পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ৈ৬ সঙ্ঘের আদেশানুসারে সন্ধৰ্ম্মাবলম্বী প্রজাবর্গের বিচারকার্য্য নিৰ্ব্বাহ করিবেন।” "সন্ধি স্থাপিত হইলে, গুর্জরেশ্বর যে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিবেন তাহার প্রমাণ কি ?” “পরম সৌগত মহামণ্ডলেশ্বর বাহুকধবলদেব সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করবেন এবং গুর্জরেশ্বরের প্রতিভূস্বরূপ স্বীয় পুত্রস্বয়কে আর্য্যসঙ্ঘে প্রেরণ করিবেন।” “উত্তম । আৰ্য্যসঙ্ঘ সন্ধিস্থাপনে সম্মত । অন্য কোন লক্ষণ থাকিবে কি ?” “থাকিবে। সন্ধিবন্ধনের পরে আর্য্যসঙ্ঘ গৌড়রাজকে অর্থসাহায্য করিতে পারিবেন না।” “উত্তম। আর্য্যসঙ্ঘ ইহাতেও সম্মত আছেন। পত্র কি আপনার সঙ্গে আছে ?” রুদ্রেণ বস্ত্রাভ্যন্তর হইতে সন্ধিপত্র বাহির করিয়া সঙ্ঘনায়কের হস্তে প্রদান করিলেন। বৃদ্ধ তাহ পাঠ করিয়া তাহার দক্ষিণপাশ্বস্থিত অপর বৃদ্ধকে সন্ধিপত্র প্রদান করিলেন। সজঘনায়কত্রয়ের পাঠ শেষ হইলে, একজন ভিক্ষু উহ! পশ্চাৎস্থিত দ্বাদশজন স্থবিরকে প্রদান করিলেন। র্তাহারা সন্ধিপত্র পাঠ করিয়া, উহা পুনরায় সজঘনায়কগণকে প্রত্যপণ করিলেন। পূৰ্ব্বোক্ত সজঘনায়ক তখন স্থবিরগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সন্ধি সম্বন্ধে চক্ররাজগণের কোন আপত্তি আছে কি?” একজন স্থবির কহিলেন, “আৰ্য্য, চক্ররাজ বিশ্বানন্দ এখানে উপস্থিত নাই।” “এ সন্ধিপত্রে সন্ধি একজন চক্ররাজের অনুপস্থিতির জন্য আর্য্যসঙ্ঘের কার্য্য স্থগিত থাকিতে পারে না। সমবেত চক্ররাজগণের অভিপ্রায় কি ?” কিয়ংক্ষণ পরে স্থবিরগণ কহিলেন যে, গুর্জরেশ্বরের সহিত সন্ধিবন্ধনে তাহাদিগের কোনই আপত্তি নাই। তথন সজঘনায়কগণ বেদীর তলদেশ হইতে লেখনী ও মস্তাধার গ্রহণ করিয়া গুর্জররাজের স্বাক্ষরের নিম্নে স্বাক্ষর করিলেন । রুদ্রেণ সন্ধিপত্র গ্রহণ করিবামাত্র কক্ষের আলোক নিৰ্ব্বপিত হইল, পূৰ্ব্বোক্ত ভিক্ষু তাহাকে সঙ্গে লইয়। কক্ষ পরিত্যাগ করিল এবং অন্য পথ অবলম্বনে তাহাকে রাজপথে আনয়ন করিল। রুদ্রেণ বিস্মিত হইয়া দেখিলেন যে, তিনি বিশ্বেশ্বরের বিশালকায় মন্দিরের সম্মুখে দাড়াইয়৷ আছেন। • প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ চতুর্থ পরিচ্ছেদ। - প্রত্যাবর্তন । দুইদিন পরে ধৰ্ম্মপালদেব কান্যকুঞ্জনগরের প্রান্তে ফিরিয়৷ . আসিলেন এবং বিনা আয়াসে অবরুদ্ধ নগরে প্রবেশ । করিলেন । " - সিংহ স্বেচ্ছায় নগরে প্রবেশ করিতেছে দেখিয়া গুর্জয় | সেনা তাহাকে বাধা দিল না। গৌড়েশ্বর পঞ্চাশং ক্রোশ ভ্রমণ করিয়াও আহাৰ্য্য সংগ্ৰহ করিতে পারেন নাই, যাহা পাইয়াছিলেন তাহ পথেই পঞ্চদশ সহস্রের জন্য বায়ু হইয়াছে। ধৰ্ম্মপাল কান্যকুক্সে ফিরিয়া আসিলে তাহার | শুষ্ক মুখ দেখিয়া সামন্তগণ বুঝিতে পারিলেন যে, গৌড়েশ্বরের । যুদ্ধযাত্রা বিফল হইয়াছে। ভীষ্মদেব তৎক্ষণাং মন্ত্রণাসভা তাহান করিয়া স্থির করিলেন যে, সময় থাকিতে থাকিতে প্রত্যাবর্তন করাই শ্রেয়। গৌড়েশ্বরের প্রত্যাবর্তনের দুইদিন পরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধৰ্ম্মপাল কান্তকুঞ্জ নগর পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইলেন, কিন্তু গৌড়ীয় সামন্তগণের । কৌশলে ও প্রত্যাবর্তনোন্মুখ প্রবাসী গৌড়ীয় সেনার } দুৰ্দ্দমনীয় বেগে গুর্জরসেনা পরাজিত হইল। বহু বলক্ষয় } করিয়া ধৰ্ম্মপাল অবরুদ্ধ নগর হইতে বাহির হইলেন এবং যথাসম্ভব দ্রুতবেগে প্রতিষ্ঠানের পথে অগ্রসর হইলেন। ষ্ট্র পরাজিত হইয়াও গুর্জরসেনা গোঁড়গণকে পরিত্যাগ করিল। ন, তাহারা মধুমফিকার ন্যায় প্রত্যাবর্তনশীল গৌড়ীয় }, সেনাকে বেষ্টন করিয়া চলিতে লাগিল। তখন নাগভটের অত্যাচারে মধ্যদেশ মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছে, গ্রাম ও নগরসমূহ জনশূন্য, ক্ষেত্রসমূহ হস্তী ও অশ্বের পদদলিত । অধিবাসীগণ সমতল ভূমি পরিত্যাগ করিয়৷ পৰ্ব্বতের উপত্যকাসমূহে আশ্রয় গ্রহণ কুরিয়াছে। অনশনক্লিষ্ট ভীত, নিরাশ গৌড়ীয়ুসেনা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানাভিমুখে চলিতে লাগিল। গুর্জর সেনা অবসর পাইলেই তাহা দিগকে আক্রমণ করে, খাদ্যদ্রব্য সংগৃহীত হইলে তাহ লুণ্ঠন করিয়া লইয়া যায় এবং সৰ্ব্বদা দূরে থাকিয় শর, বর্শ ও ভল্ল নিক্ষেপ করিয়া প্রাণহানি করে। এইরূপে সপ্তাহকাল অতিবাহিত হইল, বৃথা যুদ্ধে অৰ্দ্ধসৈন্য ক্ষয় করিয়৷ গৌড়েশ্বর | প্রতিষ্ঠান-দুর্গে উপস্থিত হইলেন। [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ১ম সংখ্যা ] যুদ্ধ চলিতে লাগিল, সমগ্র মধদেশ গুর্জরসেনার অত্যা চারে জনশূন্ত হইয়া উঠিল। ক্রমে খাদ্যাভাবে প্রতিষ্ঠানদুর্গে গৌড়ীয়সেনার অবস্থান অসম্ভব হইয়া দাড়াইল । ভগ্নহৃদয়ে ধৰ্ম্মপাল সামন্তচক্রের সহিত বারাণসীতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন। বারাণসীতে সহস্ৰ সহস্ৰ গৌড়ীয়সেনা কান্যকুজে যাত্রার জন্য একত্র হইয়াছিল, সেইজন্য মহাকুমার বাকৃপাল বারাণসীদুর্গে অপেক্ষা করিতেছিলেন । তিনি প্রত্যাবৰ্ত্তনের সংবাদ পাইয়। পশ্চিম গৌড়ে বহুস্থানে সহস্ৰ সহস্র পদাতিক সেন স্থাপন করিলেন। তাহারা হিমালয়ের চরণপ্রান্ত হইতে বিন্ধ্যপৰ্ব্বত পৰ্য্যন্ত মৃন্ময় প্রাকার নিৰ্ম্মাণ করিল। এইবার গুর্জর অশ্বারোহীগণের গতি রুদ্ধ হইল । প্রতিষ্ঠান হইতে সমগ্র গৌড়ীয়ুসেনা বারাণসীতে আসিয়া পৌছিয়ে ধৰ্ম্মপালদেব নিঃশ্বাস ফেলিবার অবকাশ পাইলেন। মৃন্ময় প্রাকারের পশণতে থাকিয় গৌড়ীয় পদাতিকগণ সর্বত্র গুর্জর অশ্বারোহীগণকে অনায়াসে পরাজিত করিল। অবসর পাইয়া গৌড়ীয় অশ্বারোহীগণ প্রতিষ্ঠানের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল। এই সময়ে রাজধানী হইতে মহামন্ত্রী গর্গদেবের দূত ভাগ্যচক্র পরিবর্তনের সংবাদ লইয়৷ গৌড়েশ্বরের সমীপে উপস্থিত হইল । কান্যকুঞ্জযুদ্ধে মণিদত্তের সঞ্চিত ধনরাশি বহুপূৰ্ব্বে ব্যয় হইয়া গিয়াছিল। মহাস্থবির বুদ্ধভদ্র গৌড়েশ্বরকে আশ্বাস দিয়াছিলেন যে বৌদ্ধসজেঘ সঞ্চিত অর্থ হইতে তিনি গুর্জর যুদ্ধের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করিবেন । ধৰ্ম্মপাল যখন বারাণসীতে ফিরিয়া আসিয়াছেন, তখন গর্গদেব জানাইলেন যে, বুদ্ধভদ্রের প্রদত্ত অর্থ প্রায় শেষ হইয়াছে, দ্বিতীয়বার অর্থপ্রদানের সময় অতিবাহিত হইয়াছে, কিন্তু বুদ্ধভদ্রের সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। সংবাদ শ্রবণ করিয়া বিশ্বানন্দ ভীমদেব ও ধৰ্ম্মপাল অত্যন্ত বিশ্বিত হইলেন। বিশ্বানন্দ স্বয়ং বহু চেষ্টা করিয়াও সজঘনায়কগণের সাক্ষাং পাইলেন না। তখন বাধ্য হইয়া গৌড়েশ্বর গৌড়ে প্রত্যাবর্তনের আদেশ প্রদান করিলেন, গৌড়ীয় অশ্বারোহী সেনা বাধা হইয়া প্রতিষ্ঠান ভুক্তির সীমা হইতে ফিরিয়া আসিল । গৌড়ীয় পদাতিকগণ পরাজিত গুর্জরসেনার হস্তে মৃন্ময় প্রাকার সমর্পণ করিয়া শোণ ও গণ্ডকীতীরে প্রত্যাবর্তন করিল, গৌড়রাজ্যে মুদ্‌গগিরি, মণ্ডল, গৌড় ও কর্ণসুবর্ণ סי צ ধৰ্ম্মপাল 沁9 প্রভৃতি প্রাচীন প্রসিদ্ধ দুর্গসমূহ অবরোধের জন্য স্থসজ্জিত হইল। ভগ্নহৃদয়ে ব্যর্থমনোরথ হইয়া ধৰ্ম্মপালদেব স্বরাজ্যে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন। কান্তকুজরাজ্যের যে-সমস্ত সামস্ত যুদ্ধের প্রারস্তে চক্রায়ুধের পক্ষাবলম্বন করিয়াছিলেন, তাহারাও স্বদেশ পরিত্যাগ করিয়া গৌড়রাজ্যে আশ্রয়গ্ৰহণ করিলেন । জয়পালদেবকে তীরভূক্তি রক্ষার্থ নিয়োজিত করিয়া ধৰ্ম্মপাল স্বয়ং শোণতীরে শিবির স্থাপন করিলেন। নাগভটের আদেশে উত্তরাপথ মরুভূমিতে পরিণত হইল। লুণ্ঠনতংপর গুর্জরসেনা বহুদিন শোণ বা গণ্ডকী অতিক্রম করিবার চেষ্টা করিল না। যখন উত্তরাপথে লুণ্ঠন করিবার আর কিছু রহিল না, তখন গুর্জরসেনানায়কগণ গৌড়রাজ্য আক্রমণের উদ্যোগ করিলেন। তখন গৌড়ীয় সামন্তগণ নদীদ্বয়ের তীরে দুর্ভেদ্য মৃন্ময়দুর্গের মালা নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন। গুর্জরসেনা মগধ ও তীরভূক্তিতে প্রবেশের চেষ্টা করিয়া বার বার পরাজিত হইল। পরাজয়বাৰ্ত্ত যথাসময়ে নাগভটের শ্রুতিগোচর হইল, গুর্জররাজ তখন কান্তকুঞ্জে অবস্থান করিতেছিলেন। কান্তকুজরাজ্য বিজিত হইলেও গুর্জররাজ ইন্দ্রায়ূধকে মুক্তি প্রদান করেন নাই ; তিনি তখনও সামান্য বন্দীর ন্যায় ভিন্নমালে অবস্থিতি করিতেছিলেন। গৌড়রাজ্য অধিকারের চেষ্টা বিফল হইয়াছে শুনিয়া নাগভট ও । বাহুকধবল কান্তকুঞ্জ হইতে শোিণতীরে যাত্রা করিলেন । গুর্জররাজ স্বয়ং সৈন্য পরিচালনা করিয়াও মগধে প্রবেশলাভ করিতে পারিলেন না । নিশীথরাত্রিতে বিমলনন্দী ও চক্রায়ুধ অল্পসংখ্যক সেনা লইয়া গুর্জররাজের বস্ত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করিয়া আসিলেন, নাগভট পলায়ন করিয়া আত্মরক্ষা করিলেন । এইরূপে একবৎসরকাল অতিবাহিত হইলশ বার বার পরাজিত হইয় গুর্জরসেনা অবশেষে গৌড়রাজ্য অধিকারের চেষ্টা পরিত্যাগ করিল। তথাপি আত্মরক্ষার জন্য গৌড়েশ্বরকে পশ্চিম সীমান্তে সহস্ৰ সহস্ৰ সেনা স্থসজ্জিত করিয়া রাখিতে হইল। ধৰ্ম্মপালের দুঃসময়ে সন্ন্যাসী বিশ্বানন্দ শত্রুনাশের এক নূতন উপায় উদ্ভাবন করিলেন। গোপালদেবের সম্রাটপদবী লাভের পূৰ্ব্বে গৌড়দেশ বহু বিদেশীয় রাজা কর্তৃক আক্রান্ত হইয়াছিল । কামরূপের