পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] অধ্যাপক ভেবার বলেন—অতি প্রাচীন কালে ভারতীয় শিল্পিগণ যেরূপ নিপুণতার সহিত স্বল্প স্থতার কোমল বস্ত্র প্রস্তুত করিত এবং নানা রংএর মিশ্রণ, ধাতুত্রব্য ও মণিমাণিক্যাদির কার্ধ্য, সুগন্ধি অতির প্রভৃতি প্রস্তুতকরণ ও অন্ত নানাবিধ কারুকার্ধ্যে তাহাদিগের যেরূপ দক্ষত ছিল, তাহাতে পৃথিবীময় তাহাদিগের মুখ্যাতি বিস্তারলাভ করিয়াছিল।” ஒ প্রাচীন গ্রীক-সমাজে চাকার স্বপ্রসিদ্ধ মসলিন বস্ত্র গ্যাঞ্জেটিকা’ নামে কথিত হইত ; গঙ্গানদীর দেশে উৎপন্ন ববিয়া ঐ নাম হইয়াছিল। তথায় উহার অতিশয় আfদর ছিল। পণ্যজাত দ্রব্যের এক অভিধানের গ্রন্থকার ডাক্তার ওয়াটু বলিতেছেন—“গ্রীক ইতিবৃত্তবিদ হেরোডোটাস ভারতবর্ষ-সম্বন্ধে লিখিতে গিয়া বলিয়াছেন যে, সেই-দেশে একপ্রকার বন্তবৃক্ষে পশম ফলে ; তাহা গুণে ও পৌন্দর্ঘ্যে মেয-রোম হইতেও উৎকৃষ্ট । ভারতীয় লোকেরা উহা হইতে বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া ব্যবহার করে।” এই হেরোডোটাস গ্রীকৃ ঐতিহাসিকদিগের আদিগুরু ; খৃষ্টপূ: পঞ্চম শতাব্দীতে বিদ্যমান ছিলেন । ইনি ভারতীয় একপ্রকার বৃক্ষ হইতে যে পশম উৎপত্তির কথা বলিয়ছেন, তাহ ষে কাপাস তাহা বুঝা যাইতেছে। আর এই উক্তি হইতে ইহাও প্রতিপন্ন হইতেছে যে, র্তাহার পূৰ্ব্বে গ্রীকগণ কার্পাসের সহিত পরিচিত ছিলেন না, রোমজ বস্ত্রাদিই ব্যবহার করিতেন। অজ্ঞাত কোনো বস্তুর সহিত প্রথম পরিচয়ে তাহাকে পূৰ্ব্বজ্ঞাত সমশ্রেণীর বস্তুবিশেষের নামে অভিহিত করা স্বাভাবিক। এইজন্যই আবার প্রাচীন গ্রীকগণ ভারতীয় কাপাসকে"শ্বেতপশম” নামে অভিহিত করিয়াছিল। তাহারা ভারতবর্ষ হইতেই সৰ্ব্বপ্রথম কাপাস প্রাপ্ত হইয়াছিল ও উচ্চ ব্যবহার শিক্ষা করিয়াছিল। পাশ্চাত্য জগতে সৰ্ব্বপ্রথম হেরোডোটাসের গ্রন্থেই কাপাস-সুত্রের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ হইতে কাপাস-শিল্প ক্রমে পারস্ত, আরব, মিশর, ফিনিসীয় ও দক্ষিণ ইউরোপে বিস্তার লাভ করে, এরূপ অল্পমান করা যাইতে পারে। খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মাত্র ইউরোপীয়গণ সুন্ন স্বত্র করণে প্রবৃত্ত হয়। ইংলও ভাহা সপ্তদশ শতাব্দীতে গ্রহণ করিয়াছে। প্রাচীন ভারতে কার্পাস-শিল্প ও চরকা २१ রোম-সাম্রাজ্যে ভারতে প্রস্তুত বস্ত্রাদি প্রভূত-পরিমাণে ব্যবহৃত হইত এবং তাঁহাতে রোমকদিগের প্রচুর অর্থ ভারতবর্ষে চলিয়া আসিত। ঐতিহাসিক প্লিনি (খৃ: পূঃ ২য় শতাব্দী) তজ্জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। আরো কত পূৰ্ব্বে, খৃ: পূ: বিংশ শতাব্দীর মিশর দেশে ‘মামি’ করিয়া মৃতদেহ কবরস্থ করা হইত, এরূপ দেখা যাইতেছে যে, তাহা অতি উচ্চশ্রেণীর ভারতীয় মসলিনে আবৃত করিয়া দেওয়া হইত। 曲 খৃষ্টীয় শতাব্দীর কিঞ্চিাধিক তিন শত বৎসর পূৰ্ব্বেগ্রীকৃ-বিজেতা আলেক্জান্দার যখন ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, তখন এবং তাহার পূর্ববর্তী বহু বৎসর ধরিয়া ভারতবর্ষ ধন, ধান্ত ও নানাপ্রকার পণ্য-প্রব্যে পরিপূর্ণ ছিল । উক্ত বিজেভার সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ তাহার বিবরণ রাখিয়া গিয়াছেন। তখন আরব, ফিনিসীয়, গ্ৰীকৃ, রোমান ও মিশরীয় বণিকৃগণ ভারতজাত পণ্য পশ্চিম-এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ ইউরোপে লইয়া গিয়া বাণিজ্য করিত ও তাহাতে বিস্তর লাভবান হইত। ஆ আলেক্জান্দরের আক্রমণের পরবর্তী সময়েও ভারতীয় শিল্প ও ঐশ্বৰ্য্যের কোনোরূপ অবনতি হর নাই। বরং ঐ সময় হইতে চন্দ্রগুপ্ত, অশোক এবং গুপ্ত ও চালুক্য প্রভৃতি বংশীয় পরাক্রমশালী নৃপতিগণের রাজত্বকালে ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যাদির উত্তরোত্তর শ্ৰীবৃদ্ধিই হইয়া আসিতেছিল। ঐ সময় পারসিক, রোমক প্রভৃতি রাজদরবারের সহিত ভারতীয় নৃপতিগণের আন্তৰ্ব্বাণিজ্যিক সম্বন্ধ সংস্থাপিত ছিল ; ঐতিহাসিকগণ তাহার প্রমাণ পাইতেছেন। 蠟 মৌর্য্যনৃপতিগণের রাজত্বকালে ও• তাহার পরে ফ্লেসকল বিদেশীয় পরিব্রাজক ও রাজদূত এই দেশে আসিয়াছিলেন, র্তাহারা সকলেই একবাক্যে ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যের প্রশংসা করিয়া গিয়াছেন। ‘পেরিপ্লাস’ নামক খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর এক রোমক বণিকের জলযাত্ৰ-বিবরণীতে দেখা যায়, তৎকালে ভারতবর্ষের উপকূল ও অভ্যন্তর ভাগ পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূৰ্ব্ব দিকে— বম্বর ও বাণিজ্য-ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ছিল। উক্ত শতাব্দীর