পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ভোজনে প্রবৃত্ত হ’লেই তাদেরও ডাক পড়বে। উপরের খরের একটি বন্ধ জানলার খড়খড়ির পাখী তুলে প্রফুল্লমুখী ধনিষ্ঠ কৌতুহলী দৃষ্টি প্রেরণ করে’ অভ্যাগতদের ভোজন পৰ্য্যবেক্ষণ করছিল । সে দেখলে মার্বেল-পাথর-পাতা দালানের উপর কাপেটের আসন পেতে ব্রাহ্মণের সার দিয়ে খেতে বসেছে, রাজকুমার-বাবু তাদের সামনে দাড়িয়ে সকলের আহারের তত্ত্বাবধান করছেন। একজন পাচক এক-হাতে একটা পিতলের বালতি ও অপর-হাতে একটা পিতলের বড় চামচে নিয়ে নূতন একটা পদ পরিবেষণ করতে উপস্থিত হ’তেই রাজকুমার-বাবু যেখানে দাড়িয়েছিলেন সেখান থেকে খানিক দূরে সরে” গেলেন ; তিনি সরে যেতেই এতক্ষণ তিনি যে লোকটিকে আড়াল করে দাড়িয়েছিলেন সেই লোকটিৰ উপর ধনিষ্ঠার দৃষ্টি গিয়ে পড় ল—ধনিষ্ঠা একেবারে চম্কে উঠল । রাজকুমারবাবু সরে যেতেই মেধাবরণমুক্ত সুয্যের হায়, ভস্মাপস্থত অগ্নির ন্যায় যে তেজঃপুঞ্জমূৰ্ত্তি ধনিষ্ঠার দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হ’য়ে উঠল তার দিকেই তার মুগ্ধ নির্নিমেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হ’য়ে গেল। আজ জমিদারের বাড়ীতে উৎসবেব নিমন্ত্রণ ; তাই সকলে যে যার উৎকৃষ্টতম পরিচ্ছদে সজ্জিত e'য়ে এসেছে ; কেবল ঐ ব্যক্তিরই সজ্জার নিতাস্ত অভাব —তার পরণে একখানা মোটা খঙ্গরের খাটো সাদা থান আর গায়েও একখানা মোট খন্দরের সাদা চাদর ; এই তপস্বীর স্বল্প বেশেও তার স্বাভাবিক সৌন্দৰ্য্য ও দীপ্তি আর সকলের চেষ্টাকৃত প্রসাধনের উপর নিজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তার আশে-পাশে সামনে কত লোক হাসি-মস্কর রঙ্গ-তামাসা করছে ; সকলের চটুলতা ও বাচালতার মধ্যে গম্ভীর সুপ্রতিষ্ঠ হ’য়ে বসে’ আছে সে একা । তার দেহ দীর্ঘ ও পরিপুষ্ট, মুখ পূৱন্ত গোল, তথকাঞ্চনবর্ণ, মুখশ্ৰী বুদ্ধির প্রভায় উদ্ভাসিত, তার উপর উদ্বেগের ছায়াপাত হওয়াতে সৌন্দর্ঘ্যের সমস্ত উগ্রতা প্রশান্ত গাম্ভীর্ষ্যে পরিণত হ’য়ে উঠেছে। যতক্ষণ ব্রাহ্মণভোজন হ’ল ততক্ষণ ধনিষ্ঠা এক-দৃষ্টে কেবল সেই লোকটিকেই দেগ ছিল, তার সমস্ত মনোযোগ সেই লোকটির নিকটে আবদ্ধ হ’য়ে পড়েছিল। একজন পাচক পরিবেশকের পা লেগে একটা জলের গেলাস উলটে গিয়ে দুজন ব্রাহ্মণের যে খাওয়া নষ্ট নষ্টচন্দ্র

  • >>

عي হ’য়ে গেল এবং সেই জল গড়িয়ে এসে নীচের রকে উপবিষ্ট একজন কায়স্থ ভজলোকের গায়ের শালখানা তর কারি-ধেীয়া হলুদের ছোপ লেগে নোঙর করে দিলে এব তার ফলে ‘ভোজনকারীদের ও তদারককারীদের মধ্যে যে বিষম চাঞ্চল্য উপস্থিত হ’ল, ধনিষ্ঠ তা লক্ষ্য করতে পারলে না। তার মনে কেবলই প্রশ্নের পর প্রশ্ন উদয় হচ্চিল—এই লোকটি কে ? এর নাম কি ? এর বাড়ী কোথায় ? এর পরিচয় কি? এর বাড়ীতে আর কেকে আছে ? এর স্ত্রী—সে কি রূপেগুণে এর উপযুক্ত ? ' সে কী সৌভাগ্যবতী ! ব্রাহ্মণ-ভোজন সমাপ্ত হ’য়ে গেল। ব্রাহ্মণের আসন ছেড়ে উঠে একে-একে দালান. থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। ধনিষ্ঠ যে-লোকটিকে এতক্ষণ দেখ ছিল, সে তার দৃষ্টির বহির্ভূত হ’য়ে যেতেই ধনিষ্ঠার চমক ভাঙল এবং সে চীৎকার করে ডাকতে লাগ ল—মাধী, মাধী, ও মাধী... আহবানের মধ্যে ব্যগ্রতার আভাস পেয়ে মাধবী দাসী পান-সাজা ফেলে রেখে খয়ের-চণ-মাথা-হাতেই সেখানে ছুটে" এল । তাকে দূরে আসতে দেখেই ধনিষ্ঠ ব্যগ্রভাবে বলে’ উঠল—তুই ছুটে দেওয়ানজী মশায়ের কাছে যা, তাকে আমার কাছে চট্‌ করে’ ডেকে নিয়ে আয়......... মাধবী এই কথা শুনেই ফিরে’ ছুট ল••••••••• ধনিষ্ঠা তার পিছন দিক্‌ থেকে ডেকে আবার বললে— দেখ, দেওয়ানজি মশায়কে বলবি—ব্রাহ্মণদেরকে যেন একটু অপেক্ষা করতে বলেন, তাদের একজনও যেন চলে’ न] क्षiनि । - ক্ষণকাল পরেই বৃদ্ধ রাজকুমার-বাবু ধনিষ্ঠার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন—কি মা, আমাকে স্মরণ করেছ কেন ? ধনিষ্ঠার মুখ অকস্মাৎ অকারণে লাল হ’য়ে উঠল, সে তৎক্ষণাৎ রাজকুমার-বাবুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে না ; সে মাথার কাপড় একটু সামনে টেনে দিয়ে একবার ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বললে—ব্রাহ্মণ-ক’জনকে কিছুe ভোজন-দক্ষিণা দিলে হয় না ?