পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ري كي لا থাকে যাহ হেতু জাত জীব জন্মদের সদৃশ হয়, সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু কথা এই, সন্তানে যে পরিবৃত্তি লক্ষিত হইল তাহ পুত্র-পৌত্ৰাদিক্ৰমে বাড়িয়া চলিতে পারে কি? মাঠে হাজার মূলা-গাছের মধ্যে দশটা পুষ্ট হয়, সে দশটার বীজ হইতে জাত মূল আরও পুষ্ট হইয়৷ ক্রমশঃ ফুলিয়৷ কলাগাছের মতন মোট হইতে পারে কি ? মানুষের বেল। এরূপ প্রশ্ন তুলিলে জিজ্ঞাস্ত হয় গাণিতিক বংশের পুত্র-পৌত্রেরা ক্রমে ক্রমে অতি-গাণিতিক হইয়৷ উঠিবে কি ? কিন্তু ভূয়োদর্শনে জানা যায় যে, তাহ হয় না। অষ্ট্রীয়-বাসী মেণ্ডেল বর্ণসংকরণে প্রচুর পরীক্ষা ও ভূয়ে৷ দর্শন দ্বারা প্রতিপন্ন করিয়াছেন যে বর্ণসংকরণের ফল দৈবায়ত্ত। দৈবায়ত্ত বলিয়৷ কিন্তু অন্য দৈবঘটনার তুল্য সন্তানের দ্বার জন্মদের গুণ-হরণ গণিতবিদ্যায় সাধিত হইতে পারে । ত৷ বলিয়া ক্ষেত্র যে কিছু নহে এমন নহে। বরং দেখ৷ যায়, ক্ষেত্র অনুসারে গাছের অঙ্গ প্রত্যঙ্গর পরিবৃত্তি হয় এবং হয় বলিয়াই কৃষক ঈপ্সিত ফল প্রত্যাশ করে। বস্তুত: কৃষিকৰ্ম্ম দুই ভাগে বিভক্ত করিতে পারা যায়, বীজকৰ্ম্ম ও ক্ষেত্ৰকৰ্ম্ম । বীজকৰ্ম্মে বীজ নিৰ্ব্বাচন, বপন, অঙ্কুরোদগমন, জাত বৃক্ষের পালন, এবং শেষে বীজ রক্ষণ। ক্ষেত্ৰকৰ্ম্মে মাটির উৎপত্তি স্থিতি জলবায়ু ও রবি-তেজ নিৰ্ব্বাহ, বৃক্ষের শত্রুর বিনাশ প্রভৃতির নিমিত্ত কৰ্ম্ম । ইহার এক এক কৰ্ম্মে প্রচুর বিজ্ঞান আছে, অনেক গবেষণা করিবার আছে । এক মাটিই—ধরি। দেখা যায়, যে মাটি স্বভাবতঃ অধম তাহাতে হাজার রসায়ন প্রয়োগ করি, তাহা কদাপি উত্তম মাটির তুল্য সুফলা হয় না। ফলসহিত বৃক্ষদেহ ভস্মীভূত করিলে মাটির প্রায় যাবতীয় উপাদান ভৰ্ম্মে পাওয়া যায়। অথচ নির্দিষ্ট পদার্থ মিশ্রিত করিয়া জলে বৃক্ষ জন্মাইলে গোটাদশবার মূল পদার্থ পর্য্যাপ্ত হয়। এইরূপে জানি, নাইট্রোজেন গন্ধক ফস্ফরস পটাসিয়ম্ মেগনিসিয়ম্ কেলসিয়ম্ লৌহ এবং বোধ হয় সোডিয়ম ও ক্লোরিন মাটিতে না থাকিলে নয়। নাইট্রোজেন গন্ধক ফসফরস প্র-পঞ্চে আছে। অতএব এই তিন কেন আবশ্যক তাহা বুঝিতে পারি। সেইরূপ অক্সিজেন হাইড্রোজেন কাৰ্ব্বন কেন চাই, তাহা বুঝিতে কষ্ট নাই । অপৱ কয়ট প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড সম্বন্ধে বিজ্ঞান এখনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারে না। পটাসিয়ম্ বিনা বৃক্ষপত্রে পললীয় ( শ্বেতসার ) উৎপন্ন হয় না, কেলসিয়ম্ বিনা ব্যাপ্ত হয় না, লৌহ বিনা পত্রের রঞ্জক অর্থাং পলপিত্ত উৎপন্ন হয় না, এবং বোধ হয় মেগনিসিয়ম্ বিনা পলপিত্তের প্রাচুর্য্য হয় হয় না ; কিন্তু ভূয়োদর্শন ত বিজ্ঞান নহে । আমাদের ন। ভূয়োদর্শনে জানিতেছি, - দেহের পুষ্টির কারণ যেমন অজ্ঞাত, ভূমির উর্বরতা-শক্তি - কিসে তাহাও প্রায় সেইরূপ অজ্ঞাত । এখানে এক বৃত্তান্ত স্মরণ হইতেছে। আমার এক উদযোগী বন্ধু কৃষিকৰ্ম্মের নিমিত্ত পাচ ছয় শত বিঘা জমি কিনিয়াছিলেন । সে জমিতে কি ফসল উত্তম জন্মিতে পরিবে, তাহ জানিবার অভিপ্রায়ে জমির কিছু মাটি এক রাসায়নিকের নিকট বিশ্লেষণের নিমিত্ত পাঠাইয়াছিলেন। বিশ্লেষণ-ফল রসায়নের সাঙ্কেতিক ভাষায় লিখিত হইয়৷ আসিল। এই সঙ্কেত বুঝিতে না পারিয়া বন্ধুবর বুঝাইয়৷ বলিতে আমায় অনুরোধ করিলেন। সঙ্কট উপস্থিত হইল, তাহা আপনার অনুমান করিতে পারেন। মাটিতে বালি এতভাগ, আলুমিন এতভাগ ইত্যাদি শুনিয়া তিনি অধীর হইয়া যে প্রশ্ন করিলেন, তাহাতে আমার অবস্থা শোচনীয় হইয়া পড়িল । তিনি জানিতে চান, কি শস্য উত্তম জন্মিতে পারিবে । বল৷ বাহুল্য, ইহার উত্তর রসায়ন-বিজ্ঞান দিতে পারে না। পরদিন জমি হইতে স্বচ্ছন্দ-জাত বৃক্ষণদি আনাইয়া দিলেন। দেখিয়া বলিলাম, ভূমি অমুর্বর, এমন অতুর্করা যে, প্রচুর অর্থব্যয় করিলেও কয়েক বৎসর ধান কলাই ভাল জন্মিবে না। জাত বৃক্ষের বৃদ্ধি ৭ পুষ্টির সহিত মাটির উপাদান মিলাইয়৷ দেখিলে উর্বরতা অনুমান করিতে পারা যায়, নতুবা নহে। পরে শুনিলাম বন্ধুবর এক পাহাড়ের ধারে জমি কিনিয়াছেন । বস্তুত:, কৃষি-বিজ্ঞান এত অজ্ঞাত যে ভূয়োদর্শন ব্যতীত কৃষি চলিতে পারে না। এ কারণ, জমি নূতন হইলে অর্থাৎ ক্ষেত্র ও বীজ দুইই অজ্ঞাত হইলে ভাবী ফলও অজ্ঞাত থাকে। মূংকুণ্ডে দুই চারিট আর্থ গাছ যত্নে বৰ্দ্ধিত ও পুষ্ট করিতে পারা বায় ; কিন্তু বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে, এবং যেটা কাজের কথা, কৃষকের বর্তমান সহায়-সম্পত্ত্বি তখন আমার যে, ১ম সংখ্যা ] 、ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ লইয়া পারা যায় কি না, সেটাই গুরুতর সমস্য। সে সমসার পূরণ না হইলে কৃষি-বিজ্ঞান আর উদ্ভিদ-বিজ্ঞান প্রায় এক থাকিয়া যায়, কৃষি-বাৰ্ত্ত দাড়াইতে পারে না । দেশের কৃষক জানে, গোবর জমির “সার", এ কারণ সারকুড়ে সার গাদা করিয়া রাখে। গোবরের উপাদান কি, তাহ জানে না ; কিন্তু জানে কোন মাটিতে কোন ফসলের পক্ষে গোবর হিতকর, কিসের পক্ষে খইল হিতকর । মাঠের মাটি পরীক্ষা করিয়া জানি, জমিতে নাইট্রোজেন ফসফরস ও পটাসিয়মের নূ্যনত আশঙ্কা করিবার কথা । সব মাটিতেই কিছু না কিছু অাছে, কিন্তু একটার নানতায় বৃক্ষ-জীবন-ক্রিয়৷ আটকাইয়া যায়। নাইট্রোজেনের সদ্ভাব কদাচিৎ হয়, এ বৎসর সদ্ভাব হইলে ও পর বৎসর হয় না। কারণ বৃক্ষকে যে সোরা আকারে নাইট্রোজেন লইতে হয়, তাহা জলে ধুইয়া চলিয়া যায়, জমিতে থাকে না। এ কারণ কৃষক গোবর, গোমূত্র, অন্য পশুর বিষ্ঠ মূত্র চৰ্ম্ম ও শৃঙ্গচূর্ণ, গাছ-পচা প্রভৃতি দ্বারা নাইট্রোজেন নিৰ্বাহ করে। বরাহের বৃহৎসংহিতায়, অগ্নিপুরাণে, শুক্রনীতিতে, বৃক্ষায়ুৰ্ব্বেদ আছে। পূৰ্ব্বকালে দ্রব্যগুণ প্রচুর আলোচিত হইয়াছিল। আমাদের আয়ুৰ্ব্বেদে যে দ্রব্যগুণ বর্ণিত আছে, তাহ যে কত ভূয়োদর্শনের ফল তাহ ভাবিলে এই বিজ্ঞানের দিনেও পূৰ্ব্ব-পিতামহদিগের প্রতি মস্তক আপনি নত হয়। দ্রব্যগুণ জানিলে লৌকিক কাজ চলে বটে, বিজ্ঞান-এষণা তৃপ্ত হয় না। ইহাতে কেহ মনে করিবেন না যে পূৰ্ব্বকালের মানব অপেক্ষ আজিকালির মানব অধিক বুদ্ধিশালী। সার ৰালেসের প্রমাণে বলিতেছি, বুদ্ধি পূৰ্ব্বাপর সমান আছে ; পূৰ্ব্বেকার জ্ঞানের সহিত নুতন জ্ঞান যুক্ত হইতেছে । ইহাতেই, এই উত্তরাধিকারিত্বেই, সভ্য মানবের বড়াই। পূৰ্ব্বকাল হইতে "ক্ষণশঃ কণশঃ সাধিত” জ্ঞান একত্র হইয়। আধুনিক বিজ্ঞান। পূৰ্ব্বে ও এখন দেশ বিদেশে যে জ্ঞান লন্ধ ইয়াছে, তাহ আমাদের সকলের ভোগে আসিবার স্বযোগ হইয়াছে। পাশ্চাত্য-বিজ্ঞান আমাদের কৃষিকৰ্ম্মে প্রয়োগ করিয়া বুঝিতেছি গোবর ও খইলে নাইট্রোজেন ফসফরস পটাসিয়ম আছে বলিয়। জমির সার হইয়াছে। দেশের কৃষক হাড়ের গুণ জানিত না । তাহার জানিবার প্রয়োজন ঘটে নাই। গ্রামের গবাদির হাড় গ্রামেই পড়িয়া থাকিত, 〉br দেশে বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠা JMJMJMMS MMAMJMMM AMJMS ১৩৭ AMMAMA AMAMAMS দূর দেশান্তরে চলিয়া যাইত না। নদী-মাতৃকা ভূমি, ત ভূমি নদীর পলি-হেতু মাতৃস্বরূপ হইয়। শস্ত দ্বারা প্রজাপলিন করে, তাহার গুণ আমরা ভুলিয়া যাইতেছি। আমরা - নদীর দুই পাশে অবিচ্ছিন্ন বাধ সাধিয়া উর্বরতা-শক্তি সমুদ্রে নিক্ষেপ করিতেছি । দামোদরের বন্যা বাধ ভাঙ্গিয়৷ ঘর বাড়ী নষ্ট করে বটে, কিন্তু যে কৃষক দামোদরের পলি পায় সে অপর সার পইল খোজে না। দেশের জালানি কাঠ দুলভ ; কৃষক গোবর না পোড়াইয়া পারে না ; গোবরের নাইট্রোজেন বায়ুসাং হয় তাহ জানিয়াও গোবর পোড়ায়। খইল মহাৰ্ঘ ; গরুকেই খাওয়াইতে পারে না। এই অবস্থায় প্রকৃতিলন্ধ পলির অপচয় চলে কি ? নদীর পলি খাল ডোবা বুজাইয়া দেশ ভরাইয়া উচ করে, যে মেলেরিয়া পশ্চিম-বঙ্গ উৎসন্ন করিতেছে তাহারও নাকি প্রতিকার করে। বস্তুতঃ কৃষির একটা মূল কথা এই যে, ভূমি হইতে শস্যরূপে যাহা উঠাইয়া লইবে, কোন-না-কোন আকারে প্রত্যপণ, করিবে, নতুবা ভূমি নিঃসার হইয়৷ পড়িবে। অতএব দেশ হইতে তিল তিসি গম কাপাস-বীজ প্রভৃতি স্থানান্তরিত হইলে খইল দিয়া ভূমি-ঋণ পরিশোধ করিতে হয় । নাইট্রোজেন ফসফরস পটাসিয়মের নূ্যনতার শঙ্কায় জমিতে প্রচুর গোবর খইল হাড়-শিংগুড় প্রভৃতি ঢালিলেই কৰ্ম্ম নিষ্পত্তি হয় না। গোমূত্রে মাটির তেজ বাড়ে বটে, কিন্তু অবস্থাগুণে গাছ জলিয়াও যায় । জল বিন গাছ বঁচে না, কিন্তু আধিক্যে মরিয়া যায়। মাটির গুণে রবির তেজে শস্তের পক্ষে অধিক জল অল্প হয় ; ক্ষেত্রভেদে অল্প জল অধিক হয়। রন্ধনকলায় অনভিজ্ঞ পাচক মসলার আধিক্য ঘটাইয়া ব্যঞ্জন মুম্বাছ করিতে চায় ; কিন্তু যেমন মাত্রাঙ্গ পাচক শ্রেষ্ঠ, মাত্রাজ্ঞ কৃষকও তেমন শ্রেষ্ঠ । জল ও সারের মাত্রা, বৃক্ষানুসারে মাত্রা সম্বন্ধে পরীক্ষণ হইয়াছে ও হইতেছে। কিন্তু অদ্যাপি ভূয়োদর্শনে নির্ভর করিতে হইতেছে। কিসে কখন কোন শস্যের পক্ষে মাত্রা অধম, কখন উত্তম হয়, তাহার বিজ্ঞান ত জানি না । * * কৃষিকৰ্ম্মের এক ক্ষুদ্র অংশেও আমাদিগকে দৈবের মুখ চাহিয়া থাকিতে হইতেছে। সংক্ষেত্রে মূর্খ দ্বারাও বীজ উপ্ত হইলে উপচয় হয়। আশা এই যে আমার ক্ষেত্র