পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tNo SMAAASAASAASAAAS প্রভৃতির ন্যায় গ্রন্থাদিও বহুশতাব্দী, বহু সহস্ৰ বৎসর থাকে। এইসকল স্কুল নিদর্শন যতদিন বৰ্ত্তমান থাকে, ততদিন নিৰ্ম্মাতা, রচয়িত প্রভৃতির কীৰ্ত্তিলোপের আশঙ্কা নাই। পক্ষান্তরে গায়ক, বাদক, নৰ্ত্তক, নট, কথক, বাগী, ব্যবহারাজীব, বিচারক, ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, প্রভৃতির কীৰ্ত্তি অন্য শ্রেণীর। ইহারা সমসাময়িক প্রত্যক্ষদ্রষ্টা বা শ্রোতার প্রশংসালাভ করেন বটে, কিন্তু মরণাস্তে আর তাহাদিগের কৃতিত্বের কোন স্কুল নিদর্শন থাকে না। অবশ্য জীবনচরিত বা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তাহাদিগের কীৰ্ত্তিকাহিনী ঘোষিত হইতে পারে। ব্যবস্থাশাস্ত্রে ব্যবস্থাপকদিগের অনুষ্ঠিত কাৰ্য্যের বিবরণ থাকিতে পারে ইত্যাদি। কিন্তু তথাপি স্বীকার করিতে হইবে যে, তাহাদিগের কৃতিত্বের স্বম্পষ্ট স্মৃতি অপেক্ষাকৃত সহজে ও অল্প সময়ে লুপ্ত হইয়া যায়, কিংবদন্তীর ন্যায় কেমন আৰছায়-আবছায়া ( vague ) ভাব আসিয়া পড়ে, ভবিষ্যদ্রবংশীয়দিগের তেমন সুস্পষ্ট উপলব্ধি বা সম্পূর্ণ আস্থাস্থাপন ঘটে না ; এমন কি, কৃতীর জীবদ্দশায়ই অনেক সময় তাহার অতীত জীবনের কৃতিত্ব স্নান হইয় পড়ে। শিক্ষকগণ এই দ্বিতীয় শ্রেণীভূক্ত। বিলাতে ডক্টর আনন্ড বা জাওয়েট, ভারতে ক্যাপ্টেন রিচার্ডস বা ডিরোজিও, রাজনারায়ণ বস্ব বা Vরামতনু লাহিড়ী প্রভৃতি প্রসিদ্ধ শিক্ষকের নাম আজিও অনেকে জানেন, কিন্তু শত বা সহস্ৰবৰ্ষ পরে সে জ্ঞান শুধু কিংবদন্তীতে দাড়াইবে, ধারণার স্পষ্টতা ও সজীবতা থাকিবে না। তাহাদিগের যশ কিছুদিন অব্যাহত থাকিবে, কিন্তু পরে তাহ পুথিগত ও (অলার না হইলেও) অসাড় হইয় পড়িবে। স্থলনিদর্শনের অভাবে ক্রমেই তাহাদিগের কীৰ্ত্তিস্থতি নিজীব ও দুৰ্ব্বল झेश्च।। ५३८त्र । পূৰ্ব্ববর্ণিত কারণে অনেক সময় শিক্ষকগণের গ্রন্থরচনা স্বারা বিদ্যাবত্তার স্কুল নিদর্শন রাথিয়া যাইবার প্রবল ইচ্ছ। জন্মে। তবে ধরিতে গেলে, গ্ৰন্থরচনা দ্বারা তাহার পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়া যাইতে পারেন, কিন্তু শিক্ষাদাননৈপুণ্যের স্কুল নিদর্শন এ উপায়েও প্রতিষ্ঠিত হইবে না। ভবিষ্যদ্রবংশীয়গণ র্তাহাদিগকে জ্ঞানী ও সাহিত্যসেবক [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ു.സുഹു സ് নিদর্শন রাখিয়া যান, কেননা স্বরম্য হর্ঘ্য, প্রস্তরমূৰ্ত্তি, চিত্র . হিসাবেই জানিবে, নিপুণ শিক্ষক বলিয়া জানিবে না। জানিলেও তাহার কোন প্রত্যক্ষ পরিচয় পাইবে না। যাহা হউক, গ্ৰন্থরচনাস্বারা স্থায়ী কীৰ্ত্তিস্থাপনের প্রবল আকর্ষণ সত্ত্বেও বহু শিক্ষক গ্ৰন্থরচনা দ্বার সাক্ষাং সম্বন্ধে জগৎসমক্ষে নিজেদের জাহির করেন নাই, বিনা আড়ম্বরে নিজেদের অবলম্বিত বৃত্তির কৰ্ত্তব্যসাধন করিয়াছেন বা করিতেছেন ; ইহাদিগের জীবনব্যাপি-সাধনা ব্যর্থ, একথা বোধ হয় কেহই বলিবেন না। গ্রন্থরচনায় ইহাদিগের ঝোক না থাকা অক্ষমতার পরিচয় বলিয়। মনে করাও ভুল। অনেক শিক্ষক মনে করেন যে, সাহিত্যনিৰ্ম্মাণ প্রভৃতি অবাস্তর কার্য্যে মনোনিবেশ করিলে তাহারা নিজেদের অবলম্বিত বৃত্তির ক্ষতি করিয়া, কৰ্ত্তব্যের ক্রটি করিয়া, তবে সাহিত্যক্ষেত্রে কৃতিত্ব লাভ করিতে পারেন। শিক্ষকের প্রকৃত কার্ষ্য গ্ৰন্থরচনা নহে। এই ধারণায় ইহার নীরব কবি’ হইয়া থাকাই শ্লাঘ বিবেচনা করেন। এই ধারণা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত বলিয়া স্বীকার করিতে পারি না। যেমন অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকের স্ব স্ব বৃত্তির নির্দিষ্ট কার্য্য সম্পন্ন করিয়াও জগৎকে সাক্ষাং সম্পর্কে শিক্ষা দিবার অধিকার এবং দায়িত্ব আছে, তেমনই শিক্ষকসম্প্রদায়েরও এ বিষয়ে অধিকার ও দায়িত্ব আছে। তাহার। কেন এই বিধিদত্ত অধিকার হইতে আপনাদিগকে বঞ্চিত করিবেন ? অন্য সম্প্রদায়ের লোকে যদি অবলম্বিত বৃত্তির ক্ষতি না করিয়া এই কৰ্ত্তব্য পালন করিতে পারেন, শিক্ষকগণই ব৷ পারিবেন না কেন ? বরং তাহারা আজীবন সঞ্চিত মার্জিত জ্ঞানের অংশ যে-পরিমাণে সৰ্ব্বসাধারণকে দিতে পরিবেন, অন্য সম্প্রদায়ের লোকের নিকট তাহ আশা করা যায় না। তাহারা জগৎকে শিক্ষা দিতে ন্যায়ত: ধৰ্ম্মতঃ বাধ্য । আর এক কথা—জগতের উপকার করা ছাড়া তাহদিগের নিজের উপকারের জন্যও এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত। শিক্ষক অনন্যকৰ্ম্ম হইয়৷ তাধ্যয়ন-অধ্যাপনে চিরজীবন ব্যাপৃত থাকিবেন, ইহা খুব উচ্চ আদর্শ বটে ; কিন্তু মানসিক স্বাস্থোর জন্য এবং মানসিক শক্তির সর্বোতোমুখ fq*fç+* giy (all-round (levelopment) f**** কৰ্ম্মবৈচিত্র্য নিতান্ত প্রয়োজনীয়। সাক্ষাং ভাবে জগতের ৫ম সংখ্যা ] সহিত সম্বন্ধস্থাপন করিতে না পারিলে, ছাত্রমণ্ডলীর সঙ্কীর্ণ পরিধির মধ্যে জীবন কাটাইলে, তাহার অগাধ পণ্ডিত্য সত্বেও কূপমণ্ডুক হইয়া পড়িবার আশঙ্কা প্রবল। অবশ্য এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ছাত্রদিগের প্রতি কৰ্ত্তব্য তাহ'র মূখ্য কৰ্ম্ম, সমগ্র জগতের প্রতি কৰ্ত্তব্য | তাহার গৌণ কৰ্ম্ম ; আবার, ছাত্রদিগের প্রতি কৰ্ত্তব্য সম্পাদন করিয়া তিনি পরোক্ষভাবে জগতের প্রতি কৰ্ত্তব্যও সংসাধন করিতেছেন। অতএব ছাত্রদিগের শিক্ষাবিধান করিয়াই যদি তিনি ক্ষান্ত হন, তাহাতে তাহাকে দোষ দেওয়া চলে না। ইহার অধিক যদি তিনি করিতে পারেন, খুব ভাল কথা ; যদি না পারেন বা ন চাহেন, তাহ হইলেও তিনি যাহা করিলেন, সমাজ তাহাতেই সন্তুষ্ট হইবে। এক্ষণে এই মুখ্য কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে শিক্ষকের আদর্শ বিচার করিয়া প্রবন্ধ শেষ করিব। আদর্শ শিক্ষকে অন্ততঃ দুইটি গুণ থাকিতেই হইবে । এই দুইটি গুণ, শিক্ষাদানে নৈপুণ্য এবং শিক্ষাদানে আনন্দ ও উৎসাহ । তিনি এমন সুকৌশলে শিক্ষাদান করিবেন যে বিষয়টি যতই কেন কঠিন ও নীরস হউক না কেন, ছাত্র o তাহা অতি সহজে হৃদয়ঙ্গম করিবে, এবং জ্ঞানলাভে স্বথ পাইবে। শিক্ষকের কার্য্যে কথন অবসাদ আলস্য শৈথিল্য ঔদাস্য বিরাগ আসিবে না, তিনি সহিষ্ণুতার সহিত ছাত্রের শিক্ষার পথের সমস্ত বাধা দূর করবেন, সদাপ্রফুল্লচিত্তে ছাত্রকে জ্ঞানদান করিবেন। জ্ঞান উপার্জনে কি স্বথ, তাহা তিনি শুধু মৌখিক উপদেশে নহে, নিজের জলন্ত উৎসাহ ও অহরাগের দৃষ্টান্ত এবং নিজের জীবনযাত্রার প্রণালী দ্বারা ছাত্রের হৃদয়ে বদ্ধমূল করিয়া দিবেন। Gladly would he learn and gladly teach– তিনি সানন্দে নব নব জ্ঞান অর্জন করিবেন এবং সানন্দে তাহা ছাত্রদিগের মধ্যে বণ্টন করিবেন, ইহাই তাহার জীবনের মূলমন্ত্র হইবে। আবার, শিক্ষক শুধু অল্পাধিক পরিমাণ বিদ্যা ছাত্রের মস্তিষ্কে প্রবেশ কুরাইয়াই নিজের কৰ্ত্তব্য স্বসম্পন্ন হইল, ইহা মনে করবেন না। বিদ্যাদান ঠিক পূর্ণকুম্ভ হইতে শূন্তকুন্তে জল ঢালার মত ব্যাপার নহে। ছাত্রের স্বপ্ত l চিন্তাশক্তি উল্লেষিত করা শিক্ষাদানের প্রকৃত প্রণালী। এই শিক্ষকের আকাঙ্ক্ষণ ও আদর্শ സഹാംബ് ৫৯১ প্রণালী ভিন্ন স্থায়ী মঙ্গল হয় না। ছাত্ৰগণ যাহাতে সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাস প্রভৃতি শাস্ত্রে স্বাধীনচিস্তা ও গবেষণার প্রণালী হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে, এবং ভবিষ্যতে সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাস প্রভৃতির চর্চায় নিজেদের পথ নিজেরা চিনিয়া লইতে পারে, মৌলিক আবিষ্কার প্রভৃতি কধ্যে পারগ হইতে পারে, তাহার ভিত্তি শিক্ষকই তাহার শিক্ষাদানপ্রণালী স্বারা প্রতিষ্ঠা করিবেন। শুনিয়াছি, বিলাতে বহু বৈজ্ঞানিক এই ভাবে ছাত্র প্রস্বত করিয়া থাকেন এবং এইজন্যই সেদেশে ছাত্রপরম্পরায় বিজ্ঞানচর্চা উন্নতি লাভ করিতেছে। অামাদের দেশেও শুনিয়াছি এই ভাবে বিখ্যাত অধ্যাপক ক্রযুক্ত জগদীশচন্দ্র বস্থ ও শ্ৰীযুক্ত প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছা এ প্রস্তুত করিতেছেন। এই রূপে ছাত্রদিগের চিন্তাশক্তির উন্মেষ করা, রস গ্রহণশক্তির উদ্বোধন করা, জ্ঞানার্জনে অঙ্গরাগের উদ্রেক করা, নেশ জমাইয় দেওয়া, শিক্ষকের কৃতিত্বের, কার্য্যকুশলতার প্রকৃত নিদর্শন। বীজের পরিণাম যেমন বৃক্ষে ও বৃক্ষের পরিণাম ফুলফলে, শিক্ষকপ্রদত্ত শিক্ষারও পরিণাম সেইৰূপ ছাত্রদিগের চরিত্রগঠনে, ছাত্রদিগকে মাহুৰ করিয়া তোলায় । কিন্তু, ছাত্রের চরিত্রের উপর শিক্ষকের প্রভাব এবং শিক্ষক প্রদত্ত শিক্ষা দ্বারা ছাত্রের চরিত্রগঠন—অনেকে ইহাঅপেক্ষা ও ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করেন। এক সময়ে আমাদের দেশে ধৰ্ম্মশিক্ষা, নীতিশিক্ষণ ও সাধারণ বিদ্যাশিক্ষার মধ্যে ভেদ ঘটে নাই। উভয় শিক্ষাই গুরুগৃহে হইত। গুরু শুধু প্রগাঢ়বিদ্বান হইতেন না, পরস্তু পুতচরিত্র হইতেন। এখনও অনেকে চাহেন যে, শিক্ষকগণ শুধু বিদ্বান হইবেন না, পুতচরিত্ৰ নিৰ্ম্মলস্বভাব হইবেন। লোকে আশা করে যে, শিক্ষকগণ অমায়িক, নিরহস্কার, নিলোভ, জিতেন্দ্রিয়, সরলপ্রকৃতি, সত্যবাদী, দয়ালু, পরোপকারী, উন্নতচেতা ও সৰ্ব্বাংশে দোষশূন্ত হইবেন । এবং উহাদের সংসর্গে ও দৃষ্টাস্তে, তাহদের চরিত্র প্রভাবে ও তাহাদের প্রদত্ত শিক্ষার গুণে ছাত্রগণও স্বচরিত্র হইবে। অপরিণতবয়স্ক অগঠিতচরিত্র কোমলহৃদয় ছাত্রগণ শিক্ষককে জ্ঞানের মূর্ব অবতার বলিয়। প্রগাঢ় ভক্তি করে। সুতরাং তাহাদের চরিত্রের উপর শিক্ষকের প্রভাব সহজেই অল্পমেয়।