে। এই জন্য ইংরেজ বা ফরাসীর পক্ষে ইউরোপকে মাতৃভূমি মনে করা তত শক্ত হইবে না, একজন ইংরেজের পক্ষে ভারতবর্ষকে মাতৃভূমি মনে করা যত কঠিন হইবে। ইউরোপের সভ্যতা, ইউরোপের মানসিক ঐশ্বৰ্য্য, ইউরোপের অনেক প্রাচীন ও অপেক্ষাকৃত আধুনিক গৌরবের স্মৃতি, সমুদয় ইউরোপীয় জাতির সাধারণ সম্পত্তি। কিন্তু ভারতবর্ষ, ইংলণ্ড এবং বৃটিশ উপনিবেশসকলের এই প্রকারের সাধারণ সম্পত্তি এখন কিছুই নাই বলিলেও হয়। ভবিষ্যতে হওয়া অসম্ভব, এমন কথা বলিতে পারি না। ভবিষ্যতে হয় ত হইতেও পারে। কিন্তু তাহা ততদিন কোন মতেই হইবে না, যতদিন একদল আপনাকে অনুগ্রাহক ও অন্যদল আপনাকে অতুগৃহীত মনে করিবে। লর্ড কারমাইকেলও বলিয়াছেন যে সহানুভূতির মধ্যে কোন মুরুবিয়ানা-রকমের অক্ষ গ্রহের ভাব থাকিলে চলিবে না। বৃটিশসাম্রাজ্যের সর্বত্র ভারতবাসীর স্বচ্ছন্দ বসবাস" গতিবিধির ব্যবস্থা হওয়৷ চাই, রাষ্ট্রীয় সমুদায় অধিকার ইংরেজ ও ভারতবাসীর সমান হওয়া চাই ; শুধু মুখের কথায় বা আইনের পাতায় নয়, কাজে হওয়া চাই। কিন্তু সমুদয় ব্রিটিশসাম্রাজ্যকে মাতৃভূমি মনে করিবার পক্ষে ইহাও যথেষ্ট নয়। ইহার উপর হওয়া চাই, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের রাসায়নিক মিশ্রণ সস্তৃত একটি সাধারণ যৌগিক সভ্যতা, একটি সাধারণ মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐশ্বৰ্য্যবোধ, জন্য পাঠকের ইচ্ছা হইতে পারে। ৪র্থ সংখ্যা ] SJSJSAMS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSMSS সমাধিসাধনা ও বিভূতি লাভ মাধবাচার্ধ্য বলিতেছেন যে, কাপালিক উগ্ৰভৈরব যখন শঙ্করকে বধ করিবার জন্য ত্রিশূল হস্তে অগ্রসর হইতেছিল, তখন শঙ্করাচার্য্য “অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে” অবস্থিত ছিলেন। সমাধি কি, অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিই বা কি, তাহ জানিবার ধৰ্ম্মসাধনার সঙ্গে সমাধি এবং দশা বা মূৰ্ছার (Trance) যোগ যে কেবল আমাদের দেশেই আবদ্ধ, তাহা নয়,—রোমীয় খ্ৰীষ্টবাদীদিগের মধ্যে এবং মোসলমান সুফি দগের মধ্যেও তাহা দৃষ্ট হয়। জানা যায় যে, সক্রেটিসেরও, সমাধি না হউক, এক প্রকার দশ হইত, এবং তখন তিনি নানা প্রকার বাণী শ্রবণ করিতেন। হজরং মহম্মদও একপ্রকার দশার অবস্থাতেই কোরানের সুর-সকল লাভ করিতেন। দশার অবস্থাতেই সুইডেনবাসী বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাধু স্বইডেনবর্গেরও নিউটন প্রভৃতির প্রেতাত্মার সহিত নানাপ্রকার বৈজ্ঞানিক ("absolute vacuum, etc.") fûcû* aftatfSai श्ङ । সাধারণ লোকের ধারণা যে, এই দশার অবস্থা স্বায়ুবিকদুৰ্ব্বলতা-জনিত। দশা ঘদিও স্বায়বিক-দুৰ্ব্বলতা-জনিত হইতে পারে, সমাধ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সেইরূপ বলা যায় না, কারণ 'সমাধি বিশেষ প্রণালী-বন্ধ সাধনার ফল । সমাধি ভারতেরই বিশেষ সম্পত্তি। আস্তিক-অনাস্তিক উভয়বিধ তত্ত্বজিঞ্জামুদিগের বিশেষ পরীক্ষিত। পাতঞ্জল-যোগ-স্বত্র প্রভৃতি গ্রন্থে সমাধি সম্বন্ধে যেরূপ দার্শনিক আলোচনা দৃষ্ট হয়, তাহাতে সমাধিকে স্বায়ুবিক বিকার মাত্র বলিয়া কোন মতেই উপেক্ষা করা যায় না। একথা সত্য যে, শ্বেতাশ্বতর প্রভৃতি আধুনিক উপনিষদ ভিন্ন অন্য উপনিষদে সমাধিসাধনার কোন উল্লেখ নাই। “আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্য: শ্রোতব্য: মন্তব্য: নিদিধ্যাসিতব্যঃ”—দর্শন শ্রবণ মনন এবং নিদিধ্যাসন বা পুনঃ পুন: ধ্যানেরই উল্লেখ। নিরীশ্বর বৌদ্ধদিগের মধ্যে এবং বৌ শিক্ষাপ্রাপ্ত 蠶 | artics গৌরবন্থতি। হইবে কিনা, বিধাতা তৎপরবর্তী পৌরাণিককালেই যে সমাধিসাধনার বিশেষ - -বিকাশ এবং বিস্তার হইয়াছিল, তাহাতে সংশয় নাই। - সে যাহা হউক, পাতঞ্জল-যোগস্থত্রে সমাধি এবং অসম্প্রজাত সমাধির যে বর্ণনা দৃষ্ট হয়, তাহারই সংক্ষিপ্ত ס\ السكـ________________________________ সমাধিসাধন ও বিভূতি লাভ 8 or 2 --০৮:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৮:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৮:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ সারাংশ আমরা পাঠকের সমক্ষে উপস্থিত করিতেছি। পাতঞ্জল ‘ধ্যানের সংজ্ঞা করিতেছেন—“প্রত্যয়ৈকতানতা" অর্থাৎ প্রত্যয় বা অনুভূতির একাগ্রতা বা একনিষ্ঠতা। ধ্যানের স্বরূপই প্রত্যয় বা অনুভূতি, এবং প্রত্যয় বা অচুভূতি বলিতে সেই প্রত্যয় বা অনুভূতির বিষয়ও তাহারই অস্তুরনিহিত। ধ্যান যখন গাঢ়ত্ব প্রাপ্ত হয়, পাতঞ্জলের মতে তখন তাহা স্বরূপ-শূন্য হইয়া অর্থাৎ আপন প্রত্যয়-স্বরূপত্ব বিশ্বত হইয়া সেই প্রত্যয়ের বিষয়ীভূত ধোয় বস্ততে লীন হইয়। ধ্যেয় বস্তুর আকার ধারণ করে, “অর্থমাত্রনির্তাসং’। ইহাকেই বলে “মনসো হামনীভাবঃ”। মনের অমনীভাবাত্মক সেই ধানকেই “সমাধি" নামে অভিহিত করা যায় (বিভূতিপাদ, ৩ ) । পাতঞ্জলের ব্যাস-ভায্যের টীকাকার বাচস্পতিমিশ্র বলিতেছেন—“ধহুধারী যেমন প্রথমে স্থললক্ষ্য বিদ্ধ করিতে করিতে পরে স্বাক্ষলক্ষ্যকে বিদ্ধ করিতে সক্ষম হয়, যোগীও সেইরূপ প্রথমে স্থল পাঞ্চভৌতিক চতুভূজাদি ধোয় বস্তুর সাক্ষাৎকার সাধন করিতে করিতে পরে স্বশ্নের সাক্ষাৎকার সাধন করেন।" পাঠক লক্ষ্য করিবেন এই সকল স্কুল পাঞ্চভৌতিক চতুভূজাদি ধোয় মূৰ্ত্তি সাধকের মনগড় মাত্র, অথবা “কৃষ্ণ কেমন ? যার মনে যেমন।” এইরূপ সমাধি সম্পূর্ণ পুরুষতা, স্ত্রীলোকে অগ্নিবুদ্ধির তুল্য। ইহাতে অগ্নিতে অগ্নি-বুদ্ধির ন্যায় শঙ্কর যাহাকে বলেন বস্তুতন্ত্রজ্ঞান তাহার কিছুই নাই। -- সমাধি দুই প্রকার—(১) সম্প্রজ্ঞাত বা সবীজ বা সালম্ব, এবং (২) অসম্প্রজ্ঞাত বা নিবীজ বা নিরালম্ব। আবার বীজ বা অালম্বনের ভেদ অনুসারে অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিও চারি প্রকার—(ক) স্থলবস্তু অবলম্বনে প্রবৃত্ত সম্প্রজ্ঞাত সমাধির নাম সবিতর্ক, (খ) বিতর্ক-রহিত সূক্ষ্মবন্ধ অবলম্বনে প্রবৃত্ত সম্প্রজ্ঞাত সমাধির নাম সবিচার, (গ) বিচাররহিত আনন্দমাত্র অবলম্বনে সম্প্রজাত সমাধির নাম আনন্দ এবং (ঘ) আনন্দরহিত অস্মিতা বা ‘আমি আছি এই প্রত্যয় অবলম্বনে প্রবৃত্ত সম্প্রজ্ঞাত সমধির নামূসাস্থিত। এই সম্প্রজ্ঞাত সমাধির নিরোধেই সর্বনিরোধ, এবং সৰ্ব্বনিরোধেরই নাম অসম্প্রজ্ঞাত, বা নিজীব বা নিরালখ সমাধি (সমাধিপাদ,৫২)। (তাহাই বৌদ্ধদিগের নির্বাণ কিনা, পাঠক বিবেচনা করিবেন)। অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি