পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালের কোপ ঐ গোপাল হালদার এ নদীটাকে দেখলে আজ আর কেউ নদী ব’লে স্বীকার করবে না। বালুর ভারে আজ সে প্রায় শুকিয়ে উঠেছে,—ভাটার সময় ওর মাঝখানটিতে থাকে ইটুেজল, জোর কোমর পর্ষ্যস্ত ; আর জোয়ারে সে জল বেড়ে উঠে দাড়ায় গলা পৰ্য্যন্ত । তবুও কাছাকাছি গায়ের লোকেরা একে নদীই বলত ; এর এককালের দৌলতের কথা তার পিতা পিতামহদের কাছ থেকে শুনে আসছিল ব’লেই বোধ হয় । সত্যই ত, আজ যদি ষোড়শ বা সপ্তদশ শতাব্দীর সেই দুই পারের প্রবল প্রতাপশালী জমিদার-বংশ-দু’টি হঠাৎ তাদের নদী-পারের নির্বাপিত চিতাভষ্ম থেকে জেগে ওঠেন। তবে কি তারা এই ক্ষণিধার জঙ্গ-প্রবাহটুকুকে সে আমলের করালী ব’লে চিনতে পারবেন ? একদিন এপারের রায় এবং ৪-পারের সিংহদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিত ও বৈরিতাকে ঠেকিয়ে রেখেছিল এই করালী নদীর করাল স্রোত এপার যথন ৭-পারকে দেখে গর্জেছে, ও-পার যপন এপারের দর্পকে চূর্ণ ক’রে দেওয়ার জন্তে অসহিষ্ণু হ’য়ে উঠেছে, আর এপারের তীবের ফৌজ যখন ও-পাবের ফৌজের মাথাগুলো ফাটাবার জন্যে উন্মত্ত হয়ে উঠত,তখন বহুবার মাঝখানকার করালী নদীর ভীষণ ভ্ৰকুটি তাদের সংযত, সম্বত করেছে । কিন্তু কালীর জল তাদের চিরদিন ঠেকাতে পারলে না । দুই বৎসরের প্রতিদ্বন্দ্বিত৷ তাদের হুদূঢ় প্রাসাদ ও স্ব-উচ্চ দেব-মন্দিরের চুড়া ছাড়িয়ে, উীদের বিশাল জনশক্তি ও ঐশ্বর্ঘ্যের শোভা যাত্রার মধ্যেই সন্তুষ্ট না থেকে একদিন রীতিমত শক্তি-পরীক্ষার স্কুন্যে মাতাল হ'য়ে উঠল ; দু-পারের প্রজার হাতে সেদিন লাঠি এবং সঞ্জ কি নেচে উঠল, সঙ্গে-সঙ্গে দ্ব-পারের নেমেদের হাতে কুপ-ঝাপ লেচে উঠ ল বড়-বড় ছিপের দঁাড়। সেদিন থেকে করাঙ্গীর বুকে প্রায় দুই শত্ৰী ধ'রে চলল এই দু-পারের রেষা-রেষি । দীর্ঘ দুই শতাব্দী ধরে ক্রমাগত করালী তাদের রক্তে রাঙা হ’য়ে উঠল। দুই বংশেরই অর্থের ভাটি পড়ে এল, তবু তাদের বিবাদের মীমাংসা হ’ল না। শেষে একদিন করালী নিজে গর্জে উঠল—এপারের ষে-প্রাসাদ এতদিন ও-পারের দূর প্রাসাদের দিকে জুকুটি-ভরে তাকিয়েছিল, তা’র উচ্চ শির যেদিন করালীর উচ্ছলিত জলধারার পায়ে কুয়ে পড়ল, সেদিন ও-পারের শিরও খাড়া নেই দেখে সে এক তৃপ্তি ও বাজের অট্টহাসিতে চারদিক চমকিত ক’রে গেল। ওপারের সম্পদের শেষ রেখা যেদিন মুছে গেল, হৃতসৰ্ব্বস্ব বাবুরা যেদিন একমাত্র গৃহ-বিগ্রহটিকে নিয়ে এতকালের স্বরক্ষিত বিশাল পুরীর পিছনের জুয়ার দিয়ে বেরিয়ে প্রাণরক্ষা করলেন, সেদিন একবার ও-পারের দিকে তাকিয়ে দেখলেন,--যপন শুনলেন, ওপারের রায়-বংশের শেষ সম্বলও রইল একমাত্র বারাহী দেবী, তখন একবার নিরুদ্বেগে মুক্তির নিঃশ্বাস টানলেন। করালীর সর্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত এড়িয়ে বেঁচে রইল কিছু দূরের নদীপারের দুই বংশের শ্মশান-মন্দিরগুলি । লেলিহান ঈর্ষ। ও প্রমত্ত রক্তলিঙ্গার প্রজঙ্গিত টীপের মতন চিতানলের শেষেও জেগে রইল তাদের বৈরিতা কালের কপালে। তা’র পরে ৪ প্রায় দেড়শ বৎসর ভেসে গেল—করালীর ক্ষুধা শেষ হয়েছিল,—ভা’র শক্তির মদে অবসান ধোবিত হ’ল। যে-শ্মশানের মন্দিরগুলি অতীতের দম্ভ ও তাগুবলীলার কাহিনী দু-পারের শান্ত গ্রামবাসীদের মনে জাগিয়ে রেখেছিল, সেখানকার পরিত্যক্ত বিস্মণতীয় কি-এক নীরব আটহাস ভৈল বেড়া’ত, সেখানকার বাতাসে শৃগালের ষে চীৎকার ব’য়ে আনৃত, তা শোনা’ত এক মৃত্যুপারের কারার মতন, সেখানকার জল-ধারায় ধে কানাকানি চলত তা খেয়া-নৌকোর নেয়ের কানে জাসত এক অব্যক্ত আক্ষেপের মতন। সেখানে দিন