পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○やめ অনেকটা দূরে। স্ত্রীলোকটি বোধ হয় তাহাকে দেখিতে পায় নাই। - • একটু লক্ষ্য করিয়া গণেশ চিনিল—সে অরুণা। সে স্তন্ধ হইয়৷ দেখিতে লাগিল, সিড়ির ধাপে ধাপে শুভ্র সুন্দর চরণ দুখানি দু'টি ফুটন্ত পদ্মের মত নামিয়া নামিয়া আসিতেছে। এমন দু’একটি স্ত্রীলোক দেখা যায়, যাহারা অত্যন্ত নিকট হইলেও মনে হয় যেন অনেক দূর। তাহাদের নিজস্ব একটি ভিতরকার তেজ আছে, যাহা বাহিরের স্নিগ্ধ মাধুর্য্য ভেদ করিয়া প্রকাশ পায়। চপল ধৃষ্টত তাহাদের সম্মুখে মন্ত্ৰমুগ্ধ সৰ্পের মত স্থির হইয়া থাকে। গণেশ ধীরে ধীরে মাদুর ছাড়িয়া উঠিয়া সিড়ির দিকে যাইতে লাগিল। সহসা তাহাকে সম্মুখে দেখিয়া অরুণা দুইহাত পিছাইয় গেল। পরে স্থির কণ্ঠে কহিল—তোমার পত্নীর আজ সমস্ত দিন খাওয়া হয় নি। এই খাবার তাকে দিয়ে আসতে পারবে ? - এ যেন তার আজ্ঞা। গণেশ হাত বাড়াইয়া রেকাবখানি লইয়া কহিল—আমি দিয়ে আসছি ; কিন্তু আপনি কি চলে যাবেন ? অরুণা —এখানে আমি কি করব ? গণেশ অতুনয়ের স্বরে কহিল—আপনি শুধু এক মিনিট অপেক্ষা করুন ; আমি এখনি আসছি। গণেশ চলিয়া গেল। অনুপমার ঘরে গিয়া, রেকবেথান। তাহার সম্মুখে রাখিয়, তখনি সে ফিরিয়া আসিল। অরুণা।—আমার কাছে তোমার কি দরকার ? গণেশ বিহ্বল দৃষ্টিতে অরুণার পায়ের দিকে চাহিয়া রহিল ; কিছুই বলিতে পারিল না। অরুণ। —দেখ, এগুলো তোমাদের ভণ্ডামি। যে লোক স্ত্রীর প্রাণে এত কষ্ট দেয়, মদখেয়ে দিবারাত্রি মাতলামি করে বেড়ায়, সে আবার ভালবাসার কি জানে ? গণেশ এরূপ তিরস্কার প্রত্যাশ করে নাই। - তাহার নেশ চুটিয়া” যাইবার উপক্রম হইল। বিনীতভাবে কহিল—কিন্তু কেন যে মদ খাই, তা’ আপনি .জানেন না"। অরুণা।—খুব জানি –তুমি একজন পরস্ত্রীর উপর প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ SAMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMMM S আসক্ত। তুমি যদি এমন অসং প্রকৃতির না হতে, তোম আমি দাদার মত মান্য করতুম। - o গণেশ ক্ষণকাল নতমুখে চিন্তা করিল ; পরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিল—তবে সেই ভাল। আজ থেকে আমি আর মদ খাব না। ঠিক সেই সময়ে অনুপমা সিড়ি হইতে উকি মারিল ; এবং তাহাদিগকে তদবস্থ দেখিয়া তাহার পা হইতে মাথা পৰ্য্যন্ত জলিয়া উঠিল। আত্মসংবরণ করিতে না পারিয়া কহিল—আ আমার পোড়াকপাল! তুমি সৰ্ব্বনাশী এইজন্যে আমার ভাল করতে আস ! অনুপমার ভ্রম বুঝিতে পারিয়া গণেশ কহিল—অতু, ইনি আমার দিদি , একে প্রণাম কর। অহর প্রতি গণেশের এই প্রথম সম্ভাষণ। আচুপমা । সরোযে মুখ ফিরাইয়৷ নামিয়া যাইতে যাইতে কহিল—মরণ । আর কি ! মুহূৰ্ত্তে গণেশের মন বিষাক্ত হইয়া উঠিল। তখনি সে বাহিরের ঘরে গিয়া অৰ্দ্ধপূর্ণ বোতলটার সমস্ত তরল পদার্থ টুকু মুখর মধ্যে ঢালিয়া দিয়া বাহির হইয়া গেল। সেই রাত্রেই বাড়ীর স্ত্রীলোকদের কানে উঠিল— ওদের অরুণা ছাদে আসিয়া ছোটবাবুর সঙ্গে কথা কহিতে, ছিল। কোথাও খুন হইলে পুলিসের দল যেরূপ তদারকে লাগিয়া যায়, বাড়ীর সধবা, বিধবা এবং কুমারী সকলে মিলিয়া ছাদে উঠিয়া সেই ভাবে জটলা করিতে লাগিলেন। এবং অরুণার চরিত্রের উপর নানাপ্রকার কটাক্ষপাত করিয়া | অনুপমার প্রতি সবিশেষ সহানুভূতি প্রকাশ করিতে লাগিলেন। বেচারা অনুপমা এতদিন বুঝিতেই পারে নাই যে, এতগুলি হিতৈষিণী ছদ্মবেশে গা ঢাকা দিয়া তাহার এত নিকটে বিরাজ করিতেছিলেন । গোলমাল শুনিয়া বিরলকেশ। মেজবউ স্বামীর অতুনয় সত্ত্বে ও মুখশযা ত্যাগ করিলেন ; এবং দ্রুতপদে অকুস্থলে উপস্থিত হইয়া ঘটনা শুনিয়া অবাক হইয়া গেলেন। পরক্ষণেই কহিলেন—এতে আর তোমরা আশ্চর্যা হচ্ছ কি ? / ওঁর গুণ আমি আগে থেকেই জানি। দেখতে ভিজে | বেড়ালটি, কিন্তু ডুবে ডুবে জল খান। সেদিন সন্ধোবেল | হঠাং গিয়ে দেখি, ঠাকরুণ আশা চিরুনী নিয়ে চুল আঁচড়া - [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ১ম সংখ্যা ] অরুণা ৩৭ SAMMMAMJMMMMMMS MMMMM MMMMMJAJMS MMM MS MS MS MMSMMSMSMSMSMS ,চ্ছেন। আমি পাকে প্রকারে বুঝিয়ে বহুম যে, দেখ ভাই বিধবা মানষের গোছা গোছ চুল রাখা কি ভাল দেখায় ? শুনে উনি বল্লেন কি—এ চুল ভাই মানসিক করেছি; চল্লিশ বছর বয়েস হলেই প্রয়াগে গিয়ে মাথাটা মুড়িয়ে আসব। আমি ত হেসে আর বঁচিনা, বল্লুম—স্থ্যাল যার পতি নেই, পুত্ত্বর নেই, তার আবার মানসিক করা কার জন্যে ? শুনে ঠাকুরুণ দেমাকে আর কথাই কইলেন না। ডুবে জল খাওয়ার এমন একটা প্রমাণ পাইয়। স্ত্রীমণ্ডলী গালে হাত দিয়া পড়িলেন। ( > 0 ) গণেশের নেশা ছুটিল তখন বেলা আটটা । চক্ষু মেলিয়৷ চাহিয়া দেখিল সে তাহার পিসিমার বাড়ীর বাহিরের ঘরে পড়িয়া আছে। গত রাত্রের ঘটনাগুলি একে একে তাহার মনে পড়িতে লাগিল। সে ভূমিশয্যা ছাড়িয়া উঠিল না পড়িয়া পড়িয়া গভীর চিস্তায় নিমগ্ন হইল । - --একি কম্বুম ! দুই মূহূৰ্ত্ত চোখের তৃষ্ণ মিটাতে গিয়ে তোমার শুভ্র ললাটে একি কলঙ্ক লেপন কম্বুম ! তোমার ত কোন অপরাধ ছিল না। হায় । ফুলের মত নিৰ্ম্মল হৃদয়পানি, আমার চক্ষের বিষে বিষময় করে দিলুম ! যে চরণ দুখানি চিন্তা করবারও যোগ্য নই, তা দেখতে গেলুম কোন সাহসে ? ক্ষমা কর । ক্ষমা কর। হে আমার চোখের আড়াল ! এবারকার মত আমায় ক্ষমা কর। এ জীবনে আর কখনো দেখতে চাইব না। তোমার ভুবনভোলান কণ্ঠস্বর আর কখনো শুনতে চাইব না।– গণেশ মেঝেয় পড়িয়া ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিল। তাহার অমৃতপ্ত দগ্ধ হৃদয় জুড়াইবার একমাত্র স্থান পিসিমার আশ্রয়। কিন্তু পিসিমা কোথায় ?—মাসখানেক হইল তিনি কালীঘাটে একটা ঘরভাড়া করিয়া কালীগঙ্গার সেবা করিতেছিলেন, কালীগঙ্গার চরণতলেই তাহার মরিবার বাসনা। গণেশ সেখানে গিয়া উপস্থিত হইল । ( ; ; ) মাস তিনেক পরে পিসিমা একদিন বলিলেন—গণশ, আমাকে গজেনের বাড়ী নিয়ে চল। গণেশ —সেখানে কেন পিসিমা ? পিসিমা ।—তাকে একবার দেখতে বড় সাধ হয়েছে। গাড়ী আসিয়া দরজার গোড়ায় থামিল। গজেনবাৰু বৈঠকখানায় চেয়ার হেলান দিয়া বসিয়া ছিলেন। গাড়ী থামার শব্দে বাহিরে আসিয়া দাড়াইলেন। ভিতরে মাকে দেখিয়৷ এদিক ওদিক চারদিক চাহিয়৷ গাড়ীর মধ্যেই একটা প্রণাম করিয়া ফেলিলেন। - গণেশ হাসিয়া কহিল—নমস্কারটা না হয় নাই করতে দাদা ! গজেনবাবু কহিলেন—যা, যা, জোঠামি করিসনে। তার পরে মা, হঠাৎ এসে পড়লে যে ? পিসিমা – শীগগির আমাকে যেতে হবে, তাই তোদের কাছে একবার এলুম। - - গজেনবাবু।–তা অসুখ বিস্কপ কল্পে আমরা গিয়ে দেখে আসতে পারতুম ত ? গণেশ —শুনছ পিসিম, উনি ভাল কথাই বলছেন। মরবার সময় পুণ্যধাম কালীঘাট ছেড়ে এখানে আসা কি ঠিক হয়েছে ? আহা দাদা ! তুমিই ধন্য! মায়ের আত্মার যাতে সদগতি হয়, সেটি পর্য্যন্ত ভেবে রেখেছ। পিসিম, তুমি না হয় শেষের ক’টা দিন আমাদের বাড়ীতেই থাকবে চলনা । পিসিমা সংকল্প স্থির করিয়া ফেলিয়াছিলেন, কহিলেন —ন। বাবা, আমি এখানেই থাকব। শ্বাশুড়ীর অকস্মাং আবির্ভাবে সচকিত হইয়া গজেনবাবুর পত্নী কন্যাটিকে লইয়া দ্রুত পিত্রালয়ে সরিয়া পড়িলেন । ( >२ ) কবিরাজ মহাশয় নাড়ী টিপিয়া রীতিমত সংস্কৃত শ্লোক আওড়াইয় গঙ্গাধাত্রার ব্যবস্থা দিলেন। ব্যবস্থা কাৰ্য্যে পরিণত হইতে বিলম্ব হইল না। বড় লোকের মা,— খাট বিছনা, সাজ রসঞ্জাম, লোক লস্কর কোন কিছুরই ক্রটি হইল না। পিসিম আপত্তি করিলেন না। এসব । ন হইলে তাহার পুত্রের যে নিন্দ হইবে। - দু'দিন দু'রাত কাটিয়া গেল, পিসিমাের অবস্থার কিছু ইতর-বিশেষ হইল না। গণেশ তাহার প্রকাও বপুলইয়৷ ” দিবারাত্রি পিসিমার শিয়রে বসিয়া রহিল।, তাহার মুখে বিরক্তির চিহ্নমাত্র নাই। সেবা এবং যত্ন যেন তাহার,