পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

به ক্রশ নক্ষত্রপুঞ্জ বরাবরই আসন্ন বর্ষার, ও প্রখর গ্রীষ্মের পর নবজীবনের স্বচনা করিয়া থাকে। মিশর দেশেও নবজীবনের চিহ্নরূপে ইহা মামিদের হাতে ও বুকে রাখিয়া দেওয়া হয়। গ্রীক জলদেবতা নেপচুনের ত্রিশূল ও হিন্দুর মহাদেবের ত্রিশূল অনেকটা ক্ৰশেরই রূপান্তর। বৃষ্টি না হইলে মিশরে যেমন কুমারীদিগকে নীলনদে নিক্ষেপ করিবার প্রথা ছিল, মায়াদেশেও সেইরূপ অনাবৃষ্টি হইলে কুমারাদিগকে একটি নির্দিষ্ট পবিত্র কুপে বলি দেওয়া হইত। অন্যান্য অনেক দেবদেবতার পূজার সঙ্গে মায় জাতি মিশরীয়দের মত এক নিরাকার ভগবানেরও আরাধনা করিত। মায়া ও মিশর উভয় দেশেই জুলাইয়ের মাঝামাঝি হইতে নূতন বৎসর আরম্ভ হয় এবং উভয়েরই বৎসরের মধ্যে পাচটি অতি খারাপ দিন আছে। সে দিনে তাহারা কোনো কাৰ্য্যেই হস্তক্ষেপ করিবে না। - মিশরীয়দিগের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে কুমারের চাকের সাহায্যে ও মৃত্তিকার উপাদানে মানুষ গঠিত হইয়াছে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে রক্ষিত ‘টোরানো নামক প্রাচীন মায়া গ্রন্থের কয়েকটি চিত্রে এই ধারণাটি চিত্রিত দেখিতে পাওয়া যায়। অস্ত্রশস্ত্র ধ্বজচিহ্ন ও পোষাক প্রভৃতি সকল বিষয়েই এই উভয় দেশবাসী লোকের ভিতর একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। উভয় জাতির লোকেই সাধারণতঃ সাদা স্থতার কাপড় পরিত ও উভয় জাতিই অতি নিপুণ রঞ্জক ছিল। নীল নদীর তীরবর্তী স্থানে গেলেই যেমন মাদুলীগলায় উলঙ্গ ছোট ছেলের দল দেখিতে পাওয়া যায়, য়ুকাটানেও ছেলেদের ডাইনী প্রভৃতির দৃষ্টি হইতে ঠেকাইয়৷ রাখিবার জন্য তাহাদের রক্ষা-কবচ পরাইয়া দেওয়া হইত। উভয় জাতিরই বসিবার মোড়া, সন্ত্রম জানাইবার ভঙ্গি ও ধরণ ঠিক একরূপই। এমনকি মিশরে যেমন বাচ্ছা * কুকুরদের ল্যাজ পাকানো করিবার জন্য তাহাতে গির বাধিয়া দেওয়া হয়—ময় দেশেও এই অবিকল নীতিটি প্রচলিত আছে । প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩২২ SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSJJSJJJSJJMSMMSMMSMSMS [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ~ ASAMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS মায় কথাটি বিশ্লেষণ করিয়া দেখিলে নিম্নলিখিত অর্থ দাড়ায়। মা—(স্থান, ভূমি, মাটি ) —(ইহা য়িটেল' কথার সাঁট, অর্থ-সহ) আ (1)–(জল)। অর্থাৎ জল সহ ভূমি’। মায়া কথার এই যদি অর্থ হয় তাহা হইলে কোনো দেশের ইহা অপেক্ষ ভালো নাম আর কিছু আছে কি ন সন্দেহ । , এককালে মিশর ও য়ুকাটানে যে একটা অতি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ লি তাহ সমর্থন করিয়া এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটিতে অনেক কথাই বলা হইয়াছে। কেননা তাহা না থাকিলে এই যোজনব্যাপী ব্যবধানের দুটি সম্পূর্ণ বিভিন্ন রকমের মহাদেশে ঠিক একই সভ্যতা, রীতি নীতি আচার ব্যবহার, ও স্থাপত্য-পদ্ধতির উদ্ভব হইতে পারে না। খুব সম্ভব, যে বিরাট সভ্যতা মিশর দেশের অতিকায় পিরামিড-রাজিতে আপনাকে বিপুল গৌরব ও গরিমার সহিত প্রকাশ করিয়া গিয়াছে, য়ুকাটান তাহারই শৈশবের মাতৃক্রোড় ও ক্রীড়াভূমি ছিল। এখনও য়ুকাটানে অনেক আশ্চৰ্য্যজনক আবিষ্কারের প্রবল সম্ভাবনা নিহিত আছে। যে-সকল পুরাতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতরা ব্যাবিলন এসিরিয়া ও মিশরের ধ্বংসাবশেষের নূতনতর তথ্যের অনুসন্ধানের জন্য নিজেদের জীবনব্যাপী সাধনা ও শক্তি নিয়োজিত করিয়াছেন তাহার। সেই উদ্যম লইয়া যদি মেস্কিকোর বনভূমিতে গিয়া অবতীর্ণ হন তাহ হইলে সেখান হইতে এখনও এমন বহু নূতন সত্য উৎখাত হয় যাহা নিমেষে হয়তো পৃথিবীকে বিস্ময়াভিভূত করিয়া দিতে পারে। শ্ৰীক্ষীরোদকুমার রায় । অভিব্যক্তি শুক্তিপুটে মুক্তাসম, হগু নয়নের সমাহিত আলোকের প্রায়, প্রেমের বসতি বন্ধু অলক্ষ্যে নিয়ত, নিশিদিন গোপন হিয়ায়, অগাধ করিয়া ভেদ, আসে যদি কভু, অতলের সম্পদ-প্রেমিক, জাগাতে নিদ্ৰিত অ’খি জাগে যদি আলো তেজোময়পূর্ণ অতুল নিৰ্ভীক, শুক্তি দেয় মুক্ত তার, উন্মুক্ত নয়ন আলোকের আনে প্রতিদান, সিন্ধুর রহস্ত ব্যক্ত, নব জীবনের শুভ গ্রহে আসে অভিজ্ঞান। ঐপ্রিয়ম্বদা দেবী । ৬ষ্ঠ সংখ্যা ] . রঙের ছোপ সদ্য বিবাহের পর সাম্বন ও স্ববিমল অরসিকের আনগোনার ভয়ে একেবারে পরিচিতের রাজ্য ছাড়িয়া সটান ভূটানে পলায়ন করিয়াছে। সেখানে তাহার এ উহার সঙ্গী, তাহদের অবিচ্ছিন্ন মিলনের মধ্যে কোনো সংপ্রসঙ্গ আলোচনার উপদ্রবের ভয় কিছুমাত্র নাই। তাহার দুজনে দাণ্ডিতে চড়িয়া পাহাড়ীদের কাধে কাধে একস্থান হইতে অপরস্থানে নিজেদের ডেরা-ডাও নাড়িয়া বেড়ায়— দুদিন কোথাও স্থির হইয়া থাকে না ; ভয়, পাছে কেহ আলাপ জমাইয়া শেষে তাহাদিগুকে পাইয়া বসে। একদিন এক গ্রামে গিয়া শুনিল সেখানে একটি বাঙালী আছে । বাঙালীর নামে সুবিমল চমকিয়া উঠিল । সাত্বন৷ বলিল- আর এক দণ্ড এখানে থাকা নয়! সৰ্ব্বনাশ ! অবাঙালীর দেশে বাঙালীর কবলে পড়ার চেয়ে বাঘের কবলে পড়িলেও রক্ষার তবু সস্তাবনা আছে! পাহাড়ীরা বলিল-ভয় নাই ; সে ভকত মানুষ, মৌনী, রাতদিন দেবী-পূজন করে, কখনো কাহারো সহিত একটিও কথা বলে না । সাস্বনা ও স্ববিমল আরামের নিশ্বাস ফেলিল। কিন্তু সাবধানের মার নাই মনে করিয়া সেখানে না থাকাটাই স্থির করিল। সেই ভূটানীদের দেশে নিৰ্ব্বাসিত বাঙালী বেচারা বাধ্য হইয়াই হয়ত মৌনী হইয়াছে ; বাঙালী দেখিলেই তাহার এতকালের বেকার রসনা বশ না মানিতেও পারে চাই কি । ভূটানীরা কিন্তু অভয় দিল যে সে বাঙালী বটে কিন্তু ভারি সাধুপুরুষ। রাতদিন দেবীপূজন করে, ঘর হইতে বাহির পৰ্য্যন্ত হয় না। উহাকে তাহার মৌনী ভকত বলে। এই মৌনী ভকতকে একবার দর্শন না করিয়া বাৰু সাহেবের যাওয়া হইতেই পারে না। সুবিমল বড় বিপদেই পড়িল । মরিবার আর জায়গা পায় নাই ! সাত্ত্বনার কৌতুহল হইতেছিল। বলিল—চলই না একবার দেখেই আসি, এত করে এরা বলছে। দেখবে আর কি ছাই ! ছাই ভস্ম মেথে জট পাকিয়ে হতভাগা বাঙালীট রঙের ছোপ b':న বসে আছেন এক বুজরুক ; বোমার মামলার ফেরারী আগামী টাসামী হবে। ভেড়াগুলোকে ঠকিয়ে দিব্যি সুখে স্বচ্ছন্দে পাচ্ছে দাচ্ছে আছে। তবু চল একবার দেখাই যাক । মরীয়া হইয়া স্ববিমল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল-চল। একখানি পর্ণকুটিরে ঢুকিয়াই সুবিমল চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল—এ যে তোমার ছবি ! একখানি প্রমাণ-সই চিত্রকে পাহাড়ী ফুলের অঞ্জলিতে অঞ্জলিতে সাজাইয়া একটি লোক একদৃষ্টে সেই চিত্রের আনন্দময়ী সুন্দরীর মুখের দিকে তাকাইয়া স্তব্ধ হইয়া বসিয়৷ আছে । সুবিমলের চীংকারেও তাহার ধ্যানভঙ্গ হইল না। সাস্তুনা সুবিমলের হাত ধরিয়া বিযঞ্জ মৃদুস্বরে মিনতি ভরিয়া বলিল—চলে এস । ও সেই বোবা চোরটা ! - এস তুমি –সাম্বন সুবিমলের হাত ধরিয়া বাহির হইয়া গেল। " এত গণ্ডগোলেও মৌনী ভকতের অপলক দৃষ্টি ছবি ছাড়িয়া একবারও ফিরিয়াও তাকাইল না যে তাহার স্বারে আসিয়াকে আবার চলিয়া গেল। সাস্তুনার যখন বিবাহ স্থির হইল তখন তাহার বাবা শ্ৰীমন্ত বাৰু তাহার একমাত্র কন্যাকে পরের ঘরে বিদায় দিবার আগে তাহার একখানি প্রমাণসই অবিকল ছবি . আঁকাইয়া লইবার সঙ্কল্প করিলেন। চিত্রকর যে নিযুক্ত হইল সে কালা বোব। বিবাহের আর চারমাস মাত্র দেরী আছে ; তিন মাসে ছবি শেষ করিয়া দিতে হইবে। রোজ পাইবে সে দশ টাকা । বোবা চিত্রকর রোজ আসে ; ইজেলের সামনে টুলে বসিয়া একদৃষ্টে সাত্বনাকে দেখে, আর নরম তুলিতে পটের উপর রঙের পর রং বুলাইয় তাহার রূপ, কলিকা হইতে ফুলের মতে, অল্পে অল্পে স্বযম সৌন্দর্ঘ্যে ভরিয়ু ফুটাইয়া তোলে। সাস্বনার পায়ের কাছে কাত হইয়া বসিয়া বসিয়া অবিরাম বকিয়া যায় সুবিমল এবং থাকিয়া