পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ᏄᎸ নূতন নূতন গুণাধীন হইয়া ধৰ্ম্মপরিণামের দ্বারা নূতন নূতন বস্তুর উৎপত্তি বা আবির্ভাব হইতেছে। প্রশ্ন হইতে পারে যে যদি সকল বস্তু হইতেই সকল বস্তুর উৎপত্তি হইতে পারে তবে বাস্তবিকপক্ষে সেরূপ উৎপত্তি হইতে দেখা যায় না কেন ? কেন শরিষ হইতেই তেল হয় আর বালি হইতে হয় না ; কেন পাথর হইতে দধি হয় না, অথচ দুগ্ধ হইতে হয় ? ইহার উত্তরে এই কথা বলা যাইতে পারে, যে, মূলতঃ কোনও বস্তু হইতে কোনও বস্তুর উৎপত্তির কোনও বাধা ( সৰ্ব্বং সৰ্ব্বাত্মিকং ) না থাকিলেও বস্তুত: সেরূপ উৎপত্তি বাধাশূন্য নহে। কারণ দেশকাল আকার নিমিত্ত প্রভৃতি হিসাবে পরমাণুসন্নিবেশের প্রতি স্বভাবতই একটা কঠিন শাসন বিদ্যমান রহিয়াছে ; এই স্বভাবশাসনের প্রতিবন্ধকতা ব। বাধার জন্যই প্রত্যেক বস্তুর নিৰ্ম্মাণভূত পরমাণুগুলির সন্নিবেশ-পরিণামের একটা কঠোর নিয়ম রহিয়াছে ; এবং সেইজন্যই সেই বাধা উল্লঙ্ঘন করিয়৷ যে-কোমও বস্তু হইতে যে-কোনও বস্তু উৎপন্ন হইতে পারে না। প্রকৃতি এবং তাহার বিকৃতিগুলি সৰ্ব্বদাই ক্রিয়াশীল বা পরিণামশীল, এবং সেইজন্যই ঘে-পথে কোনও বাধা পায় না, সেই পথেই সেই শক্তি ব্যক্তরূপে পরিণত হইতে থাকে ; যে দিকের বাধা উন্মোচিত হয় ক্রিয়াশক্তি কেদারস্থ জলপ্রবাহের ন্যায় সেইদিকেই ছুটিতে থাকে। কতকগুলি বাধা কারণব্যাপারের দ্বারা দূরীকৃত হয়, এই যেমন মন্থনের দ্বারা দুগ্ধ হইতে নবনীত হয়। এই বাধা দূর করাতেই কারণ-ব্যাপারের কারণত্ব ; নচেৎ বাস্তবিক পরিণামব্যাপারের কোনও কারণত নাই, কারণ সেই প্রকৃতির স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম (নিমিত্তং অপ্রয়োজকং প্রকৃতীনাং বরণভেদস্তু তত: ক্ষেত্রিকবৎ) যে-দিকের বাধা পরমাণুগুলির স্বভাবনিষ্ঠ হইয়। গিয়াছে, এবং কোনও কারণব্যাপারের দ্বারা তাহা দূর করা সম্ভব নয়, সেদিকের বাধা অতিক্রাস্ত হয় না বলিয়াই, সেদিকে পরিণামশক্তির কোনও প্রবাহ ধাবিত হয় না, এবং কাজেই তাদৃশ পরি ণামও সঙ্ঘটিত হয় না। কাশ্মীরেই কুঙ্কুম হয়, পাঞ্চালে হয় না, গ্রীষ্মে ধান্ত পাকে না, মৃগীর গর্ভে মনুষ্য জন্মে না, এবং পাপীরও নিস্তরঙ্গ মুখোপভোগ হয় না (ব্যাম-ভাষ্য প্রবালী—ভাদ্র, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড ৩।১৪ ) । প্রকৃতির মধ্যে কতকগুলি দিকে কেন এইরূপ স্বাভাবিক বাধা রহিয়াছে, কেনই বা কতকগুলি দিকের বাধা স্বভাবতই শিথিল ও স্বথাপনেয় এবং কেনই বা কতকগুলি প্রতিবন্ধক কঠিন এবং সৰ্ব্বথ দুরপনেয়,-ইহার উত্তরে সাঙ্খা বলেন যে প্রকৃতির সহিত স্বভাবতই পুরুষ বা জীবের এই সম্বন্ধ রহিয়াছে, যে, তাহার পরিণামের দ্বারা জীবের সুখদু:থাদি ভোগ এবং তদনন্তর কৰ্ম্মের পরিপাকের নিয়মে অপবর্গপ্রাপ্তি প্রভৃতি সমস্তই অনায়াসে সঙ্ঘটিত হইতে পারে। পুরুষার্থের সহিত প্রকৃতির আত্মপরিণামের এই স্বভাবসিদ্ধ নিয়মের দ্বারাই প্রকৃতির পরিণাম নিযুঞ্জিত হইয়৷ রহিয়াছে। যে পথে শক্তি প্রবাহিত হইলে পুরুষার্থের উপযোগী হইবে না, পুরুষার্থের অনুপোযোগিত্ব প্রযুক্তই সেই পথে প্রকৃতির শক্তি প্রবাহিত হইতে পারে ন। অথচ যে প্রবাহিত হইলে পুরুষাৰ্থ স্বসম্পন্ন হইতে পারে, সেই পথের বাধা সহজেই আপনীত হয়, এবং প্রকতির শক্তি সেইদিকেই তাহার পরিণামকে আকৃষ্ট করিতে থাকে। প্রকৃতি জড় ও চিংশূন্য হইলেও, তাহার স্বভাবনিষ্ঠ পুরুষার্থপরতার বলেই তাহার পরিণাম একটি সুনির্দিষ্ট উপযোগী ও স্বশৃঙ্খল প্রবাহে পরিচালিত হইতে পারে। কাজেই সেজন্য ঈশ্বর স্বীকার করিবার কোনও আবশ্বক নাই । কিন্তু পতঞ্জলি বলেন যে প্রকৃতি যখন জড় তখন তাহার পরিণাম প্রবাহের সম্মুখে যে-সমস্ত বাধা প্রতিবন্ধক আছে তাহা দূর করিয়া, তাহার আচ্ছন্ন বা আবৃত পরি ণামকে ব্যক্ত করিবার জন্য স্বতন্ত্র ঈশ্বর স্বীকার করিবার প্রয়োজন। সত্য বটে প্রকৃতির মধ্যেষ্ঠ পুরুষাৰ্থ নিহিত হইয়া রহিয়াছে। এই স্বনিষ্ঠ পুরুষার্থপরতার দ্বার। কোনও বিশেষ পরিণামের দিকে প্রকৃতির শক্তি কেন্দ্রীভূত ও উন্মুখ হইয় উঠে, ইহাও স্বীকার করা যাইতে পারে, কিন্তু প্রকৃতির শক্তি যখন জড় তখন সে কি করিয়া জানিবে, কোন দিকের কোন বাধা উদঘাটন করিলে পুরুষার্থোপযোগী পরিণাম-প্রবাহের মধ্যে সে আপনাকে সার্থক করিয়া তুলিতে পরিবে। প্রকৃতির পুরুষার্থোপযোগিং আছে বলিয়াই যে কোন পথে প্রবাহিত হইলে তাহার ৫ম সংখ্যা ] শক্তি সার্থক হইতে পারিবে তাহা সে বুঝিতে পরিবে তাহ বলা যায় না। আর যদি পুরুষার্থের মধ্যেই এত বড় একট। প্রকাও বোধশক্তি জাগ্রত রহিয়াছে ইহা স্বীকার করা যায়, তবে ত তাহারই বলে প্রকৃতিকেই বাস্তবিক চেতন বলিয়া মানিতে হয় । কাজেই স্বতন্ত্র এমন একটি ঈশ্বর স্বীকার করিতেই হয়, যাহার সান্নিধ্যপ্রযুক্তই যথানির্দিষ্ট প্রতিবন্ধক অপনীত হইয়া প্রকৃতির শক্তি-প্রবাহ পুরুষার্থোপযোগী মার্গ অবলম্বন করিয়া যথানিয়মে পরিচালিত হইতে পারে ( ঈশ্বরশু প্রতিবন্ধাপনয় এব ব্যাপার: ) । অবশু সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির পুরুষার্থপরতা মানিতে হয়, কারণ তাহা হইলে ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিবন্ধকগুলি অপনীত হইয়া প্রকৃতির পরিণামপ্রবাহ স্বসম্পন্ন হইলেও তাহা দ্বারা পুরুষের বা জীবের কোনও অর্থ বা প্রয়োজন সুসিদ্ধ হইতে পারে না। বস্তুত: প্রকৃতির মধ্যে পুরুষাৰ্থত৷ ’ না থাকিলে ঈশ্বর সত্বেও পরিণামের দ্বারা পুরুষের কোনও উপোযোগিতা হইতে পারে না। দৃষ্টাস্তস্বরূপে বলা যাইতে পারে যে, - ধর একজন অত্যন্ত নিন্দিত কৰ্ম্ম করিল এবং তাহার ফলভোগের জন্য, তাহার জন্য প্রকৃতির একটি দুঃখময় পরিণাম হইল ; এ অবস্থায় ঈশ্বরের ইচ্ছাতে তাহার, সান্নিধ্যবশতঃই প্রকৃতির এরূপ বাধা উন্মোচিত হইল যে তাহাতে যে পরিশামটি সঙ্ঘটিত হইল তাহ দ্বারা বস্তুতঃ সে দুঃখ পাইতে পারে ; কিন্তু প্রকৃতির মধ্যেই যদি পুরুষার্থপরতা না থাকিত ' তবে সেরূপ পরিণামের স্বারাও পাপী দুঃখ পাইত না । যাহাতে সুখকর বা দুঃখকর হইতে পারে বা মাহীতে কৰ্ম্মফলভোগ নিপন্ন হইতে পারে, জীবের কৰ্ম্ম এই হিসাবেই পরিণামের নিয়ামক, এবং যেরূপ প্রবাহের পরিণামের দ্বারা এইটি স্বসিদ্ধ হইতে পারে, সেই দিকের বাধা উন্মোচন করিয়া দেওয়াতেই ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব । এই ঈশ্বরের দ্বারাই এই জগতের সমস্ত বস্তু বিধৃত হইয়৷ রহিয়াছে, ইহার সান্নিধ্যপ্রযুক্তই প্রকৃতির ব্যাপার সফলকাম হইতে পারিতেছে। এই ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, ৰেম্ব, অভিনিবেশ প্রভৃতি কোনও ক্লেশাত্মিক বৃত্তিরই- তাহাতে কোনও সংস্পর্শ নাই। তাহার কোনও কৰ্ম্মও নাই, ফলও নাই, জননও নাই, ভোগও নাই। কোনও পাতঞ্জল সাস্থ্যে বা যোগদর্শনে ঈশ্বর SAMMMMMAJAMJJMJJJMAMAMAMAMAMJMAMAMAAAS ¢ጳó শ্রেণীর মুক্তপুরুষেরা পূৰ্ব্বে কোনও সময় বদ্ধ হইয়াছিলেন, পরে নিজকৰ্ম্ম দ্বারা বন্ধ হইতে মুক্ত হইয়াছেন; আবার আরএক শ্রেণীর সাধক আছেন, যাহার কৰ্ম্মম্বারা কিছুদিন মুক্তের ন্যায় প্রকৃতির মধ্যে লীন হইয়া থাকেন এবং পুনরায় কৰ্ম্মক্ষয়ে বন্ধন প্রাপ্ত হন; ইহঁাদের কাহারও সহিতই ঈশ্বরের কোনও তুলনা হয় না। তাহার কোনও কালে কোনও বন্ধন ছিল না, এবং কোনও কালে কোনও বন্ধন থাকিবে না ; তিনি সৰ্ব্বদাই মুক্ত সৰ্ব্বদাই ঈশ্বর (স তু সদৈব মুক্ত: সদৈবেশ্বর: )। তাহার তুল্য ঐশ্বৰ্য্যসম্পন্ন আর দ্বিতীয় কেহ নাই, তিনি অদ্বিতীয়, তাহার আজ্ঞা কেহ রোধ করিতে পারে না। তাহাতেই সৰ্ব্বজ্ঞত্বের চরমসমাপ্তি। তাহার নিজের কোন ও প্রয়োজন নাই, জীবকে অনুগ্রহ-বিতরণ করাই তাহার একমাত্র উদেশ্ব ও প্রয়োজন। জীব যাহাতে পাপপুণ্য অনুসারে দুঃখস্থখাদি ভোগ করিয়া ক্রমশঃ আত্মোপলব্ধির সন্নিকট হইতে পারে ও ক্রমশঃ মুক্তিপদে আরোহণ করিতে পারে এইজন্যই তিনি জীবের কৰ্ম্মফলভোগোপযোগী প্রকৃতিব্যাপারের নিয়ামক হইয়া থাকেন। জীব যদি ভক্তির সহিত কেবল র্তাহারই উপাসনা করে তাহা হইলেই সে অনায়াসে আপন চরম ও পরম স্বরূপ লাভ করিতে পারে, কোনও কৃচ্ছ্বসাধনের প্রয়োজন নাই, কোনও তত্ত্বোদঘাটনের আবশ্যক নাই। জীব কেবল র্তাহারই চরণকমলে ভক্তির অঞ্জলি উৎসর্গ করুক, তাহ হইলেই তাহার সকল কামনা স্বসিদ্ধ হইবে। ব্যাধি, চিত্তের জড়ত, সন্দেহ, পথভ্রংশ, আলস্য, বিষয়তৃষ্ণ, মিথ্যা জ্ঞান, অস্থিরত্ব, প্রভৃতিকে দূর করিবার জন্য পৃথকভাবে কোনও উপায় অবলম্বন করিবার প্রয়োজন নাই, ভক্তিবিগলিত হইয়া তাহাতে মনঃসংযোগ করিলেই, তাহার কৃপায় সমস্ত বাধা, সমস্ত প্রতিকূলতা, সমস্ত অন্তরায় বিদূ- , রিত হইয়া যাইবে । তাহার পক্ষে প্রকৃতির উন্মেষ ক্রমশঃ মঙ্গলময় আনন্দময় হইয় উঠে, এবং সেই পরম কারুণিকের কৃপায় পুণ্যপথের সমস্ত প্রতবন্ধকতা ধ্বস্ত হওয়াতে প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিণামে সে ক্রমশঃ মুক্তিরাজ্যের নিকটবর্তী হয় ও পরিশেষে আনন্দ-হ্রদাবগাঢ় হইয়া অমৃতত্ব লাভ করিয়া কেবলী হয় । সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত ।