পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] “বিয়ের ফুল । > তাহার উপর চক্ষের সম্মুখে তাহার কার্ডের এই লাঞ্ছন। হওয়াতে লে একেবারে ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিল। বুলি বঙ্গাইয়া সাম্নে জাগাইয়া গেল এবং দাতে দ্বাত পিষিয়া বলিল “আমি ঠগ জোচ্চোর ?—ৰেট মেড়ে, যতবড় মুখ নয় তভবড় কথা ?—* হসিয়ার হইলেই যে সাহসী হইতে হুইবে এমন কোনো কথা শাস্ত্রে লেখে না। আবার সম্প্রতি সহরে কয়েকটা ডাকাতি হইয়া গিয়াছিল। রামতনুর উদ্যত ঘুসির নিম্ন । হইত্তে তড়িতের ন্যায় সরিয়া গিয়া মাঝরাস্তায় বৃষ্টি মাথায় করিয়া রামটহলব আৰ্ত্তস্বরে ডাকিয় উঠিল “খুন ভইল, দৌড় হো—ডাঙ্কু পড়ল বা—” রামতমু প্রমাদ গণিল । প্রেম করিতে আসিয়া শেষকালে ডাকাতিতে অভিযুক্ত হইতে হইবে নাকি ?-- লোকে এমন ফ্যাসাদেও পড়ে ! মুহূর্ভের মধ্যে নামিয়া পড়িয়া রামতন্থ প্রেম ভুলিয়া প্রাণপণে ছুটিল । সামনেই একটা গলি দেখিতে পাইয়া তাহার মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল এবং এগলি-মেগলি করিয়া একেবারে হেদোর সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । ইাপাইতে লাগিল যেন বুকের পাঞ্জরী-কটা ছিটুকাইয়া বাহির হইয়া যাইবে । . কিন্তু তখনও তাহার স্বস্তি নাই। সাম্নে দিরা মন্থর গতিতে একটা ঘোড়ার গাড়ী যাইতেছিল। একবার চারিদিকৃ চাহিয়া গাড়োয়ানকে সে জিজ্ঞাসা করিল, “মেছে-বাজার যাবি?” রামতন্থর বস্ত্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গাড়োয়ান বলিল, “না বাবু, গদি ভিঙে যাবে।” “আমি দ্বাড়িয়ে যাবো বাবা, গদি ভিজ জে তুই দাম পাবি ।” --> “ডবল ভাড়া লিব বাৰু, দেখছেন না কি-রকম বাদল আছে ? - "বাদল না-হলে আর এইটুকুর জন্তে গাড়ী করি ? তা ডবল ডবলই সই, কত হবে ? “দেড় টাকা দিবেন বাৰু, আপনি ভদ্রলোক কষ্টে পড়েছেন, কি জার বল ৰ ?” ভালোকের জন্ত ত্যাগ-ব্যবসায়ী এই উদারচেত। গাড়োয়ানের গাড়ীতে চড়িতে-চড়িতে রামতন্তু বলিল, “চার জানার ভবল কি দেড় টাকা হয় বাপু ? তা চল তোর ধৰ্ম্ম তোতেই আছে; একটু জোরে হাকাস। গাড়ী চড়িবার মিনিট খানেকের মধ্যে বৃষ্টিটা হঠাৎ ধরিয়া গেল। বিধিরও এই কঠোর বিরূপ দেখিয়া রামতন্থর মনে হইল গাড়ীর দেওয়ালে মাথা ঠুকিয়া মরে । নামিয়া একটা দোকান হইতে ৫ গ্রেন কুইনাইন কিনিয়া লইয়া হোটেলে ঢুকিল। তাহার পর ট্রাঙ্ক, খুলিয়া গাড়োয়ানের-জন্ত দেড় টাকা বাহির করিয়া লইল । তাহার পর একটি একটাকার নোট ও বিকশিত-দন্ত বিদ্রুপের মতন একটি টাকা ট্রাস্কের মাঝখানে পড়িয়া রহিল । 8 w পরদিবস বেলা আন্দাজ চারিটার সময় রামতন্থ বিছানার উপর অলসভাবে শুইয়া জানালার মধ্য দিয়া আকাশ পানে চাহিয়া ছিল। মেঘ ছিল না বলিলেও মিথ্যা বলা হয় না, তবুও ঘর-পোড়া গরু যেমন সি দুরে মেঘে ডরায়, সেইরূপ যা দুই-একথও মেঘ এদিকৃ-ওদিক্‌ করিয়া বেড়াইতেছিল তাহা দেখিয়াই রামতন্থর ধথেষ্ট আতঙ্ক উপস্থিত হইয়াছিল এবং আণ্ড-বিবাহের আশা দিয়াও তাহাকে খামবাজারে পাঠাইতে পারা ধাইত না। সে ভাবিতেছিল মেঘের নামগন্ধ না মুছিয়া গেলে সে আর পাদমপি নড়িতেছে না। এমন পয়সাও নাই যে গাড়ী করিয়া যাইবে । আর ফাইলেও যে তাহাকে কেন্দ্র করিয়া মন্তবড় একটা ভীড় দাড়াইয়া যাইবে না তাহারই বা নিশ্চয়তা কি ? ব্যাটা উজ বুক চাকরটা সব কাচাইয়া দিল। মেসে একটা লোক খবরের কাগজ দিত, সে দেখা দিল । তাহাকে নিজের ঘরে ডাকিয়া রামতনু কাগজট লইল। হাতে কোনো কাজ নাই, একটা কাগজের দামও বেশী নয়, রামতন্থ জিজ্ঞাসা করিল, “কোনো বাঙ্গাল কাগজ রাখিস্ট্র’ লোকটা সোৎসাহে একখান ‘নায়ক’ • বাহির করিয়া বলিল, “এই লিনু বাৰু, এবুকম গালাগাল পাচকড়ি-বাৰু অনেকদিন দেননি; প্রাণ খুলে লাটসাহেবকে নিয়েচেন একচোট।” রামতন্তু হালিয়া কাগজখানা লইল, তাহাকে দাম চুকাইয়া দিল এবং বুকে বালিশটা চাপিয়া কাগজটা বিছানায় মেলিয়া পড়িতে লাগিল ।