পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N ১ম সংখ্যা ] কি ? আমার ভাই ত বলেইছে—আমিত আর নিজে বিয়ে করতে মাইনু যে আমায় কিছু বলবে? বাবা সম্বন্ধ করেছিলেন, মেয়ের বাপ মেয়ে দান করেছিল । সে তাদের কথা তারা দুই বুড়ে বুৰ বে। আমি পিতৃসত্য পালন ক’রে খালাস, মেয়ে ঘরে নেবার কোনো কথা আমার সঙ্গে হয়নি । এর পর আমি নিজের মনের মতো মেয়ে দেখে ঘরে আনৃব।” । অনস্বয়া এমন অকাট্য যুক্তির আর কোনো উত্তর না দিয়া বলিল, “কিন্তু মেয়ের ত একটা পছন্দ আছে । মেয়ে যদি আপনার ভাইকে পছন্দ না করে ?” বিধবা প্রথমটা-বিস্ময়ে অবাকৃ হইয়া রহিল। তাহার পর বলিল, “ও, ঘরবরের কথা বলছেন ? তা আমাদের ঘর ভালোই, কুলীন কায়েত, তিনকুলে কোথাও এতটুকু খুং খুঁজে পাবে না কেউ । বাপের জমিজমা আছে, একখানা বাড়ী আছে গ্রামের সদরে । আর যদি বলো, আইনআদালতের কথা, তবে সে-দিকেও আমার ভাই শক্ত আছে। নতুন বে। আনবার আগেই পুরোনো বেীকে সাত টাকা মাসোরা বরাদ ক’রে দেবে। তা হ’লে আর টু শব্দটি কবুরার উপায় থাকৃবে না। তার পর গিয়ে গাইগোত্রের কথা যদি বলে, তবে বলি, আমরা কি আর জানিনে যে ব্রাহ্মসমাজে ওসব মানে না । সেসব জেনেশুনেই ন ভাই এগোচ্ছে । ভাইকে আমার অপছন্দ করবুর কিছু নেই। পুরুষ বেটাছেলে, তার ত আর রং মেজে চুল চি’রে দেখে নিতে হবে না।” পৌরুষের এমন অটল মহিমার কাছে মাথা ইেট না করিয়া যে উপায় নাই ভাবিয়া ভ্রাতৃসৌভাগ্যবতী রমণী অনস্বয়াকে কথার উত্তর দিবার সময় না দিয়াই হাসিয়া বলিলেন, “তোমার বয়স কত হয়েছে ভাই ?” হঠাৎ তাহাকে এমন প্রশ্ন করিতে শুনিয়া অনস্বয়া বিপদ গণিয় বলিল, “আমার বয়স অনেক হয়েছে। তা’র গাছপাথর নেই।” - মেয়েটি বলিল, “আমার সঙ্গে ঠাট্টা । আইবুড়ো মেয়ের আবার বয়স কি ! কতই আর হবে, সতের কি আঠারো।” অন্তত আট-নয় বৎসর বয়স কমিয়া যাওয়াতে অনস্বয়ার মনটা এতই খুশী হইয়া উঠিল যে সত্যনিষ্ঠার খাতিরেও পথের দেখা $లి সে এ-কথার প্রতিবাদ করিতে পারিল না । বলিল, “হ্যা, কাছাকাছিই বলেছেন।” বিধবা বলিল, “তবে আর বেশ কি ? আজকাল কত বামুনকায়েতের ঘরে কুড়ি বছরের মেয়েও পড়ে আছে দেখা যায়। এ ত হামেশাই হয়।” একটু দম লইয়াই মেয়েটি আবার পূরা উৎসাহে কথা স্বক করিল, “তোমার বাপের নাম কি ? কি কাজ করেন ?, দেশ কোথায় ? কতটাকা মাইনে. পান ? তা হ্যা ভাই, আপনার সমাজ ছেড়ে কায়েতের ছেলে বেশ্ব-সমাজে গেলেন কেন ? কিছু গোলমাল আছে নাকি ? অার থাকলেই বা কি ? কলুকেত সহরে কে কাকৈ চিন্‌ছে বলে ! টাকা দিলেই গুরু পুরুত বামুন নাপিত সব হাতের মুঠোয় এসে যায়।” তাহার সম্বন্ধে মহিলার উৎসাহ ক্রমশই বাড়িয়া যাইতেছে দেখিয়াও অনস্বয়া আর বাধা দিবার কিম্ব কথা মুরাইয়া লইবার চেষ্টা করিল না। একৃলা ষ্টেশনে বসিয়া কাটানোর চেয়ে এমন শ্রুতি সুখকর আলোচনাটা তাহার কাছে অনেক ভালো লাগিতেছিল । অনসূয়া সাধ্যমত প্রশ্নের উত্তর দিয়া চলিতে লাগিল। পিতৃপরিচয় বংশপরিচয় আর্থিক পরিচয়, সকলই যখন বিধবার মনের মতো হইল, তখন সে আবার অনেকক্ষণ ধরিয়া নীরবে অনসূয়ার মুখের দিকে তাকাইয়া লইয়া অকস্মাং চোরা চাহনিতে পাশের বেঞ্চের দিকে চক্ষু ফিাইয়া ঈষৎ অঙ্গুলি হেলাইয়া অনস্বয়াকে চুপিচুপি বলিল, “ঐযে আমার ভাই । দেখ ছ না ।” এতক্ষণ অনস্বয়া ভগিনীর সহিত কথা বলিতেই ব্যস্ত ছিল, ভাইকে ফিরিয়া দেখে নাই। এইবার একবার চুক্তিতে চাহিয়া দেখিয়া লইল । ব্যগ্র একজোড়া চক্ষু এতক্ষণ ধরিয়া পিছন দিক্ হইতে যে তাহাকেই গ্রাস করিতেছিল, তাহ সে জানিত না, চাহিবা-মাত্র বুঝিয়া দৃষ্টি নামাইয়া লইল, কিন্তু যতখানি দেখা দরকার তাহা দেখা তাহার হইয়া গিয়াছিল । বেঞ্চির হাতলের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া পূৰ্ণবয়স্ক একটি পুরুষ চক্ষু ও কর্ণের সাহায্যে জনসূয়ার পরিচয় হাইবার চেষ্টা করিতেছিল। লোকটির মাথার চুল উঠিয়া কপাল ব্রহ্মরন্থ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়া পড়িাছে, কিন্তু তাহার উপরও বুরুষ চালনার চিহ্ন দেখু যায়। যন্ত স্বদেশী ক্রমে রণবহুল মুখখান তৈলাক্ত