পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& Oe প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ২য় খণ্ড তিনি তৎপর ইতালী ও সুইটসজাবৃল্যাণ্ডে ভ্রমণ করিয়া ফিরিতে লাগিলেন। অতীত-গৌরবময়ী ইতালীকে তিনি নিবিড়ভাবে ভালবাসিয়া ফেলিলেন । তিনি দান্তে, র্যাফেল, মাইকেল এঞ্জেলে, গাপ্লিবলডি, ম্যাটুসিনি প্রভৃতির স্থতিরঞ্জিত ইতালীর চমৎকার বর্ণনা দিয়াছেন। এজ মও গসের সঙ্গে পরিচয় ক্রমশঃ নিবিড় বন্ধুত্ব-বন্ধনে পরিণত হয়। এই সময়ে তিনি প্রচুর কবিতা লিখিতেন। একদিন তাহার এই গোপন বাণী-সাধনার কথা গসের নিকট তিনি ভাবাবেগে প্রকাশ করিয়া ফেলিলেন । গস্ তাহার এই কবিতাগুলি দেখিতে চাহিলে সম্পূর্ণ বিদেশী ভাষায় কৰি-যশপ্রার্থী এই বালিকা-কবি র্তাহার হাতে এক গাদ কবিতার পাণ্ডুলিপি প্রদান করেন। তিনি সেগুলি পড়িয়া হতাশ হইয় পড়েন এবং ব্যথিতচিত্তে সরোজিনীকে ইংরেজ কবিদের ভাব, ভাষা ও ছন্দের ব্যর্থ অনুকরণ করিতে নিবেধ করেন ও সম্পূর্ণ দেশী বিষয়ে দেশী ভাবে কবিতা লিখিতে অনুরোধ করেন । ভারতের অনুভূতি, শিক্ষা, সৌন্দৰ্য্যবোধ ও সংস্কার লইয়াই ষে ভারতীয় কবির কাব্য রচনা করা উচিত, একথা তাহাকে বুঝাইয়া দেন। ইংলতীয় কবিদের ব্যর্থ অন্থকৃতি, কিম্বা হইতে?ীয় প্রকৃতির ভাববৈচিত্র্য বর্ণনা না করিয়া ভারতবর্ষের শুামল সা-সমারোহ, অভ্ৰভেদী তুষারমৌলী পৰ্ব্বতশ্রেণী, গভীর অরণ্যান ও বিচিত্র কারুকাৰ্যখচিত প্রাচীন মন্দিরগুলিকেই তাr"ার কাব্যের পটভূমি করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে উ পদেশ দেন । দেশের সহজাত সংস্কার ও অম্বভূতিই যে কাব্যশক্তির প্রাণ সরোজিনী ইহা বুঝিতে পারিয়া সম্পূর্ণ ভারতবর্ষীয় মন লইয়া কাব্য রচনা স্বক ফুল এবং তা ৰিভাৱ উত্তৰ মেলি নিজেই মুগ্ধ হইলেন। এই ঘটনার দশ বৎসর পরে তিনি পর পর তাহার তিনখানি কাব্যগ্রন্থ ‘গোলডেন থেশোলড়’ ‘বার্ড অব টাইম' ও 'ব্রোকেন উইঙ্গ’ প্রকাশ করেন। এই কাব্যগুলি কি দেশে, কি বিদেশে সৰ্ব্বত্রই উচ্চ সমাদর লাভ করিয়াছে ও জগতের কবিসমাজে সরোজিনীর স্থান চিরস্থায়ী করিয়া রাখিবে। বিশেষ করিয়া তাহার বার্ড, অব টাইম্‌ কে এডমও গ্রসের স্তায় সমালোচকও নিখুঁত বলিয়া প্রভূত প্রশংসা করিয়াছেন । প্রায় তিন বৎসর বিদেশে বাস করার পর ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত হইয়৷ ডিসেম্বর মাসেই তাহার স্বয়ম্ব ত ডাক্তার মোতিআলা গোবিন্দরাজুলু নাইডু মহাশয়কে বিবাহ করেন । ১৮৯e সালে বিলাত যাইবার পূর্বেই তাহার মনে প্রেমের স্থচনা হয় এবং নানা বাধা-বিস্ত্রের মধ্যেও তিনি র্তাহার এই ভালবাসা হইতে বিচ্যুত হন নাই। র্তাহার এই বিবাহ লইয়। অনেক বিরোধ ও মনান্তর ঘটিয়াছে। ব্রাহ্মণ-কন্যা সরোজিনী অব্রাহ্মণকে বিবাহ করায় তাহাকে অনেক গঞ্জন সহিতে হইয়াছে। র্তাহার বিবাহিত জীবন আনন্দপূর্ণ। কিন্তু আশৈশব স্বাস্থ্যহীনতার জন্য দুৰ্ব্বল শরীরে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে এই স্থখভোগ করিতে পারেন নাই। তবু স্বামীর অনাবিল প্রেম ও পুত্ৰকঙ্কার নিবিড় স্নেহে তিনি হাসিমুখে সব সহিয়া গিয়াছেন। দুই কন্ত ও দুই পুত্ৰ লইয়া তিনি তাহার “ক্ষুদ্রগৃহে” স্থখেই কালাতিপাত করেন। তাহার মহানুভব স্বামীর গভীর প্রেম উহাকে বর্ষের মত ঘিরিয়া থাকে। তাহার দুৰ্ব্বল শরীর মাঝে মাঝে তাহাকে পীড়া দিয়া মৃত্যুকে স্মরণ করাইয়া দিত। কিন্তু সরোজিনী মৃত্যুভয়ে ভাত নহেন। তবে মাঝে মাঝে এই সময় তাহার মনে নিরাশ আসিত । তিনি ভাবিতেন—“আমার কবিমন পূর্ণ বিকাশ ও প্রকাশ লাভ করিবার পূৰ্ব্বেই কি আমি ঝরিয়া পড়িব ? আমার চিরআকাঙ্গিক্ষত্ত স্বপ্ন কি সফল হুইবে না ? কিন্তু এই মানসিক অবস্থা বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। ১৯৯৫ সালে মিঃ হাইনমেন যখন তাহার প্রথম কবিতার পুস্তক গোলডেন থেশোল্ড প্রকাশ করিলেন তখনই আশার ঔজ্জ্বল্যে সরোজিনীর চিত্ত ভরিয়া উঠিল । তাহার বন্ধু আর্থার সাইমনস এই কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখিয়া দিয়াছেন। প্রাচ্য জগতের সন্মোহিনী মাধুর্ঘ্যে এই গ্রন্থখানি ভরপুর। এই কাব্য-গ্ৰন্থখানি ইংলওঁীয় সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করিল। বায়রণের মত সরোজিনীও একদিন ঘুম হইতে জাগিয়া দেখিলেন যে, তিনি যশের উচ্চ শিখরে আরূঢ় হইয়াছেন। ১৯১১ সালে তাহার বার্ড অব টাইম ও ১৯১৭ সালে দি ব্রোকেন উইজ এডমও গসের ভূমিক-সম্বলিত হইয়া প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থগুলির কবিতা বিশে