পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نواوي لا SAMMMMAAASASASS - পূজা হয়। তিব্বতীর তাহাকে সিদ্ধাচাৰ্য্য বলিয়া পূজা করে। তিনি অনেক বাঙ্গল গাম লিথিয়াছেন, অনেক সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থের টীকা-টিপ্পনীও লিখিয়া গিয়াছেন, তিনি একটি সম্প্রদায়ই স্থষ্টি করিয়াছেন । সে সম্প্রদায় হয় সহজযান হইবে, ন হয় সহজযানেরই কোন ভাগ হইবে । খ্ৰীষ্টের জন্মের ১৩ শত বৎসর পরে হরিসিংহ নামে একজন রঘুবংশী মিথিলায় রাজা হইয়াছিলেন। তিনি এক সময় নেপাল আক্রমণ করিয়াছিলেন, তাহার ভয়ে বাঙ্গলা ও দিল্লীর মুসলমানের ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। পরিণামে তাহারই বংশের সন্তান নেপালে রাজা হন । হরিসিংহের মন্ত্রী চণ্ডেশ্বর অনেকগুলি স্মৃতির পুস্তক লেখেন। তাহার সভায় একজন কবি ছিলেন, তিনি সংস্কৃতে বেশ প্রহসন লিখিতেন। ইহার নাম জ্যোতিরীশ্বর কবিশেখরাচাৰ্য্য । ইনি বোধ হয় বা লাতেও কবিতা লিখিতেন । ইহার আধা-বাঙ্গল, আধা-সংস্কৃত একখানি অপূৰ্ব্ব পুস্তক আছে, তাহার নাম বর্ণনরত্নাকর। কবিতা লিখিতে গেলে কাহার কিরূপ বর্ণনা করিতে হয়, সেই বিষয়ে উপদেশ দেওয়া পুস্তকের উদ্দেশ্য। তিনি ঐ পুস্তকে চৌরাশি সিদ্ধের নাম করিতে গিয়া ৭৬ জনের নামমাত্র করিয়াছেন, ইহাদের মধ্যে লুইএর অনেকগুলি শিষ্যের নাম আছে। হরিসিংহের সময় পৰ্য্যন্ত লুইএর দল যে চলিয়া আসিতেছিল, ইহাতেই বোধ হয় যে, লুই একজন অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন । তেজুরে লেখা আছে যে, লুইকে মংস্যাম্রাদ বলিত, অর্থাৎ— তিনি মাছের পোট থাইতে বড়ই ভাল বাসিতেন । ( কোন বাঙ্গালীই বা না বাসেন । ) তেজুরে আবার সেইথানেই লেখা আছে, "তাই বলিয়া লুই মংস্তেন্দ্রনাথ নহেন, মংস্তেন্দ্রনাথ মীননাথের পুত্র, লুই মহাযোগীশ্বর।” সিদ্ধাচার্য্যগণের মধ্যে লুই কুকুর, বিরুআ, গুড়রী, চাটিল, ভূত্বক, কাহ্ন, কামলি, ভোম্বী, শান্তি, মহিত্ত, বীণা, সরহ, শবর, আযদেব, ঢেণ্টন, দারিক, ভাদে, তাড়ক,—এই কয়জনের "চৰ্য্যাপদ" বা কীৰ্ত্তনের গান পাওয়া গিয়াছে। ঐসকল পদ মুসলমানবিজয়ের পূৰ্ব্বেই দুৰ্ব্বোধ হইয়া উঠিয়াছিল, তাই সহজিয়ামতে উহার সংস্কৃত টীকা করিতে হইয়াছিল। ইহা ছাড়াও বহুংখ্যক দোহাকোষেরও সংস্কৃত টীকা ছিল। ‘অনেকগুলি দোহাগীতিকা ছিল, তাহারও সংস্কৃত টীকা ছিল। এই প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড সমস্তেরই ভূটিয়া ভাষায় তর্জমা আছে। যে ནྀ་རཱྀ་ལྀ་༑ সিদ্ধাচায্যের নাম করিলাম, ইহাদের সকলেরই গ্রন্থ আছে, সমস্তই ভুটিয়া ভাষায় তর্জমা হইয়া গিয়াছে। সুতরাং ভূটিয়া ভাষাগ্রন্থ, বিশেষ তেজুর গ্রন্থ খুজিলে যে শুধু বাঙ্গালীদের ধৰ্ম্মমত পাওয়া যাইবে এমন নয়, বাঙ্গল | সাহিত্যেরও একটি ইতিহাস পাওয়৷ যাইবে । বাঙ্গালীর } পূৰ্ব্বপুরুষের কথা বাঙ্গালী কিছুই জানেন না, কিন্তু তাহদের শিষ্য ভূটিয়ার বিশেষ যত্ব করিয়া তাহদের গ্রন্থ রক্ষা করিতেছে । এটা বাঙ্গালীর কলঙ্কের কথা হইলেও তাহার পূৰ্ব্বপুরুষগণের বিশেষ গৌরব, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। ত্রয়োদশ গৌরব—ভাস্করের কাজ মহাযান হইতে যতই নূতন নূতন ধৰ্ম্ম বা হর হইতে লাগিল, হিন্দুদের মধ্যেও যতই তন্ত্রের মত প্রবেশ করিতে লাগিল, ততই নূতন নূতন দেবতা, নূতন নূতন বুদ্ধ নূতন নূতন বোধিসত্ত্ব-পূজা আরম্ভ হইল। এক এক দেবতারই নানা মূৰ্ত্তি হইতে লাগিল, কখন ক্রোধমূর্তাি কথন শান্তমূৰ্ত্তি, কখন করুণামূৰ্ত্তি— নানারূপ মুদ্র বাহির হইতে লাগিল। সে-সকল মুদ্রায়, সেসকল মূৰ্ত্তির ও সে-সকল দেবতার নাম অসংখ্য । মালায় ২৫৬ রূপ মূৰ্ত্তির সাধনের কথা বলা আছে। তেথুরে ১৭৯ বাণ্ডিলে প্রায় দেবতার সাধন আছে। নেপালের চিত্রকল্প জাতির লোকে এখনও এই-সকল দেখিয়া মূৰ্ত্তি তাকিয়া দিতে পারে। বাঙ্গলায় এরূপ আকিয়া দিবার লোক কত ছিল বলা যায় না। পাথর তাহারা মোমের মত ব্যবহার করিত। পাথর দিয়া যে তাহারা কত রকম মূৰ্ত্তি গড়িয়া দিত, তাহা গণিয়া শেষ করা যায় না। এই মূৰ্ত্তিবিদ্যার ইংরেজী নাম "lcoro graphy” । সেদিন একজন প্রসিদ্ধ Iconographist এক সভায় বলিয়াছেন যে, মূৰ্ত্তিবিদ্যা শিখিবার একমাত্র জায়গা বাঙ্গল । বাস্তবিকই হিন্দু ও বৌদ্ধগণের কত মূৰ্ত্তিই যে ছিল, আর কত মূৰ্ত্তিই যে পাথরে গড়া হইত, তাহা ভাবিলে আশ্চৰ্য্য হইয়া যাইতে হয়। বরেন্দ্র-রিসার্চ সোসাইট অনেক মূৰ্ত্তি সংগ্ৰহ করিয়াছেন। পরিষদেও অনেক মূৰ্ত্তি সংগ্ৰহ হইয়াছে। ১৬৬ সকল মিউ বৌদ্ধদের এক সাধন ; সাহিত্য ১ম সংখ্যা ] জিমেই কিছু কিছু মূৰ্ত্তি সংগ্রহ আছে। তথাপি বনে জঙ্গলে পুরাণ গ্রামে পুরাণ নগরে এখনও গাড়ী গাড়ী যুক্তি পাওয়া যাইতে পারে। এইসকল মূৰ্বর এখন আর পূজা হয় না। সুতরাং মিউজিয়মই তাহাদের উপযুক্ত স্থান। যে-সকল মূৰ্ত্তি এখনও পূজা হয়, তাহাই বা কত সুন্দর । এক-একটি কৃষ্ণমূৰ্ত্তির ভাব দেখিলে সত্য-সত্যই মোহিত হইতে হয়। এখনও ভাস্করের নানারূপ স্বন্দর সুন্দর যুক্তি নিৰ্মাণ করিয়৷ থাকে। দাইহাটের ভাস্করদের কথা ত সকলেই জানেন । চৈতন্যের সময়েও চমৎকার চমৎকার মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ হইত। পালরাজাদের সময়েই এই ভাস্করশিল্পের চরম উন্নতি হইয়াছিল। ভারতবর্ষের সর্বত্রই এখানকার ভাস্করের কার্য্য করিত। তাম্ৰপত্রলেপ, শিলালেখ বারেন্দ্র কায়স্থদিগের যেন একচেটিয়াই হইয়াছিল । ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানেও মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ হইত। মহিম্বর, ত্রিবাঙ্গুর প্রভৃতি দেশেও নানারূপ মূৰ্ত্তি পাওয়া যাইতেছে, কিন্তু তাহাতে সাজসজ্জাই বেণী-গহনা, ফুল, সাজ—ইহাতেই পরিপূর্ণ, ভাব দেখাইবার চেষ্টা খুব কম। যে ভাবে ভালুকের মন মুগ্ধ করে, দে ভাব কেবল বাদলাতেই ছিল, কতক কতক এখনও আছে। অনেক সময় মূৰ্ত্তি দেখিলে মনে হয় যে, উহ কথা কহিতেছে। অনেক সময় মনে হয় যেন উহ। এই মৃত্য করিয়া দাড়াইল । কৃষ্ণ বঁাশী হাতে দাড়াইয়া আছেন, আমরা যেন সে বঁাশীর আওয়াজ শুনিতেছি। শিল্পের এত উন্নতি অল্প সাধনার ফল নয়। বাঙ্গালী এককালে সে সাধনা করিয়াছিল, তাহার ফলও পাইয়াছে। শুধু পাথরে নয়, পিতলে তামায় রূপায় সোনায় অষ্টধাতুতে— যাহাতেই বল, মূর্তিগুলি যেন সজীব । চৈতন্যদেবের পর গরীব বৈষ্ণবের কাঠের ও মাটর মূৰ্ত্তি তৈয়ার করিত। মহাপ্রভূর দুই-একটি কাঠের মূৰ্ত্তি দেখিলে সত্য-সত্যই মনে হয়, মহাপ্রভূ কথা কহিতেছেন, ঠোটদুটি যেন নড়িতেছে। চৈতন্তের কীৰ্ত্তনমূৰ্ত্তি অনেকেই দেপিয়াছেন, কি সুন্দর! মাটীর মূৰ্ত্তিতে কৃষ্ণনগরের কুমারের এখনও বোধ হয় ভারতে তদ্বিতীয় । একজন ইউরোপের ওস্তাদ কতকগুলি মাটর গড় মানুষের মূৰ্ত্তি দেখিয়া বলিয়াছিলেন, "ইহার। সত্য-সত্যই অনেক দিন ধরিয়৷ মানুষের শিরাধমনী পৰ্য্যন্ত তলাইয়া দেখিয়াছে ও বুঝিয়াছে।” - চতুর্দশ গৌরব—বাঙ্গলায় সংস্কৃত মুসলমান-আক্রমণের পূৰ্ব্বে বাঙ্গলায় অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ লিখিত হইয়াছিল । ভবদেব একজন প্রকাণ্ড পণ্ডিত ছিলেন। সংস্কৃতে যাহা কিছু পড়িবার ছিল, তিনি যেন সবই পড়িয়াছিলেন । বাচস্পতি মিশ্র তাহার প্রশস্তি লিথিয়াছেন । সেই প্রশস্তিতে যাহা লেখা আছে, তাহ যদি চারিভাগের একভাগও সত্য হয়, তাহা হইলেও २२ বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব ১৬৯ ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘー ভবদেব যে-দেশে জন্মিয়াছিলেন, সে দেশ ধন্য। তাহার কত পুস্তক ছিল, আমরা এখনও জানিতে পারি নাই। তবে সামবেদীদের পদ্ধতি ছাড়া আরও তাহার দশ-বারপানি গ্রন্থ পাওয়া গিয়াছে। লোকে বলে বাঙ্গলায় বেদের চর্চা ছিল না, এ কথা সত্য । অন্য জায়গায় যেমন সমস্ত বেদটা মুখস্থ করে, বাঙ্গালীরা তাহা করিত না, তাহার তত আহাম্মুক ছিল না। তাহারা যেটুকু পড়িত, অর্থ করিয়া পড়িত ; নিজের কৰ্ম্মকাণ্ডের জন্য যতখানি জানা দরকার, সবটুকু বেশ ভাল করিয়া পড়িত। স্বতরাং প্রথম বেদের ব্যাখ্যা বাঙ্গলাতেই হয়। সাযুণাচার্য্যের দুই তিন শত বৎসর পূৰ্ব্বে হুগড়াচাৰ্য্য এক নূতন ধরণের বেদব্যাখ্যা স্বষ্টি করেন। তুগড়ের পুস্তক এখনও পাওয়া যায় নাই, কিন্তু তাহার সম্প্রদায়ের পুস্তক অনেকগুলি পাওয়া গিয়াছে। হলায়ুধ তাহার সম্প্রদায়ের, গুণবিষ্ণু তাহার সম্প্রদায়ের। ইহাদের ব্যাথ্য বেশ পরিষ্কার ও বেশ সুগম। দর্শনশাস্ত্রে বৌদ্ধদের সঙ্গে সর্বদাই তাহাদের বিচার করিতে হইত। স্বতরাং বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ মাত্রকেই দর্শনশাস্ত্রের কিছু চর্চা রাখিতে হইত। শ্রীধরের লেখা প্রশস্তপাদের টীকা এখনও ভারতবর্ষে খুব প্রচলিত। স্মৃতিতে গৌড়ীয় মতই একটা স্বতন্ত্র ছিল । কাশী মিথিলা ও নেপাল দেশের প্রাচীন স্মৃতি-নিবন্ধে অনেকবার গৌড়ীয় মতের নাম করিয়াছে। মতুর টীকাকার গোবিন্দরাজ যে স্মৃতিমঞ্জরী বলিয়া এক প্রকাণ্ড স্মৃতি-নিবন্ধ লিথিয়া গিয়াছেন, তাহ পড়িলে আশ্চর্য্য হইতে হয়। দায়ভাগকার জীমূতবাহন, জিকন, শ্ৰীকর প্রভৃতি অনেক স্মৃতি-নিবন্ধকারের ও জোগ্লোক, অন্ধক ভট্ট প্রভৃতি অনেক জ্যোতিষনিবন্ধকারের নাম করিয়া গিয়াছেন। তিনি নিজে যাহা করিয়া তুলিয়াছেন, সেই ত একটি অদ্ভূত জিনিস। সম্পত্তি পূৰ্ব্বে বংশগত ছিল, তিনি তাহাকে ব্যক্তিগত করিয়া গিয়াছেন ; এ কাজটি ত ভারতে আর কেহই করিতে পারেন নাই। বল্লালও ত নিজে দুখানি বিরাট গ্রন্থ লিথিয়া গিয়াছেন, একখানি দানসাগর ও আর-একখানি অদ্ভূতসাগর। শ্ৰীনিবাসাচার্য্যের শুদ্ধির গ্রন্থও ত স্মৃতি ও জ্যোতিষের একখানি ভাল বই। পঞ্চদশ গৌরব—বৃহস্পতি, শ্ৰীকর, শ্ৰীনাথ ও রঘুনন্দন ধৰ্ম্মের গৌরব, বিদ্যার গৌরব ও শিল্পের গৌরবে গৌরবান্বিত হইয়া বৌদ্ধগণ ও হিন্দুগণ বাঙ্গলা দেশে মুখে স্বচ্ছন্দে বাস করিতেছিলেন। বৌদ্ধের তিব্বতে গিয়া সেখানে আপনাদের প্রভাব বিস্তার করিতেছিলেন, ব্রাহ্মণেরও বাঙ্গলায় নূতন সমাজের স্বষ্টি করিতেছিলেন। এমন সময় ঘোর বন্যার ন্যায় আফগান দেশ হইতে মুসলমানের আসিয়া উপস্থিত হইল। বাঙ্গালী ও বেহারী