পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন-চড়াল গাছের পত্রপন্দন ও প্রাণীর হৃৎস্পন্দনের সমতা পরীক্ষা। আচার্য জগদীশচন্দ্র যন্থের পরীক্ষায় প্রমাণিত করিয়া দেখাইয়াছেন যে বন-চাড়াল গাছে বিষ গ্যাস প্রভৃতি প্রয়োগ করিলে তাহার যেরূপ পত্রম্পন্দন হয় উহ সম-অবস্থায় প্রাণীর হৃৎস্পন্দনের অবিকল অমুরূপ। ব্যাখ্যানকে কখনই সং ব্যাখ্যান “ বলা যায় না। জগদীশচন্দ্র ইহা গ্রাহ করেন নাই। তিনি বলেন, বাহিরের শক্তি দিয়া যে স্পন্দনকে রুদ্ধ করা যায় এবং চালানো যায়, তাহা মূলে ভিতরকার শক্তির কাজ হইতে পারে না। র্তাহার মতে প্রাণী এবং উদ্ভিদের স্বতঃস্পন্দন বাহিরের শক্তিরই কার্যা । বাহিরে শক্তির অভাব নাই,—জল বাতাস আলোক বিদ্যুং সকলি শক্তিময়। ঈথর এবং ক্লোরোফরম্ প্রভৃতি দ্রব্যের শক্তি যেমন বাহির হইতে আসিয়া দেহের উপরে কার্য্য দেখায়, সেইপ্রকার জলবায়ু ও তাপালোক প্রভৃতির শক্তিও নিযুত দেহের উপরে পড়িয় স্বতঃস্পন্দন শুরু করে। জগদীশচন্দ্রের সিদ্ধান্তটি মোটামুটি এই যে, জীবনধারণের জন্য যতটুকু শক্তির প্রয়োজন উদ্ভিদগণ তাহার চেয়ে অনেক অধিক শক্তি বাহির হইতে সংগ্ৰহ করিয়া নিজেদের দেহে সঞ্চিত রাখিতে চায়, কিন্তু এই প্রকার শক্তিকে সংযত করিয়া রাখার ব্যবস্থা তাহাদের দেহে নাই। কাজেই অতিরিক্ত শক্তি উদ্ভিদের পাতার উঠানামা প্রভৃতি স্বতঃস্পন্দনে দেখাইয়া ব্যয় করে । উদ্ভিদ কি প্রকারে বৃদ্ধি পায়, ইহাও বিজ্ঞানের একটা প্রকাও সমস্যা । পুথিপত্রে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়, প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩২২ { ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড কিন্তু তাহাতে মনের খট্কা মিটে না। পূৰ্ব্বোক্ত সিদ্ধাস্তের সাহায্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিরও ব্যাখ্যান পাওয়া গিয়াছে। জগদীশচন্দ্রের নিজের পরিকল্পিত “ক্রেস্কোগ্রাফ" নামক যন্ত্রটি অতি আশ্চর্য্যজনক । ইহার সাহায্যে তিনি উদ্ভিদ-বিজ্ঞানের অসাধ্য সাধন করিতে বসিয়াছেন । কোনো গাছ প্রতিদিন কতখানি করিয়া বাড়িল, তাহা সপ্তাহ বা মাসের গড় হিসাব করিয়া আমরা বলিতে পারি। বলা বাহুল্য এই প্রকার হিসাব কখনই স্বহ্ম হয় না, একটা মোটামুটি আন্দাজ পাওয়া যায় মাত্র। পূৰ্ব্বোক্ত যন্ত্রটি দিয়া গাছ প্রতি-সেকেণ্ডে কতথানি করিয়া বাড়িতেছে তাহ হাজার লোককে একসঙ্গে দেখানে চলে। যন্ত্রটি কিপ্রকাল আশ্চৰ্য্যজনক একবার ভাবিয়া দেখুন। কোন সার কোন গাছের বৃদ্ধির অমুকুল, স্থির করতে হইলে কৃষিতত্ববিদকে মাসের পর মাস পরীক্ষা করিতে হয় । কিন্তু বস্থমহাশয়ের এই যন্ত্রটির সাহায্যে তাহা কয়েক সেকেণ্ডে স্থির হইয়া যায় । বুদ্ধি রোধ হইলে জীবদেহে ক্ষয়ের স্বরু হয় এবং ক্ষয়ের পরিমাণ অধিক হইলে মৃত্যু দেখা দেয়। ইহাই মৃত্যুর নিয়ম। প্রাণীর মৃত্যুকাল নির্ণয় করা কঠিন নয়। মৃত্যুর পূৰ্ব্বে তাহার সঞ্চাঙ্গে আক্ষেপ দেখা যায় এবং তারপরে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও দেহযন্ত্র নিশ্চল হইয়া আসে। ইহাই প্রাণীর মৃত্যু। কিন্তু মৃত্যু উদ্ভিদকে এমন ধীরে ধীরে আসিয়া আক্রমণ করে যে, ঠিক কোন সময়ে তাহার মৃত্যু হইল, তাহ ঠিক বলা যায় না। পাতা বা ডালের অবস্থ৷ দেখিয়া মৃত্যু ধরা যায় না ; মৃত্যুর পরেও অনেকদিন পর্য্যস্ত শাখাপল্লবকে তাজা দেখিতে পাওয়া ষায় । জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদের মৃত্যুলক্ষণ অনুসন্ধান করিতে গিয়া, তাহাতে প্রাণীর মৃত্যুজ্ঞাপক প্রত্যেক লক্ষণ দেখিতে পাইয়াছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি যেসকল পরীক্ষা দেখাইয়াছেন, তাহা অতি বিস্ময়কর। প্রথমে লজ্জাবতী লতাকে লইয়াই পরীক্ষা চলিয়াছিল। লজ্জাবতীর পাত যন্ত্রের লেখনীর সহিত স্বাক্ষস্থতা দিয়া বাধা ছিল। পাতা হেলিয়া-দুলিয়া উঠিয়ানামিয়া লেখনীর সাহায্যে নিজের অবস্থার কথা নিজেই ঢেউ খেলানো রেখা টানিয়া ব্যক্ত করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। ইহার ধারে লজ্জাবতীর গায়ে তাপ দিবার ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। ঠাণ্ডায় গাছে ভাল সাড়া পাওয়া যায় ৬ষ্ঠ সংখ্যা ) । --സസ്സ്.-- ন। কাজেই যখন একটু একটু করিয়া তাপ বাড়ানো হইয়াছিল, তখন লজ্জাবতী বেশ জোরে সাড়া দিতে আরম্ভ করিয়াছিল। তখনো সে আসন্ন মৃত্যুর কথা বুঝিতে পারে নাই । তাপের পরিমাণ ত্রিশ ডিগ্রি হইতে ক্রমে চল্লিশ এবং তারপরে পঞ্চাশ ও পঞ্চাল্প হইয়া দাড়াইলে যন্ত্রের লিপিফলকে সাড়ার পরিমাণ কমিয়া আসিতে লাগিল । বোধ হয় এই সময়েই লজ্জাবতী বুঝিয়াছিল, অবস্থা ভাল নয়। তারপরে উষ্ণতার পরিমাণ সেটিগ্রেডের যাইট ডিগ্রি হইবামাত্র, সেই তাপক্লিষ্ট লজ্জাবতী হঠাৎ একট প্রবল সাড়া দিয়া নিম্পন্দ হইয় পড়িয়াছিল। এই পরীক্ষা দেখিলে মৃতপ্রায়ু লজ্জাবতীর শেষ প্রবল সাড়াটিকে মৃত্যুর আক্ষেপ ( spasm ) ব্যতীত আর কিছু বলা যায় কি ? একবার নয় বারবার পরীক্ষা করিয়৷ জগদীশচন্দ্র ঠিক মাইট্‌ ডিগ্রি উষ্ণতায় স্বস্থ উদ্ভিদমাত্রকেই মরিতে দেখিয়াছেন। তাজ পাত পোড়াইতে গেলে তাহা আকুঞ্চিত হইয়া নিজেই নড়াচড়া করে। কেবল তাপই এই আকুঞ্চনের একমাত্র কারণ নয়, পাতার মৃত্যুযন্ত্রণার আক্ষেপও ইহার অন্যতম কারণ। উদ্ভিদের এই প্রকার করুণ।-উদ্দীপক মৃত্যুর বিষয় যে শীঘ্র আবিষ্কৃত হইবে, কোনো বৈজ্ঞানিক কিছুদিন পূৰ্ব্বেও তাঙ্কা কল্পনা করিতে পারেন নাই। একই বোটায় অনেক সময়ে বিচিত্র রঙের ফুল ফুটিয়া থাকিতে দেখা যায়। এই-সকল ফুলের বর্ণ দিনে দিনে পরিবর্তিত হয়। পাতাবাহার গাছে দিনে দিনে কত বিচিত্র রঙের ছিটাফোটা প্রকাশ পায়। আচাৰ্য্য বস্থ মহাশয় এগুলির উৎপত্তি প্রসঙ্গে যেসকল কথা বলেন, তাহাও বিস্ময়কর। তাহার মতে পুপপত্রের ঐ বর্ণবৈচিত্র্য তাহদের মৃত্যুলক্ষণ। পাতা ও ফুলের দেহের বিশেষ বিশেষ স্থান যখন প্রাণহীন হয়, তখনি সেইসকল স্থানে বিচিত্র বর্ণ প্রকাশ পায় । উদ্ভিদের যে-সৌন্দৰ্য্যকে আমরা এত আদর করি, তাহ মৃত্যুর বিবর্ণতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সহ-গুণ সকলের সমান নয়। যুবক ও সবল ব্যক্তি যে পীড়ার যন্ত্রণ সহ করিয়া আরোগ্যলাভ করে, তাহাতেই বালক বৃদ্ধ এবং ছৰ্বল ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। প্রাণীর এই cगौन Գs.» --SumitaBot (আলাপ) ০৯:০১, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) ধৰ্ম্মটিও জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদে দেখিতে পাইয়াছেন। তিনি সদ্য-অঙ্কুরিত গাছে তাপ-প্রয়োগ করিয়া দেখিয়াছিলেন, তাহার মৃত্যুর জন্য তাপের পরিমাণ যাইট ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়াইতে হয় নাই। অল্পতাপেই তাহার মৃত্যু হইয়াছিল, –এ যেন দুৰ্ব্বল শিশুর মৃত্যু। সবল ও স্বস্থ গাছকে তিনি বিছাতের প্রবাহ দ্বার প্রথমে দুৰ্ব্বল করিয়া লইয়াছিলেন এবং পরে তাহাতে তাপ দিয়াছিলেন। দুৰ্বল গাছ সাঁইত্রিশ ডিগ্রি উষ্ণতায় মরিয়া গিয়াছিল। তারপরে তুতের জল দিয়া একটি গাছকে অস্থস্থ করাইয় তাহাতে তাপ দেওয়া হইয়াছিল ; বিয়াল্লিশ ডিগ্রিতেই সে মৃত্যুলক্ষণ দেখাইয়াছিল। এপর্য্যন্ত যে-সকল আবিষ্কারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়৷ হইল, তাহার কথা আলোচনা করিলে জগদীশচন্দ্রের চিস্তার ধারা কোন পথে চলিয়া গবেষণাকে সার্থক করিয়াছে, পাঠক তাহা বুঝিতে পারিবেন। জগং যতই বিচিত্র হউক না কেন, তাহার অণু-পরমাণু যে একই মহাপ্রাণে প্রাণবাম হইয়া আছে, তাহা জগদীশচন্দ্র এই ভারতের অতি-প্রাচীন ঋষিবাক্য হইতে জানিতে পারিয়াছিলেন এবং তাহাতে বিশ্বাস করিতেন। এইজন্যই তিনি সজীব-নির্জীব ও প্রাণীউদ্ভিদের বাহু অনৈক্যে আস্থাপন না করিয়া, অস্তরের কথা জানিবার জন্য সকলেরই কাছে উপস্থিত হইতে সাহসী হইয়াছিলেন। কেহ কোনো কথা গোপন করে নাই ; সকলেই একবাক্যে বলিয়াছিল,—“আমরা সবাই এক”। এখনকার বৈজ্ঞানিক জাতিভেদের দিনে সত্যের সদ্ধানে জড় প্রাণী ও উদ্ভিদের দ্বারস্থ হইয়া জগদীশচন্দ্র যে সাহসের পরিচয় প্রদান করিয়াছেন, তাহার উপযুক্ত পুরস্কারই তিনি লাভ করিয়াছেন । ॐीछ*ानानन द्राग्र । মৌন এপ্ৰেম করিয়া লীন অস্বর-শয়নে আমি চেয়ে রব শুধু নীরব নয়নে । বীণার রাগিণী যথা বচন-অতীত তন্ত্রীর মৰ্ম্মের মাঝে রহে তিরোহিত, যন্ত্রী যাদুকর তার যত দিনে আসি মন্ত্রম্পর্শে নাহি তোলে মূর্ছনা বিকাশি। . - ঐপ্রিয়ম্বদা দেবী ।