পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-৭১২ বাঙ্গালীর ভেতো নাড়ী তেমন নয়। টাকাটাকাসের বৃহদাকান্ধ আঙ্গুর আপেল ও নাগপাতি কিনিয়া ক্ষুন্নিবারণের চেষ্টা করা গেল। মোগলসরাই ছাড়াইলে দূরে বারাণসীতে বেণীমাধবের ধ্বজ দেখিতে পাইলাম। সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি দেবালয়ের চূড়াও দৃষ্টিগোচর হইল। বিশ্বেশ্বরের আসন মনে করিয়া কেহ কেহ যুক্তকরপুটে উদ্দেশে মন্দিরকে নমস্কার করিলেন। পরে যখন শুনিতে পাওয়া গেল মন্দিরটি রামনগরের, তখন সঙ্গীদের ভাবন হইল,—কাশীর প্রণাম পড়িল কিনা ব্যাসকাশীতে ! উন্ট উৎপত্তি না হয়! তাহাদিগকে আশ্বাস দিলাম, জনাৰ্দ্দনের ন্যায় বিশ্বেশ্বরও ভাবগাহী, সন্দেহ নাই। পথে বিন্ধ্যাচল হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তনকারী মোটর কোচ আমাদের বিপরীত দিকে চলিয়া গেল। দেখলাম, মোটর কারে এবং মোটর কোচে প্রভেদ আছে। মোটা মোট টায়ারওয়ালা মোটর গাড়ী সৰ্ব্বোচ্চ শ্রেণীর ভ্রমণবিলাসীদের সোহাগের সামগ্ৰী, কিন্তু মোটর কোচ তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীতে পরিপূর্ণ। বেল প্রায় তিনটার সময় অনতিদূরে চুণারের অমৃচ্চ গিরিশ্ৰেণী দেখিতে পাইলাম। চারিদিকে নয়নাভিরাম সবুজ শোভা, মাঝে মাঝে পাহাড়ের গায় কাকরের আখরে কে যেন হিজিবিজি লিথিয়া রাখিয়াছে। গিরিশৃঙ্গের উপর একখানি অট্টালিকা। শুনিলাম, পাহাড়ের নীচে একটা ইদার হইতে বাড়ীর জলসরবরাহ হইয়া থাকে। এই কাজে নাকি প্রায় এক ডজন লোক লাগাইতে হয়। এইরূপ অন্তরীক্ষবাসীদের পক্ষে বায়ুসেবনের স্বযোগ অবশ্য যথেষ্টই আছে, কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য গুরুতর সামগ্রীর সহিত সম্পর্ক রাখা তাহাদের কিঞ্চিং কষ্টকর বলিয়া বোধ হইল । একথানি ঠিকাগাড়ীতে নিজেরা চাপিয়া এবং থানকয়েক একায় বোচকাবুচকি চাপাইয়া সহরের দিকে চলিলাম। ঠিক যাত্রারম্ভের সময় চুণারপ্রবাসী ভরতদাদ উড়ানিতে কোমর বাধিয়া আমাদের অভ্যর্থনার জন্য আসিয়া পৌছিলেন এবং একা হইতে নামিয়াই পুনরায় আমাদের গাড়ীতে উঠিয়া বসিলেন। ষ্টেশনের পাশে সড়কের দুই দিকে পাথরের কারখানা। এ অঞ্চলের কোঠাবাড়ী সমস্তই প্রস্তরে প্রস্তুত। পাথর কাটিয়া ছাটিয়া ঘষিয়া মাঙ্গিয় গৃহনিৰ্ম্মাণের উপযোগী প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩২২

  • ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ

[ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড করা হইতেছে। চুণারকে এ দেশের লোকে ‘পাখরগড় বলে। অনতিদূরেই পাহাড়ের উপর গড় দেখিতে পাইলাম। গুহক বিক্রমাদিত্য এবং শেরশাহের লীলাস্থল দুর্গটি এখন যুক্তপ্রদেশের ফিরমেটরি বা তরুণ অপরাধীদের বন্দীশালায় পরিণত হইয়াছে । আমরা যে তিনতলা বাড়ীতে উঠিলাম তৎসংলগ্ন শিলালিপি পাঠে জানিতে পার গেল, বাড়ীখানি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জনৈক পৰ্ত্ত গীজ কাপ্তেনের তৈয়ারি । এ বিবরণের অন্থকূল প্রমাণও যথেষ্ট ছিল। দেখিলাম, বাড়ীর অধিকাংশ চৌকাঠেই কপাট নাই এবং প্রায় সমস্ত বাতায়নেই বাতাসের অবাধগতির স্থবিধা রহিয়াছে। ভরতদাদা বলিলেন, কি কষ্টে যে তিনি এই স্বন্দর বাংলাটি খুজিয়া বাহির করিয়াছেন তাহ কহতব্য নয় । হাওয়া থাইতেই পশ্চিমে আসা ; সেই হাওয়া অবলীলাক্রমে গৃহের সৰ্ব্বত্র প্রবেশ লাভ করিবে ; অধিকন্তু তিনি আশা করিলেন, আমাদের মত সাহিত্যিক লোকে এই গৃহে বসিয়া যত্বপূৰ্ব্বক প্রত্নতত্ত্বের অনুশীলন করিলে অনেক সুফল ফলিবে! মুফলের আশা পরে ; দেখিলাম আপাতত: বাংলার সম্মুথের জমীতে বড় বড় কুমড়া ফলিয়াছে বিস্তর। অদূরে ইদারা ; পাশে একটি পুষ্পিত কৃষ্ণচূড়ার গাছ। বাগিচার ফকে বজেড়া'র ক্ষেত, ক্ষেতের নীচেই পূর্ণাঙ্গী গঙ্গার জলরাশি। পরপারে স্বদুল্পবিস্তৃত খামল ভূমির শেষে আকাশের কোলে নীলাভ বনশ্রেণী । সন্ধ্যার সময় বেড়াইতে বাহির হইলাম। বাংলার সম্মুখের রাস্তাটি কেল্প হইতে ক্যান্টনমেন্ট পৰ্য্যত গিয়াছে। পথের দুই দিকে তরুণীর্থী ; মৃদু বায়ুহিল্লোলে গাছের পাতাগুলি ঝুরঝুর করিয়া কঁাপিতেছে। রিফরমেটরির বালকবন্দীর হকি থেলিয়া ফিরিতেছে, তাহাদের বুদ্ধ সাহেব সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট বাইকে চলিয়াছেন। একটি লোক লাঠিহাতে একপাল টার্কি তাড়াইয়া আসিতেছে। গোরু চরাইবার মত এখানে মুরগী চরাইবারও চলন আছে দেখিতেছি। ফোটের পাহাড় একেবারে নদীগর্ভ হইতে উঠিয়াছে। সেখানে বাকের মাথায় এক ঝাক নৌকা। দেহাতী লোকে বোঝাই হইয়া দিনশেষের শেষ খেয়া ওপারে চলিয়াছে। - ৬ষ্ঠ সংখ্যা ] প্রত্যহ বায়ুসেবী বাবুর আমদানী হইতেছে। মহারাজ রাজারামজীর বাংলা একখানিও আর খালি নাই। বাকী দুইজন বাড়ীওয়ালা হনুমানপ্রসাদ এবং ভাগবতপ্রসাদের প্রসাদলাভও এখন অসম্ভব। ক্যান্টনমেন্টে দুই-একটা বাড়ী খালি অাছে দেখিলাম, কিন্তু সেখানে দেশীয়দিগের প্রবেশ নিযেধ । বাজারে নাকি আগে চার পয়সা ছ' পয়সা সের মাছ বিকাইত ; এখন দর চড়িয়া চার আনায় উঠিয়াছে। আলু কিছু আক্র, কিন্তু অন্যান্য তরকারি কলিকাতার তুলনায় স্বলভ। মাংস বেশ সস্তা, চৌদ্দ পয়সায় এক সের পাওয়া যায়, তবে তেমন স্বস্বাদ নয় ; বিশেষত: ঘন ঘন খাইয়া অরুচি ধরিবার উপক্রম হইয়াছে। পাণ মাগগি—বজেট বাধিয়া খরচ করিতে হয়। নগ্নদেহে গঙ্গাস্নানের পথে পোষ্টাফিসে চিঠি ফেলিতে গিয়াছিলাম। ডাকঘর মেরামত হইতেছে। একজন মজুর চুনসুরকি বহিয়া সিড়িতে উঠিতে উঠিতে সম্মুখে পথরোধকারী আমাকে দেখিয়া বলিল, পণ্ডিতজি, যানে দেও ! নিরক্ষর লোকেও আমার বিদ্যার পরিচয় কেমন করিয়া পাইল ভাবিতেছি, হঠাৎ মনে পড়িল ; এদেশে ব্রাহ্মণমাত্রেই না পড়িলেও পণ্ডিত । স্বাস্থ্যকর স্থান বলিয়া চুণারে অনেক অবসরপ্রাপ্ত সাহেবের বাস। একদিন কোম্পানি-বাগে বেড়াইতে বেড়াইতে একটি বৃদ্ধ ইংরেজ সৈনিকের সহিত সাক্ষাৎ হইল । ইনি লর্ড রবার্টসের কাবুল অভিযানে যুদ্ধ করিয়াছিলেন; এখন দৈনিক এক শিলিং পেন্সন পান । এই সামান্য আয়ে নিজের ও রুগ্ন পত্নীর খোরপোষ চলা অসম্ভব, তাই কিছু জমি লইয়া চাষ করিতেছেন। এ ছাড়া এই কোম্পানিবাগে জন থাটাইবার চাকরীও পাইয়াছেন। জমির তদ্বির করেন ইনি, কিন্তু বাগান জমা লইয়াছে একজন মালী ; সেই ফল বিক্রয়ের ফলভোগী । তিনটি ছেলে আছে, সকলেই বেশ দু’পয়সা রোজগার করে । একজন লিভারপুলে, একজন দিল্লীতে এবং কনিষ্ঠ পুত্রটি কানাডায় থাকে। ছোট ছেলেটি কালেভদ্রে কিছু কিছু পাঠায়, বড় দুইটির কোন খবর বহুদিন পাওয়া যায় নাই। ফিরিবার সময় সাহেবকে বলিলাম, আগামী বৎসর যদি আসি পূজার পর্যটন - כיכר - - - --- ്.--l.আবার এই বাগানে তাহার সহিত সাক্ষাৎ লাভের আশ। করি। তিনি হাসিয়া কহিলেন, এখানে যদি দেগা না হয়, কবরখানায় হইবে । একদিন রামবাগ ও রামসরোবর দেখিতে গিয়াছিলাম। রামায়ণের রামচন্দ্রের সহিত ইহাদের কোন সম্পর্ক নাই এবং রামদা এবং রামছাগল প্রভৃতি শব্দে যেরূপ, রাম বিশেষণটি এক্ষেত্রে সেরূপ বৃহদৰ্থবাচকও নহে। স্থানীয় ভূস্বামী মহারাজ রাজারামজী মালিক বলিয়া এ দু'টির এইরূপ নামকরণ হইয়াছে। রামবাগে কতকগুলি ফুল ও ফলের গাছ আছে, এ ছাড়া একটা ঝরণার উপর ঘাট বাধিয়া সেখানে নিভৃত বিরামকুঞ্জ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। মহাষ্টমীর সন্ধ্যাকালে দুর্গাবাড়ী সন্দর্শনে চলিলাম। রেলওয়ে ষ্টেশনের সন্নিহিত মাঠ ছাড়াইলেই পাহাড় । অনুন্নত গিরির মেখলার মত স্থপরিসর পাষাণপথটি স্ট্রাকিয়৷ বাকিয়া উঠিয়াছে। মাঝে মাঝে প্রকাও শিলাখণ্ড , তাহাদের রিক্তদেহ সিক্ত করিয়া নৃত্যশীলা নিঝরিণী কলধ্বনি তুলিয়া ছুটিয়াছে। দুই দিকে অসংখ্য শিউলী গাছ; সন্ধ্যার তরল অন্ধকারে নির্জন বনপ্রদেশ শেফালীর মৃছ সৌরভে ভরপুর। শরদ্বারাধনায় প্রকৃতির প্রেমাঞ্জলির মত ফুলগুলি নিঃশব্দে ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে। ক্ষণকাল পরে ঝরণার উপর একটা পোল পাওয়া গেল। ওপারে দুর্ভেদ্য দুর্গের ন্যায় মন্দিরটি মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে। একটি অতিক্ষুদ্র দ্বারপথে দেবীর সম্মুখে প্রবেশ লাভ করিলাম। বাঙ্গালার মৃন্ময়ী দশভূজায় এবং এখানকার ধাতুমূৰ্ত্তিতে অনেক প্রভেদ। এ পূজার আয়োজনেও সে উৎসবের সাদৃত নাই। প্রায় একপ্রহর রাত্রে বাজারের কাছে রামলীলা দেখিতে গেলাম। ষ্টেজ বাধিয়া থিয়েটারী কেতায় অভিনয় হইতেছে। লোকজনের খুব সমারোহ। কয়েকটা মিষ্টান্ন এবং পাণের দোকান বসিয়া গিয়াছে। ঢোল করতাল লইয়৷ একপাশে একদল গায়ক রামায়ণ কীৰ্ত্তন করিতেছেন। শুনিলাম, গায়কেরা আদিকাণ্ড হইতে আরম্ভ করিয়া আজকার বর্ণনীয় বিষয়ে পৌছিৰামাত্র স্বৰনিক ভোল৷ হইবে। একজন বাঙ্গালী চিত্রকর দৃশুপটগুলি জাকিয়াছেন। সেদিন হনুমানের সমুদ্রলক্সন ও অশোকবনে সীতা