পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

رف 8 وN আন্দু সে কথা কানে তুলিল না। দ্রুতবেগে ভিড়ে মিশিয়া পড়িল । ভীষণ শব্দে ষ্টেশন কাপাইয়া ঝ। ঝ করিয়া ট্রেন আসিয়া পড়িল । একটা শৃঙ্খলাহীন স্থাকডাকের উচ্চ রোল পড়িয়া গেল। লোকজনের হুড়াছড়ি, ছুটাছুটি, জিনিসপত্র নামান উঠান,—'কুলী পান সিগারেট' পানিপাড়ে থাবারওয়ালা সব ক’টার চীৎকার আওয়াজ যুগপৎ জড়াইয়া, সার ষ্টেশনটা সর্গরম্ হইয়া উঠিল। আন্দু তাড়াতাড়ি তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় উঠিয় বেঞ্চির উপর নিজের লাঠি ও মোটটা ফেলিল। তারপর নমিয়৷ আসিয়া উৎফুল্প-বিক্রমে ছুটাছুটি করিয়া, অন্যান্য যাত্রীদের মোট পুটুলি অযাচিত ভাবে গাড়ীতে তুলিতে নামাইতে লাগিল। আন্দুর কল্যাণে অক্লেশে দলে দলে অক্ষম দুৰ্ব্বল শিশু বৃদ্ধ স্ত্রীলোক গাড়ী হইতে নামিতে ও গাড়ীতে উঠিতে লাগিল। একজন শীর্ণকায় হিন্দুস্থানী রমণী একটা প্রকাও গাটর মাথায় করিয়৷ ভিড়ের বেগে গাড়ীতে উঠিতে ন পারিয়৷ অতি কষ্টে ছুটাছুটি করিয়া ঘুরিতেছিল। আন্দু তাড়াতাড়ি তাহার ভারি গাটুরীট নিজের ঘাড়ে টানিয়া লইয়া, মেয়েদের কামরার দরজা খুলিয়া মোট-মৃদ্ধ তাহাকে উঠাই দিয়া, আবার অন্যত্র ছুটিল। উপকৃত বৃদ্ধ দুই হাত তুলিয়। অপরিচিত যুবাকে আশীৰ্ব্বাদ করিল। মধ্যম শ্রেণীর একটা কামরার দরজা-গোড়ায় দুইজন কুলী একটা ট্রাঙ্ক লইয়া ঠেলাঠেলি করিতেছিল, কিছুতেই সেটা কামরার ভিতর তুলিতে পারিতেছিল না। হঠাৎ আন্দু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া, বিনাবাক্যে এক ধাক্কায় সামনের কুলীটাকে সরাইয়া সবেগে দ্বিতীয় ধাক্কায় ট্রাঙ্কট। কামরার মধ্যস্থানে পৌছিয়া দিয়া আবার অন্যদিকে চলিল । হাসিতে হাসিতে, উদ্দেশে ওস্তাদকে অভিবাদন করিয়া মনে মনে বলিল, "কুস্তি শিক্ষার সার্থকতা এইখানে,— কাজের মাঝে।" ট্রেনে উঠিবার সময় এক আরোহী ভদ্রলোকের হাত হইতে দৈবক্রমে একখানি বই লাইনের নীচে পড়িয়৷ গিয়াছে, ভদ্রলোকটি সাগ্রহে চার-পাচজন কুলীকে পুরস্করের লোভ দেখাইয়। বইখানি তুলিয়া দিবার জন্য বারম্বার প্রবালী—ভাদ্র, ১৩২২ S AASAASAASAASAA AAAMS MS MS MMSMMSAMAAMAMSAMASAJJJJS [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড JSMSMSJSAASAASAAAS আমুনয় বিনয় করিতেছেন। কিন্তু ট্রেন তখন ছাড়ে-ছাড়ে হইয়াছে, স্বতরাং প্রাণের ভয়ে সে সময় নীচে ঝুঁকিতে কেহই সাহস করিতেছে না। দূর হইতে তাহদের ভাবগতিক দেখিয়া আন্দু সেখানে ছুটিয়া আসিয়া হাজির হইল। ভদ্রলোকটির কাতরোক্তি শ্রবণ মাত্রে অকুতোভয়ে তৎক্ষণাৎ মাটিতে বুক দিয়া শুইয়া হাত বাড়াইয়। অতিকষ্টে বইখান তুলিল। ঠিক সেই মুহূৰ্ত্তে ট্রেন ছাড়িল। ভদ্রলোকটির হাতে বইখানা দিয়া, আন্দু কোনদিকে দৃকপাত না করিয়া, ছুটিয়া আসিয়া, নিজের কামরার দরজা খুলিয়৷ ট্রেনে উঠিল । পাদনিতে পা দিয়াছে, এমন সময় হঠাৎ অন্যদিকে নজর পড়িল দেখিল তিনখান। গাড়ীর পর দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরার জানাল হইতে বুক পৰ্য্যন্ত বাহির করিয়৷ গাড়ীর পিত্তল-দও ধরিয়া ছোট মেমসাহেব ঝুকিয় পড়িয়া ব্যগ্র দৃষ্টিতে তাহাকে লক্ষ্য করিতেছেন! চোখোচোপি হইবামাত্র হর্ষবিকশিত নয়নে, তীক্ষু উচ্চকণ্ঠে মেমসাহেব বলিলেন “টুভুলায় নামবে, টুভূল জংসন।” আন্দু গাড়ীতে উঠিয়া হাতল ঘুরাইয়। দরজ বন্ধ করিয়া দিল। তখন ট্রেন প্লাটফরম ছাড়াইয়াছে, চারিদিক ফশী হইয়া আসিয়াছে । ( ; 8 ) কাজের ছড়াছড়ি যখন একেবারে ঠাণ্ড হইয় গেল, তখন আন্দু নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া, বিক্ষিপ্ত চিত্তটাকে শৃঙ্খলাস্বত্রে টানিয়া বাধিতে বসিল। আন্দু মনকে বুঝাইয়া কঠিন নিৰ্ম্মম করিল। সে অতীতের জন্য,—অতীত মুখের জন্ত স্বার্থপরের মত হা-হুতাশ করিবে না, – সে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত হইবে । ভগবান তাহাকে যে শক্তি কটা দিয়াছেন, সব কটাই সে কাৰ্য্যের শানে তীক্ষু উজ্জল করিয়া লইয়৷ জটিল সংশয়াকুল জীবন-যাত্রাট সহজ শান্ত করিবে। অসীম বেদনার মধ্য হইতে, কঠিন সন্তোষ সবলে আকর্ষণ করিয়া পৌরুষের মর্যাদL সে সযত্বে বজায় রাথিবে। নিঃসম্বল নিরাশ্রয় হইয়া স্বেচ্ছায় -অকুতোভয়ে সে যেমন পথে দাড়াইয়াছে, তেমনি সদৰ্পে স্বাবলম্বন ধরি। সে অদৃষ্টকে উপেক্ষা করিয়৷ যাইবে। l ৫ম সংখ্যা] হঠাৎ আন্দুর মনে পড়িল কাল দ্বিপ্রহরের পর সে আহার করিয়াছে, তাহার পর আর জলস্পর্শ করে নাই ; উদ্বেগ-আকুল চিত্তের দুরন্ত উৎক্ষেপ-বিক্ষেপে ক্ষুধা তৃষ্ণার অমৃভবশক্তি এতক্ষণ মোটে অনুভূত হয় নাই ; এখন কাজ নাই, তাই আলস্তের ঝেণকে ক্ষুধা তৃষ্ণ তন্দ্র সবাইকে মনে পড়িতেছে। আন্দু অভ্যাস-বশে পদচালনার জন্য উঠিয়া দাড়াইল, কিন্তু এখানে ঘুরিবে কোথ, এ যে জনপূর্ণ চলন্ত গাড়ী ! আন্দুর চিত্ত-শক্তিটা এমনি একমুখী একগুয়ে, যে, যখন খে-বিষয়ট। ভাবিতে বসে, তাহারই তলায় গভীর ভাবে তখন ডুবিয়া যায়। এই প্রকাও গাড়ীভর এতগুলো বিভিন্ন শ্রেণীর বিচিত্র প্রকৃতির লোকও এতক্ষণ তাহার দৃষ্টির কৌতুহলশক্তি উদ্বোধিত করিতে পারে নাই। হঠাৎ সমস্ত গাড়ীটার পানে বিস্মিত দৃষ্টিতে চাহিয়া আন্দু অবাক হইয় গেল। আন্দুর বেঞ্চির সামনের বেঞ্চিতে বসিয়৷ মোটে ঠেস দিয়৷ এক সৌম্যমূৰ্ত্তি হিন্দুস্থানী বৃদ্ধ অনেকক্ষণ হইতে প্রাতঃস্মরণীয় সংস্কৃত শ্লোকসমূহ আবৃত্তি করিতেছিলেন। আন্দু এতক্ষণ কান দেয় নাই, এখন কানে যাইতেই আন্দু সোজা হইয়া উন্মুখ নয়নে বৃদ্ধের পানে চাহিয়৷ বসিল । সংস্কৃতপ্রিয় ভবভারণের সংসর্গে পড়িয়া আন্দুর ংস্কৃত শাস্ত্রে কিঞ্চিং অভিজ্ঞতা ছিল, নিজের উদ্যমে সংস্কৃত শ্লোকও কিছু কিছু শিথিয়াছিল ; সে প্রায়ই ভবতারণের কাছে গিয়। গীত ও মোহমুগরের সব্যাখ্যা শ্লোক শুনিত ; ভবতারণের কাছে সেও মধ্যে মধ্যে নমাজের রেকার মৰ্ম্ম, এবং কোরানের বয়েদ আবৃত্তি করিয়াছে। তাহাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের মাঝে পরস্পরের ধৰ্ম্মের প্রতি সম্মানের ভাবটি বড় স্নিগ্ধ মধুময় ছিল। সমস্ত গাড়ীর মধ্যে আন্দু এই বৃদ্ধের শাস্ত মুখচ্ছবিতে একটি বিশেষ রকম মাধুৰ্য্য লক্ষ্য করিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়৷ গেল। বৃদ্ধের চেহারায় সুপুরুষতার চিহ্নমাত্র ছিল না, দেখিতে তিনি নিতান্তই সাধারণ শ্রেণীর মানুষ । কিন্তু তাহার বাৰ্দ্ধক-প্লথ শরীরের মধ্যে আমনি একটি সৌম্য সহিষ্ণু মহানুভবতার জ্যোতুি মূছ শক্তিতে বিকীর্ণ হইতেছিল যে দেখিলেই ভক্তি করিতে ইচ্ছ। হয়। বৃদ্ধের সহিত আলাপ করিত্রার জন্য আন্দু উৎসুক হইয়। উঠিল। আদুর পিছন দিকের বেঞ্চিতেও কি একট। গল্প সেখ আন্দু MAM MMA AMM MAAA AAAA AAAA SAAA AAAA AAAA AAAA AASJMJMMJAMJMSMSAMAMAMS ogo স্রোতের গোলমাল প্রবলভাবে চলিতেছিল, আন্দু ফিরিয়া সেদিকে চাহিল। দেখিল লাটুদার-পাগড়ী-মাথায় গোফ দাড়ি-কামান, এক পত্তিত-গোছের ফোটা-পর হিন্দুস্থানী মধ্য-বয়স্ক ব্যক্তি উষার আলোকে জানালার কাছে গিয়া একজনের করকোষ্টি দেখিয়া অনর্গল বকিয়া যাইতেছেন, আর লোকটা যেন নিতান্ত গো-বেচারীর মত ‘হু স্থা’ দিয়া যাইতেছে। সে লোকটির কোষ্ঠিফল যথাবিহিত বর্ণিত হইলে আরএকজন উঠিয়া- আসিয়া হস্ত প্রসারণ করিল। আন্দু দেখিল, তিনি প্রথমোক্ত ব্যক্তিকে যাহা বলিয়াছিলেন ইহাকেও প্রায় তদনুযায়ী বলিলেন, অধিকন্তু একটি সদ্যসমাগত বিপদের প্রতিকারের জন্য শাস্তিস্বস্ত্যয়ন করিতে আদেশ করিলেন। তৃতীয় ব্যক্তি আসিতে তাহাকেও ঠিক ঐস্কপ ভাবে অতীত জীবনের কথা বলিলেন । লোকটা ভক্তি-গদগদপ্রাণে, অকুষ্ঠিত চিত্তে সমস্ত মানিয়া লইয়া নিজের স্থানে গিয়া বসিল । আলুর কৌতুহল বাড়িয়া উঠিল, সেও উড়িা আসিয়া গণকের সামনে দাড়াইল, হাসিয়া বলিল “আমি একবার হাত দেখাতে পারি কি ?—কিন্তু আমি মুসলমান।” গণক-ঠাকুর দুই মুহূর্তের জন্ত আন্দুর পানে খর দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন, তাহার পর অবিশ্বাস্ত ভাবে মাথা নাড়িয়া গম্ভীর স্বরে বলিলেন “তুমি আমার ঠকাতে এসেছ ?—তুমি মুসলমান নও।” গণক-ঠাকুরের জ্যোতিষ-জ্ঞানের প্রাখধ্যে আন্দু চমং কৃত হইল। হাস্য সম্বরণ করিয়া অবিচলিত ভাবে বলিল "ই ঠাকুর, সত্যিই আমি মুসলমান।” গাড়ীর লোকগুলা পরম্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করিতে লাগিল। গণক-ঠাকুরের দম্ভ-কঠিন মুখমণ্ডল একটু নিম্প্রভ হইল, বলিলেন "বস, দেখছি।" আন্দু বসিয়া হাত বাড়াইল৷ গণক-ঠাকুর পুনরায় পুৰ্ব্বাহুবৃত্তিরূপে যোগিনী-দোষ হইতে আরম্ভ করিয়া গ্ৰহসংস্থান পৰ্য্যন্ত একই স্বর ভাজিম্বা গেলেন। . তারপর বলিলেন “তোমার ধনস্থানে বৃহস্পতি আছেন, যথেষ্ট অর্থাগম হবে, কিন্তু তুমি রাখতে পারবে না,-”