পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8述br একটা পান মুখে পূরয়া খবরের কাগজ পড়িবার উদ্যোগ করিতেছি, এমন সময় পোষ্টমাষ্টার মেল রওয়ানা করিয়া আসিয়া বসিলেন। শিষ্টাচার এবং আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে অামি কপট বিনয়ের ভঙ্গীতে কহিলাম, “আপনাকে নিতান্ত বিত্রত করেছি।” পোষ্টমাষ্টার সহস্তে কহিলেন, “তার চেয়েও বিত্রত আপনাকে করতাম। যদি এই বৃষ্টিতে আপনাকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এই বৃষ্টি মাথায় করে গিয়েও যদি আপনার বিশেষ কোন স্ববিধ বা উপকার হত তা হলে বলতে হবে আমিই আপনাকে বিত্রত করেছি।" বলিয়া তিনি উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিলেন । যখন দেখা গেল কেহ কাহাকেও বিব্রত করি নাই, তখন পোষ্টমাষ্টার বেশ জমাইয় গল্প আরম্ভ করিলেন । বাহিরে বৃষ্টিও বেশ জমিয়া আসিয়াছিল। পোষ্টমাষ্টার এবং স্থলমাষ্টার সম্বন্ধে আমার প্রায় অভিন্ন সংস্কার ছিল। উভয়ের কথা মনে হইলেই নিরীহ অথচ রুক্ষ স্বভাবের প্রাণীর কথা আমার মনে হইত। ইহার সহিত অরক্ষণ কথাবার্তার পরই কিন্তু বুঝিতে পারিলাম ইনি দলছাড়া লোক। রুক্ষ ত নিশ্চয়ই নহেন, বাক্যে এবং ব্যবহারে ইহার মত মন্থণ ব্যক্তি আমি দ্বিতীয় দেখিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না; এবং নিরীহ শব্দ যে অর্থে ব্যবহার করিয়াছি তাহাও ইহার উপর প্রয়োগ করা কোন মতে চলে না। বাহিরে বৃষ্টি বোধ হয় থামিয়া গিয়াছিল, কিন্তু আমার সেদিকে মন ছিল না। আমি তন্ময় হইয়া পোষ্টমাষ্টারের গল্প শুনিতেছিলাম। নিত্যকার সংসারের তুচ্ছ মুখদুঃখের সাধারণ গল্প তিনি করিতেছিলেন, কিন্তু তাহতেই আমার মন এমন বসিয়া গিয়াছিল যে আমাদের কথাবাৰ্ত্তার মধ্যে কোন সময়ে পোষ্টমাষ্টারের কন্যাটি ঘরে প্রবেশ করিয়া এক কোণে টেবিলের সম্মুখে একখানি বই লইয়া বসিয়াছে তাহ আমি লক্ষ্যই করিতে পারি নাই। পাশ হইতে তাহার মুখের একটা দিক দেখা যাইতেছিল, এবং কেরোসিন ল্যাম্পের উজ্জল প্রভায় সেই আধখানি-দেখা মুখ একটি কমনীয় শ্ৰীতে মণ্ডিত হইয়া উঠিয়াছিল। প্রবাসী—এাবণ, ১৩২২ ു. 、ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ*ヘ。 এই মেয়েটি আমার নিকটে একটি রহস্তের মন্ত | হইয়া উঠিতেছিল। সে যে পোষ্টমাষ্টারের কন্যা তায় অহমান করিয়া লইয়াছিলাম, কিন্তু শুধু সেই পরিচয়েই নিবৃত্ত হইতে পারিতেছিলাম না। ইচ্ছা হইতেছিল পোষ্টমাষ্টারকে জিজ্ঞাসা করিয়া তাহার সকল সংবাদ অবগত হই। কিন্তু কোন মতেই তাহ পারিয়া উঠিতেছিলাম না। আমার নিজের বিবাহের বয়স উপস্থিত হইয়৷ রহিয়াছে | এবং অবিবাহিত জীবনের সীম৷ অতিক্রম না করায় এখনও নাবালকের শ্রেণীভূক্ত হইয়া রহিয়াছি এরূপ একটা অপরাধের জ্ঞান মনের মধ্যে সজাগ থাকায় একটি প্রাঞ্চ ৷ বয়স্ক এবং সুন্দর বালিকার কথা উত্থাপন করিতে বাধ-বা{ ঠেকিতেছিল। মনে হইতেছিল তাহা হইলে তখনই বিশ্বসংসার মনে মনে নিশ্চয় আমাকে সন্দেহ করিয়া বসিবে। কিন্তু কিছু পরে পোষ্টমাষ্টার স্বয়ং কন্যার কং তুলিলেন। সেইটিই তাহার একমাত্র দুহিতা এবং একমাত্ৰ সন্তান। মাতৃহীন হওয়ার পর হইতে তাহাকে পিতা এবং মাত৷ উভয়ের স্থান গ্রহণ করিতে হইয়াছে, কিন্তু মেয়েটি যেমন ক্রমশ: বড় হইয়া উঠিতেছে ততই যেন তাহদেৱ | মধ্যে সম্পর্কট। বিপরীত হইয়া দাড়াইতেছে। তাই তিনি ৷ মা ভিন্ন অপর সম্বোধন আর বড় ব্যবহার করেন না। বলিয়৷ হাসিতে লাগিলেন । | একজন অপরিচিত ব্যক্তির সম্মুথে নিজের বিষয়ে এরূপ অবাধ আলোচনা আরম্ভ হইল দেখিয় 'মধু' (পরে জানিয়াছিলাম মনোরম ) একটু যেন বিত্রত হইয়া উঠিল এবং দুই একবার একটু নড়িয়া চড়িয়া ইতস্তত: করি। পালইয়া বাচিল । প্রসঙ্গ উঠায় আমি সাহস করিয়ু কহিলাম, "এ মেয়েট যখন বিবাহের পর শ্বশুরবাড়ী যাবে তখন দেখচি আপনার দিন কাটান ভার হবে!" পোষ্টমাষ্টার আমার কথা শুনিয়া হাসিতে লাগিলেন। কহিলেন, “সে দুঃখ ত পরের কথা। তার জন্যে তত্ত্ব ভাবনা হয় না। সেই দুঃখ ভোগ করবার অবস্থায়ু ীি উপায়ে উপস্থিত হব তাই হয়েচে এখনকার ভাবনার কথা | আহার করলে বদহজম হবার ভয় ত আছেই, কিন্তু সেই | [ >¢* छाश, »३ ११ { ৪র্থ সংখ্যা] আহাৰ্য্য সংগ্রহ করবার জন্য দুশ্চিন্তা তার চেয়ে কম প্রবল নয়!" আমি কহিলাম, "কিন্তু আপনার এ মেয়েটির পক্ষে সে ভাবনার কোন কারণ নেই বলে আমার মনে হয়। আপনার মেয়েকে দেখে কেউ অপছন্দ করবে না।" পোষ্টমাষ্টার কহিলেন, “আপনি যে কথা বলছেন সে কথা বাঙ্গালাদেশের পক্ষে থাটে না। টাকা দিয়ে ঘেদেশে জামাই কেনবার প্রথা চলেছে সেখানে টাকার উপরই সব নির্ভর করে। আমার এ কথার প্রমাণস্বরূপ আপনাদের গ্রামেরই একট। নজীর দেখাতে পারি। এই গ্রামের কোন ভদ্রলোকের ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে মনোরমার বিবাহের কথা পাক হয়ে গিয়েছিল। পাত্রের দামও স্থির হয়ে গিয়েছিল তিন হাজার টাক। ছেলেটি তখন ডাক্তারীপরীক্ষ দেবার জন্য কলিকাতায় ছিল বলে আমি আমার একজন বন্ধুকে চিঠি লিখে দিই। সে মেসে গিয়ে ছেলে দেখে এসে আমাকে জানায় যে পত্রটি ভাল, দরে বিকোবার যোগ্য। কাজেই আমার মত লোককে তিন হাজার টাকাতেও রাজি হতে হয়েছিল। সমস্তই ঠিক হয়ে ৰুইল, শুধু পাত্র এলে উভয় পক্ষে আশী দ্বাদ হয়ে যাবে। এমন সময় গ্রামের জমিদার সেই পাত্রের উপর দশ হাজার বিশ হাজার কি একটা মস্ত দর ঠাকলেন। কথার মূল্যের চেয়ে চাদির মূল্য ঢের বেশী। কাজেই কথ। যা ছিল তা বদলে যেতে কিছুমাত্র বিলম্ব হল না। পাত্রের পিত আমাকে লিথলেন তিনি দুঃখিত কিন্তু অক্ষম। দুঃখিত কথাটা একেবারে মিথ্য, কিন্তু তিনি যে অক্ষম সে বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না।” বলিয়৷ পোষ্টমাষ্টার উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিলেন। আমি জানি না কেমন করিয়া আমার মুখ দিয়া বাহির হইয় গেল “অন্যায়, ভয়ানক অন্যায় !” এবং একটা অপমান ও হীনতার বেদনায় আমার সমস্ত দেহ ভরিয়া फेर्द्विज। পোষ্টমাষ্টার কহিলেন, “ন্যায় অন্যায়ের বিচার ছেড়ে দিলেও অবস্থাত এই ! এতে আপনি কি করে বলেন যে মেয়ের বিবাহ সম্বন্ধে আমার কোন ভাবনার কারণ নেই?" পোষ্টমাষ্টারের কথা ভাল করিয়া আমার কানে প্রবেশ & অর্থমনৰ্থৰ্ম SAMJAMAAASSSAAASSSAAASSSAAASSSAAASSJSSSSJSSSSJSSSSJSSSSJSSSSAAAASAAAA జనన করিতেছিল না। বিরক্তি ক্রোধ ও লক্ষায় আমার সমস্ত মন আচ্ছন্ন হইয়া উঠিয়াছিল। এ আচরণ যে সামান্ত সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় সম্বন্ধে হইলেও লজ্জাজনক হইত। ভদ্রলোকের কথা এবং ভদ্রলোকের কন্যা কি এমনই তুচ্ছ জিনিষ যে তাহা লইয়া যেমন ইচ্ছা খেলা করা চলে ! সে সম্বন্ধে কোন দায়িত্ব, কোন সন্ত্রমের প্রয়োজন হয় না! পিতার এই ব্যবহার স্মরণ করিয়া যতই মৰ্ম্মাহত হইতে লাগিলাম, মনোরমার সকরুণ মূৰ্ত্তিথানি ততই আমার মর্শ্বের মধ্যে অধিকার স্থাপন করিতে লাগিল। এই মনোরমা, যে আমার মনের অগোচরে এই দুইদিনে আমার হৃদয়ের মধ্যে এমন প্রবলভাবে অধিকার স্থাপন করিয়াছে, এই মনোরম। তাহার সমস্ত সম্পদ এবং সমস্ত মাধুর্ঘ্য লইয়া আমার আশ্রয়ে উপনীত হইয়াছিল। কিন্তু অর্থের লালসা তাহাকে ঘৃণিতভাবে ফিরাইয়া দিয়াছে ! তখনও বৃষ্টি পড়িতেছিল। কিন্তু আর অপেক্ষা করিব না স্থির করিয়া উঠিয় পড়িলাম। বিশেষত: পোষ্টমাষ্টারের নিকটে পাছে আত্ম-পরিচয় দিতে হয় সেই ভয় হইতেছিল। পোষ্টমাষ্টার কহিলেন, “বৃষ্টি এখনও থামেনি, এখনই কেন উঠছেন ?” - আমি কহিলাম, “এ বৃষ্টি থামতে বিলম্ব আছে, আর দেরি করব না।” পোষ্টমাষ্টার কহিলেন, "নিতান্ত যদি যাবেন তা হলে একটা ছাতি নিয়ে যান। কাল পাঠিয়ে দেবেন।" বলিয়া আমার আপত্তি সত্ত্বেও উচ্চকণ্ঠে কহিলেন, “ময়,-আমার ছাতিটা দিয়ে যাও ত মা !" মনোরম একটি ছাতি লইয়। উপস্থিত হইল এবং সেট আমার সম্মুখে রাখিয়া তাহার পড়িবার স্থানে গিয়া বসিল । কিন্তু মনে মনে যাহা ভয় করিতেছিলাম তাহাই ঘটিল। পোষ্টমাষ্টার কহিলেন, “আপনার সঙ্গে এতক্ষণ আলাপ করলাম, কিন্তু নামটি জানা হয় নি ত?" কি করিব প্রথমটা ঠিক করিতে পারলাম না। কিন্তু তখনই সামলাইয়া লইয়া বলিলাম, “আমার নাম বিনম্নভূষণ মিত্র।” পোষ্টমাষ্টার যেন একটু চমকিয়া উঠিলেন, কছিলেন, “আপনার পিতার নাম?” |