পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্য। ] ভারতবর্ষীয় দার্শনিক সঙ্ঘের সভাপতির অভিভাষণ ©© ছন্দোবদ্ধ করিতে এবং সেই আদর্শের সঙ্গে মিলাইতে চেষ্টা করিয়াছে। প্রবৃত্তির রুদ্রসংঘাতের মধ্যে সেই আদর্শ জীবন ডাক দিয়াছে এবং ইউরোপের কৰ্ম্মপ্রচেষ্টাকে নিয়ন্ত্ৰিত করিয়াছে। এই প্রয়াসের মূলে ছিল একটি স্বষ্টির প্রেরণী—একটি গভীর অস্তিক্যবোধ যাহা আদেশ করিয়ু বলিত-লোভ করিৎ না, আপন সীমাটি চিনিয়া লগু স্বসঙ্গত সৌধের স্থান জুড়িয়া আজ অসংখ্য ইটের পাঞ্জা গড়িয়া তুলিবার প্রচও উৎসাহ দেখা দিয়াছে, এবং চূর্ণইটের গুড়ায় দক্ষ স্থপতির আদর্শটি চাপ৷ পড়িয়া গিয়াছে । ইহাতে বিদ্যার সহিত অবিদ্যার বিচ্ছেদ স্বচিত হক্টস্থেছে । সেই জন্যই এক ছন্দঙ্গীন শক্তি সমস্ত হষ্টিপ্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করিয়া এক প্রচ্ছন্ন অগ্নিদাহের স্তষ্ট করিয়াছে, যাহাতে দীপ্তি নাই, শুধু তাপ আছে। ছন্দ্ৰেই স্বষ্টি ; ছন্দেই বিদ্যা : অবিদ্যার, সীম ৪ অসীমের মিলনভূমি। অরূপের বৃক্ষ হইতে শতদলটি কেমন করিয়া ফুটিয়া উঠিল জানি না। অস্পষ্টভার গর্ভে যতদিন ইন্স লুকাইয়াছিল ততদিন আমাদের কাছে ইহার কোন তাৎপৰ্য্যই ছিল না, তবু কোথাও সেই পদ্মটি ছিল ত। কোন ছৱবগাছের তলদেশ হইতে উঠিয়া কেমন করিয়া অপূৰ্ব্ব ছন্দপীমায় ইহা ধরা দিল, আমাদের চেতনায় একটি নূতন আবর্ভ জাগাইল ? অসীমের স্পর্শে যে আনন্দ চিনিলাম, তাহ যে সীমারই দান । স্বষ্টিকৰ্ত্তার সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় কাজই যে সীমা নির্দেশ করা ; তিনি যে বন্ধনের মধ্য দিয়াই মুক্তি পান, সীমার ভিতর দিয়াই অসীমকে পান। জড়-বস্তুর উপাসনায় অসীম অতৃপ্তি। তাহা ক্ৰমবৰ্দ্ধমান আতিশয্যের পথে শুধু ছুটায়, কিছু প্রকাশ করে না ; তাহার কোন রূপ নাই। এই লোক চিরঅন্ধকারে আবুত, অদ্ধেন তমসাবৃত্তা ; এখানে আছে শুধু মূক বস্তপিণ্ডের বোঝা। মানুষের সত্য প্রার্থনা বৃহৎকে চায় না ; সত্যকে চায়, আপোককে চায় । তাহ। অগ্নিকাণ্ড নয় জ্যোতিরুন্মেষ ; মানুষ অমৃতকে চায়, কালের ব্যাপ্তিতে নয়, পূর্ণের শাশ্বত গৌরবে। মুক্তির অস্তলোকের পথ রুদ্ধ করিয়া ফেলিয়াfছ বলিয়াই আমাদের নিকট বহির্জগতের দাবী এমন ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিয়াছে । সে লোকে বস্তু আছে কিন্তু তাহার অর্থসিদ্ধির পথ অবরুদ্ধ। সে লোকে বাচিয়া থাকা দাসত্ত্ব । জীবনের সত্য যাহাতে নিহিত, অন্ধভার বশবর্তী ছষ্টয়া তাহাই আমরা হারাইয়া ফেলিয়াছি বলিয়া মাছুবের পক্ষে জীবনকে পাপ বলা সম্ভব হইয়াছে। একটি পাথায় ভর করিয়া পার্থী আকাশে উড়িতে গিয়া বাজাসের উপরেই ক্রোধ প্রকাশ করে—কেন সে তাহাকে আঘাত করিয়া ধূলায় ফেলিয়৷ দিল । খণ্ড সভ্যমাত্রই পাপ ৷ খণ্ড সত্য মাতুষকে পীড়া দেয় ; কারণ ভাগ যাহা দিতে পারে না আভাসে তাহারই কথা মনে জাগায়। মৃত্যু আমাদের পীড়া দেয় না, কিন্তু রোগ যন্ত্রণ দেয়, কারণ রোগ কেবলই স্বাস্থাকে স্মরণ করাষ্টয়া দিয়া তাঙ্গকেই কাঢ়িয়া রাখে। অসম্পূর্ণ জগতে জীবনও পাপ ; কারণ যেখানে জাঁধনের অসম্পূর্ণভা প্রত্যক্ষ, সেখানে ৪ ভাগ পূর্ণতার ভাণ করে, শুধু পানপাভ্ৰাট মুখের কাছে ধরে কিন্তু প্রাণ-রস হইতে আমাদের বঞ্চিত রাপে । সত্য , খণ্ডিত থাকিয়া যায়ু বলিয়, তাহার বিকাশযন্ত্রটির পূর্ণ।বৰ্ত্তন হয় না বলিয়াই স্বষ্টির মধ্যে এত ছদৈব । শত বৎসরের পুরাতন একটি বাউলের গান শুনাইয়া আমি আজিকার বক্তব্য শেষ করিব । এই গানে কবি অনস্তের সহিত সান্ত জীবাত্মার চিরন্তন মিলন বন্ধনের কথা গাহিয়াছেন; এ বন্ধন হইতে মুক্তি নাই, কারণ এই পরম্পর সম্বন্ধেই সভ্য সম্পূর্ণ হয়, কারণ প্রেমই পরমতত্ত্ব, নিরপেক্ষ স্বাধীনতা সম্পূর্ণ বন্ধান্ত ও শূন্যভামাত্র। অবিমিশ্র বিদ্যাতেও সভ্য নাই, অবিদ্যাতেওঁ নাই, দুইয়ের মিলনেই সত্যের প্রকাশ—উপনিষদের এই কথায় যাহা পাই, এই গানটিতেও আমরা সেই ভাবটি উপলব্ধি করি । "হৃদয়-কমল চলতেছে ফুটে কত যুগ ধরি। তাতে তুমিও বঁধি, আমিও বঁধি, উপায় কী করি । ফুটে ফুটে কমল ফুটায় না হয় শেষ, এই কমলেঃ যে-এক মধু রসবে তা’র বিশেব। ছেড়ে যেতে লোভী ভ্রমর পারে না যে তাই । তাই তুমি ও বাধা, আমিও বঁধি, মুক্তি কোথাও নাই ।**

  • এই অভিভাষণটি মূল ইংরেজী হইতে অনুদিত। -