পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१b-8 প্রাণীর স্বায়ু মুখদুঃখ প্রকাশ করার মত সাড়া দেয়, ইহাই প্রচার করা বস্থ মহাশয়ের প্রথম বৈজ্ঞানিক অভিযানের বিষয় ছিল। ইহা পনেরো ষোল বংসর পূৰ্ব্বেকার কথা। জগদীশচন্দ্র ধ্যানমগ্ন মুনির ন্যায় নীরবে যে সাধন করিতেছেন, তাহার ইতিহাস যাহাদের জানা আছে, তাহাদের কাছে ষোলবৎসর পূৰ্ব্বেকার কথা বলা নিম্প্রয়োজন। ইংলণ্ড ও ফ্রান্সের বিজ্ঞান-পরিষদ তখন তাহার পরীক্ষাগুলি দেখিয়া অবাক হইয়। গিয়াছিলেন। প্রচলিত বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের সহিত জগদীশচক্সের আবিষ্কৃত তথ্যগুলি খাপ খায় না, গোড়া বৈজ্ঞানিকগণ ঈর্ষান্বিত হইয়া পড়িয়ছিলেন। সংবাদপত্রে ও বৈজ্ঞানিক সাময়িকপত্রে তখন জগদীশচন্দ্রের কথাই প্রকাশ হইত ; তিনি এক পৃথিবীব্যাপী বিরাট আন্দোলনের স্বত্রপাত করিয়াছিলেন। মাদকদ্রব্য প্রয়োগে প্রাণী উত্তেজনার লক্ষণ প্রকাশ করে এবং বিষে মরিয়া যায়, ইহা আমাদের জ্ঞান কথা। বিদ্যুতের সাহায্যে প্রাণীর এইসকল অবস্থার কথা শারীরবিদগণ প্রাণীদের,দিয়াই লিখাইয়৷ লইতে পারেন। কিন্তু মাদকদ্রব্য প্রয়োগ করিলে যে ধাতুপিণ্ডও উত্তেজন প্রকাশ করে এবং বিষে জর্জরিত হয়৷ মরিয়া যায়,-ইহা কাহারে জান ছিল না। জগদীশচক্সের গবেষণার ফলে ইহা জানিয়াই সকলে চমৎকৃত হইয়াছিলেন। ইহার পরে জগদীশচন্দ্র আরো দুইবার বিদেশ-যাত্র। করিয়াছিলেন। সেই সময়ে যুরোপ ও আমেরিকা প্রভৃতি দেশে প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্বন্ধীয় তাহার অনেক আবিষ্কারের কথা প্রচারিত হইয়াছিল। উদ্ভিদের যেসকল জীবন ক্রিয়ার ব্যাখ্যান আধুনিক বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরাও দিতে পারেন নাই, বস্থমহাশয় সেইগুলিরই অতি সহজ ব্যাখ্যান দিয়া সকলকে বিস্মিত করিয়াছিলেন। তিনি কেবল বক্তৃতা করিয়া ব্যাখ্যান দেন নাই, নিজের পরিকল্পিত অতি স্বন্দর স্বন্দর যন্ত্রের সাহায্যে প্রত্যেক উক্তির প্রমাণ দেখাইয়া সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ইহাতে উদ্ভিদতত্বের অনেক রহস্তের মীমাংসা হইয়া গিয়াছিল। এবারেও উদ্ভিদের জীবনক্রিয়ার আরো নূতন নূতন তত্ত্বপ্রচারের জন্য জগদীশচন্দ্র বিদেশযাত্র করিয়াছিলেন। প্রবালী—আশ্বিন, ১৩২২ SJSJSMSMMMMS প্রাণী-জীবনের যে-সকল কাৰ্য্য কেবল প্রাণীরই বিশেষত্ব বলিয়া জীবতত্ত্ববিদগণ এতকাল মানিয়া আসিতেছিলেন তাহা উদ্ভিদের জীবনেও দেখা যায়, ইহাও প্রমাণিত করা র্তাহার লক্ষ্য ছিল। ভিয়েনা, পারিস, অক্সফোড, কেমব্রিজ, সিকাগো, কলম্বিয়া এবং তোকিয়ে প্রভৃতির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানপরিষদ সাদরে নিমন্ত্ৰণ করিয়া তাহার আবিষ্কারের বিবরণ শুনিয়াছিলেন। প্রাচীন বিশ্বাসকে ত্যাগ করিয়া সহজে কেহই নূতনকে গ্রহণ করিতে চায় না। যাহারা বিজ্ঞানের সত্য লইয়। নাড়াচাড়া করেন, তাহাদেরও মধ্যে এই প্রকারের গোড়ামি বিরল নয়। জগদীশচক্সের আবিষ্কারগুলি উদ্ভিদতত্ব ও শারীরতত্বের প্রাচীন সিদ্ধান্তের বিরোধী। কাজেই যে-সকল প্রবীণ বৈজ্ঞানিক প্রাচীন সিদ্ধান্তে বিশ্বাস করিয়া আসিতেছিলেন, তাহাদিগকে নূতনের দিকে টানিয়া আনা সহজ কাজ ছিল না। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র এবারে এই দুঃসাধ্য সাধনেও কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন। চক্ষুর সম্মুখে শত শত পরীক্ষা দেখাইয়। তিনি যে সকল সত্যের পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন, প্রবীণ বৈজ্ঞানিকেরাও তাহা অগ্রাহ করিতে পারেন নাই। জড় ও জীবের দুই বৃহৎ রাজ্যের মাঝামাঝি যে স্থানটি চিররহস্যময় ছিল, আমাদের স্বদেশ সী জগদীশচন্দ্রই যে তাহাতে নূতন আলোকপাত করিয়া স্বম্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছেন, জগতের সকল বৈজ্ঞানিকই তাহা এখন স্বীকার করিতেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মভূমি যুরোপকে এখানে ভারতের নিকটে পরাজয় স্বীকার করিতে হইয়াছে। এখন বিদেশের চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রেই বলিতেছেন, যুরোপের বৈজ্ঞানিকগণ প্রকৃতিকে এ পর্যন্ত খণ্ড খও করিয়াই দেখিয়া আসিয়াছেন ; কাজেই তাহার স্বন্দর পূর্ণ মুখিনি কাহারে নজরে পড়ে নাই। প্রাচ্য বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্রই প্রকৃতিকে দৃষ্টির সীমার মধ্যে আনিয়া তাহার পূৰ্ণমূৰ্ত্তি দেখাইবার উপক্রম করিয়াছেন। আমন্ত্রিত হইয়। জগদীশচন্দ্র যুরোপ ও আমেরিকার প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাসমিতিতে যে-সকল কথা বলিয়াছেন, তাহার বিবরণ এখনো আমাদের হস্তগত হয় নাই। সম্প্রতি ম্যাকুলিয়োর মাগাজিন ( McClure Magazine) নামক প্রসিদ্ধ সাময়িক পত্রে বস্থমহাশয়ের [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড | ৬ষ্ঠ সংখ্যা } আবিষ্কার সম্বন্ধে যেসকল কথা প্রকাশিত হইয়াছে আমরা পাঠকের নিকটে তাহারি মৰ্ম্ম উপস্থিত করিতেছি। “প্রবাসীর" নিয়মিত পাঠক জগদীশচন্দ্রের মৃতন ও পুরাতন আবিষ্কারের অনেক কথাই অবগত আছেন । লেখক সেইসকল কথাকেই সংক্ষেপে গুছাইয়া লিখিয়াছেন বলিয়া ইংরেজী প্রবন্ধটি উপাদেয় হইয়াছে। উপাধি গ্রহণ করিয়া জগদীশচন্দ্র যখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বহিরে আসিয়াছিলেন, তপন জড়বিজ্ঞা নের অবস্থা এখনকার মত ছিল না। তারহীন টেলিগ্রাফ, তখন উদ্ভাবিত হয় নাই। ঈশ্বরের তরঙ্গই যে বিদ্যুং তাপ এবং আলোক উৎপাদন করে, ইংরেজ বৈজ্ঞানিক ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল সাহেব তাহা কাগজে-কলমে প্রমাণিত করিয়৷ তখন পরলোকগত । কেবল জৰ্ম্মান পণ্ডিত হাজ সাহেবই সেই সময়ে ম্যাক্স ওয়েলের আবিষ্কারের সূত্র ধরিয়া পরীক্ষা করিতেছিলেন। হাজ সাহেবের এই পরীক্ষাগুলি জ্ঞানপিপাস্ক জগদীশচন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল। হার্জসাহেব পরীক্ষা করিয়া দেখাইয়াছিলেন, কৃত্রিম উপায়ে বিদ্যুতের তরঙ্গ ঈশ্বরে উৎপন্ন করা যাইতে পারে বটে, কিন্তু তাহার পরিচয় আমাদের চক্ষু কর্ণাদি ইন্দ্রিয় গ্রহণ করিত্তে পারে না। কাজেই ইহার পরিচয় লইতে হইলে কোন প্রকার যন্ত্রের সাহায্য প্রয়োজন। ইংরেজ বৈজ্ঞানিক লজ,সাহেব এই কথা শুনিয়া অল্পদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি আবিষ্কার করিয়াছিলেন। তাহাই এখন কোহেরার (Coherer) নামে খ্যাত হইয়াছে। কাচের নলে আবদ্ধ ধাতু যন্ত্রটির প্রধান উপাদান। বিদ্যুতের অদৃশ্ব তরঙ্গ ঈশ্বরে উৎপন্ন হইয়া ধাতুচুর্ণে আসিয়া ঠেকিলে ধাতুর বিদ্যুৎপরিবাহন-শক্তি কমিয়া আসিত এবং ইহা দেখিয়াই অদৃশ্ব বিদ্যুৎ তরঙ্গের অস্তিত্ব বুঝা যাইত। কিন্তু যন্ত্রটিকে কাৰ্য্যক্ষম রাখিবার জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার পরে ধাতুচুর্ণগুলিকে ঝাকাইয়া না দিলে চলিত না। যে ধাতু চূণে একবার তরঙ্গের স্পর্শ লাগিয়াছে, ঐ প্রকারে ঝাকাইয়া না দিলে তাহা আর বিদ্যুৎ-তরঙ্গের সাড়া দিত না । যাহা হউক, লজ লাহেবের এই যন্ত্রে বৈজ্ঞানিকগণ বিদ্যুৎতরঙ্গের পরিচয় গ্রহণ করিতে লাগিলেন এবং এই অদৃশ্ব তরঙ্গের চালনা করিয়া সংবাদ আদানপ্রদানের সুবিধা জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার ꬃካy¢ - খুজিতে লাগিলেন। কিন্তু নলে আবদ্ধ ধাতুচুর্ণের পরিচালন-শক্তি কেন বিদ্যুৎ-তরঙ্গের স্পর্শে পরিবর্তিত হয়, এবং কেনই বা তাহাতে ঝাকুনি না দিলে কাজু, চলেন, এই-সব প্রশ্নের উত্তর অমীমাংসিত থাকিয়া গেল। আমাদের জগদীশচন্দ্ৰই ইহার কারণ অনুসন্ধানে লাগিয়৷ গেলেন। ইহাই তাহার প্রথম গবেষণা। কোন স্বত্রে কোন তত্বের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহার হিসাবপত্র করিয়া তত্ত্বাম্বেষীরা চলেন না। পূৰ্ব্বোক্ত যে বিষয়টি লইয়া জগদীশচন্দ্র প্রায় কুড়িবংসর পূৰ্ব্বে গবেষণা আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহাই যে জীবের জীবত্বের ও জডের জড়ত্বের মূল কথা বলিয়া দিবে, তাহা তিনিও সেই সময়ে ক্ষণকালের জন্য মনে করিতে পারেন নাই। যাহা হউক, বিদ্যুৎ-তরঙ্গের স্পর্শে লৌহচূর্ণ কেন বিদ্যুৎ-পরিচাল নার ধৰ্ম্ম হারায়, তাহার অনুসন্ধান করিতে গিয়া জগদীশচন্দ্র দেখিয়াছিলেন, প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন পুনঃ পুন: সঞ্চালনে অসাড় হইয়া যায়, বিদ্যুৎ-তরঙ্গের বার বারআঘাতে লৌহচূর্ণও সেইপ্রকারে অসাড় হইয় পড়ে। তাই তাহার ভিতর দিয়া তখন বিদ্যুৎ-পরিচালনা হয় না। আবার কাজ পাইতে হইলে, সেই অসাড় ধাতুচুর্ণকে ঝাকুনি দিয়া উত্তেজিত করিতে হয়। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র নিজের এই আবিষ্কারে নিজেই বিস্মিত হইয়া পড়িয়ছিলেন এবং নানা জড়পদার্থের উপর পুনঃ পুনঃ আঘাত-উত্তেজনা দিলে কি ফল হয়, তাছা পরীক্ষা করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। প্রাণীদেহের যে সকল ক্রিয়া চোখে দেখিয়, কানে শুনিয়া বা স্পর্শ করিয়া বুঝা যায় না, প্রাণীতত্ত্ববিদগণ তাহ বিদ্যুং-প্রবাহের দ্বারা বুঝিতে পারেন । জগদীশচন্দ্র ঐ প্রকারে বিদ্যুতের সাহায্য লইয়া জড়ের নানা অবস্থা পরীক্ষা করিতে স্বরু করিয়াছিলেন। সজীব প্রাণীর পেশী বা স্বায়ু উত্তেজিত করিলে উত্তেজনাপ্রাপ্ত অংশে অতি মৃদু বিদ্যুতের উৎপত্তি হয়। খুব ভাল তড়িৎবীক্ষণযন্ত্রে সেই বিদ্যুৎ ধরা পড়ে। কিন্তু মৃত প্রাণীর দেহে অবিরাম আঘাত দিলেও তাহাতে বিদ্যুৎ জন্মে না। ধাতু লইয়া পরীক্ষা করায় জগদীশচন্দ্ৰ দেখিয়াছিলেন, সজীব প্রাণীর ন্যায় ধাতুও আঘাতের উত্তেজনায় সাড়া দেয় ; তাহারও জীবন মরণ