পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা । যে, সেটা শিশুর আহারের জন্য চীৎকার করার মতনই মনে হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের মধ্যে তাহাকে অস্বাভাবিক আকার দেওয়া হইয়াছে বলিয়াই তাহা এমন ভীতিপ্রদ হইয়া উঠিয়াছে। আপনার বলিতে পারেন, তুমি ত শিক্ষক। তুমি আমাদের নিকট এমন কাদ্বনি গাহিতেছ কেন ? অভাবঅভিযোগেব পালা তোমার ফুরাইতেছে না দেখিতেছি ; থামাও তোমার কচ কচানি, কি চাও তাহাই বলে । চাক্ট না আর কিছুষ্ট বন্ধু, চাই কেবল এষ্ট যে, আমাদের হাতের বন্ধনটি মোচন করিয়া দাও । সসাগর পুথিবীর অধীশ্বরও আমাদিগকে করিয়া দিবে না ; আর দিলেও তাহাতে আমাদের কর্শ্বের বিশেষ সুবিধ৷ হইবে ন, বরঞ্চ এই কৰ্ম্মের পক্ষে আমাদের এই বৰ্ত্তমান সদাবেষ্টিতের অবস্থাটাই আছে ভালো, কারণ প্রাণকে সেই-ই জাগাইতে পারে, প্রাণ লইয়াই যাহার টানাটানি । কিন্তু যে ভারটা আমাদের উপর তাহাকেও যথার্থভাবে বহন করিতে হইবে । ভগবানের এমন সৃষ্টি যে মানুষ, তাহাকে আমরা একঘেয়ে অসম্পূর্ণ আকার দিয়া চলিয়াছি। যেখানে আমরা খুব ভালো কাজ করিয়াছি সেখানে ঐ হাতুড়ি-পেটার কার্ধ্যে কোনো খোচ খাচ রাখি নাই এইমাত্র । কিন্তু স্বষ্টিকৰ্ত্তাই জানেন, আমাদের এই ব্যবস্থায় তাহার মানুষ গড়িতেছে না, গড়িতেছে এই জগতের আপাতকাৰ্য্যসিদ্ধির জন্য যাহা আবশ্বক তাহাই । ইহাতে ভবিষ্যং জগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে । কেহ-কেহ হয়ত আমাকে বলিতে পারেন, তুমিই অধিকতর ক্ষতির উপদেশ দিতেছ ; তুমিই তোমার ছাত্রগুলিকে একটি বিষম স্থানে দুৰ্ব্বল করিবার আয়োজন করিতে চাহিতেছ , তাহাদিগকে যে উপার্জন করিতে হইবে, তাহা ভাবিয়া দেখিতেছ না। কিন্তু এ-কথায় কোনো ভুল নাই যে, বেশীর ভাগ মানুষের উপার্জন-পরায়ণতা স্বাভাবিক । দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যবৃদ্ধি মানুষের লক্ষণ । যে মানুষ, সে উপার্জনের প্রয়োজন বুঝিবে এবং উপার্জন করিবেও,কেবল তাহাতে এই একটা বিশেষত্ব থাকিবে যে, এই যে কেবল টাক-টাক; করিয়া সকলে চীৎকার করিতেছে তাই সে করিবে না। আরও একটা বিশেষত্ব দেখা যাইবে শিক্ষকের অদক্ষণ ২৪৩ এই যে, নিজের অথবা আপন জনের উদর-পূরণেই তাহার উপার্জনের উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধ হইয়া থাকিবে না। একথা মনে করা ভূল যে, কাহাকেও কেবলমাত্র উপার্জন করিতে শিখাইলেই তাহার সমস্ত শক্তি টাকা আনার কার্য্যে লাগিবে । তাহার এমন শক্তি অনেক আছে যাহা টাকা আনার কার্ষ্যে ব্যবহৃত হইতে পারে না, কিন্তু মহত্তর কার্য্য করিতে পারে, তাহার এমন শক্তিও আছে যাহা প্রস্ফুটিত হইতে না পাইয়া পচিয়া উঠিয়া তাহারই জীবনকে বিষাক্ত করিয়া তুলিতে পারে। তাহাকে সৰ্ব্বাঙ্গীণ মানুষে বিকশিত করিয়া তুলিতে পারিলে তবেই এরূপ ক্ষতি এবং বিপদের সম্ভাবনা থাকে না । জীবন-সংগ্রাম যেরূপ তীব্র হইয়া উঠিয়াছে, তাহাতে কোথাও কোনো দুৰ্ব্বলতা সহ্য হইবার আর অবকাশ নাই। ভগবান মানুষ দিয়াছেন, তাহাকে অপচয় যেদেশ করিবে তাহার রক্ষা নাই, প্রকৃতির নিয়মেই তাহাকে নীচে নামিতে হইবে। প্রত্যেককেই তাহার সমস্ত শক্তিতে দৃঢ় হইয়া জগতের সমক্ষে দাড়াইতে হইবে। তাহা না হইলে, আর-একজন, যে শক্তিমান, সে ছাড়িয়া দিবে না, সমস্ত কাড়িয়া লইবে । অল্পে স্বল্পে সহজভাবে দিন চলিয়া যাইবার যুগ ফুরাইয়া গিয়াছে ; ঐ অল্পে-স্বল্পে চলিয়া যাওয়া আর সহজভাবে ঘটিতেছে না । ইহা হইতে নিষ্কৃতির উপায়, ক্ষুদ্র হইতে বৃহত্তরের দৃষ্টি ফিরাইয়া সেই বৃহত্তরের উপযুক্ত শক্তি সংগ্রহ করা। মানুষকে কাটিয়া-ছাটিয়া বিশেষ-বিশেষ প্রয়োজনের জন্তু তাহাকে প্রস্তুত করা, মহৎকে ক্ষুজের কোঠায় নামাইয়। আনা মাত্র । সে মানুষ বলিয়াই বৃহত্তরে তাঙ্গর স্থান, তাহার সেই অধিকারকে পাকা করিবার অবকাশ তাহাকে দিতেই হইবে । এ তখনই সম্ভব যখন সে সম্পূর্ণ মানবে ফুৰ্ত্তিলাভ কfরবে, আনন্দের আবহাওয়ায় শারীরিক ও মানসিক উভয়বিধ স্বাস্থ্যের নিৰ্ম্মলতামু যখন তাহার ভিতর ও বাহির উজ্জল হইয়া উঠিবে। বক্তৃতা-বাগীশ শিক্ষা ব্যবসায়ীর বাক্যবৃষ্টি ক্ষমা করুন। বলিতে চাহি মাত্র এই যে, মুক্তির মধ্যে জীবনের অবধি ও পরিপূর্ণ বিকাশ ব্যতীত দুৰ্গতি হইছে মুক্ত থাকিবার অন্য পন্থা নাই ।