পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.१२२ তাহার আলোচনা করিবার ইচ্ছ। আছে । বিদ্যাপতির যে নাট্যশক্তিও যথেষ্ট ছিল, বাঙ্গালী পাঠক তাহা ততট৷ লক্ষ্য করিয়াছিলেন কিনা সন্দেহ । বিদ্যাপতির বৈষ্ণবপদাবলীই বঙ্গে পঠিত গীত ও আলোচিত হইয়৷ আসিতেছে, কিন্তু তাহার শিবগতির ভিতর কতটুকু কবিত্ব বা শক্তি নিহিত আছে তাহ কেহ এতাবৎ বুঝতে চেষ্টা করেন নাই, বুঝান তো দূরের কথা। তাহার শৈবগীতাবলী ৮ কালীপ্র ম কাব্যবিশারদ বহুদিন পূৰ্ব্বে প্রকাশ করিয়াছিলেন ; ইদানীং সাহিত্যপরিষং-সম্পাদিত পদাবলীতে সেগুলি আরও বিস্তৃতভাবে প্রকাশিত হইয়াছে, ইহাও । প্রায় পাচবংসর হইতে চলিল , তথাপি এই শ্রেণীর গীতগুলির কোনও সমালোচনা হয় নাই দেথিয়। অযোগ্যত। সত্বেও ইহাদের সম্বন্ধে দুএকটি কথা বলিতে প্রবৃত্ত श्प्लांछ् ि। বিদ্যাপতির শিবগীতির সম্বন্ধে লক্ষ্য করিবার দ্বিতীয় বিষয়—বঙ্গে প্রচলিত শিবগীতির সঙ্গে ইহাদের বিস্ময়জনক সাদৃশ্য। বঙ্গে অনেকগুলি শৈবকাব্য আছে, ইহাদের সমগ্র রচনা কেবল শিবপাৰ্ব্বতী সম্বন্ধে, যেমন শিবায়ণ প্রভৃতি। আবার অনেকগুলি এমন কাব্য আছে যাহাতে প্রসঙ্গক্রমে শিবপাৰ্ব্বতীর দাম্পত্যচিত্র চিত্রিত হইয়াছে, যেমন মুকুন্দরামের চণ্ডী, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি। আমরা দেখিয় আশ্চৰ্য্যান্বিত হই যে এই কাব্যগুলিতে শিবপাৰ্ব্বতীর বিবাহ সম্বন্ধে মেনকাদির যে চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে, শিবপাৰ্ব্বতীর দাম্পত্য ও গৃহস্থালির যে ভাবে বর্ণনা আছে, সেগুলি যেন হুবহু বিদ্যাপতির অনুকরণে চিত্রিত। বঙ্গে যে বিদ্যাপতির শিবগীতি কখনও প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছিল, তাহা আমরা জানি না, এমন কি কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের সংস্করণের পূৰ্ব্বে ইহাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কাহারও অবগতি ছিল তাহাও বোধ হয় না ; অথচ চিত্রের যে এমন ঐক্য তাহার কারণ কি ? তাহার একমাত্র কারণ, যে, বঙ্গেই হৌক বা মিথিলাতেই হোক, সে-সময় দেবতা সম্বন্ধে ধারণ নিতান্ত ঘরোয় হইয় পড়িয়াছিল, দেবতার বিষয়ে আম৷ দের এই ধারণ দাড়াইয়াছিল যে তাহার। সমস্ত মহুযসম্ভব ব্যবহারই করিতে পারেন ; অতএব কুমারসম্ভবের আদর্শ মহামোগী, পুরাণের বিশ্বৰূিপায় নীলকণ্ঠ, নিঃস্ব ভিক্ষাজীবী প্রবাসী—আশ্বিন ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড বৃদ্ধ ব্রাহ্মণে ও জগজ্জননী উমা সেই দরিদ্র গৃহস্থের বৃদ্ধস্য তরুণী ভাৰ্য্যায় দাড়াইয়াছেন । তাই কোনও কবিই এই শিবপাৰ্ব্বতীর চরিত্রব্যপদেশে ঘরের কথা বলিতে কুষ্ঠিত হন নাই। মায়ের মন মিথিলাতেও যেমন বঙ্গেও তেমন, গৰ্ব্বিত ধনীর চরিত্র জগতে সৰ্ব্বত্রই সমান, অন্নাভাবক্লিষ্ট দরিদ্র পরিবারের মূৰ্ত্তি বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার হিসাবে বিভিন্ন হয় না, সবদেশেই একই প্রকার । যদি সেই-সকল চরিত্র যথাযথ ভাবে, অক বর মত বিকৃত না করিয়া চিত্রিত হয়, . তাহ হইলে বঙ্গের চিত্রে ও মিথিলার চিত্রে প্রভেদ না . কাজেই বঙ্গের চিত্রে ও বিহারের চিে হওয়াই ঠিক । ঐপ্রকার বিস্ময়জনক সাম্য দেখা যায়। বিদ্যাপতির অথবা মুকুন্দরাম প্রভৃতির শিবসঙ্গীতে কোনও জটিল মনস্তত্বের মীমাংসা নাই, কোনও একট। উচ্চ আদর্শস্থষ্টির প্রয়াস ও লক্ষিত হয় না । সেগুলি দৈনিক জীবনের সুখদুঃখসম্বলিত গার্হস্থ্য চিত্রাবলী। ম্যাথু আৰ্ণল্ড বলেন যে মনুষ্যজীবন যথাযথ অঙ্কন কবিত্বের প্রধান লক্ষণ ও লক্ষ্য । তা যদি হয়, তাহ হইলে এই চিত্রগুলিতে বিদ্যাপতির কবিত্ব যথেষ্ট পরিমাণে বিকশিত হইয়াছে বলিতে হইবে । কোন ও বড় সমস্যার বা আদর্শের চিত্র ন হইলেও ইহাদের ভিতর যে একটি কোমল অথচ নিবিড় আত্মীয় তার ভাব, সৰ্ব্বাবস্থাপরাজয়ী স্নেহের রেখা ফুটিয়া উঠিয়াছে ইহ। লাইয়াই আমাদের সংসার । আমা- - দের দেশ দারিদ্র্যকে কোনও দিনই ভয় করিতে শেপে নাই, কেনন আমাদের অভাব এত কম ছিল যে কোনও ন। কোনও উপায়ে লোকের সংসার চলিত। দারিদ্র্যের কারণে স্বামীস্ট্রীর স্নেহবন্ধন বিচ্ছিন্ন ইত না। গৃহে কলহ করিয়া শিব বাহিরে চলি যাইতেন—গেীর তাহাকে খুজিয় বেড়াইতেন, একথা আমরা বলিয়াছি ; সেই অন্বেষণবিষয়ুক কবিতার সাংগয্যে বিদ্যাপতি একটি সরস স্নেহময় স্বয়ের চিত্ৰ তুলিয়াছেন—সেই চিত্র হইতে আমরা বুঝিতে পারি যে হরপাৰ্ব্বতীর বিবাদের মধ্যে বিষ নাই! এইরূপ বিবাদ নিত্য হইলেও স্ত্রীপুরুষের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি স্নেহের ও বিশ্বাসের অভাব ছিল না। এই প্রকার স্নেহ ও বিশ্বাসের উপরই মাংসারের স্থিতি । আমার পাগল কোথা গেল, আহা কোথায় কথন কি বিপদে পড়িবে; ৬ষ্ঠ সংখ্যা] , را در این بار در ایران ایران ایران. ঘরে তাহার সব সাজান রহিল সে কোথায় রহিল ; কে আমার স্বামীকে এমন উন্মত্ত করিল –এই সকল কথার মধ্যে একটি স্নেহস্নিগ্ধ হৃদয়ের স্পন্দন বেশ অহুভৱ করা যায়। ইহার উপর পরস্পরনির্ভরত। স্ত্রী স্বামীকে ও স্বামী স্ত্রীকে সকল মনের কথাই ব্যক্ত করেন। স্ত্রী স্বামীকে মধুর শাসনবাক্যে প্রবেধিত করিয়া বলেন— “হে আমার উন্মত্ত ! তুমি আমার কথা শোন না বলিয়াই তোতোমার এত নাকাল, সংসারে গৃহিণীর কথা তো সকছুলেই শোনে, তুমি কেন শোন না-কে তোমায় এমন বুদ্ধি লি?” স্বামী স্ত্রীকে বলে, “দেখ দেৰি কি কাও, তোমার গণেশের মূষিক আমার মাথায় বসিয়া গঙ্গাজল পান করে --তোমার কাৰ্ত্তিক এক ময়ুর পুষিয়াছে যাহাকে দেখিয় আমার সাপগুল ভয়ে অস্থির হয়, তুমি একটা সিংহ

      • 。、、、

-ঘাই কোথায়? হৃদয়ের এমন বিশ্রদ্ধভাব যত দিন থাকে ততদিন শত দুঃখদারিদ্র্যের মধ্যেও স্বথ থাকে, উহ ভাঙ্গিলে সংসার ভাঙ্গিয়া যায়। বঙ্কিমচন্দ্র তাহার “কৃষ্ণকাস্তুের উইলে এবং জর্জ এলিয়ট তাহার "রমোলায়" সেই তথ্য প্রতিপন্ন করিয়াছেন। বিদ্যাপতির শিবগীতির ડીરે সরস উপাদানটি সৰ্ব্বাস্ত:করণে উপভোগ্য। গৌরী কর্তৃক শিবান্বেষণ-বিষয়ক পদাবলী হইতে আমরা দুইটি সামাজিক তথা জানিতে পারি। বিদ্যাপতির সময়ে অবরোধপ্রথা প্রচলিত হইয়াছিল বলিয় মনে ं ना' ; *६३ तमय मिथिलाग्न भूलनभानधडान সম্পূর্ণমাত্রায় বিস্তৃত হয় নাই, সে কথা আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। আজকাল বঙ্গে বিহারে ও পশ্চিমাঞ্চলে যে ভাবে অবরোধপ্রথা চলিয়াছে, সে সময় তেমন ছিল না, তাহ হইলে সন্ধান্তবংশীয় ব্রাহ্মণমহিলা পথে পথে স্বামীর অম্বেষণ করিয়া হিদুর সংসারে গৃহিণীর যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল, তাহ গৌরীর আচরণে ও কথাবাৰ্ত্তায় স্পষ্ট লক্ষিত হয়। কবে কোন অবস্থায় অবরোধপ্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত হইয়াছিল তাহ নি:সংশয়ু মীমাংসা করিবার উপায় নাই। বিদ্যাপতির স্বক্ষদৃষ্টি সাংসারিক সকল ব্যাপারেই প্রস্বত ছিল, তাহাও এই গীতগুলি হইতে জানিতে পারি। সুঃখের | বিদ্যাপতির শিবগীতি পুৰিয়াছ যে আমার বৃষকে ভয় দেখায়। আমি করি কি , বেড়াইতে সাহস করিতেন না। অপর তথ্য এই যে । ৭২ত, ബ --- বিষয় হরগেীরীর বিবাহপ্রসঙ্গে তিনি মৈথিল বিবাহপদ্ধতিত্ব সবিশেষ পরিচয় দেন নাই, দিলে আমর ইহার একটি অবিকৃত চিত্র পাইতাম। তিনি কেবল “কোবর” অর্থাৎ কৌতুকাগারে (বাসরঘরে) স্ত্রীলোকের পরস্পরের সহিত রঙ্গরহস্ত করে—এইটুকুই জানিতে দিয়াছেন। আমাদের বিবাহব্যাপারে এবং বিহারের বিবাহব্যাপারে বিস্তর প্রভেদ আছে। কি কি বিষয়ে প্রভেদ তাঙ্গ আমরা বিদ্যা পতির কাছ হইতে জানিতে পারি না। যাহা হউক কৰি তৎকালপ্রচলিত কতকগুলি কুসংস্থারের পরিচয় দিয়াছেন, যথা মূচ্ছিত হইলে ভূতাবেশ হইয়াছে ভাবিয়া রোজ বা ওঝা ডাকা ; “যাদুটোলায়"বিশ্বাস, নজর লাগায় বিশ্বাস ইত্যাদি। ঐতিহাসিকের কাছে এই-সকল কথার पूजा আছে। তাহার কৃষ্ণসঙ্গীতেও এইসকল বিশ্বাসের অল্পবিস্তর উল্লেখ দেখিতে পাই। বিদ্যাপতি নিজে এই সকলে বিশ্বাস করিতেন বলিয়া মনে হয় না, কারণ তিনি কোনও পাত্রপাত্রীকে বশীকরণাদি ঔষধসেবনের ব্যবস্থা দেন নাই; = হৃদয় দিয়া হৃদয়-বশীকরণই যে সকল বশীকরণ অপেক্ষ ফলপ্রদ সেকথা তিনি জানিতেন ও শিখাইয়াছেন। তৰে অনেকে যে এই সকল ব্যাপারে আস্থ স্থাপন করিভ ভাই তিনি দেখাইয়াছেন। বিদ্যাপতির শ্ৰীকৃষ্ণসঙ্গীতেও তাহার সাংসারিক জঙ্কি জ্ঞতা সবিশেষ প্রকাশিত হইয়াছে, কিন্তু ঐ পদাবলীsাম ভাবের চিত্র বলিয়া সেখানে তাহার সংসারজ্ঞান ও উপদেশ স্বত্রাকারে প্রকটত। উহাতে আমাদের শিথিবীর ও বুঝিবার অনেক কথা আছে, অন্য কোনও সময় দে বিৰ য়ের আলোচনা করিবার ইচ্ছ রহিল। বিদ্যাপতির শিক গীতিতে তাহার সংসারজান নাটকীয় কৌশলে ব্যক্ত হই, স্বাছে তাহ আমরা এতক্ষণ দেখিয়াছি। বিদ্যাপতির সমগ্র শক্তি বুঝিতে হইলে এই গীতগুলির গ্রন্তি অমনোনয়৷ হইলে চলিবে না। এগুলিকে বিচার করিয়া ভবিষ্যৎ সমালোচক বিদ্যাপতি সম্বন্ধে মতস্থাপন করেন এই উদ্বেপ্তে এই প্রবন্ধে উহাদের যৎকিঞ্চিৎ আভাস দিবার প্রয়াস করিয়াছি। - ঐজিতেঞ্জলাল বস্তু। -- o