পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wob শরীরে মূৰ্ত্তি ধরিয়াছে। তৃতীয় রাত্রে কবিরাজের উপর বিষম বিরক্ত হইয়৷ গজেনবাবু বিলাতে পাশকরা বি কে মল্লিককে আনিয়া হাজির করিলেন। এই ডাক্তারটির চক্ষে চৰ্ম্মের অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনেকে সন্দিহান ছিল। বিশেষ আহুনয় বিনয়েও কেহ কথন তাহার দয়া উদ্রেক করিতে পারে নাই। একবার এক ব্রাহ্মণ র্তাহার নিকট রোগের বিবরণ বলিয়, ব্যবস্থা লইয়া, তাহাকে স্মরণ করাইয়া দিবার চেষ্টা করেন যে, তিনি তাহাদের কুলগুরুর দৌহিত্র। ডাক্তার সাহেব বলিয়াছিলেন—দেখ বাপু, আমি সমুদ্রযাত্রা করেছি, মুর্গ খাই এবং তোমাদের শাস্তরের মতে আরো কত কি অনাচার অবিচার করে থাকি ; তবু যদি আমাকে তোমার শিষ্য বলে ভ্রম হয়, তাহলে ত আমি নাচার।” ইহা শুনিয়া ব্রাহ্মণ ভিজিটের টাকা ফেলিয়া দিতে পথ পান নাই । ডাক্তার সাহেব নাড়ী পরীক্ষা করিলে গজেনবাৰু ইংরেজীতে জিজ্ঞাসা করিলেন—কেমন দেখছেন মশায় ! আরো কতদিন ভোগাবে ? প্রশ্ন শুনিয়া গণেশের মুখ লাল হইয়া উঠিল, তীব্রস্বরে কহিল—দাদা অফিসার মানুষ কি না, সব কাজই চটপট শীগগির সেরে ফেলতে চান। আপনার ঘুমের বড় ব্যাঘাত হচ্ছে, না ? ডাক্তার মৃদুমন্দ হাসিতে লাগিলেন। একে গজেনবাবুর মেজাজ খিটখিটে হইয়াই ছিল ; তাহার উপর ডাক্তার সাহেবের সম্মুথেই এমন অপমান তিনি অার সহ করিতে পারিলেন না। হাকিয় দরেয়ানকে কহিলেন—উসকে কান পাকড়কে হিয়াসে নিকাল দেও। গণেশ ব্যান্ত্রের মত হিংস্র হইয়া উঠিল, এবং এক মুহূৰ্ত্তে বিছান হইতে নামিয়া প্রচণ্ড ঘুসি পাকাইয়া কহিল— গোটা পাচেক দরোয়ান আগে জোগাড় করে আনগে – | *ও একটা আধটার কৰ্ম্ম নয়। পিসিম ক্ষীণস্বরে ডাকিলেন—গণশ ! আমার কাছে • अंाग्न । গণেশ পোষ৷ কুকুরটির মত পিসিমার কাছে গিয়া বসিল । প্রবাসী—বৈ SMMJJMMMMMJS শাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ডাক্তার সাহেব গজেনবাবুকে কহিলেন—তোমার মায়ের আর বেশী দেরী নেই । পিসিমা ডাকিলেন—গজেন। একবার আমার কাছে এস ত বাবা! ** গজেনবাবু ডাক্তারের দিকে চাহিয়৷ অনুচ্চস্বরে কহিলেন —কি যে বলবে তার ঠিক নেই, মিছে জালাতন করবে। কথাটা ডাক্তার সাহেবের ভাল লাগিল না। তিনি অত্যন্ত গম্ভীর হইয়া গেলেন । পিসিমা ক্ষীণতর স্বরে ডাকিলেন—একটিবার এস বাবা, তোমায় শেষ দেখে যাই । গজেন বিরক্তভাবে কাছে আসিলে, পিসিমা তাহার মাথায় হাত দিয়া আশীৰ্ব্বাদ করিলেন। তাহার স্নিগ্ধ ছায়াময় চক্ষু দু'টি দিয়া যেন গজেনের সমস্ত আপদ মুছিয়া লহলেন । গণেশের চক্ষু সিক্ত হইয়া উঠিল, সে রুদ্ধস্বরে কহিল— পিসিমা ! আমায় কি তোমার কিছু বলবার নেই ? পিসিমা ক্ষীণ স্নেহার্দ্র কণ্ঠে কহিলেন—তোকে আর মুখের আশীৰ্ব্বাদ কি করব, বাবা ? আমার যা-কিছু পুণ্য তোকে অক্ষয় কবচের মত ঘিরে থাকবে। ডাক্তার সাহেব ব্যস্তসমস্ত ভাবে উঠিয়৷ টুপী খুলিয়৷ কহিলেন—গুড নাইট গণেশবাবু” এবং গজেনবাবুকে সম্ভাষণ মাত্র না করিয়া বুকপকেট হইতে রুমালটা টানিতে টানিতে গাড়ীতে গিয়া উঠিলেন । গজেনবাবু অগ্রসর হইয়া কহিলেন—ডাক্তার মল্লিক, আপনার ভিজিট । ডাক্তার সাহেব কৰ্ণপাত না করিয়া কোচ ম্যানকে কহিলেন চালাও । ( ১৩ ) রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে। তখনও চারপাচটা চিতার আলোকে শ্মশানভূমি আলোকিত। দুইতিনটা কুকুর দীর্ঘছায়। ফেলিয়৷ প্রেতের মত ঘুরিয়৷ বেড়াইতেছে। একটা সন্ন্যাসী গাজার কলিকায় অগ্নি সংযোগের জন্য চিমটাহস্তে একটা অৰ্দ্ধনিৰ্ব্বাপিত চিতার নিকট বসিয়া আছে । সম্মুখে গঙ্গা বহিয়৷ চলিয়াছে। পাশের ঘাটে দুই-একটি করিয়া স্নানার্থী জড়ো হইতে আরম্ভ করিয়াছে । 4. o ১ম সংখ্যা ] ヘヘヘヘヘヘヘヘ সকলে চলিয়া গিয়াছে ; গণেশ তখনও পিসিমার চিতার "দিকে চাহিয়া বসিয়া ছিল। তাহার চক্ষে অশ্রু ছিল না। তিন রাত্রি জাগিয় তাহার চুলগুলো উস্কোখুদ্ধে, চোখদুটাে রক্তবর্ণ,—সে যেন কি একটা স্বপ্ন দেখিতেছিল। সহসা উঠিয়া সে চাদনীর ভিতর হইতে জমাট পরিয়া আসিল । পকেট হইতে একথানা কাগজ বাহির করিয়া পিসিমার নিৰ্ব্বাপিত চিতার কাছে গিয়া বসিল । খানিকটা ভস্ম তুলিয়। কাগজখানাতে মুড়িয়া সযত্নে জামার পকেটে রাখিয়৷ দিল। তারপরে আবার কি মনে করিয়া গাত্র হইতে জামাটা খুলিয়। একট। প্ৰজলিত চিতার মধ্যে ফেলিয়৷ দিল। বারম্বার কাহার উদ্দেশে প্রণাম করিল ; এবং পিসিমার চিতা হইতে মুঠ মুঠ ভস্ম লইয়া মাথায় এবং সৰ্ব্বাঙ্গে মাখিতে লাগিল । পশ্চাতে মধুর কণ্ঠে শব্দ হইল—দাদা ! এ কণ্ঠস্বর গণেশের পরিচিত, সে চমকিয়া উঠিল। পিছন ফিরিয়া দেখিল সদ্যঃস্নাত অরুণ সুধীরের হাত ধরিয়া দাড়াইয়া আছে। গণেশ কহিল—দিদি । আপনি এখানে ? যদি কেউ দেখতে পায় ? অরুণ আকাশের দিকে হাত তুলিয়। কহিল—দেখ ভাই, ঐ অসংখ্য পাণ্ডুর তারাগুলি যার চোখ, তাকে ছাড়া আর কাউকে আমি ভয় করি না। তুমি বাড়ী যাবে না ? গণেশ —আপনি বাড়ী যেতে বলছেন,–কিন্তু সেখানে আমার আছে কি ? অরুণ –কেন, তোমার সব কৰ্ত্তব্য কি শেষ করে এসেছ ? গণেশ একবার মাত্র অরুণার মুখের দিকে চাহিয়৷ দেখিল ; পরে কহিল—তবে একটু পরেই আমি যাচ্ছি। গঙ্গাস্নানটা সেরে নি। উীর রক্তরাগ একটি স্নিগ্ধ মহিমার মত অরুণার মুখে আসিয়া পড়িল । ( >8 ) আজ এক বৎসর ধরিয়া চেষ্টা করিয়াও ভবেশবাবু তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের বিবাহ দিতে পারিলেন না। কন্যাকৰ্ত্ত৷ পাত্র দেখিতে আসেন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর নিকট ভবেশ অরুণা \OR বাবুর কন্যা-সম্বন্ধে কানাযুম্বা শুনিয়া সরিয়া পড়েন। কন্যাদায়প্রপীড়িত বঙ্গদেশে পুত্রের বিবাহ দেওয়াও যে এত কঠিন ভবেশবাবু পূৰ্ব্বে তাহ স্বপ্নেও অনুমান করেন নাই। দুই-একটি অরক্ষণীয়া কন্যার পিতা সকল কানাকনি উপেক্ষা করিয়া বিবাহ দিতে সম্মত হইলেন বটে কিন্তু সুযোগ বুঝিয়া প্রত্যাশিত পণের পরিমাণ অত্যন্ত কমাইয়৷ দিলেন। ভবেশবাবু কন্যাপক্ষের এই অসঙ্গত প্রস্তাব কিছুতেই অমুমোদন করিতে পারিলেন না। অরুণ সমস্তই দেপিল। পিতামাতার অসন্তোষ এবং বিরক্তি তাহার মৰ্ম্মে গিয়া বিধিল। সে আজ দেখিল সংসার একটা রক্তচক্ষু দানবের মত ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিয়াছে। বুঝিল যে, এখানে সময়বিশেষে পরমস্নেহময়ী মায়ের হৃদয়ে পৰ্য্যন্ত দয়ামায়ার অভাব হইয়া থাকে। এতদিনে তাহার জ্ঞান হইল, শুধু আকাশের দেবতাকে ভয় করিয়া সংসারে থাক চলে না । এখানে সমাজদেবতা এবং লোকদেবতার মন রাখিয়া না চলিলে পদে পদে বিভ্ৰাট ঘটে । সেদিন সমস্ত গৃহকৰ্ম্ম শেষ করিয়া অরুণ। দুই তিন ঘণ্টা ধরিয়া ভাবিল। সহসা উঠিয়া একখানা কাগজ লইয়। লিখিল— গণেশ দাদা, বাড়ীর কাউকে কিছু না বলে কাল ভোরেই আমি তীর্থে চলুম। কাল সকালে তুমি যখন এই চিঠি পাবে, তখন আমি অনেক দূর গিয়ে পড়ব। তুমি চিরদিনই আমার পাগলা ভাই ; তোমায় না জানিয়ে চলে গেলে পাছে তুমি একটা পাগলামি করে বসে। সেইজন্যেই তোমাকে জানালুম। তুমি আর-কাউকে একথা বোলে না। তুমি কখনো আমার কোন কথা অমান্য করনি। আজ আমার শেষ অনুরোধটি এই যে, তুমি আমার খোজ করে মিছামিছি সময় নষ্ট কোরোনা। যে কাজগুলো দুজনে করবার কথা ছিল সেগুলো তোমাকে একাই করতে হবে। তুমি নিরাশ হলে চলবে না, আমি তোমার উপর অনেক ভরসা রাখি। যেদিন তোমায় প্রথমু দেখি সেই দিনই আমার মনে হয়েছিল—ই, পুরুষমানুষ বটে ! তোমার মতন জীবন্ত লোকগুলি যদি সংপর্থে থাকে তবেই আমাদের সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ উজ্জল হবে। তুমি