পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२>8 প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড লেখাপড় শিখে মানুষ হ’তে চেষ্টা করছে তখন তাকেও এষ্টেটু থেকে কিছু সাহায্য করা উচিত ; তার যে এখানে লেখাপড়া হয়নি তার জন্তে ত এই এষ্টেটের মালিকই झांश्लेौ । রাজকুমার-বাবুর মনে পড়ল এই বউরাণী স্বামীকে সৰ্ব্বদা অনিলের সঙ্গে থাকৃতে দেখে ঈর্ষ্যাম্বিত হ’য়ে অনিলের নাম কখনো মুখে আনতেন না, তার কথা উল্লেখ করতে হ’লে ঘৃণা ও হিংসা-ভরা স্বরে বলতেন আমার সতীন ! যাকে অবলম্বন করে’ এই হিংস উদগত হয়েছিল তার অন্তৰ্দ্ধানে তার প্রিয়পাত্র হিংসার পাত্র থেকে এখন অল্পকম্পাৰ পাত্ৰ হ’য়ে উঠেছে ; এই অল্প কম্পা পরলোকগত প্রিয়তম পতির প্রতি গীতির স্মৃতিৰ ফল। এইকথা মনে করে রাজকুমার-বাৰু বললেন—ত তাকেও মাসে-মাসে কিছু-কিছু দিলেই হবে । ধনিষ্ঠা মাথা নীচু করে’ দৃঢ়স্বরে বললে—অনিলের দাদাকে বলে’ দেবেন-আনিলের বিলেতে পড়ার সমস্ত খরচ এষ্টেটু থেকে দেওয়া হবে। রাজকুমার-বাব আশ্চৰ্য্য অবাকৃ হ’য়ে ধনিষ্ঠার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । ধনিষ্ঠ ধীরমন্থরপদে দালান থেকে ঘরের মধ্যে চলে’ গেল । ধনিষ্ঠ যুবতী, সুন্দরী, জমিদারের বিধবা পত্নী । ধনিষ্ঠার স্বামী প্রফুল্প-বাৰু স্বশিক্ষিত না হ’লেও তার চালচলন ছিল ইংরেজি-ধরণের ; সে স্ত্রীকে নিয়ে খোলা গাড়ীতে বেড়াতে যেত ; স্ত্রীর সঙ্গে যে-ঘরে বসে থাকৃত, কোনো কৰ্ম্মচারী বা প্রজা কোনো বিষয়-কৰ্ম্মের উপলক্ষে তার দর্শন-প্রার্থী হ’লে সেই ঘরেই স্ত্রার সাম্নেষ্ট তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করত । বাইখের ঘরে কোনো অভ্যাগত উপস্থিত থাকার সময় যদি হঠাৎ ধনিষ্ঠ। সেই ঘরে এসে পড়ত, তা হ’লে সেই অভ্যাগত ষে-পরিমাণ ব্যস্ত ও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ত স্থার সিকিও ধনিষ্ঠ বা প্রফুল্প-বাবু হ’ত না ; সেই অভ্যাগত পূৰ্ব্ব-পরিচিত বা পূৰ্ব্ব-দুষ্ট হ’লে ধনিষ্ঠা বেশ সহজ সংপ্ৰতিভভাবে স্বামীর পাশে এসে বস্ত, এবং সে-ব্যক্তি অপরিচিত অদৃষ্টপূৰ্ব্ব হ’লে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত ; কখনো-কখনো বা প্রফুল্প-বাবু স্ত্রীকে ডেকে আগম্ভকের সঙ্গে স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিত। প্রফুল্ল ও ধনিষ্ঠার এইরূপ আচরণ অনেকের কাছেই উৎকট ও বিসদৃশ ফিরিঙ্গিখানা বলে’ মনে হ’ত, কিন্তু কেউ মুখ ফুটে জমিদার-দম্পতির আচরণের স্পষ্ট প্রতিবাদ বা নিন্দ করতে সাহস করত না । গ্রামের যদু বাড়য্যে ধনিষ্ঠা-সম্বন্ধে অযথা নিন্দা প্রচার করেছিল শুনে প্রফুল্ল নিজে তার বাড়ীতে গিয়ে যদু বাড়ষ্যেকে আচ্ছা করে” বেণি য়ে দিয়ে এসেছিল এবং বেত মারবার সময় বলেছিল—“তুমি ব্রাহ্মণ বলে’ আমি নিজে তোমার বাড়ীতে এসে তোমাকে বেক্তিয়ে গেলাম ; তুমি ব্রাহ্মণ না হ’লে আমার হাড়ী পাইক দিয়ে কান ধরে’ দেউড়িতে নিয়ে গিয়ে যে মূথে মিথ্যা কুৎসা রটনা করেছ সেই মুখ জুতো মেরে ভাঙিয়ে দেওয়াতাম !” এইকথা শোনার পর গ্রামের ব্রাহ্মণের প্রফুল্পর এমন ব্রাহ্মণ-ভক্তির পরিচয় পাওয়া সত্ত্বেও ধনিষ্ঠা-সম্বন্ধে আর কোনো অভিমত ব্যক্ত করতে সাহস করেনি ; অপর জাতির লোকেরা ত ব্রাহ্মণেরই দাস । স্বামীর কাছে এইরূপ প্রশ্রয়প্রাপা যুবতী সুন্দরী নিঃসস্তান ধনিষ্ঠ যখন বিধবা হ’য়ে সমস্ত সম্পত্তির মালিক ও সর্বময়ী কী হ’ল তখন গ্রামের পরার্থপ্রাণ প্রবীণ লোকগুলি আর-একবার চঞ্চল হ’য়ে উঠল । একট। কানাধুষ জনরব ধনিষ্ঠার কানে এসেও পৌছল। ধনিষ্ঠা কিছুমাত্র বিচলিত না হ’য়ে দেওয়ান রাজকুমার বাবুকে ডেকে অতি ধীর প্রশান্তভাবে বললে—হরিশ চাটুয্যেকে বলে’ দেবেন যদু বাড়ুয্যের কথাটা যেন মনে রাখে ; র্তার মতন আমি ত আর ব্রাহ্মণ-ভক্তি নেথাতে পারব ন, আমাকে নগদি পাইক দিয়ে কাজ সাৰ্বতে হবে । যে মেয়ে নিজের কুৎসা শুনে কিছুমাত্র সঙ্কুচিত না হ’য়ে এমন স্বম্পষ্টভাবে ভবিষ্যৎ ব্যবস্থার আভাস দিতে পারে তাকে নিয়ে নিন্দাচর্চার বিলাসিত করা যে বিশেষ নিরাপদ নয় তা বুঝতে গ্রামের কারো বাকী থাকেনি । কিন্তু সমস্ত গ্রামটা একটা প্রকাও ভীমরুলের