পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্মুখে পশ্চাতে চারিদিকে বিস্তৃত। আমরা যে বাৰ্ত্ত। আশ্রয় করিয়া জীবিকা করিতেছি, ক্ষেত্রস্বামীগণ তাহার ,উপায় বিধান করিবেন। কৃষিবাৰ্ত্ত দৃষ্টান্ত করিবার অপর উদেখ আছে (১) দেখা যায় এই বাৰ্ত্তা ধরিয়া দুরূহ বিজ্ঞানে প্রবেশ করিতে পারা যায়। যে-সকল ছাত্ৰ মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান সহজ মনে করেন, তাহার। দেখিবেন কৃষিকৰ্ম্মের এক এক বিজ্ঞান অদ্যাপি অজ্ঞাত। ( ২ ) গবেষণা জাগ্রত করিবার পক্ষে কৃষিবাৰ্ত্তাও স্বন্দর উপায়। গবেষণা শম্বের মূলাৰ্থ নাকি গরু খোজা । গরু হরাইলে লোকে খুজিতে বাহির হয় । কৃষি-বাৰ্ত্তার অসংখ্য গরু, মূল্যবান গরু খুজিবার আছে, যেগুলা পাইলে আমাদের বহু মঙ্গল হইবে । চাণক্য নাকি বলিয়াছেন, কৃষির্যস্ত ন বাণিজ্যং গাবো যশু ন ধেনব: | দারিদ্র্যং সততং তস্ত গৃহে তস্য কুভোজনম্। আমাদের গৃহে যে কুভোজন হইতেছে, তাহ পল্লীতে প্রবেশ করিলেই প্রত্যক্ষ হয় । , - এই যে অভাব-বোধ হইতে গবেষণা তাহাই প্রকৃত ; অন্যের দেখাদেখি যাহ। তাহা কৃত্রিম। আরও দেখিতেছি কৃষি ধরিয়া প্রায় যাবতীয় বিজ্ঞান শিথাইতে পারা যায়। বিজ্ঞানের এমন শাখ-মনে হইতেছে না য়াহা ইহাতে কিছুনা-কিছু না লাগে । ইহাই ত প্রজাসাধারণের আবখ্যক । বিজ্ঞানের স্থল তত্ত্ব প্রচারিত হউক, পরিচিত কৃষি-বাৰ্ত্তার দৃষ্টান্তে প্রচারিত হউক। দেশের আপামর সাধারণে প্রচারিত হউক, পুস্তক দ্বারা হউক, কথা দ্বারা হউক । কিন্তু দেখিবেন যেন পুস্তক ও কথা দ্বারা পাঠক ও শ্রোতার মনে বিজ্ঞানের প্রতি আদর জন্মে। তাহদের জ্ঞাত বিষয় লইয়া বিজ্ঞান প্রচার করিবেন ; কেনন। তাহাদিগকে শিথাইতে হইবে। উহ উল্লেখ করিতে পারেন ; কিন্তু তদ দ্বারা অজ্ঞতা ঢাকিতে চেষ্টা করিবেন না। পাঠক ও শ্ৰোতৃ হাজার বিষয়ে অজ্ঞ হউন, তাহারা মানুষ, বুদ্ধিশালী মানুষ, এ কথা কদাপি ভুলিবেন না। আমাদের বৈজ্ঞানিক যুবকের নিকট কখনও কখনও দ্বিবিধ প্রশ্ন শুনিয়াছি (১) গবেষণার কি বিষয় বাকি আছে যাহা তিনি আরম্ভ করিতে পারেন। (২) গবেষণার বিষয় থাকিতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞান-কৰ্ম্মশাল। নইলে তু কিছুই প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড করা যাইতে পারে না। প্রথম প্রশ্নের উত্তর প্রায় দিয়াছি; দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে বলি, বিজ্ঞান-শালায় পরীক্ষার পূর্বে প্রথমে ভূয়োদর্শন চলুক। পরিসংখ্যান কিংবা ভূয়োদর্শনের নিমিত্ত বিজ্ঞান-শালার প্রয়োজন হয় না। উদেশ্ব সম্মুখে রাখিয়া চলিতে থাকিলে বিধেয় আপনি জুটিবে। আমরা সংসার-বৃত্তিতে “বাৰু” হইয়া পড়িয়াছি। আমার মনে হয় জ্ঞানের পথে চলিবার সময় ও ভোগাসক্তি ভূলিতে পারি না। আমরা আর্য্য ঋষি মহর্ষি ইত্যাদির নাম উচ্চারণ দ্বারা মনে মনে গৰ্ব্ব অনুভব করি । কিন্তু যাহঁাদের জ্ঞানের জন্য আমাদের গৰ্ব্ব তাহারা কি টানা-পাথার বাতাসে বসিয়৷ ভোগ-বিলাসে থাকিয়া জ্ঞান অর্জন করিয়াছিলেন ? বিজ্ঞান শালা নাই, যন্ত্র-পাতি নাই; নাই থাক। এমন বিষয়ও ত আছে যাহাতে যন্ত্র-পাতি লাগে না। মানুষই বড়, যন্ত্রত বড় নহে। এইত সে দিন ওড়িশার চন্দ্রশেখর সিংহ দুই থও কাষ্ঠ লইয়া অসাধ্য-সাধন করিয়া গিয়াছেন। যে পঞ্জিকাসংস্কার-কোলাহলে কর্ণ পীড়িত হইয়াছে, দুইখানা কাঠির জোরে ওড়িশায় সে কোলাহল উঠিতে দেন নাই। তৃতীয় প্রশ্নও শুনিয়াছি। বিজ্ঞান-শাল আছে, অবসরও আছে। কিন্তু কোন বিষয়ে গবেষণা কতদূর হইয়াছে তাহ জানি না, ইয়ুরোপ ও আমেরিকার যাবতীয় বৈজ্ঞানিক পত্র দেখিতে পাই না, যাবতীয় ভাষাও বুঝি না। ইহাদিগকে আমার নিবেদন এই যে, দেশের বাৰ্ত্ত কিংবা কলা ধরিয়৷ গবেষণা করুন, তাহ নিশ্চয়ই নূতন এবং নিশ্চয় অফুরন্তু আছে। যে কোন একটা ধরুন, সেটা শেষ হইতে না হইতে দশটা আক্রমণ করিবে । সেটার বিজ্ঞান অন্য কেহ ব্যাখ্যা করিয়া থাকিলেও ক্ষতি হইবে না। দেশভেদে পাত্রভেদে ব্যাখ্যাভেদ হইতে পারে, পূৰ্ব্ব আবিষ্কার সত্য কি ন৷ পরীক্ষ হইবে । ইহাও না হয়, আপনার চেষ্টিত দ্বারা আপনার শক্তি বাড়িবে | আত্মশক্তি-লাভ শ্রেয়স্কর। হলাও দেশীয় ডি-ভিরিজ নামক উদ্ভিদবেত্ত তাহার বাগানের একটা গাছের পরিবৃত্তি দেখিয় তাহার তত্ত্ব আবিষ্কারে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। পরে ডার্বিনের মতের অপবাদ ধরিতে পারিলেন। তিনি দেখিলেন অল্পে অল্পে ধীরে ধীরে জঙ্গম ও উদ্ভিদের জাতি-বহুলত ঘটে নাই, অর্থাৎ জীবহুষ্টি অবিচ্ছিন্ন ভাবে নাই। র্তাহার গবেষণার সময় তিনি পূৰ্ব্ববর্তী ১ম সংখ্যা ] মেণ্ডেলের গবেষণার ফল কিছুই জানিতেন না। ডি ভিরিজ বর্ণসংস্করণ দ্বারা গুণহারিত অনুসন্ধান করিতেছিলেন, মেণ্ডেলও সে বিষয়ে গবেষণা করিয়া এমন এক তথ্য পাইয়াছিলেন যাহা এখন মেণ্ডেলের স্বত্র নামে প্রচারিত হইয়৷ বিবৰ্ত্তনবাদীর মহা সমস্ত হইয়া দাড়াইয়াছে। ডি-ভিরিজ মেণ্ডেলের সূত্র অবগত থাকিলে হয়ত তাহার গবেষণা পাইতাম না, কিংবা তাহার চিন্তা-প্রস্থত অকুমানও আসিত ন। অতএব দেপ। যাইতেছে, কে কোথায় কি তথ্য আবিষ্কার করিয়াছেন তাহ না জানিলেও গবেষণার ফল शार्प झ्म्न न। । তবে এ কথা মানি, কাজের একটা শৃঙ্খলা থাকিলে ভাল হয়। সাহিত্য-পরিষৎ বাঙ্গল গ্রন্থ অনুসন্ধান করিতেছেন, এই নিমিত্ত কৰ্ম্মী নিযুক্ত করিয়াছেন। কয়েক বৎসরের মধ্যে কি ফল ফলিয়াছে তাহ আমরা সবাই জানি। বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতি কৰ্ম্মীর দল বাধিতে পারিয়াছেন এবং আমাদের দেশের ইতিহাস উদ্ধারে নিযুক্ত হইয়াছেন। দেশের বিজ্ঞানৈষণার এইরূপ এক সমিতি হইলে অনেক অকৰ্ম্ম ও নিষ্কৰ্ম্ম কৰ্ম্মীর দলে পড়িয়া কৰ্ম্মের পথ দেখিতে পাইতেন । মনে করুন যেন তাহার দেশের সকলকেই আহ্বান করিয়া বলিতেছেন, আস্থন আমরা দেশের বাৰ্ত্তার বিজ্ঞান উদ্ধার করি । এ কাজে ছোট-বড় ভেদ নাই, দেহের হাত ছোট কি পা ছোট, তাহ যেমন নিরর্থক প্রশ্ন, এ কাজের কাজীদিগের ছোট বড় নাই । ধিনি স্বাধহ-বিদ্য ভালবাসেন, তিনি কৃষি ও আবহের সম্বন্ধ স্থির করুন। কোন মেঘে কখন কি পরিমাণে বৃষ্টি হইয় থাকে, স্বাবস্ত পূর্ণিমায় বৃষ্টি হয় কি না, "চাদের সোভ নিকট জল এ কথা সত্য কি না, বাতাসে ঝড়ে কোন শস্তের কি ক্ষতি হয়, ক্ষতি হয় কেন, আমের মুকুলের কোন অবস্থায় কুয়াস হিতকর নহে, ইত্যাদির উত্তর সংগ্রহ করুন । যিনি রাসায়নিক গবেষণ। ভালবাসেন, তিনি কৃষির পক্ষে মাটির তিন আবখ্যক উপাদানের হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাণ করুন ; শস্যের সহিত মাটির উপাদানের সম্বন্ধ নির্ণয় করুন, শস্যের পরিমাণ ও গুণের সহিত করুন, কিংবা শস্য-বৃক্ষের বয়স অনুসারে করুন, ইত্যাদি । এইরূপ নানা বিষয় আছে। যিনি যে শাপ ভালবাসেন তিনি সেই শাখাতেই জ্ঞাতবা বিষয় দেশে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা yరీసె পাইবেন । ডাক্তার কবিরাজ সকলেরই কাজ করিবার আছে। বিজ্ঞান ছাড়িয়া অর্থবিদ্যারও প্রচুর ক্ষেত্র আছে। উপরে যে সমিতির উল্লেখ করিয়াছি, সে সমিতি প্রশ্ন ছাপাইয়া, কোথাও কোথাও মার্গ সম্বন্ধে কিছু উপদেশ দিয়া, দেশের মধ্যে বিতরণ করিবেন। আমার বিশ্বাস, এইরূপে দেশে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হইতে পারিবে । যাহার ফল সদ্য সদ্য পাই, তাহার দিকে আমরা স্বভাবতঃ ধাবিত হই। এই কারণে কৃষি-বাৰ্ত্তা ধরিয়া বিজ্ঞান প্রচার করিতে বলিতেছি। - কিন্তু বিজ্ঞান-প্রচারের কথা উঠিলেই ইহার ভাষা পরিভাষার প্রশ্ন উপস্থিত হয় । আমরা পরিভাষা-সমস্যা যত কঠিন মনে করি, বস্তুতঃ তত নহে। এ বিষয়ে দুই চারি কথা সংক্ষেপে বলিতেছি। ব্যাকরণে শব্দের চারি প্রবৃত্তি বা অর্থ ধরিয়া শব্দসমূহ চারি ভাগে বিভক্ত হইয়াছে। জাতি-শব্দ, গুণ-শব্দ, দ্ৰব্যবা সংজ্ঞা-শব্দ, এবং ক্রিয়া-শব্দ —এই চতুৰ্ব্বিধ শব্দের মধ্যে দ্রব্য-শব্দ সম্বন্ধে সঙ্কট মনে হইয়াছে। কথাটা এই, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন বলিব, না অন্য নামে বলিব ? এরূপ বিতর্ক ওঠে কেন, তাহা বুঝা কঠিন। গরুকে গরু বলিব, না অন্য কিছু বলিব, এই বিতর্ক যেমন, অকৃসিজেনকে অকৃসিজেন বলিব, না অম্লজান বলিব, সে বিতর্কও তেমন। নূতন দ্রব্য যাহার নিকট পাই, সে যে নাম বলে, সে নামেই তাহ পরিচিত হয় । সকল ভাষাতেই ইহ সাধারণ নিয়ম । সংস্কৃত কোষে গ্রীক ও আরবী নাম পাইবেন ; বাঙ্গলা কোষে, ইংরেজী কোষে নানা ভাষার শব্দ পাইবেন । কত ইংরেজী শব্দ বাঙ্গলায় চলিতেছে স্মরণ করুন, সে-সকল শব্দ কেবল দ্রব্য-বাচকও নহে। ইযুরোপে বিজ্ঞানের অভু্যদয় ; আমরা সে বিজ্ঞান ইংরেজীতে শিখিতেছি। শুধু বাঙ্গালী নহে, ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের লোক শিখিতেছে। সকল প্রদেশের সহিত মিলিয়া ভারতবর্ষের নিমিত্ত সংজ্ঞা-শব্দ নির্ণয় করিতে পারিলে অন্তত: কিছু স্থবিধা হইত। কোন প্রদেশে অকৃসিজেনকে কি বলা হইতেছে তাহ জানা নাই। মনে রাখিতে হইবে, ভারতবর্ষে কেবল সংস্কৃতমূলক ভাষা নহে, মুসলমানী ভাষা ও দ্রবিড় ভাষা চলিত আছে। যদি