পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११० কৰ্ম্ম সাংসারিক কাজ সবই মুখে মুখে চলিত। কাজেই সংস্কার বা রীতিনীতির ধারা বুঝিতে পারা নিতান্তই কঠিন। এইজন্যই কালনিরূপণ দুঃসাধ্য। তবে মেক্সিকোতে চিত্রের সাহায্যে ভাব প্রকাশ করিবার রীতি অবলম্বিত হইয়াছিল। কিন্তু এগুলি পরিপুষ্ট হইয়া উঠে নাই । জমিজমার হিসাব এবং পূজাপাঠ ছাড়া অন্য কোন দিকে (Picture writings) চিত্রলেপের ব্যবহার হইত না । ডিক্সন যুক্তরাষ্ট্রের লোকগণনা বিভাগের এক শাখার বিবরণ সম্পাদন করিতেছেন। ইনি বলিলেন—“যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ লোহিতাঙ্গ নরনারী আছে— কানাডায় প্রায় এক লক্ষ। মেক্সিকে। এবং দক্ষিণআমেরিকায় লোহিতাঙ্গদিগকে স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনা করা श्झ न1 ।।' হার্ভার্ড ক্লাবে নেশভোজন । সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে দেখিতে পাই পণ্ডিতেরা গ্রন্থ রচনা করিয়া নিজের নাম প্রকাশ করিতেন না। গ্রন্থগুলি গুরুর নামে প্রচারিত হইত। বৰ্ত্তমানকালেও ভারতবর্ষে এই সনাতনী গুরুভক্তির ধারা চলিতেছে। অমুক টোলের ছাত্র অমুক গুরুর শিষ্য ইত্যাদি বলিয়া শিক্ষিতের গৌরব বোধ করিয়া থাকেন। চেলায় চেলায় অথবা শিষ্যে শিষ্যে"সম্ভাব এবং বন্ধুত্ব এই উপায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। “গুরুভাই" শব্দ আমাদের ধৰ্ম্মজীবনে এবং শিক্ষা-সংসারে সুপরিচিত। পাশ্চাত্যসমাজে alma mater একটা পারিভাষিক শব্দ আছে। ইহার দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোন শিক্ষাকেন্দ্র বুঝান হয়। এইসকল দেশে লোকের ভারতবাসীর মত জন্মভূমিকে কখনও "মা" বলিয়া। ডাকে না। কিন্তু বিদ্যালয়গুলি ছাত্রদের নিকট মাতৃস্বরূপ। এক জননীর সন্তানের ন্যায় ছাত্রেরা ভ্রাতৃত্ব সম্বন্ধ চিরজীবন রক্ষা করিয়া চলে। এইজন্য ইহার বিদ্যালয় হইতে বাহির হইবার পর নানাপ্রকার ক্লাব সমিতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করিয়া পুরাতন ছাত্রজীবনের স্মৃতি জাগরুক রাখিতে চেষ্টা করে। অক্সফোর্ড ও কেন্থিজের ছাত্রদের Old Assoication 43 ostol .হুবিদিত। ইয়াঙ্কিস্থানেও હાફે Boy's প্রবাসী-আশ্বিন, ১৩২২ --SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS [ ১৫শ ভাগ,"১ম •e. ব্যবস্থা বেশ লক্ষ্য করিতেছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ছাত্রের আমেরিকার নানা স্থানে হার্ভার্ড ক্লাব স্থাপন কুরিয়াছেন। নিউইয়র্কের হার্ভার্ড ক্লাবে বাস করিয়া হার্ভার্ডের চালচলন খানিকট বুঝিছিলাম। আজ বষ্টনের হার্ভার্ড ক্লাবে নিমন্ত্রণ। প্রায় এক হাজার লোক উপস্থিত। এক ভোজনালয়ে একসঙ্গে এতগুলি ব্যক্তির খাওয়া দাওয়া হইল। ধূমপানের গৃহে দেখি সম্মুখেই এক টেবিলের উপর কতকগুলি বিজয়চিহ্ন "Cup" সাজান হিয়াছে। একজন বলিলেন—“এই যে সৰ্ব্বমধ্যে প্রকাও Cupটি দেখিতেছেন উহ। আমরা বিলাত হইতে কাড়িয়া আনিয়াছি। অক্সফোর্ডের সঙ্গে হার্ভার্ডের একবার নৌচালন সম্বন্ধে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য হার্ভার্ড ক্লাবের নৌচালন সমিতি লণ্ডনে তাহাদের দল পঠাইয়াছিলেন। টেম্স্ নদীতে বাহিচ হয়। অক্সফোর্ড পরাজিত হন।" c বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনাধ্যাপক উডস বলিলেন—“পূৰ্ব্বে বষ্টনে কোন হার্ভার্ড ক্লাব ছিল না। আমরা ভাবিতাম পুরাতন ছাত্রের প্রয়োজন হইলে বষ্টন হইতে দশ মিনিটের ভিতর কেন্থি জে আসিতে পারে। স্বতরাং বিশ্ববিদ্যালয়েরই corta ez old Boys Meeting Asif "fistfors হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু এইসকল সভায় পুরাতন ছাত্রের সংখ্যা অত্যধিক হইত। বষ্টনে আজকাল প্রায় ৬• • • হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট বাস করেন। ইহাদের অনেকেই পুরাতন ছাত্র-সভার সভ্য হইলেন। কাজেই একটা স্বতন্ত্র ভবন তৈয়ারী করা আবশ্যক হইল। এত বড় বাড়ী তৈয়ারী করা হইয়াছে—তথাপি স্থানাভাব-শীঘ্রই ইহাকে আবার বাড়াইতে হইবে।” আমি বলিলাম"নিউইয়র্কের ক্লাবও সৰ্ব্বদা লোকে ভর থাকে।" উড়ন্ত্ৰ বলিলেন—“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ছাত্রদের এরূপ টান না থাকিলে হার্ভার্ড উন্নত হইতে পারিত না। আমরা গবমেন্টের অথবা ধৰ্ম্মসভার সাহায্য পাই না-ধনী ছাত্রদিগের দানেই বিশ্ববিদ্যালয় গড়িয়া উঠিয়াছে। হার্ভার্ড-ক্লাব খোস গল্পের একটা আডডা মাত্র নয়— কাৰ্য্যকরী মাতৃভক্তি ও গুরুভক্তির কেন্দ্র বিশেয ।" | 娅 | o ৬ষ্ঠ সংখ্যা ] আমে উডস, দুই তিনবার ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন। কাশী, পুণ, কাশ্মীর ইত্যাদি স্থানে সৰ্ব্বসমেত দুই বৎসর কাটাইয়াছেন। সংস্কৃত সাহিত্য ও হিন্দুদর্শন শিক্ষা করাই উদ্দেশ্য ছিল। সম্প্রতি ইনি- যোগশাস্ত্র ইংরেজীতে অহুবাদ করিয়াছেন । এই অনুবাদ ভূমিকাসহ Oriental Series Roffs gráfś zitsj fyzitzl otájfty প্রকাশিত হইতেছে । ইনি বলিলৈন “যোগশাস্ত্রের ভিতর Psychology বা মনোবিজ্ঞান-বিষয়ক বহু তথ্য পাওয়া যায়। সেগুলি স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করিবার ইচ্ছ। আছে।” আমি বলিলাম—“গ্রীক দর্শন অথবা জাৰ্ম্মান দর্শন আলোচনা করিবার সময়ে পাশ্চাত্য, পণ্ডিতেরা গ্রীস ও জাৰ্ম্মানির পূর্বাপর সকল ঘটনা বিশ্লেষণ করিয়া দেখেন। প্লেটাে, আরিষ্টটল, কান্ট, ফিক্টে ইত্যাদি দার্শনিকগণকে সমগ্র জাতীয় জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে গ্রথিতরুপে বুঝান হয়। কিন্তু ভারতবর্ষের উপনিষৎ, দর্শন ইত্যাদি গ্রন্থ, কিম্বা দার্শনিক, টীকাকার, ভাষ্যকার ইত্যাদি গণকে এইভাবে বুঝিবার চেষ্টা করা হয় কি ? ভারতের আর্থিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থার সঙ্গে এই-সকল দর্শনবাদের সম্বন্ধ বিশ্লেষণ করিবার প্রয়াস কেহ করিতেছেন কি ? আমাদের এই চিন্তাগুলি আকাশ হইতে পড়ে নাই। আমাদের দেশের লোকেরা পাওয়া পরা করিত, রাষ্ট্রশাসন করিত, ব্যবসায় বাণিজ্য চালাইত, নাচ গান করিত, কবিতা লিথিত, নাটকাভিনয় দেখিত—তাহার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনালোচনা এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনও করিত । কাজেই ভারতীয় দর্শন বুঝিবার জন্য ভারতবাসীর জাতীয় জীবনের সকলপ্রকার অনুষ্ঠান বুঝিতে চেষ্টা করা কৰ্ত্তব্য নয় কি ?" উডস, বলিলেন—“ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক ও বৈষয়িক তথ্য নিতান্ত অল্পমাত্র সংগৃহীত হইয়াছে। সেগুলির সঙ্গে মিলাইয়া দর্শনালোচনা করিবার সম্ভাবনা এক্ষণে খুব কম। আমরা বর্তমানে সংস্কৃত ভাষায় লিখিত দার্শনিক গ্রন্থনিচয়ের অনুবাদ করিয়া যাইতেছি মাত্র। আপনি যে প্রস্তাব করিতেছেন তাহা ভবিষ্যতে হয়ত কার্ষ্যে পরিণত হইবে।” আমি উডসকে জিজ্ঞাসা করিলাম—“হার্ভার্ডে চীন। জাপানী এবং ভারতীয় ছাত্রের সংস্পর্শে আপনি আছেন। > 8 Harvard কথা ইহাদের তুলনা করিয়া কখনও দেখিয়াছেন কি ?’ ইনি উত্তর করিলেন—“চীন জাপানের ছাত্ৰগণ প্রায় সকলেই উত্তম শ্রেণীর অন্তর্গত। ইহাদিগকে গবমেন্ট উচ্চবৃত্তি প্রদান করিয়া পাঠাইয়া থাকে দেশে যাহারা যথেষ্ট উন্নতি দেখাইতে পারিয়াছে তাহাদের মধ্য - হইতেই নিৰ্ব্বাচন করা হয় । কাজেই হার্ভার্ডে ইহার স্বফল প্রদর্শন করে। কিন্তু ভারতীয় ছাত্রদের এরূপ কোন অভিভাবক বা "সংরক্ষক" নাই। ইহার নিজ চেষ্টায় নানা স্থানে ঘুরিতে ঘুরিতে হয়ত হার্ভার্ডে আসিয়া উপস্থিত হয়। গৃহ হইতে উপযুক্ত অর্থ-সাহায্য আসে না। তাহার উপর ছাত্রেরাও যে ভারতবর্ষে উচ্চ শ্রেণীর অন্তর্গত তাহাও বোধ হয় না। কাজেই ভারতীয় ছাত্রেরা আমাদের স্বধৃষ্টি আকৃষ্ট করিতে পারে নাই। তবে কয়েকজন ছাত্রের স্বখ্যাতি না করিয়া থাকা যায় না। কয়েক বৎসর হইল জাতীয় শিক্ষাপরিষদের বৃত্তি পাইয়া চারিজন ছাত্র হার্ভার্ডে আসিয়াছিল। তাহারা সত্যসত্যই উচ্চ শ্রেণীর অন্তর্গত—এখানে - আসিবার পূৰ্ব্বে স্বদেশেও ইহাদের স্বনাম ছিল। এইরূপ বাছ ছাত্র আসিয়াছিল বলিয়া ইহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ নাম করিতে পারিয়াছে। একজন বোধ হয় এবার পিএইচ,ডি, উপাধি পাইবে। ইহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতম পুরস্কার এবং ছাত্রবৃত্তি লাভ করিয়াছিল। এরূপ ভারতীয় ছাত্রেরই হার্ভার্ডে আসা উচিত।” পরলোকগত অধ্যাপক বিনয়েন্দ্রনাথ সেনের নাম করিয়৷ উডস, জিজ্ঞাসা করিলেন—“আপনি তাহাকে জানিতেন কি ?" আমি বলিলাম--“আমি তাহার ছাত্র ছিলাম।” উণ্ড বলিলেন—“আমরা তাহার পাণ্ডিত্য এবং সুমধুর বক্তৃতায় মুগ্ধ হইয়াছিলাম। একদিন আমি আমার ছাত্রগণকে ডেকার্টের দর্শনবাদ সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতেছিলাম। অধ্যাপক বিনয়েন্দ্রনাথ সেই গৃহে উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতার শেষে আমি তাহাকে বক্তৃতা করিতে অনুরোধ করিলাম। ভাবিয়াছিলাম যে তিনি হয়ত দুই চারিট ভদ্রতাসূচক সাধারণ কতকগুলি কথা বলিয়া ছাত্রগণকে সন্তুষ্ট করিবেন । কিন্তু দেখিলাম ডেকার্টের দার্শনিক মত সম্বন্ধেই বক্তৃতা করিলেন। আমি যে পৰ্য্যন্ত বলিয়াছিলাম আপনার শিক্ষক ঠিক তাহার পর, হইতে মুরু করিলেন। ৭৭১