পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ☾b← মাকড় তুলিয়া আনিয়া বাটিয় তাহদের গায়ে প্রলেপ দিতে লাগিলেন, হাতীরাও নানারূপে তাহার সেবা করিতে লাগিল। রাজা সব শুনিলেন। তিনি কে, কি বৃত্তান্ত জানিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। অনেক সাধ্যসাধনার পর মুনি আপনার পরিচয় দিলেন। তিনি বলিলেন, "হিমালয়ের নিকটে যেখানে লৌহিত্য নদ সাগরাভিমুখে যাইতেছে, সেখানে সামগায়ন নামে এক মুনি ছিলেন। তাহার ঔরসে ও এক করেণুর গর্ভে আমার জন্ম। আমি হাতীদের সহিতই বেড়াই, তাহারাই আমার আত্মীয়, তাহারাই আমার স্বজন। আমার নাম পালকাপ্য। আমি হাতীদের পালন করি, তাই আমার নাম পাল। আর কাপ্যগোত্রে আমার জন্ম, সেইজন্য আমার নাম কাপ্য। লোকে আমায় পালকাপ্য বলে। আমি হস্তিচিকিৎসায় বেশ নিপুণ হইয়াছি।” তাহার পর রাজা তাহাকে হাতীদের বিষয় নানা কথা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, তাহার উত্তরে তিনি হস্তীর আয়ুৰ্ব্বেদশাস্ত্র ব্যাখ্যা করিলেন। র্তাহার শাস্ত্রের নাম "হস্ত্যায়ুৰ্বেদ" বা “পালকাপ্য”। চেস্তসাল রাও সি, আই, ই, যে "গোত্রপ্রবরনিবন্ধকদম্ব সংগ্ৰহ করিয়াছেন, তাহার শেষে তিনি প্রায় সাড়ে চারি হাজার গোত্রের নাম দিয়াছেন, ইহাতে কাপ্যগোত্র নাই। স্বতরাং অনুমান করিতে হইবে, তিনি আৰ্য্যগণের মধ্যে চলিত গোত্রের লোক নহেন, এ গোত্র বোধ হয় বাঙ্গল দেশেই চলিত ছিল। পালকাপা পড়িতে পড়িতে অনেক স্থানে মনে হয় যেন, উহা অন্য কোন ভাষা হইতে সংস্কৃতে তর্জমা করা হইয়াছে, অনেক সময় মনে হয় উহা সংস্কৃত ব্যাকরণের মতে চলিতেছে না। এ গ্রন্থ যে কত প্রাচীন তাহ স্থির করা অসম্ভব। কালিদাস ইহাকে অতি প্রাচীন শাস্ত্র বলিয়া গিয়াছেন। রঘুর ষষ্ঠ সর্গে তাহার স্বনন্দ অঙ্গরাজকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছেন যে, বহুকাল হইতে শুনা যাইতেছে যে, স্বয়ং স্বত্রকারের ইহার হাতীগুলিকে শিক্ষা দিয়া যান, সেই জন্যই ইনি পৃথিবীতে থাকিয়াই ইন্দ্রের ঐশ্বৰ্য্য ভোগ করিতেছেন। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে "হস্তিপ্রচার" অধ্যায়ে হস্তি-চিকিৎসকের কথা আছে। স্বতরাং কৌটিল্যেরও পূৰ্ব্বে যে হস্তি-চিকিৎসার একটি শাস্ত্র ছিল, তাহা বুঝা যাইতেছে। - প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ MJMJMJJJJJJJMMMMMMMMMMMMS [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড SumitaBot (আলাপ) ০৮:০২, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)്.സസ്സസ്സ যে আকারে পালকাপোর স্বত্র লেখা, তাহা হইতে কু যায় যে, উহা অতি প্রাচীন। সুতরাং ম্যাক্সমুলার যাহাঙ্কে "Suttra period” &R, go সময়েই পালকাপ্য স্বত্র রচনা করিয়াছিলেন। বিউলার সাহেব বলেন, আপস্তত্ব ও বৌধায়ন খ্ৰীঃ পূৰ্ব্ব পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকে স্বত্র লিখিা ছিলেন এবং তাহারও আগে বশিষ্ঠ ও গোতমের স্বত্র লেখা হয়। পালকাপ্যও সেই সময়েরই লোক বলিয়া বোধ হয়। ভারতের পণ্ডিতেরা মনে করেন যে, স্বত্র রচনার কাল আরও একটু আগে হইবে। খ্ৰীঃ পূৰ্ব্ব পঞ্চম ব। যষ্ঠ শতকে যদি বাঙ্গলা দেশে হস্তি-চিকিৎসার এত উন্নতি হইয় থাকে, তাহ হইলে সেটা বঙ্গদেশের কম গৌরবের কথা নয়। দ্বিতীয় গৌরব—নানা ধৰ্ম্ম-মত জৈন ধৰ্ম্ম, বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম, আজীবক ধৰ্ম্ম এবং যে-সকল ধৰ্ম্মকে বৌদ্ধের তৈর্থিক মত বলিত, সে সকল ধৰ্ম্মই বঙ্গ মগধ ও চের জাতির প্রাচীন ধৰ্ম্ম প্রাচীন আচার প্রাচীন ব্যবহার প্রাচীন রীতি প্রাচীন নীতির উপরই স্থাপিত। আর্য্য জাতির ধৰ্ম্মের উপর উহা ততটা নির্ভর করে না। ইহা বঙ্গদেশের কম গৌরবের কথা নয়। এই সকল ধৰ্ম্মেরই উৎপত্তি পূৰ্ব্ব-ভারতে ; বঙ্গ মগধ ও চের জাতির অধিকারের মধ্যে, যে-সকল দেশের সহিত আৰ্য্যগণের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল সেসকল দেশের বাহিরে। এ সকল ধৰ্ম্মই বৈরাগ্যের ধৰ্ম্ম। বৈদিক আধাদের ধৰ্ম্ম সম্পূর্ণরূপে গৃহস্থের ধৰ্ম্ম। ঋগ্বেদে বৈরাগ্যের নাম গন্ধও নাই। অন্যান্য বেদেও যাগযজ্ঞের কথাই অধিক, সেও গৃহস্থেরই ধৰ্ম্ম। স্বত্রগুলিতেও গৃহস্থের ধৰ্ম্মের কথা। এক ভাগ স্বত্রের নামই ত গৃহস্থত্র। স্বত্রগুলিতে চারি আশ্রম পালনের কথা আছে। শেষ আশ্রমের নাম ভিক্ষুর আশ্রম। ভিক্ষুর আশ্রমেও বিশেষ বৈরাগ্যের কথা দেখা যায় না। এ আশ্রমের লোক ভিক্ষা করিয়াই খাইবেন, এই কথাই আছে। কিন্তু আমরা যেসকল ধৰ্ম্মের কথা বলিতেছি, তাহাদের সকলেই বলিতেছে গৃহস্থ আশ্রম ত্যাগ কর। গৃহস্থ আশ্রমে কেবল দুঃখ। গৃহস্থ আশ্রম ত্যাগ করিয়া যাহাতে জন্ম জরা মরণ–এই ত্রিতাপ নাশ হয় তাহারই - ১ম সংখ্যা ] ব্যবস্থা কর। আর তাহ নাশ করিতে গেলে "আমি কে?” “কোথা হইতে আসিলাম ?" "কেন আসিলাম?” —এইসকল বিষয় চিন্তা করিতে হয়। সেই চিন্তার ফলে কেহ বলেন আত্মা থাকে, কিন্তু সে “কেবল" হইয়া যায়, সংসারের সহিত তাহার আর কোন সংস্রব থাকে না, সুতরাং সে জরামরণাদির অতীত। কেহ বলেন, তাহার অহঙ্কার থাকে না ; যখন তাহার অহঙ্কার থাকে না, তখন সে সৰ্ব্বব্যাপী হয়, সৰ্ব্বভূতে সমজ্ঞান হয়, মহাকরুণার আধার হইয়া যায়। এসকল কথা বেদ ব্রাহ্মণ বা সুত্রে নাই। এসব ত গেল দর্শনের কথা, চিন্তা-শক্তির কথা, যোগের কথা। বাহিরের দিক হইতেও দেখিতে গেলে, এই সকল ধৰ্ম্মের ও আর্য্যধৰ্ম্মের আচার-ৰ্যবহারে মিল নাই । আর্য্যগণ বলেন, পরিষ্কার কাপড় পরিবে, সৰ্ব্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিবে, নিত্য স্বান করিবে। জৈনেরা বলেন, উলঙ্গ থাক, গায়ের মলা তুলিও না, স্বান করিও না। মহাবীর মলভার বহন করিতেন। অনেক জৈন যতি গৌরব করিয়া "মলধারী" এই উপাধি ধারণ করিতেন। আৰ্য্যগণ উষ্ণীষ উপানহ ও উপবীত ধারণ করিতেন ; জৈনের খালি মাথায় থাকিতেন, জুতা পরিতেন না, এক ধুতি ও এক চাদেরই কাটাইয়া দিতেন। আর্য্যগণ সৰ্ব্বদাই থেউরি হইতেন। অনেক ধৰ্ম্মসম্প্রদায় একেবারে থেউরি হইত না। আর্য্যেরা মাথা মুড়াইলে মাথার মাঝখানে একটা টিকী রাথিতেন। বৌদ্ধের সব মাথ৷ মুড়াইয় ফেলিত। আর্য্যগণ দিনে একবার থাইতেন, রাত্রিতে একবার থাইতেন । বৌদ্ধের বেলা ১২টার মধ্যে আহার না হইয়া উঠিলে তাহদের সেদিন আর আহারই হইত না। রাত্রিতে তাহারা রস বা জলীয় পদার্থ ভিন্ন আর কিছুই থাইতে পারিত না। খাট ছাড়া আৰ্য্যগণের শয়ন হইত না। বৌদ্ধের উচ্চাসন মহাসন একেবারে ত্যাগ করিত। আর্য্যগণ সংস্কৃতে লেখা পড়া করিতেন, অন্য সকল ধৰ্ম্মের লোক নিজ দেশের ভাষাতেই লেখা পড়া করিত। এসকল নূতন জিনিস যখন আৰ্য্যদের মতের বিরোধী, তখন তাহারা আর্য্যদের নিকট হইতে সেসব পায় নাই। উত্তরে হিমালয় পৰ্ব্বত, হিমালয়ের উত্তর দেশের লোকের সহিত তাহাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব AMMMMMMJJMMMM MMMMM MMMMMMJMJMJMJMJJMMJMMMJMMMMMMMS >© থাকিতেই পারে না। দক্ষিণ হইতেও ঐসব আসিতে পারে না, কেননা ; দক্ষিণের সহিত তাহাদের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাহার কোন প্রমাণ নাই ; বরং বিন্ধ্যগিরি পার হইয়া যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। স্বতরাং যাহা কিছু উহারা পাইয়াছে, পূৰ্ব্বাঞ্চল হইতেই পাইয়াছে এবং পূৰ্ব্বাঞ্চলেই আমরা এইসকল জিনিস কতক কতক এখনও দেখিতে পাই। জৈনদের শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর ৩০ বৎসর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন, তাহার পর কিছুদিন বৈশালির জৈন-মন্দিরে বাস করেন, তাহার পর বার বৎসর নিরুদ্দেশ থাকেন। এ সময় তিনি পূৰ্ব্বাঞ্চলেই ভ্রমণ করিতেন। বার বৎসরের পর তিনি জ্ঞান লাভ করিয়া বৈশালিতে ফিরিয়া আসেন। র্তাহারও পূৰ্ব্বে তীর্থঙ্কর পাশ্বনাথ কাশীতে জন্মগ্রহণ করেন, ৩০ বৎসর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন, তাহার পর নানাদেশে ভ্রমণ করেন। তাহার ভ্রমণও পূৰ্ব্বাঞ্চলেই অধিক। শেষ জীবনে তিনি সমেতগিরিতে বাস করেন—সমেতগিরি পরেশনাথ পাহাড়। র্তাহারও পূৰ্ব্বে যে ২২ জন তীর্থঙ্কর ছিলেন, র্তাহীদের মধ্যে অনেকেই সমেতগিরিতেই বাস করিতেন ও সেইখানেই দেহ রক্ষা করেন। সাংখ্য-মত এই সকল ধৰ্ম্মেরই আদি । সাংখ্যের দেখাদেখিই জৈনেরা কেবলী হইতে চাহিত – কৈবল্য চাহিত। বৌদ্ধের বলেন, তাহার সাংখ্যকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু সাংখ্য-মত আর্য্য-মত নহে, উহার উৎপত্তি পূৰ্ব্বদেশে। সাংখ্যকার কপিলের বাড়ী পূৰ্ব্বাঞ্চলে, পঞ্চশিখের বাড়ী পূৰ্ব্বাঞ্চলে। তৃতীয় গৌরব—রেসম ইউরোপীয়েরা চীনদেশ হইতে রেসমের পোক৷ আনিয়াছিলেন এবং অনেক শত বৎসর চেষ্টা করিয়া তাহার রেসমের কারবার খুলিতে পারিয়াছেন। তাহাদের সংস্কার চীনই রেসমের জন্মস্থান, চীনেরাও তাহাই বলে। তাহার বলে খ্রষ্টের ২৬৪ বৎসর পূৰ্ব্বে চীনের রাণী তুতগাছের চাস আরম্ভ করেন। রেসমের ব্যবসা সম্বন্ধে অতি প্রাচীন কাল হইতেই চীনদেশে অনেক লেখা পড়া আছে। চীনের রেসমের চাস কাহাকেও শিখিতে দিত না। উটি তাহাদের উপনিষৎ বা গুপ্ত বিদ্য ছিল। জাপানীরা অনেক কষ্টে