পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぐ〉8 প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । BBBBMMJBBBBBBJMMMM MMMMMMMMMMS চালের লাউটি ছিড়িতে, গৃহস্থের কলাগাছের বুকে ছুরি বসাইতে, নিদ্রিত ব্যক্তির মুখে চুনকালি মাথাইয়া মজা দেখিতে শ্ৰীমান সতুর ভারি আমোদ ! একদিন গ্রামের গদাধর বৈরাগী ঘুম হইতে উঠিবার পর অনুভব করিল, যেন তার মাথাটা বিশেষ হালকা হইয়া গিয়াছে। সন্দেহের বশে বাবাজী মাথায় হাত বুলাইয়া সবিস্ময়ে দেখিল, যে, তার একহস্ত পরিমিত বহুদিনের যত্নবৰ্দ্ধিত তৈলসিক্ত শিথাটি মন্তকে নাই! টিকিট যে কিরূপে অন্তষ্ঠিত হইল, তাহা সে কিছুতেই অনুমান করিয়৷ পাইল না। অবশেষে ভৌতিক কাও বলিয়াই মনে মনে স্থির করিয়া লইল । কিন্তু কিছুদিন পরে তাহার সে সন্দেহ দূর হয়। একদিন সে দেখিতে পায়, সতু একজোড়া বিশাল কৃত্রিম গোফ পরিয়া সদলবলে হাসিতে হাসিতে রাস্ত গুলজার করিয়া চলিয়াছে! বাবাজী সেই গোফজোড়াটি দেখিয়াই নিঃসন্দেহে চিনিতে পারে, সে তাহারই মাথার কর্তিত টিকি ! সেই ইস্তক গদাধর কবাটে খিলনা দিয়া ঘরে শুইত না । তা, ইহাতে তোমরা সতুকে দুষ্টই বল, আর পাজীই বল, তার মুখ্যাতিও করিতে হইবে। শুধু দোষটি ধরিলে চলিবে কেন? তার গুণের দিকে চাহিয়া দেখ, দেখিবে, সে একটি অমল সরল প্রফুল্ল কুসুম ! সমীরণে কুমুমের যে চপলতা, তা লোকের প্রতিপ্রদই হইয়া থাকে। গোলাপের বোটায় কাটা থাকে, তাতে কি কেহ গোলাপের অনাদর করে ? সতু দুষ্ট, তবু তাকে লোকে ভালবাসিত, তার অনেকগুলি কারণ ছিল। প্রথমতঃ, তার মুখখানিতে এমন একটা সরলতাময় সৌন্দর্য্য মাথান ছিল, যাতে লোকের মন সহজেই আকৃষ্ট হইত। তারপর তার গুণ। সেই এগার বৎসরের ছেলের প্রাণে যে-সকল উচ্চবৃত্তি লুকান ছিল, তাহ অনেক সাধুনামধারী ধাৰ্ম্মিকাভিমানী ব্যক্তির হৃদয় খুজিলে পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ ! একদিন রামাবাগীর বড় জর হয়। রামচন্দ্রের এমন কেহই নাই, যে, তাহার রোগের একটু শুশ্রুষা করে। সতু সমস্ত দিনটি বসিয়া, তাহার মাথা টিপিয়াদিয়াছিল। এমন কে করে ? এমন কাজ সে অনেক করিত। তবে সংবাদপত্রে তার নামটি বাহির হয় নাই বটে। তার কাছে আপন পর - हिनना a cनीकन शाड़ि बलिं भूत्रिशबड़ाईल, हो? ছোট ছেলেমেয়েগুলিকে কোলে করিয়া আদর করিত, বৌঝিদের সঙ্গে গল্প করিত, গরুবাছুরের গলায় ফুলের মাল৷ পরাইয়া, তাহদের গলা জড়াইয়া আলাপ করিত! আবার, গাহিত, নাচিত, যাত্রার অভিনয় করিত। মেয়েমহলে সতুর খাতিরটা কিছু বেশী। তার মিষ্ট মিষ্ট কথাগুলি, মিষ্ট মিষ্ট গানগুলি মেয়ের বড় অা গ্রহের সহিত শুনিত । সতু গাহিত বেশ । গানও জানিত অনেক। প্রায় প্রত্যহই, দিবার শেষে,-কনকআভাদীপ্ত-গোধূলিতে,— যখন পশ্চিমদিগন্তে গগনচুম্বিত তরুরাজিশিরে মণিদীপ্তিখচিত কোষেয় শয্যা পাতিয়া, শ্রাস্ত রবি তাহার উপর অলসে ঢলিয়া পড়িত, তখন প্রায়ই দেখা যাইত, গ্রাম্যপথের ধারে গাছের তলায়, সেই চিকিমিকি ক্ষীণ রৌদ্রের উকিঝুকির মাঝখানে বসিয়া সতু গাহিতেছে। সে সময় তার গান বড় মধুর শুনাইত। সে গানের যে একটা কোমল প্রতিধ্বনি উঠিত, তাহ সেই তরু-ছায়া-স্নিগ্ধ বিহগকলরবময়ী পল্লীর ধূসররঞ্জিত বক্ষে স্বপ্নের শোভা জাগাইয়া দিত। তার কণ্ঠস্বর বড় মিষ্ট ছিল ! সতুর পিতা যোগীনবাবু গ্রামের মধ্যে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। তিনি কলিকাতায় চাকরী করিতেন। প্রত্যেক শনিবারে দেশে আসিতেন। যোগীনবাবুর দুই বিবাহ। প্রথম স্ত্রীই সতুর গৰ্ত্তধারিণী। সতু জননীর একমাত্র সন্তান। তার যখন ছয় বৎসরের বয়স সেই সময় তার মাতার মৃত্যু হয়। মাতার অভাবে সতুকে বিশেষ কিছু কষ্ট পাইতে হয় নাই ; কেননা, পিতা ও গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতার অত্যধিক স্নেহ ও ভালবাসায় তার জননীর স্মৃতিটুকু ঢাকা পড়িমাছিল। প্রথম স্ত্রী বর্তমানেই যোগীনবাবু দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করেন। দ্বিতীয়া-পত্নীর একপুত্র ও এককন্যা। সতুর চেয়ে তার বৈমাত্রেয় ভ্রাত “কেবলরাম” প্রায় দুই বৎসরের ছোট। কেবলরামের সঙ্গে সতুর বড় একটা বনিবনাও হইতনা। কেবলরাম একটু রুক্ষ মেজাজের ছোকরা,-জননীর আদুরে-গোপাল! সতুকে সকলেই ভালবাসিত, কিন্তু একজন তাকে দুটি চক্ষে দেখিতে পারিত না। সে তার বিমাতা ৪র্থ সংখ্যা ] ©☾ MJMJMMMMJMMJMMMJMJMJMAMAJJJJJJSJMM MJJJJMJMA AMJMMMAMS মানদাসুন্দরী। সতুর উপর মানদাসুন্দরীর বড় আক্রোশ । তার কারণ, অন্যান্য সস্তান অপেক্ষ সতু পিতার একটু বেশী আদরের। সেই হিংসাটাই মানদার প্রবল। সতু প্রায়ই অকারণে তার বিমাতার নিকট তিরস্কৃত হইত। কিন্তু, সেগুলি সে বড় একটা গ্রাহের মধ্যেই আনিত না । বিমাতা যখনই তাকে গালি দিতেন, তখনই সে ফুল্ল হরিণশিশুটির মত নাচিতে নাচিতে বাটীর বাহির হইয়া যাইত। আবার গাইবার শুইবার সময় ‘ম।' 'ম৷ বলিয়। ছুটিয়৷ আসিত। মানদাসুন্দরী সতুকে দিবারাত্র তিরস্কার করিতেন বটে, কিন্তু স্বামীর ভয়ে কোনদিন তার গায়ে হাত তুলিতে সাহস করেন নাই। মনের রাগ মনে চাপিয়৷ রাথিতেন । চাপ রাগ বড় ভয়ানক ! একদিন সেই চাপ। আগুন জলিয়। উঠিল একদিন হইল কি,—কেবলরাম পাড়ার একটি মেয়ের হাতের চুড়ি ভাঙ্গিয় দিল । বালিকা ক্টাদিতে কঁাদিতে বালকদের মোড়ল মহাশয় সত্যুর কাছে নালিশ রুজু করিল। সতু তখনই কেবলরামকে গ্রেপ্তার করিয়া বালিকার সম্মুখে তার কান দুটি বেশ করিয়া নাড়িয়া দিল। শ্রীমান কেবলরামও কম যান না ; সে সতুর হাত কামড়াইয়া ধরিল। তাহাতে সতু রাগিয়া কেবলরামের পৃষ্ঠে খুব দুই চারি ঘা কীল ও চাপড় বসাইয়৷ দিল । সেগুলি হজম করিতে কেবলরামের ক্ষমতায় কুলাইল না, কাজেই রণে পৃষ্ঠপ্রদর্শনপূর্বক উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে কঁাদিতে মাতার নিকট ছুটিল । মানদাসুন্দরী পুত্রের মুখে সবিশেষ শুনিয়া ক্রোধে জলিয়া উঠিলেন। পেদিন আর তিনি রাগ চাপিয় রাখিতে পারিলেন না। তখনই সতুকে ধরিয়া আনিবার জন্য বাটীর ভূত্যের প্রতি আদেশ জারী হইল। ভূতাটি খুজিয়া পাতিয়া সতুকে ধরিয়া আনিল। রোমদীপ্ত বিমাতা বাঘিনীর মত সতুর ঘাড় ধরিয়া বলিলেন,—“হারে মুখপোড়া লক্ষ্মীছাড়া, হাড়জালানে! কেবলাকে মেরেছিস কেন ?” সতু বলিল,-"কেবল চারুর চুড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে, তাই মেরেছি।" মানদা। তুই মারবার কে, পোড়ারমুখে৷ ডাকাত ? সতু। বাঃ! কেবল একজনের জিনিষ ভেঙ্গে দিলে তার বেলায় বুঝি কোন দোষ হলো না! > x মানদা। যার ভেঙ্গেছে, সে বুঝবে, তুই মারলি কেন ? সতু। তা, কেবলাও তো আমার হাত কামড়ে দিয়েছে ! মানদাসুন্দরী মুখ খিচাইয়া বলিলেন—“বেশ করেছে।” সতুর ও কেমন একটু রোক হইল, বলিল,—“আমিও বেশ করেছি !” মানদ রাগে অগ্নিমূৰ্ত্তি হইলেন, বলিলেন,–“কি ! যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা ! আমার মুখের ওপর চোপা!” এই বলিয়া সতুর গালে সজোরে এক চড় বধাই দিলেন। নিকটে কেবলরাম দাড়াইয়া ছিল, সে হাততালি দিম৷ হাঃ হাঃ শব্দে হাসিয়া উঠিল । বিমাতার সেই অপ্রত্যাশিত কঠিন ব্যবহারে সতু কিছু বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইল। বিমাতা যে তাকে প্রহার করিবে, ভ্ৰমেও সে এ আশা করে নাই। তার কচিমুখখানি লাল হইয়া উঠিল! গালে পাচটি অঙ্গুলির দাগ বসিয়া গেল। সেই প্রথম তার সদানন্দদীপ্ত হাসিভর মুখখানিতে বিষাদ-আকুলত ফুটিয়া উঠিল । তার প্রাণে ব্যথা বাজিলেও সে মুখ ফুটিয়া কিছু বলিল না। শুধু ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল। একটা চড়ে মানদাম্বন্দরীর তৃপ্তি হইল না, পুনরায় সতুর কান ধরিয়া বলিয়া দিলেন,—"এবার যদি আমার ছেলেদের গায়ে কখন হাত তুলবি তো গলা টিপে মেরে ফেলব। মা মরে গিয়ে যেন ধরাকে সরা দেখছেন!" সতুর বোধশক্তি ক্ষুদ্র হইলেও, কথাগুলি তার মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে বিধিল! সেই দিন তার একটা বিশেষ জ্ঞান জন্মিল, যে, সে বিমাতার কেহ নয়! বহুদিনের বিশ্বত স্নেহভরা একটি হাসি-হাসি মুখ,–যেন জ্যোৎস্নায় আঁকা একখানি স্বর্গের ছবি,—বিদ্যুৎ-স্ফুরণের মত সহসা তার প্রাণে জাগিয়া উঠিল । সে যেন কতদিনের স্বপ্ন,—তরই স্মৃতি ! সে যেন কত আশা, কত তৃপ্তি, কত উল্লাস! সে সৌন্দর্য্যে মাতৃহীন বালকের ক্ষুদ্র হৃদয়খানি ভরিয়া গেল! তার প্রাণের ভিতর যে একটা শিহরণ উঠিল, তা তার বিমাতা বোধ হয় দেখিলেন না। সতু আড়ালে গিয়া একটু কাদিল । সে দিন শনিবার। সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে যোগীনবাবু কলিকাতা