পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষত্রিয় যুবক কি তাহার পাণিগ্রহণ করিবে ? রঘুসিংহের কম্বা পিতৃমাতৃহীনা অনাথ মৃত দুর্গশ্বামিনী আমার হস্তে তাহাকে সমর্পণ করিয়া গিয়াছিলেন, এখন আমি তাহার অভিভাবক। রাষ্ট্রকূটরাজের প্রার্থন পূরণ না করিলে তিনি বিরূপ হইবেন, গুর্জরসেনা হয়ত রাষ্ট্রকূটসেনার সহিত মিলিত হইয়া আর্য্যাবৰ্ত্ত আক্রমণ করিবে, তাহা হইলে কান্তকুঞ্জ ও গৌড়সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব পর্য্যন্ত লোপ হইবে । তাত কি করিব ?" ভীষ্মদেব নীরবে অবনতমস্তকে বসিয়া রহিলেন । তাহা দেখিয়া বৃদ্ধ সঙ্ঘস্থবির উঠিয় দাড়াইয়া কহিলেন, "মহারাজ, জীবনে একমাত্র পথ—ধৰ্ম্মপথ, অন্য পথ নাই। ইহা রাজা ও প্রজা উভয়ের পক্ষেই সমান।” ধৰ্ম্মপাল জিজ্ঞাসা করিলেন, "ধৰ্ম্মপথ কি প্রভূ ? তাহাও চিনিতে পারিতেছি না।" "আৰ্ত্তন্ত্রাণ সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ সৌগতধৰ্ম্ম, কল্যাণী আশ্রয়হীন, অনাথ, ধৰ্ম্মের নিকটে তিনি আপনার পত্নী । চক্রণযুদ্ধ আপনার আশ্রিত বটে কিন্তু চক্রায়ুধ রাজা, চক্রায়ুধের রাজ্যে চক্রায়ুধের পরিবর্তে হয়ত অন্য রাজা আসিবে। চক্রায়ুধের ক্ষতিপূরণ হইবে, কিন্তু কল্যাণীর ক্ষতিপূরণ হইবার নহে। গৌড়েশ্বর ইহাই ধৰ্ম্মপথ ।” বৃদ্ধ ভীষ্মদেব একলশে আসন ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “সাধু মহাস্থবির, সাধু। সত্য সত্যই ইহা ধৰ্ম্মপথ। মহারাজ ইহাই ক্ষত্রধৰ্ম্ম, এই কথা বৃন্ধের জিহ্বাগ্রে আসিয়াছিল, কিন্তু গৌড়সাম্রাজ্যের অবশ্যম্ভাবী দুরবস্থা কল্পনা করিয়া উচ্চারণ করিতে পারিতেছিলাম না।” তখন গৌড়েশ্বর সিংহাসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন এবং কহিলেন “সামন্তবর্গ ইহাই ধৰ্ম্মপথ এবং একমাত্র পথ। আমি লক্ষ্য স্থির করিয়াছি, সভায় চলুন। সমবেত নায়কমণ্ডলী যদি একবাক্যে কল্যাণীকে ত্যাগ করিতে পরামর্শ দিতেন, তাহা হইলেও তাহ সম্ভব হইত না, গৌড়রাজ্যের মঙ্গলের জন্য গৌড়সিংহাসন ত্যাগ করিতে প্রস্তুত হইয়া আসিয়াছিলাম, কিন্তু বন্ধুবৰ্গ, কল্যাণীকে ত্যাগ করিবার সঙ্কল্প মনেও আনিতে পারি নাই।" সকলে স্থির হইয় গৌড়েশ্বরের উক্তি শ্রবণ করিলেন। সহসা কমলসিংহ লম্ফ দিয়া আসন ত্যাগ করিখ গৌড়ে । প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড


, *,...v.,-v, ..., ..., v., v_~^.

শ্বরকে আলিঙ্গনপাশে আবদ্ধ করিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ভীষ্মদেব প্রমথসিংহ, রণসিংহ প্রভৃতি অন্যান্য নায়কগণ আসন ত্যাগ করিয়া ধৰ্ম্মপালকে বেষ্টন করিল। সহসা মন্ত্ৰগৃহ কম্পিত করিয়া ভীষণ জয়ধ্বনি উখিত হইল। মন্ত্ৰগৃহের বহির্দেশে সমবেত সেনাপতি ও সেনানায়কগণ যুদ্ধযাত্রার আদেশ হইয়াছে মনে করিয়া জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। কিয়ৎক্ষণ পরে গর্গদেব কহিলেন, "মহারাজ, সভামণ্ডপে যাইবার আবখ্যকতা নাই, রাষ্ট্রকূটরাজদূতকে মন্ত্ৰগৃহে আহবান করুন, তিনি এই স্থানেই গৌড়েশ্বরের উত্তর শ্রবণ করিবেন।" গৌড়েশ্বর সম্মতি প্রদান করিলেন। জনৈক দণ্ডধর গৰ্গদেবের আদেশে রাষ্ট্রকূটরাজদূতকে আনয়ন করিতে গেল। একদণ্ড পরে রাষ্ট্রকূটরাজদূত মন্ত্ৰগৃহে প্রবেশ করিলেন। তখন সভা নীরব, নিস্তব্ধ । ধৰ্ম্মপালের একপাশ্বে গৰ্গদেব ও অপর পাশ্বে ভীষ্মদেব দণ্ডায়মান। দূত আসন গ্রহণ করিলে, ভীষ্মদেব কহিলেন, "তপ্রবর, পরমেশ্বর পরমভট্টারক পরমসৌগত মহারাজাধিরাজ গৌড়েশ্বরের আদেশে তাহার সমক্ষে ও গৌড়ীয় সামন্ত চক্রের সমক্ষে আপনার প্রার্থনার উত্তর প্রদান করিতেছি,—‘গৌড়েশ্বর গোকর্ণদুর্গস্বামীর কন্যার সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। যথারীতি বিবাহ হয় নাই বটে কিন্তু গান্ধৰ্ব্ব বিবাহ হইয়া গিয়াছে। দেশান্তরে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে তাহাই যথেষ্ট । ক্ষত্রধৰ্ম্মানুসারে প্রথম পত্নী ধৰ্ম্মপত্নী এবং পট্রাভিষিক্তা। লোকাচারাচুসারে গৌড়েশ্বর দ্বিতীয় পত্নী গ্রহণ করিতে পারেন না। সুতরাং গৌড়েশ্বরকে জামাতারূপে প্রার্থন করি। রাষ্ট্রকূটরাজ যে সম্মান প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহ গ্রহণ করা গৌড়েশ্বরের পক্ষে সম্ভব নহে। রাষ্ট্রকুটরাজ মিত্র, অসময়ের বন্ধু, বিপদে ত্রাণকৰ্ত্তা, তাহাকে আদেয় গৌড়রাজ্যে কিছুই নাই, তবে ধৰ্ম্মরক্ষা করিয়া রাষ্ট্রকূটরাঙ্গকন্যার পাণিগ্রহণ ধৰ্ম্মপালের পক্ষে অসম্ভব। দক্ষিণাপথেশ্বরকে জানাইবেন যে ধৰ্ম্মপাল ভূত্যের ন্যায় তাহার অপর সমস্ত আদেশ পালন করিবেন।" ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ । - ভীষ্মদেব । o যথাসময়ে কল্যাণীদেবীর সহিত ধৰ্ম্মপালের বিবাহ হইয় গেল, কল্যাণীদেবী গৌড়-সাম্রাজ্যের পটুমহাদেবীরূপে ৫ম সংখ্যা 1 SMSMSAAAAAA AAAA AAAA AAAA AAAA SAAAAA AAAA AAAA AAMSMS SS - অভিষিক্ত হইলেন। বাকৃপাল গৌড়ীয় সামন্তরাজগণের সহিত লক্ষাধিক সেনা লইয়া পঞ্চনদে গুর্জররাঙ্গচুক্রের অধিকার আক্রমণ করিতে যাত্র করিলেন। ছয়মাস নিৰ্ব্বিবাদে কাটিয়া গেল, গৌড়ীয় সেনা গঙ্গা যমুনা অতিক্রম করিয়া শতদ্রু ও বিপাশার মধ্যবৰ্ত্তী ভূভাগ আক্রমণ করিল। শীতের মধ্যভাগে সংবাদ" আসিল যে, রাষ্ট্রকূট রাজ গোবিন্দ ও মহানায়ক জয়বৰ্দ্ধন ভিন্নমাল নগর অধিকার করিয়াছেন, গুর্জররাজ গোবিন্দের অধীনত। স্বীকার করিয়া সন্ধি প্রার্থনা করিয়াছেন। বাকুপালের বাহুবলে শতদ্রু ও বিপাশাতীরে গুর্জরের অধিকার লুপ্ত হইল, শত শত বর্ষ পরে কৌরব ও যাদব বংশীয় রাজগণ প্রাচীন অধিকার পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন, সমগ্র আর্য্যাবৰ্ত্ত গৌড়ীয় বীরগণের ঘশ:সৌরভে পূর্ণ হইল। বাকৃপালের সেন যখন বিপাশ পার হইয়। বিশালকায় ইরাবতী-তীরে পৌঁছিয়াছে, তখন গৌড়ে সংবাদ আসিল যে, অসংখ্য সেনা লইয়। দক্ষিণাপথেশ্বর গোবিন্দ কান্তকুঞ্জে আগমন করিয়াছেন। তিনি গুর্জর রাঞ্জের সহিত সন্ধিপত্র স্বাক্ষর করিবার জন্য গৌড়েশ্বরের প্রতিনিধিকে কাৰ্যকুঞ্জে আহবান করিয়াছেন। এই সন্ধিস্থত্রে গুর্জররাজ নাগভট্ট উত্তরে যমুন এবং দক্ষিণে নৰ্ম্মদ গুর্জর সাম্রাজ্যের সীমা বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন এবং পঞ্চনদবাসী গুর্জরগণের সহিত যোগ দিবেন না অঙ্গীকার করিয়াছেন। বাকৃপাল দূতমুখে সংবাদ প্রেরণ করিলেন যে, প্রাচীন ভোজ, মৎস্ত, কুরু, যছ, যবন, গান্ধীর ও কীরদেশে গৌড়ীয় সেনার বাহুবলে ক্ষত্রিগ্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। মহামন্ত্রী গর্গদেব সন্ধিপ র স্বাক্ষর করিবার জন্য গৌড় হইতে যাত্র করিলেন। বসন্তকাল আসিল, সকলে ভাবিল যে অতি দীর্ঘকালস্থায়ী গুর্জর-যুদ্ধের এতদিনে অবসান হইল । হঠাৎ একদিন সংবাদ আসিল যে, ভীষ্মদেব মগধে ফিরিয়াছেন, তিনি সত্বর সম্রাটের সহিত সাক্ষাতের জন্য গৌড়ে আসিয়াছেন। সংবাদ পাইয়া ধৰ্ম্মপাল অত্যন্ত চিস্তিত হইলেন। তিনি বৃদ্ধ মহানায়ককে বাকৃপালের রক্ষার জন্য নিয়ােক্তি করিয়া পঞ্চনদে প্রেরণ করিয়াছিলেন, এখন ভীষ্মদেব একাকী ফিরিয়া আসিন্ধাছেন শুনিয়া তিনি ঘোরতর বিপদ আশঙ্কা করিতে লাগিলেন। ধৰ্ম্মপাল চছ SS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSAAAASSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSS yჯტა একদিন অপরাহে ভীষ্মদেব প্রাসাদের তোরণে আসিয়া সম্রাটের সহিত সাক্ষং প্রার্থনা করিলেন। প্ৰতীহার ও দওধরগণ তৎক্ষণাৎ তাহাকে সম্ৰাটসকাশে লইয়া গেল। ধৰ্ম্মপাল আসন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া দাড়াইলেন এবং কম্পিতকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাত, সংবাদ কি ? আপনি একাকী ফিরিলেন কেন ?" বৃদ্ধ মহানায়ক আসন গ্রহণ করিয়া ললাটের স্বেদ মোচন করিতে করিতে কহিলেন, “পুত্র, বিপদ উপস্থিত। গৌড়-সিংহাসন দৃঢ় ভিত্তির উপরে স্থাপন বোধ হয় ভগবানের অভিপ্রেত নহে।" “কি হইয়াছে ?” "আমি ইরাবতীতীরে শুনিতে পাইলাম যে, রাষ্ট্রকূটসেন যমুনার তীর্থগুলি অধিকার করিয়াছে, লক্ষাধিক সেনা স্থীস্বর ও পৃথুৰক দুর্গে প্রবেশ করিয়াছে। ততোধিক সেনা লইয়া রাজপুত্র কন্ধ মথুরায় সেনানিবাস স্থাপন করিয়াছেন। কানাকুঞ্জের, রাষ্ট্ৰকুট-সেনা উৎসবে উন্মত্ত নহে, তাহারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইতেছে। পঞ্চনদে যুদ্ধ শেষ হইয়াছে, কিন্তু বাকপালের ফিরিবার উপায় নাই। ভিন্নমালে জযুবৰ্দ্ধন ও বিমলনন্দী গুর্জররাজের অমুমতি ব্যতীত প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতে পারিবে না। গৌড়ে তুমি একা। সেই জন্ত প্রমথসিংহ ও কমলসিংহ আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। রাষ্ট্রকূটসেনার যুদ্ধোন্তম কিসের জন্ত ? উত্তরপথে বা দক্ষিণাপথে আর ত শত্রু নাই। নাগভট্ট বন্দী, চক্রায়ুধ গোবিদের করতলগত, এখন গোবিন্দ পুনরায় যুদ্ধসজ্জা করিতেছেন কেন তাহা বুঝিতে বিলম্ব হয় নাই। পুত্র বিষম বিপদ উপস্থিত, সমগ্র গৌড়ীয় সেনা মালবে ও পঞ্চনদে। গোবিন্দ যদি গৌড়দেশ আক্রমণ করে, তাহ হইলে সাম্রাজ্য রক্ষা করিবে কে ?” “গোবিন্দ বিরূপ হইলেন কেন ?" “রাষ্ট্রকূট-রাজকন্যার পাণিগ্রহণে অসম্মত হইয়াছিলে তাহা কি বিশ্বত হইয়াছ ?” “না।” "দক্ষিণাপথেশ্বর স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়। রাষ্ট্রকূটরাজকন্যাকে গৌড়েশ্বরের হস্তে সমর্পণ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, গৌড়েশ্বর সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন; উত্তরাপথে